দেশের আইন হিসেবে একজন অপরাধী গেপতার হবে এটা হওয়াই সাবাবিক পরীমণিকে নিয়ে লেখার কোনো সম্পর্ক নেই। পরীমণির গ্রেপ্তার ইস্যুতে মিডিয়া ট্রায়ালে অংশ নিতে চাইনি। নারী – পুরুষ হিসেবে বিভাজন করতে চাইনি। কেউ অপরাধী হলে নারী হিসেবে বিশেষ ছাড় পাবে এমন আশা আমি করি না।
কিন্তু একজন নারীকে ঘিরে পুরুষতান্ত্রিক অস্ত্রের যে নির্লজ্জ মহড়া চলছে তা চোখ আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যে, আমাদের সামাজিক অশিক্ষা আর অসুস্থতা একলা নারী এবং তার সৌন্দর্য যুগে যুগে সমাজের চক্ষুশূল।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে পরীমণি দেশের শীর্ষ অপরাধী! বিগত কয়েকদিনের টেলিভিশন এবং অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত খবর দেখে-শুনে-পড়ে পরীমণির অপরাধ সম্পর্কে যা জানতে পারলাম তা মোটামুটি এমন যে, পরীমণির বাড়িতে একটি মিনিবার আছে। সেই মিনিবার থেকে থেকে বিপুল পরিমাণ মদ এবং ভয়ংকর মাদক এলএসডি এবং আইস উদ্ধার করা হয়েছে।
এছাড়া “গ্রাম থেকে উঠে আসা”, “ক্লাসলেস, এতিম, অশিক্ষিত” পরীমণির সাড়ে তিন কোটি টাকার গাড়িতে চড়া, ফ্ল্যাটের আলিশান ইনটেরিয়র থেকে শুরু করে, দেশে বিদেশে পরীর আমোদ – প্রমোদ – ফূর্তি, ঘন ঘন স্বামী/পুরুষসঙ্গী পরিবর্তন, ব্ল্যাকমেইল, রাঘববোয়ালদের সাথে পরীর চলাফেরা, ওঠাবসা-শোয়ার গল্পে চারপাশে কান পাতা দায়। হওয়াও অনুচিত- সেটা না জানা বেশিরভাগ শিক্ষিত নারী-পুরুষকে রাতারাতি বদলে ফেলাও অসম্ভব।
তবে কি পরীমনি নারী বলেই তাকে কঠোরতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে – এই অভিযোগ মিথ্যা ?
না। অবশ্যই না।
আর এরজন্য দায়ী দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রীয়ভাবে নারীকে হেয় করার প্রচেষ্টা, তাকে পর্দার অন্তরালে রাখার চেষ্টা, আছে বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে রাজনীতিকরণ, রাজনৈতিক ক্ষমতা বলয় তৈরি করে পেশীশক্তির খেলা।
যখন দায়িত্বশীল কোন পুলিশকর্তা নারী হিসেবে পরীমনি সম্পর্কে অত্যন্ত আপত্তিকর একটি উপমা ব্যবহার করেন। যখন টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক বলেন, পরীমনি চৌদ্দশিকের ভেতরে যাবেন কোনদিন ভাবেননি।
রাতের রানী, মক্ষীরানী শব্দগুলো খুব জোর দিয়ে ব্যবহার করছেন দায়িত্বশীল লোকজন, তখন বোঝা যায় জবাবদিহিতা বলে তেমন কিছু নেই। আর এই অভিযোগের সত্যতা আপনাতেই মিলে যায়।
আর এইখানেই আমাদের আলোচনার ফোকাসটা থাকা উচিত। পরীমনি যদি মক্ষিরানী, তাহলে সেই মৌমাছিরা কই?
পরীমনি যদি রাতের রানী, তাহলে রাতের রাজাও নিশ্চয়ই আছে। তারা কোথায়?
সেই প্রশ্ন যে উঠছে না, তাও নয়। কিন্তু প্রশ্নগুলো হারিয়ে যাচ্ছে প্রবল জনসম্পৃক্ততার হট্টগোলে। এই প্রশ্নগুলো যাদের তোলার কথা ছিল তারা নিজেদের স্বার্থেই এ আমার লোক নয়, ইনি মডেল নন, ইনি অভিনয় শিল্পী নন, তার অপরাধের দায় আমরা নেব না, তার সদস্যবপদ বাতিল, সে কেন এমন করলো বলে পার পেতে চাইছেন।
প্রশ্ন তবে আমরাও করি, এই গা বাঁচাতে চাওয়া প্রতিষ্ঠান সংঘ বা ব্যক্তিরা তখন কোথায় থাকেন যখন এই মেয়েগুলি এইসব অপরাধে জড়িয়ে পড়তে থাকেন? পরীমনি, পিয়াসা, মুনিয়া, পাপিয়ারা তো গর্তে বসে বা ভিনগ্রহে বসে আপনাদের মত নিষ্পাপদের ভাষায় ‘ওইসব পাপ’ কাজকর্ম করেন না। যা করার একটু আড়াল রেখে সমাজে বসেই করেন। তখন সবাই চুপ করে থাকে কেন? কাদের ভয়ে, কোন লজ্জায়?
আর পরীমনিরা যাদের টাকায় এমন জীবন যাপন করে, তারাই বা কোন যোগ্যতাবলে সমাজের গণ্যমান্য থাকে? একই কাজ করে তাদের শরীর মন, সততা, ভদ্রতা কৌমার্য্য অক্ষুণ্ণ থাকে আর পরীমনিরা হয়ে যায় অসতী, অভদ্র, বেশ্যা?
আমরা বুঝি, সবকিছু রাজনীতিকরণের এই সময়ে তাদের গায়ে গা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে, তাদের টাকায় খেয়ে পরে তাদের বিরুদ্ধে যাওয়া যায় না। পরীমনিকে খেয়ে দিল যারা তাদের চিনলেও গালি দেয়া যায় না।
তাদের খুশি করতেই এই চুপ থাকা। তাদের বাঁচাতেই পরীমনিকে বেশ্যা বানাতে হয়।
তাদের পারপাস সার্ভ করতেই রাতারাতি পরীমনিকে বাতিলের ঝুড়িতে ফেলতে হয়।
এইজন্যই হয়তো সাধারণ মেয়ে স্মৃতির পরীমনি হয়ে উঠার গল্পটা শেষ হয় না। আর তাই অভিযুক্ত ব্যক্তি নারী বলেই তার উপর খড়্গ নেমে আসছে কীনা এই প্রশ্ন তোলা জরুরি হয়ে যায়।
তখন প্রকৃত ঘটনার চেয়ে, প্রকৃত অপরাধ ও অপরাধীর চেয়ে মুখ্য হয়ে যায় সেই চিরকালীন ভালো নারী মন্দ নারী বিতর্ক।
পরীমনি অপরাধ করেছে কী করেনি সেটি দেখবে দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থা।
অপরাধ করলে যে কেউ আটক হতেই পারে। নারী বা পুরুষ যেই হোক মাদক ব্যবসা করলে, বাণিজ্যিক ভাবে ঘরে নিয়মিত জুয়ার আসর বসালে, ঘরে বার খুলে অবৈধভাবে আনা মদ খাওয়ানোর ব্যবসা করলে, মানববিধ্বংসী মাদকের চোরাকারবার করলে, অন্য নারীদের দিয়ে জোরপূর্বক বা ফাঁদে ফেলে দেহব্যবসা করালে সে অবশ্যই অপরাধী গণ্য হবে। আইনেও আছে তা।
সেক্ষেত্রে নারী নাকি পুরুষ এটা দেখার সুযোগ নেই।
এসব ক্ষেত্রে নারী বলে কাউকে পার পাইয়ে দেয়া যেমন অন্যায় তেমনি নারী বলেই তার অপরাধ হাইলাইট করাও আরো বড় অপরাধ হবে।
পরীমনির ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে এই শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
পরীমনির কাছে মদ ছাড়াও দেশে নিষিদ্ধ ভয়াবহ মাদক পাওয়া গেছে। আর এখন জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া যাচ্ছে দেশের সৎ, চরিত্রবান, ধার্মিক, অবুঝ নাক টিপলে দুধ বের হয় এমন কিছু পুরুষদের নামধাম। যাদের পরীমনি জোর করে বস্ত্র খুলে নিয়েছেন। বাধ্য করেছেন মদ খেতে, জুয়া খেলতে, এবং কিছু শরীরচর্চা করতে। পরীমনি উচ্চশিক্ষিত, নিজেকে সমাজে ভদ্রলোক বলে জাহির করা ব্যাংকার, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সফল ব্যবসায়ীদের ধরে ধরে নিয়ে গিয়ে ইজ্জতে হামলা করেছে আর এখন যখন ভাগে কম পরলো হয়ে গেল পরি মনি সমাজের নষ্ট কিট। তাহলে পরী কেন একা এ দায় বহন করবে । সমাজে এই মুখুশদারি কিট দের আইনের আওতায় এনে দেশের ডানাকাটাপরীদের দের সচেতন করা রাষ্টের দায়িত্ত । না হলে ঘরে ঘরে নারীদের হতে হবে পরীমনি. মনিয়ার মত রাতের রানী।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০২১ সকাল ১০:৫৫