somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপরাধীর সম্পত্তি ক্রোক, জবরদখল, তারপর বিতরণ!

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকাল আমাদের বিভিন্ন মন্ত্রীমহোশয়গণ কিছু কথা বলে যাচ্ছেন নিজেদের মনমতো, এরকম কথা শাহবাগের দ্বিতীয় মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মও বলেছেন। যুদ্ধাপরাধীদের সম্পত্তি, প্রতিষ্ঠান ক্রোক করতে, তাদের সম্পদ কেড়ে নিতে ইত্যাদি ইত্যাদি। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করতে গিয়ে নিজেরাই নিজেদের অজান্তে হানাদার বাহিনীর প্রতিরূপ হয়ে উঠছি, তা কি আমরা লক্ষ্য করছি? ৭১-এ গ্রামকে গ্রাম জ্বালিয়েছে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীরা। কোন গ্রামে গেছে কোন মুক্তিযোদ্ধার খোঁজে, না পেলে তার পরিবারের লোকজনকে হত্যা করেছে, পরিবারের মেয়েদেরকে নির্যাতন করেছে, যদি টের পায় ওই গ্রামের সবাই কোন না কোনভাবে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করছে, তবে তো কথাই নেই, পুরো গ্রামই জ্বলে পুড়ে ছারখার! মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি অনেক নিরীহ জেলে, কৃষক, শ্রমিক, তাঁতী, গরিব খেটে খাওয়া মানুষগুলো তাদের ভিটেমাটি হারিয়েছে, কোন কোন পরিবার গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে, ফিরে এসে আর কিছুই পায়নি। অনেক হিন্দু পরিবার ভয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে, তাদের অনেকেই ফিরে এসে নিজেদের ভিটা বেদখল পেয়েছে। ৭১-এ ছেড়ে যাওয়া এসব ভিটেমাটি রাজাকারেরা ভোগ দখল করলেও পরবর্তীতে অনেক আওয়ামী লীগ বা অন্যান্য অসহায় পরিবারগুলো এতে আশ্রয় নিয়েছে, এটা সহজেই প্রতীয়মান।
তাই আজ মনের ক্ষোভ মেটাতে কেবল জামায়াতের অভিযুক্ত অপরাধী নেতাদের সম্পত্তি কোন সুবিবেচনা না করেই ক্রোক করে নিবেন, এটা মোটেও কোন যৌক্তিক পন্থা হবে না।
১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের পরে পাকিস্তানের ডিফেন্স অর্ডিয়েন্সের মাধ্যমে ৬৫ সাল থেকে ৬৯ সাল পর্যন্ত যেসব হিন্দু ভারতে চলে গিয়েছিল তাদের সম্পত্তি অধিগ্রহণ করা হয় ‘শত্রু সম্পত্তি আইনে’। ১৯৭৪ সালে দেশ স্বাধীন হবার পর এটি বদলে হয় ‘অর্পিত সম্পত্তি আইন’। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশেও হিন্দুরা তাদের সম্পত্তি তো ফেরতই পায়নি বরং ২০১১ সালের আগ পর্যন্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক সরকারের দলীয় লোকেরা এসব সম্পত্তি ভোগদখল করেছে। বৃটিশ ভারতে বৃটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী সূর্যসেন থেকে শুরু করে ৫২-র ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা রাখা ধীরেন্দ্রনাথ মন্ডলের সম্পত্তি পর্যন্ত সরকার অধিগ্রহণ করেছে। অবশেষে ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার এই আইনটি বদলে ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন’ করে এবং এর মাধ্যমে বর্তমানে অনেক হিন্দু পরিবার তাদের ভিটেমাটি ফিরে পেয়েছে, যেমন সূচিত্রা সেন।
https://www.amarblog.com/adilmahmood/posts/146595
এখানে লক্ষ্যণীয় দেশ স্বাধীন হবার পরে ৭১-এ বেদখল হওয়া জমি, সহায়-সম্পদ ভিক্টিমদের ফেরত দেয়া নিয়ে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি, যদিও যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য কয়েক হাজার মামলা হয়েছে দফায় দফায়। পাকিস্তান সরকারের কাছ থেকেও ক্ষতিপূরণ আদায়ের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তাদের ১৯৮জন যুদ্ধাপরাধী অফিসারদের ত্রিদেশীয় চুক্তির মাধ্যমে বলা চলে একপ্রকার ছেড়েই দেয়া হয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধে এদেশে আটকে পড়া পাকিস্তানী বা বিহারীদের কোন বিচারের মুখোমুখি করা হয়নি দালাল আইনে। কেবলি যত দোষ নন্দ ঘোষ জামায়াতীরাই এবং গোলাম আজমগং!
আমরা এ সরকারের গত আমলে খালেদা জিয়াকে দেয়া সরকারী বাড়ি সরকারকেই ফেরত নিতে দেখেছি। এর আগে বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের মালামালও ক্রোক করতে দেখেছি। এ টার্মে দেখছি সংসদ ভবনের মূল নকশায় কবরের ডিজাইন নাই বলে জিয়ার কবর সরানোর তোড়জোড়ও চলছে, কিন্তু মূল নকশায় ন্যাম ভবনও নাই। এই বিরোধীদলের সম্পদ কেড়ে নেয়া একটা জিঘাংসা চরিতার্থ করা ছাড়া আর কিছুই নয়। এখন আমাদের মন্ত্রীরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে, মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসন করার নামে বিরোধীদের সম্পদ দখলের হীন চিন্তায় মেতেছে। যদি তর্কের খাতিরে ধরে নেই ৭১-এ রাজাকারেরা মুক্তিযোদ্ধা বা সাধারণ জনগণ বা হিন্দুদের সম্পত্তি বেদখল করেছে, তাহলে যুদ্ধপরবর্তী সময়ে অনেক যুদ্ধফেরত মুক্তিযোদ্ধা বা অসহায় পরিবারগুলো যেসব পরিত্যক্ত বাড়িতে বা জমিতে আশ্রয় নিয়েছে তাদের কি হবে? আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগের যুদ্ধাহত নেতা কর্মীরা এরকম ভোগদখল করে থাকলে তাদের বেলায় কি হবে? এ নিয়ে কি একটা বিস্তারিত জরিপ হবে, যে ৭১-এ জমির মালিক কে ছিল, এখন কে আছে এসব নিয়ে? নাকি কেবল মানবতাবিরোধী হিসেবে অভিযুক্তদের অর্জিত সম্পদও আপনারা কেড়ে নিবেন? এটা কি সুবিচার হবে নাকি পাকিস্তানী আর্মিদের বা রাজাকারদের মতোই আচরণ করা হবে? তাহলে আমরা কি ধরণের অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়েছি? দাবী করবেন, অনেক মুক্তিযোদ্ধা এখন ভিটে মাটি হারিয়ে অসহায়? তাদের জমিগুলো বা বাড়িগুলো কারা দখল করেছে সেটা সম্বন্ধে বিস্তারিত জেনেই তবে সে সম্পদগুলো উদ্ধার করে দিন। আর তাদের যদি সেরকম সম্পত্তি না থেকে থাকে তাহলে সরকারী খাস জমিগুলোতে তাদেরকে ঠাঁই দিন। কেবলি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে কোন অযৌক্তিক উদ্যোগ নেবেন না দয়া করে, প্রয়োজন হলে এ ব্যাপারে সরেজমিনে ভূমিজরিপ করে ‘সম্পত্তি প্রত্যর্পণ ও মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন আইন’ করুন। অন্যায়ভাবে কারো সম্পত্তি ক্রোক হলে সেটা আবারো নতুন করে অবিচারের সূচনা করবে।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৪২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৭.৬২ MM গুলি উদ্ধার। ব্রিগ. সাখাওয়াত ঠিকই বলেছিলেন।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৩ ই মার্চ, ২০২৫ ভোর ৪:৫৫


*২০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ*

রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর এলাকা থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ২০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে ডিএমপির উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ।

উত্তরা পশ্চিম থানা সূত্রে জানা যায়, আজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কামাল আতাতুর্ক: ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুন ও স্বকীয়তা ধ্বংসকারী এক বিতর্কিত শাসক

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৩ ই মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১২:৪২

কামাল আতাতুর্ক: ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুন ও স্বকীয়তা ধ্বংসকারী এক বিতর্কিত শাসক

তুরষ্কের বিখ্যাত আয়া সোফিয়া মসজিদের ছবিটি অন্তর্জাল থেকে সংগৃহিত।

মুস্তাফা কামাল আতাতুর্ক (১৮৮১-১৯৩৮) তুরস্কের ইতিহাসে এক প্রভাবশালী ও বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব। তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=স্নিগ্ধ প্রহর আমার, আটকে থাকে স্মৃতিঘরে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মার্চ, ২০২৫ দুপুর ২:০০


কিছু স্নিগ্ধ প্রহর স্মৃতির ঝুলিতে বন্দি রাখি,
শহরের ক্লান্তি যখন ঝাপটে ধরে,
যখন বিষাদ ব্যথা আঁকড়ে ধরে আমায়,
স্বস্তি শান্তি দিয়ে যায় ফাঁকি
ঠিক তখনি উঁকি দেই স্মৃতিঘরে,
মুহুর্তেই সময় পরিণত হয় সুখ... ...বাকিটুকু পড়ুন

নাজলী নামের মেয়েটি

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ১৩ ই মার্চ, ২০২৫ দুপুর ২:০৫

"নাজলী এখন ভালো আছে"

নাজলীর অসুখ করেছে, আকাশ পাতাল ভাবনায়
ডুবে আছে মেয়েটি।
ঢাকা শহরের উদাস হাওয়া,এলোমেলো পাগলা মিছিলের
আওয়াজে প্রকম্পিত চারদিক, তবুও ভালো আছে নাজলী নামের
মেয়েটি।

গুমোট নগরে
দু:খবোধ জন্ম নেয়, জন্ম নেয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমা করো মা'মনি

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৩ ই মার্চ, ২০২৫ দুপুর ২:২৩

এখন অনেক রাত। বিছানায় শুয়ে শুয়ে আইপ্যাডে নিউজ পড়ছিলাম আর সেহরির অপেক্ষা করছি। মাগুরার ছোট্ট শিশুটির হাসপাতালে জীবন-মরন যুদ্ধের খবর বিভিন্ন পত্রিকায় দেখছিলাম। মন থেকে চাইছিলাম মেয়েটি সুস্থ হয়ে যাক।

আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×