সন্ধ্যায় শত শত পাখির কিচির মিচির আওয়াজে কান ঝালাপালা হয়ে যায়। আমার ঘরের জানালার ঠিক পাশেই এক বিশাল গাছ, তার নামটা জানা হয় নি আজও। চারপাশের এত বিল্ডিঙের ফাঁকে গাছটা কিভাবে যেন বেঁচে গিয়েছে রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলোর হাত থেকে। মানুষের বসবাসের জন্য নীড় তৈরি করতে গিয়ে পাখিদের থাকার জায়গার অভাব শুরু হয়েছে এই শহরে। কিন্তু তা নিয়ে কারো মাথা ঘামানোর সময় নেই। আমারো যে খুব সময় আছে, ব্যাপারটা সেরকম নয়। প্রতি সন্ধ্যাতে কিচির মিচির আওয়াজের হাত থেকে বাঁচার জন্য যদি আমাকে জানালা বন্ধ করতে না হত তাহলে আমিও হয়তো ব্যাপারটা নিয়ে মাথা ঘামাতাম না।
ঘুমুতে ঘুমুতে আমার সাধারণত রাত দুটো পার হয়ে যায়। সকালে আমাকে বাসের লাইনে দাঁড়াতে হবে না, অন্তত আরো দু সপ্তাহ - এই ভাবনা, এই সুখ আমাকে রাতে জাগিয়ে রাখে। গান শুনি, বই পড়ি, ব্লগের পুরোনো পোস্টগুলো দেখি। মনে হয়, আহা, কি স্বর্ণালী সময়ই না কাটিয়েছি! অতীতের স্মৃতিচারণের মাঝেই আমার রাতের একাকী নির্জন সময়টা কেটে যায়। মোবাইলে মাঝে মাঝে মিসকল আসে, আমার কলেজ জীবনের বন্ধুদের কাছ থেকে। তাদের ভাষ্যমতে এই মিসকল হল তারা যে আমাকে মিস করছে তার বহিঃপ্রকাশ। আমাকেও তাই তার জবাব দিতে হয়।
ফোনে কথা বলার যে কেউ নেই তা নয়। ছিল একাধিক। কিন্তু আমার শীতল আচরণ তাদের দূরে ঠেলে দিয়েছে। কোন ধরনের ভণ্ডামি আমি মেনে নিতে পারি না, এই ভণ্ডামির যুগে এটি নিঃসন্দেহে একেবারে সেকেলে একটি ধারণা। তাই এই সেকেলে মানুষের ধারেকাছে কেউ পারতপক্ষে ঘেঁষে না। সৌভাগ্যক্রমে জীবনে চলার পথে আমি আমার মতই সেকেলে কিছু মানুষের দেখা পেয়েছি। আমার একাকীত্ব কিছুটা হলেও ঘুচেছে তাদের কারণে।
আমার মনে হয়, চারপাশের হাজার হাজার বিল্ডিং আমাদের কোন বাসস্থান দিতে পারছে না। আমরা মনে মনে যেন এখনো নিজের জন্য একটা নীড় খুঁজে বেড়াচ্ছি। অনেকটা ঐ উদ্বাস্তু পাখিগুলোর মতই।