কৃষকের সাথে অনেক বছর পর যখন কথা হল, সে সূত্রে অন্য পুরোনো বন্ধুদের খোঁজ খবর ও পাওয়া গিয়েছিল। সেসব বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ হল, একসময় গত ঈদে আমরা একটা আড্ডাও দিয়ে ফেললাম। কৃষককে বলেছিলাম তুমি দেশে এলে আমরা আরেকটা গেট টুগেদার করবো, এখন তো অনেক গুলো বন্ধুর খোঁজ জানি, সবাইকে ডাকবো। কৃষক আমার আগ্রহ এবং আনন্দে একদম ঠান্ডা বরফ পানি ঢেলে দিয়ে জানালো..... "কোন দরকার নেই, আমি এখন পুরাপুরি ভার্চুয়াল, বাস্তব জগতে আমাকে আর পাওয়া যাবে না। তোমার গেট টুগেদার তুমিই করো।"
মেজাজ চরম গরম হলেও কিছু বলি নাই। যা খুশি করুক, তার ভার্চুয়াল থাকতে ভাল লাগলে আমার কি! আবার ঠিকই খবর নিবে কেমন আড্ডা হল, কে কোথায় কেমন আছে, কার বাচ্চা কাচ্চা কয়টা ইত্যাদি ইত্যাদি।
এর মধ্যে আমি বেশ ব্যস্তই আছি বলা চলে। তারপরও এক বৈদেশ ফেরত বন্ধুর উছিলায় আমরা আবার একখানা জটলা করার সুযোগ পেলাম। আগে ভাগে কৃষককে জানালামও সে কথা। আড্ডার দিন পুরোনো বন্ধুরা সব পুরোনো দিনের গল্প করছে......... ভার্সিটি লাইফের ফাঁকিবাজির কথা শুনতে যেয়ে হাসতে হাসতে চোখে পানি চলে আসছিল, এত সাধের কাজল গেল মুছে। যাক গে কাজল, এত মজার সময় তো আর পাওয়া যাবে না। আমার ভার্সিটির গল্প বলতে গেলে তো অবধারিত ভাবে কৃষক এর কথা চলে আসে........আমি বলছিলাম আমার ফাঁকিবাজির গুরু হল কৃষক, আমরা কি কি ফাঁকি দিতাম......। (অবশ্য সেদিন কৃষক মেসেন্জারে বলছিল সে নাকি সারাজীবন আমার বুদ্ধিতে চলতো, আমার অবাক হওয়া ছাড়া আর কি করার আছে!) আমাদের বন্ধুরা ১২-১৪ বছর পর দেখা, আমাদের সম্পর্কের ভাঙ্গনের পর এই প্রথম কৃষকের নাম আমার মুখে ওরা শুনলো, অথবা নিজেরাও বলল; ওরা হয়তো একটু অবাক ই হল।
আড্ডা চলার সময় কৃষককে এসএমএস করেছিলাম, কোন মুল্লুকে ছিল কে জানে, কোন রেসপন্স নাই। খাওয়া দাওয়ার পর সবাইকে আমাদের (কৃষক-কিষানীর) পুনরায় যোগাযোগের গল্পটা বললাম। সবাই অতীব আগ্রহের সাথে, পিনপতন নিরবতার মধ্য দিয়ে ঘটনা টা শুনলো। একবার মনে হচ্ছিল ব্লগে লেখা আমাদের মহাকাব্যটার কথাও বলে দিই। পরে ভাবলাম এটা তো আমার একার সম্পত্তি নয়, কৃষকের অনুমতি ছাড়া এটা কাউকে বলা ঠিক হবে না।
ফিরে এসে ছবিগুলো পিসি তে নেয়ার সময় দেখি কৃষক অনলাইনে আছে। তার সাথে আড্ডার গল্প এবং ছবিগুলো শেয়ার করলাম। সে দেখি কাউকেই চিনতে পারে না। বলে কোনটা কে বলে দাও। আমাকে বলল, আমি নাকি মটু হয়ে গেছি। আবার বলে লম্বা চুলগুলা কেটে ফেললাম কেন? আমি বলি সব সময় এক ফ্যাশন ভালো লাগে না, মাঝে মাঝে চেইন্জ করতে হয়। আমি বললাম সবাইকে অনেক কথা বলে দিয়েছি তবে ব্লগের কথা বলি নাই। আমাকে ফোড়ন কাটলো, আমি ভয় পেয়েছি কিনা। এই অপবাদের উচিৎ জবাব কিভাবে দেয়া যায় তাই ভাবছি।
এরপর দিন কৃষক নাকি স্বপ্ন দেখেছে, কক্সবাজার সমূদ্র সৈকতে সে আমার সাথে ঘুরতে গেছে। এইটা বলার জন্য ফোন পর্যন্ত করলো। আমি বলি ঘুরতে গেলা আর কি করলা? বলে সেইটা বলা যাবে না। (লজ্জায় লাল হবার ইমো হবে)।
(অনেক দিন কোন পোস্ট দেয়া হয় না..........তাই কৃষক-কিষাণীর জীবন যাপনের একটু আপডেট দিলাম...........কিষাণী)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০০৯ বিকাল ৪:০৩