এক সপ্তাহের ঝলমলে রোদেলা দিন শেষে আবারো শুরু হলো ব্র্িষ্টি। রাত থেকেই থেমে থেমে দমকা হাওয়া আর একঘেয়ে ঝরঝর ব্র্িষ্টি। বারান্দায় কাপড়গুলো শুকিয়েছিল। সন্ধ্যায় তুলে আনা হ্য়নি, রাতের ব্রিষ্টিতে সেগুলো আবারো ভিজে গেল। শাওয়ালের রোজা রেখে ক্লান্ত অধরা খুব ভোরে ঘুম থেকে জেগে তাড়াহুড়ো করে তুলে আনলো আধভেজা কাপড়গুলো। ঘরের ভিতরে ফ্যানের বাতাসে চেয়ারের উপর ছড়িয়ে রাখলো দ্বিতীয়বার শুকনোর জন্যে। এরপর ভোরের নামাজ প্রশান্ত চিত্তে পড়ে নিল। ব্রিষ্টি আবারো কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলো আলস্যে। পাশে তার মেয়ে ঘুমিয়ে আছে, একনজর সেদিকে চোখ বুলালো। তার গায়েও কাঁথা এলিয়ে দিল অধরা। মেয়ে গড়িয়ে এসে মাকে জড়িয়ে ধরলো। পরম ত্র্প্তিতে মাও জড়িয়ে ধরলো মেয়েকে। একসময়ে চোখ বুজে এলো নিরবে। ছুটির দিনের সকালের এই মিষ্টি ঘুম উপভোগ করে মা-মেয়ে দুজনেই।
আটটা বাজতেই তড়িঘড়ি করে উঠে গেল অধরা। নাস্তা বানাতে হবে। মুখ ধুয়ে ছাতা মাথায় বেরিয়ে গেল। দোকান থেকে দুধ আর ডিম কিনে ফিরলো। ঢাকা শহরে ব্যস্ততা সবসময়েই, ভাবলো অধরা। এই ব্রিষ্টিতেও সকাল সকাল সবাই দোকান খুলে বসে আছে, যদিও ক্রেতা কম।
মেয়েকেও ঘুম থেকে জাগালো। রুটিাসেঁকে, লাচ্ছা সেমাই রান্না করে নাস্তা সারতে না সারতেই চলে এলো মেয়ের ইংরেজীর শিখ্খক।
রাতের বেলাতেই বুটের ডাল দিয়ে খাসীর মাংস কষিয়ে রেখেছিল অধরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন অবস্থায় সায়েন্স ক্যাফের দুপুরের খাবারের মেনুতে এটা ছিল অধরার খুব প্রিয় খাবার। নাস্তা সেরে আবার সেটাই বাকীটুকু রাঁধতে বসলো অধরা। ব্রিষ্টি দেখে খিচুরী রান্নার একটা ঝোঁক চাপলেও মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললো সে। মাত্র দু চার দিন আগেই খিচুড়ী রান্না হয়েছে বাসায়। আজ আবার খাসীর মাংস। একসাথে এতো ভারী খাবার খেতে চাইলো না, লোভটুকু সামলে নিল। এমনিতেই দিনে দিনে ওজন বেড়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই ৭০ কেজি ক্রস করেছে ওজন। আর না বাড়ুক।
দুপুরের রান্না বান্না সেরে মাকে ফোন করে খোঁজ খবর নেয়। মা তার মফস্বলে থাকে, বাবা মারা গেলে তিনি একা হয়ে গেছেন। তবুও চাকুরীজীবি হবার কারণে ঢাকায় ছেলেমেয়েদের সাথে এসে থাকা হয় না মায়ের। অধরা মাঝে মাঝে গিয়ে মাকে দেখে আসে, মায়ের জন্য তেমন কিছুই করা হয়না তার। এটা নিয়ে নিজের মনে মনে আফসোস আছে তার। মাঝে মাঝে কিছু আর্থিক কাজে সহায়তা করে এতোটুকুই। মায়ের স্বাস্থ্যের খোঁজ খবর নেয়। মা তার যথেষ্ট কর্মঠ! এই সকালেই তিন নম্বর সতর্কতার মাঝেও ছাদে গিয়ে নিজ হাতে তৈরী সবজি বাগানের যত্নআত্তি নেয়। নিজের একাকি জীবন এভাবেই ব্যস্ত রাখেন মিসেস আনজুম।
জানালা দিয়ে উঁকি দিল অধরা। টিপ টিপ ব্র্িষ্টি ঝরেই চলেছে, সেই সাথে একটু একটু দমকা হাওয়া...