পহেলা বৈশাখে এবার সারাদিন বাসায় বসে কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। গত ১০ বছরের মধ্যে এবারেই প্রথম এই বাসায় বসে থাকার সিদ্ধান্ত। কেন যেন খুব ক্লান্ত মনে হচ্ছিল, বাইরে বের হতে ইচ্ছে করছিল না।
কিছু বন্ধু আছে যাদেরকে আমি যদি কবরেও ডাকি তারা বোধ হয় দ্বিধাহীন চিত্তে চলে আসবে। আমার বাসাটা নিঃসন্দেহে কবরের চেয়ে ভালো জায়গা। বিস্ময়করভাবে আমার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ চারজন বন্ধুই রাজি হয়ে গেল পহেলা বৈশাখে সারা দিন আমার বাসায় কাটাতে, লাঞ্চ করতে এবং বিকেলে একটু ঘোরাঘুরি করে বাসায় ফিরে যেতে।
পান্তার আয়োজন করি নি, তবে ইলিশ ছিল একটা মাঝারি আকারের। ভাত এবং পোলাও উভয়ই ছিল। ছিল মুরগি, সবজি, ডাল, শুটকির ভর্তা (এটা আমার একজন বন্ধুর বিশেষ অনুরোধে) আর কোল্ড ড্রিংকস। বাঙালিয়ানা খুব বেশি দেখানো হয় নি।
গান শোনা, গল্প করা - এই দুই বাদে আমরা আর কোন কাজই করি নি। কলেজ জীবনের স্বর্ণালী স্মৃতি আমাদের প্রায়ই হানা দিচ্ছিল। আজ আমরা ছিটকে পড়েছি নানা জায়গায়, তবু আত্মার বন্ধনটা এখনো আছে। আমরা এখনো আকজন আরেকজনের কাছে এলে ছেলেমানুষের মত স্বপ্নে বিভোর হয়ে উঠি, বাস্তব জীবনের নানা জটিলতা ভুলে যাই নিমিষেই।
বিকেলে রোড পড়ে এলে আমরা একটু ঘোরাঘুরি করি, বন্ধ করে রাখা মোবাইল ফোনটা অন করি তখনই। দেখি প্রায় গোতা পঁচিশেক ম্যাসেজ, তার প্রায় সবই ইংরেজি হরফে বাংলা লেখা নববর্ষের শুভেচ্ছা।
কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটির পর সন্ধ্যা নেমে এলে ওরা চলে যায় সবাই একে একে। একলা আমি বাসায় ফিরে আসি। শূন্য ফ্ল্যাটের নির্জনতা আমাকে গ্রাস করে। আমার সামনে আমার বাকি জীবন, পুরোনোকে ভুলে নতুন করে শুরু করা জীবন। এই বোধটা আমার মাঝে এক ধরনের সস্তির সঞ্চার করে।
সবাইকে জানাই নববর্ষের শুভেচ্ছা।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০০৯ রাত ৮:১৬