এ বছর বৃষ্টি এল অনেক দেরিতে। আমি প্রতীক্ষায় ছিলাম তার আসার। সে তো এলোই, উপরি হিসেবে নিয়ে এল তার নাক উঁচু বান্ধবী শিলাকে নিয়ে। আমি শিলাকে পছন্দ করি না। অপছন্দ করার কারণটাও খুব সহজ - সে কি এমন বিশিষ্ট গণ্যমান্য ব্যক্তি যে তাকে এত হিসেব করে আসতে হবে! বৃষ্টির মত কেন সে আমার সাথে সহজে মিশতে পারে না?
শিলা সঙ্গে থাকায় আমি বৃষ্টিটা তেমন উপভোগ করি নি। বাসার পেছনের বারান্দা দিয়ে ছিটকে ছিটকে শিলা আসছিল। ঘরের ভেতরে তার অনুপ্রবেশ ঠেকাতে দরজা বন্ধ করতে বাধ্য হলাম। কিছুই করার ছিল না। ইলেকট্রিসিটি নেই, আইপিএস দিয়ে লাইট ফ্যান চলছে। বজ্রের ভয়ে টিভি চালানো যাচ্ছিল না। ও, বলতে ভুলে গেছি - বজ্র হচ্ছে শিলার বদমেজাজী বয়ফ্রেন্ড। ওকেও আমি পছন্দ করি না।
পিন পিন করে চারদিকে মশা উড়ছিল, জানালার কাঁচে তারা ঠোক্কর খাচ্ছিল। বুঝতে পারি, ওরা বের হতে চাইছে। আমার মত তারাও অনেক দিন ধরে এই দিনটির প্রতীক্ষায় ছিল। আজ শহরের আনাচে কানাচে পানি জমে থাকবে। সেখানে স্ত্রী মশারা ডিম পাড়বে। সিটি কর্পোরেশনের ভেজাল মশার ওষুধে তাদের বংশবৃদ্ধি ব্যাহত হবার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
আমি জানালার কাঁচ খুলে দেই, সাথে সাথে বৃষ্টি এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে। তার ভাবটা এমন - এতক্ষণ কোথায় ছিলে? আমি তার প্রশ্নের জবাব দেই না। শুধু নীরবে তার দিকে তাকিয়ে থাকি। সে এসেছে আজ তার সমস্ত শক্তি নিয়ে, ধুলোয় ঢাকা শহরের ধূসর পাতাগুলোকে সবুজ করার দৃপ্ত প্রত্যয় তার চোখে মুখে। আমি মনে মনে তাকে অভিনন্দন জানাই।
বলি, "বৃষ্টি, আমি তোমাকে ভালবাসি। অজস্র প্রেমিকের ভিড়ে আমাকে তোমার নজরে পড়বে কিনা জানি না। কিন্তু আমি তোমার অপেক্ষাতেই ছিলাম, আছি এবং হয়ত থাকব সারা জীবন!"
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মার্চ, ২০০৯ দুপুর ১২:২৫