বাংলাদেশের টিভি চ্যানেল বা খবরের কাগজ দেখলে মনে হবেনা পৃথিবীতে ব্রডকাস্টিং ল বলে কোন জিনিসের বালাই আছে । তাজা রক্ত, নগ্ন লাশ, আলাদা হয়ে যাওয়া শরীরের বিভিন্ন অংশ, কাটা মুন্ডু হেন কিছু নাই যা টিভিতে দেখানো হয়না আর হেন কিছু নাই যা খবরের কাগজগুলো ছাপেনা ।
খবরের জন্য সংবাদকর্মীদের সবসময় পাবলিক ইন্টারেস্ট বলে একটা ফ্যাক্টরের দিকে খেয়াল রাখতে হয় তা না মেনে গতি নাই কিন্তু "বৃহত্তর স্বার্থ" বলেও তো বিপরীতমুখী আরেকটা ফ্যাক্টর আছে সেটার ধার কেউ ধারছেননা ।
এই মুহুর্তে জাতি হিসেবে আমরা যে মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছি সেটা বোঝার জন্য কাওকেই এরিস্টটল বা প্লেটো হতে হচ্ছেনা । আজকালকার জেনারেশন তো কে কতটা ভায়োলেন্স সহ্য করতে পারে, দেখতে পারে সেসব নিয়েও রীতিমত কম্পিটিশনে যাচ্ছে । কদিন আগে দেখলাম এক বাহাদুর বাচ্চা ট্রেনের নিচে গা বাঁচিয়ে শুয়ে থেকে নিজের বাহাদুরি প্রমাণ করে দেখাল এবং আহ্লাদী জনতা তাকে বাহবা দিয়ে ‘আরো কর’ টাইপ একটা উৎসাহও দিল । রাজন হত্যার সময় খুনীরাই ভিডিও করে মানুষের ঘরে ঘরে সেটা পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব নিল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিপুল জনতা সেটা শেয়ার করে মেকি কান্নাকাটি জুড়ে দিল । প্রোফাইল পিকচার, কভার ফটো চেইঞ্জ করে বিশাল প্রতিবাদী ঝড় তুলে ফেলল ।
সর্বশেষ, তনুর ভাল্লুক কর্তৃক জখম হওয়া, মুখে বুকে কাটা নমুনাসহ অর্ধনগ্ন ছবি ফেইসবুকে এতই ভাইরাল হয়েছিল যে আমি রীতিমত রাত্রে ঘুমানোই ছেড়ে দিয়েছিলাম ।
বিষয়টা আসলে কি দাঁড়াচ্ছে, ভিডিও ছাড়া আমাদের মানবিক হা-হুতাশ আসেনা ! কেউ কাওকে পিটাচ্ছে দেখলে ছাড়ানোর চেয়ে ভিডিও করে অনলাইনে ছেড়ে দেয়াটাই বেশ কলিজাওয়ালার কাজ ! আর এসব কলিজাওয়ালাদের টার্গেট অডিয়েন্সও বানের মত বাড়ছে, এ বান ঠেকানোর সাধ্য কারো নাই ।
সিনেমার ভায়োলেন্স দেখতে দেখতে আগেই সব চোখ সওয়া হয়ে যাচ্ছে, বাকি ব্যক্তিজীবনের ভায়োলেন্স সে হিসেবে হিউম্যান ইন্টারেস্টই হবার কথা ।
যেখানে ব্রডকাস্টিং ল এর এমন ছ্যাড়াব্যাড়া অবস্থা সেখানে সোস্যাল মিডিয়া নিয়ে চেঁচিয়ে কীবোর্ড ক্ষয় করে কোন কাজের কাজ হবেনা জানি । ওদিকে ঘোষনা হয়ে গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের থেকে বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি অধিকতর উন্নত । আমেরিকায় ১ দিনে যে পরিমান খুন হয়, বাংলাদেশে ১ মাসেও সেই পরিমান খুন হয় না ।
সুতরাং গুম, খুন, হয়রানি কিছুই কিছু না । আরো বেশি করে মারামারি কাটাকাটির ভিডিও ভাইরাল হোক, ভায়োলেন্স ছড়িয়ে পড়ুক স্ক্রিন থেকে স্ক্রিনে, ঘর থেকে ঘরে, মানুষ থেকে মানুষে, খুন হতে থাকুক মানবতা, দ্রুত গতিতে কমতে থাকুক জনসংখ্যা । ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উপনীত হোক, বেড়ে যাক মাথাপিছু আয় ।
আমরা সকলেই ভাল আছি ।