অবশেষে সিদ্ধান্তটা জানিয়ে দিলাম আমার ম্যানেজার কে!
ম্যানেজারের রুমে ঢুকতেই আমার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন--(সম্ভবত আমার চেহারায় চিন্তার রেখাগুলো স্পষ্ট ছিল )
-কিছু বলতে চাও?
-- স্যার, একটু কথা বলতে চাই আপনার সাথে
-বলো
-- স্যার, আমি জব আর পড়াশোনা দুটোই একসাথে করতে হিমশিম খাচ্ছি, আর তাছাড়া আমার একটা পিএইচ.ডি'র অফার আছে তাই আমাকে থিসিস টা দ্রুত শেষ করতে হবে। তাই জব টা আর কন্টিনিউ করতে পারছি না, স্যার।
এমন আচমকা একটা সিদ্ধান্তে বস একটু নড়েচড়ে বসলেন। কিছুক্ষন থমকে থেকে বললেন,
-কোন দেশে ?
--বললাম
- কবে সেশন শুরু?
--স্যার এটা নির্ভর করছে কত দ্রুত আমি ইউনি তে আমার থিসিস টা শেষ করতে পারছি তার উপর।
- তাহলে তো একটু দেরি-ই হবে, এই কয়েক মাস এখানে থেকেই যাও।
( মনে পড়লো সপ্তাহ দু'এক আগে এমনি এক বিকেলে দ্রুত হাতের কাজগুলো শেষ করে এই রুমে ঢুকে অনুরোধ করেছিলাম- "স্যার, আজ আমার একটা মিডটার্ম এক্সাম আছে তাই একটু আরলি বের হতে চাচ্ছি"
উনি উত্তর দিয়েছিলেন এভাবে--
"দ্যাখ, অফিস চায় প্রোডাক্টিভিটি, তোমার কোন ক্যারিয়ার দেখতে পাচ্ছিনা এখানে, পরিক্ষা দিতে এসেছ তুমি? "
কান্না পেয়েছিলো ; আটকে গিয়েছিলো কন্ঠস্বর, নিজের উপর অভিমান করে যাইনি সেদিন।
আজ সিদ্ধান্ত টা নিতে পেরে কী এক প্রশান্তি ... যেন বুক ভরা দীর্ঘ শ্বাস...মুক্তির আস্বাদ...)
অথচ আজ যখন বললাম কোন দেশে আমার অফার ... শুনেই যেন অবিশ্বাস্য ঠেকল উনার কাছে। চোখ বড় করে বললেন
- বাহ!
কিভাবে এতোকিছু জানতে চাইলেন। GRE, TOEFL এতো কিছু করে ফেলেছি কিছুই জানতে পারলেন না কিংবা জানাতে পারেন নি ম'সাহেবি করা কয়েকজন অনুগত। কী অদ্ভুত!
- তুমি ভেবে দ্যাখনা আরো কিছুদিন আমাদের সাপোর্ট দেয়া যায় কিনা। এই দেশ থেকে সব ভালো ছেলেদের নিয়ে যাচ্ছে ওরা......।। ...।। ইত্যাদি কতো কিছু। আমি হাসি ।
হাসতেই থাকি। প্রশান্তির হাসি...।
কিছুক্ষনের মধ্যেই পুরো অফিস জেনে গেল আমি রিজাইন দিচ্ছি।
গতকাল পেলাম চিঠি টা। ...your resignation have been accepted and thank you for your contribution bla bla bla..
বুকের ভেতর টা একটু মোচড় দিয়ে উঠলো। মনে পড়ছে এই চাকরি টা পেয়েছিলাম বাবার মৃত্যুর কয়েকদিন বাদেই।
মরণব্যাধি লিভার ক্যান্সার এ আক্রান্ত হয়ে বাবা যখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ঠিক সে সময় ই আবেদন সময়সীমার শেষ দিনে এপ্লাই করেছিলাম।এতোদিন বাবার পাঠানো কষ্টার্জিত টাকাই ছিলো একমাত্র ভরসা। বাবার মৃত্যুর মাত্র কয়েকদিন পরেই রিটেন টেষ্ট এ প্রথম এবং দুটো মৌখিক পরিক্ষায় উত্তির্ণ হয়ে পেয়েছিলাম চাকরি টা। বাবার আশীর্বাদেই।
মনে পড়ে বাবার শেষ কথাগুলো--
"অনেকেই তো চাকরির পাশাপাশি পড়াশোনা করে। তোদের মানুষ করার জন্য আমি জীবন টাকে জীবন মনে করিনি । তোরা মানুষ হতে না পারলে ওপারে গিয়েও শান্তি পাবোনা আমি।"
বাবা আমায় ক্ষমা করো। হাত জোড় করে ক্ষমা চাই তোমার কাছে--- পারলাম না দুটোই এক সাথে । তবে মানুষ হওয়ার চেষ্টায় ব্রত এখন আমি । তুমি স্বর্গ থেকে আমার জন্য আশীর্বাদ কোরো...।। পরম করুণাময় সুখেই রাখুন তোমায়।
জগতের সকল হারিয়ে যাওয়া এবং বেঁচে থাকা বাবাদের জন্য উৎস্বর্গীকৃ্ত এই ভিডিওটি। আমার অসম্ভব প্রিয়। যতোবার দেখি ততোবার চোখ ভিজে যায় জলে।
এই ভিডিও টি প্রথম দেখেছিলাম আমার প্রিয় বন্ধু শামীম এর সৌজন্যে। ওর প্রতি কৃ্তজ্ঞতা। ও আজ আমায় ছেড়ে সুদূর টেক্সাস এ।