আজকের বাংলাদেশ প্রতিদিনে তসলিমার লেখাটা মূলত বামদের নিয়ে। কিন্তু সেখানে দুটো লাইন কোট করার মতো, কিছু কিছু সমালোচনা ইতিবাচক,
"ইসলামী মৌলবাদীরা রাষ্ট্রকে আক্রমণ করে না, আক্রমণ করে সাধারণ মানুষকে। দেশে দেশে নিরীহ জনগণ হত্যা করে চলেছে। আমেরিকার সরকারকে নয় (টুইন টাওয়ার আক্রমণ প্রসঙ্গে বলা), তারা মুসলিম দেশগুলোতে মুসলমানদের জেনে বুঝে ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিতভাবে হত্যা করছে।"
"তারা যদি গরীব্দের দান করে, এ দানের পিছনের উদ্দেশ্যটি এই নয় যে তারা দরিদ্রদের দারিদ্র্য ঘোচাতে চায়। তারা নিজের পরকালের আরাম আয়েসের ব্যবস্থাটি পাকা করতে চায় মাত্র।"
এ কথা দুটো খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। সত্যিই আমরা দান করি কিছু রিটার্ন পাবার আশায়, এটা আমাদের অনেকের মস্তিষ্কেই অবচেতনমনে গেঁথে গেছে। অনেক বিজ্ঞজনের সাথে মুসলিমরাও আজকাল আধুনিক মত ধারণ করছে যে, "'নাথিং' গোস আনপেইড"। "এভ্রিথিং শুড হ্যাভ সাম রিটার্ন্স।"
সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে মুসলিমদের ব্যাপারে আবারো নতুন করে ভাবছি, দাবী করি আমরা ভাল। সত্যিই ভাল তো?
মাওলানা ফারুকীর অতিমাত্রায় সুফীবাদে বিশ্বাস, ফানাফিল্লাহ নিয়ে কথাগুলো বেশিরভাগ আলেমের কাছেই শিরক পর্যায়ের গোনাহ। এর জন্যে কি আল্লাহই যথেষ্ট ছিলেন না? আল্লাহ তাআলা বলেছেন, শিরকের শাস্তি আমি নিজে দিব। আরো একটি হাদীসে আছে, কোন ব্যাক্তি যতক্ষণ বলে আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, ততক্ষণ পর্যন্ত তার জান মুসলিমের জন্য হারাম। (মুসলিম) আমি আশংকায় ভুগি যে মাওলানা ফারুকির হত্যাকারী হিসেবে কোন ইসলামী গোষ্ঠী দায়ী না হয়।
পত্রিকা মারফত জানলাম ইরাকে আইএসএস ইয়াজিদী বিধর্মী নারীদের জোরপূর্বক অপহরন করে আইএসএস যোদ্ধাদের কাছেই বিক্রি করছেন বিয়ে করার জন্যে, এসব নারীদেরকে জোর করে ধর্মান্তরও করানো হচ্ছে। কোথায় পেয়েছে এমন যুদ্ধনীতি? রাসূলের(সঃ) যুদ্ধনীতি কি তাই ছিল? তিনি কি পরাজিত ইহুদী নারীদের জোর করে তুলে এনেছেন? বিক্রি করেছেন? হ্যাঁ, শত্রুপক্ষের সব পুরুষদের যখন চুক্তিভঙ্গের দায়ে মেরে ফেলা হয়েছিল, তাদের নারীদের যুদ্ধবন্দি হিসেবে নিয়ে এসেছিলেন, এটা খুব স্বাভাবিক বিষয় যে তাদের দেখাশোনা করার মতো কোন গোত্রীয় পুরুষ বেঁচে ছিল না। মুসলিমরাই হয় স্ত্রী হিসেবে বা দাসী হিসেবে তাদের দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছিলেন। আইএসএস কি দাবী করতে চায় যে ইয়াজিদী নারীদের ক্ষেত্রে বিষয়টা একই রকম??
চট্টগ্রামের বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনে এবং শিক্ষকদের বাসে বোমা হামলা হয়েছে, পত্রিকায় এসেছে এগুলো শিবিরের হামলা। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেই যে বাসের আরোহীদে সবকজন আওয়ামী লীগার ছিলেন, একজনও সাধারণ শিক্ষক বা ছাত্র-ছাত্রী ছিল না, যদিও সেটা অসম্ভব, তবুও বলি শিবিরের আন্দোলন-প্রতিবাদ কখনোই গণতান্ত্রিক দেখিনি। যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনা-প্রতিক্রিয়া শুরুর পর থেকেই তাদের আচরণ লক্ষ্য করছি, তার আগে সেভাবে তাদেরকে পর্যবেক্ষণ করিনি। গত পাঁচ-ছয় বছরে তাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলন কম দেখেছি। এদিকে বামদলের ছেলেদের কার্যক্রম প্রশংসনীয়। আমাদের ছাত্রথাকাকালীন অবস্থায় দেখেছি শিক্ষকদের কোন অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ করতে হলে তারা সাধারণ ছাত্রের ব্যানারে সাধারণ ছাত্রদের নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে, শিবির সেটা খুব কমই পারে, যদিও তাদের দলীয় কর্মী অনেক, দাবী করা হয় তারা অনেক ডেডিকেটেড, কিন্তু তারা কেবল নিজেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ! তাই তারা সাধারণ ছাত্রদেরকে তাদের কাছে টেনে নেয়ার, তাদের দাবির পক্ষে ছাত্রমত গড়ে তোলার চেষ্টাও করে না। তাদের ধারনা তারা একাই একশো! তাই তারা জনবিচ্ছিন্ন।