somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরা কি আমাদের অভ্যাসের জন্য দায়ী?

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৮:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





অ্যাঞ্জি ব্যাচম্যান, একজন গৃহিণী। স্বামী অফিসে চলে গেলে এবং বাচ্চারা স্কুলে চলে যাবার পর তার হাতে থাকে বিস্তর অবসর! যদিও ঘরের যাবতীয় সব কাজই নিজের হাতে করেন, তথাপি প্রায় সকাল দশটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত টিভি দেখা বা পত্রিকা পড়া ছাড়া তেমন কোন কাজ থাকে না। খুব সকালে উঠেই নাস্তা বানানো এবং রান্নার কাজ সেরে ফেলেন। ১৯ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল তার। যৌবনে রূপসীই ছিলেন বলা যায়, গিটারবাদক স্বামী যখন আসল চাকুরীতে ঢুকলো তখন তিনি একজন মা হবার প্রতিই পূর্ণ মনোযোগ দিলেন। মেয়েরা এখন হাইস্কুলে পড়ে, তারা তাদের বান্ধবীদের সাথে গল্পগুজব, আড্ডা মেরে সময় কাটায়। স্বামী ভূমি অফিসে চাকুরী করেন। সেই সকাল আটটায় যান, ছয়টায় ফেরেন। প্রায় ২০ বছরের সংসারজীবনে আজকাল অ্যাঞ্জির বড় একা লাগে! সারাদিন ভীষণ বোরিং সময় কাটান, দিনে দিনে বিষণ্ণতা তার বেড়েই চলেছে।
একদিন একাকী ঘরে বসে বসে ভাবছিলেন তার এমন কিছু খুঁজে বের করা দরকার যেটা তাকে কিছুটা সময়ের জন্য আনন্দে রাখবে, একটু হলেও তার একাকীত্ব দূর করবে। ঠিক কি হতে পারে সেটা নিয়ে ভাবলেন প্রায় দুই ঘন্টা। ১২টা বাজে হঠাত তিনি সেজে গুঁজে বের হলেন, ২০ মিনিট দূরত্বের রিভারবোট ক্যাসিনোতে গিয়ে ঢুকলেন। শুরু হলো তার এক নতুন উত্তেজনাকর জীবন!
অ্যাঞ্জির মদ্যপান বা ধূমপানজনিত কোন আসক্তি ছিল না। কিন্তু ক্যাসিনোতে গিয়ে শুরু করলেন পাশা খেলা। প্রথম প্রথম ভালই টাকা জিততেন। একটা সময়ে যখনই তার স্বামীর সাথে ঝগড়া হতো বা বাচ্চারা তাকে তাচ্ছিল্য করে কথা বলতো, মনের কষ্ট ভুলতে তিনি প্রায় প্রতিদিনই ক্যাসিনোতে যেতেন। এবং বেশি বেশি টাকা পাশা খেলাতে পুঁজি খাটাতে লাগলেন। মাঝে মাঝে হেরেও যেতেন, তখন বেশ অনেকটা অর্থ লস হয়ে যেত। বেশ কিছুদিন পর লাভের চেয়ে লসের পাল্লা ভারী হতে থাকে, দেদারছে তার অর্থ নিঃশেষ হতে থাকে। কিন্তু এসবের কিছুই তার স্বামীকে জানাতো না। এক সময়ে ইউটিলিটি বিলের টাকায় টান পড়ে। বেশ কয়েকমাসের বিল বাকী পড়ে যায়। অ্যাঞ্জি গোপনে তার মায়ের কাছ থেকে টাকা ধার এনে সে বিল শোধ করে। অ্যাঞ্জি বুঝতে পারতো তার অনেক ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু চরম একাকীত্বের হাত থেকে কিছুটা সময় মুক্তি পেতে তার এর কোন বিকল্প ছিল না।
কয়েক বছর পর হাজার হাজার ডলার লস করে একসময়ে অ্যাঞ্জি সর্বস্বান্ত হয়, তার স্বামীর সবকিছু শেষ করে। তার উকিল তার পক্ষে স্টেটমেন্ট দেয় যে এই পাশা খেলাটা তার পছন্দের ছিল না, বদভ্যাস ছিল।
এভাবে চলতে চলতে একসময়ে তার উপলব্ধি হয়, এভাবে চলতে দেয়া যায় না, এখনি এখান থেকে বের হতে হবে। তা না হলে আরো ধ্বংস নেমে আসবে তার জীবনে। এক সময়ে সে ক্যাসিনোতে যাওয়া কমিয়ে দেয়, ধীরে ধীরে পাশা খেলার নেশা থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে আনে।





২০০৮ সালের জুলাই মাসের এক সকাল। থমাস নামের এক ব্যক্তি পুলিশকে ফোন করে জানান যে তিনি তার স্ত্রীকে ঘুমের ভিতরে খুন করে ফেলেছেন। ১০ মিনিটের মাথায় পুলিশ এসে হাজির হয় তার বাসায়, এসে দেখেন তিনি স্ত্রীর লাশ ভ্যানে রেখে তার পাশে বসে কাঁদছেন। থমাস বলতে থাকেন, রাতে হঠাত ঘুম ভেঙ্গে দেখেন জিন্স পরিহিত এক পুরুষ তার পাশে শোয়া স্ত্রীর উপর উপুড় হয়ে আছে, এটা দেখে তিনি হকচকিয়ে উঠেন। সেই পুরুষটিকে টেনে সরানোর চেষ্টা করেন। ধস্তাধস্তি শুরু হয় দুজনের মধ্যে। এক পর্যায়ে ঘুষি ঘুষি মেরে তিনি সেই আগুন্তক পুরুষটিকে নিঃস্তেজ করেন। হঠাত তিনি পূর্ণ সজাগ হয়ে উঠেন। তখন তিনি বুঝতে পারেন কোন পুরুষ নয়, তিনি তার স্ত্রীকেই নিঃস্তেজ করে ফেলেছন। সাথে সাথে তিনি সর্বতোভাবে চেষ্টা করতে থাকেন স্ত্রীর জ্ঞান ফেরানো, কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গেছে!
পুলিশ থমাসের বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল আইনে মামলা করেন। চলতে থাকে তদন্ত। তদন্তের এক পর্যায়ে জানা যায় ঘুমের ভিতরে হাঁটাহাঁটি করা থমাসের ছোটবেলাকার অভ্যেস। তার মায়ের কাছ থেকে জানা যায় ছোটবেলায় ঘুমের ভিতরে থমাস অন্য কারো রুমে চলে যেতেন, পাশের বাড়ির লনে হাঁটতে থাকতেন, বাড়ির কাছের লেকে সাঁতরানো শুরু করতেন। তার এই অভ্যাসগুলো নিয়ে বাড়িতে অনেক কৌতুক হতো। বিয়ের পর স্ত্রীর সাথে তার বেশ উষ্ণ সম্পর্ক ছিল, কোনদিন কোন নির্যাতনের অভিযোগ নেই। তার এই ঘুমহাঁটা (sleepwalk) র কথা তার স্ত্রীও জানতো। ঘুমের ভিতরে ঘরের দরজা খুলে মাঝে মাঝে বের হয়ে যেত বলে তার স্ত্রী দরজা লক করে চাবি নিজের বালিশের নিচে রেখে ঘুমাতেন। থমাস আলাদা রুমে ঘুমাতেন। ঘুমাতে যাবার আগে তারা পরস্পরকে ভালোবাসা জানিয়েই ঘুমাতে যেতেন। এই ঘুমের ভিতরেই তিনি আগুন্তক পুরুষকে স্ত্রীর কাছে দেখতে পান। এতে করে তদন্ত কর্মকর্তারা নিশ্চিত হন পেশাদার খুনে স্বভাব থেকে নয়, ঘুমহাঁটার অভ্যেস থেকেই এই খুন হয়েছে। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, এই ‘sleepwalk’ আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় ঘুমানো এবং জেগে থাকা বিচ্ছিন্ন কোন কিছু নয়। ব্রেইনের একটা অংশ আমাদের ঘুমের ভিতরে কার্যক্ষম থাকে যেটা আমাদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে। এবং এর উপর কারো হাত নেই, এর দ্বারাই আমাদের স্বভাব তৈরী হয়। আর জাগ্রত অবস্থায় বিভিন্ন জটিল কাজকর্ম করতে সক্ষম অংশটি কার্যক্ষম থাকে।



পরবর্তী পর্বঃ কিভাবে আমরা আমাদের নিজেদের অভ্যাসগুলোকে চিহ্নিত করে রিওয়ার্ডের পরিমাণ বাড়াতে পারি।


সূত্রঃ The Power of Habit (Why we do, what we do and how to change) – Charles Duhigg
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৮:৫৪
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৭.৬২ MM গুলি উদ্ধার। ব্রিগ. সাখাওয়াত ঠিকই বলেছিলেন।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৩ ই মার্চ, ২০২৫ ভোর ৪:৫৫


*২০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ*

রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর এলাকা থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ২০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে ডিএমপির উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ।

উত্তরা পশ্চিম থানা সূত্রে জানা যায়, আজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কামাল আতাতুর্ক: ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুন ও স্বকীয়তা ধ্বংসকারী এক বিতর্কিত শাসক

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৩ ই মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১২:৪২

কামাল আতাতুর্ক: ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুন ও স্বকীয়তা ধ্বংসকারী এক বিতর্কিত শাসক

তুরষ্কের বিখ্যাত আয়া সোফিয়া মসজিদের ছবিটি অন্তর্জাল থেকে সংগৃহিত।

মুস্তাফা কামাল আতাতুর্ক (১৮৮১-১৯৩৮) তুরস্কের ইতিহাসে এক প্রভাবশালী ও বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব। তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=স্নিগ্ধ প্রহর আমার, আটকে থাকে স্মৃতিঘরে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মার্চ, ২০২৫ দুপুর ২:০০


কিছু স্নিগ্ধ প্রহর স্মৃতির ঝুলিতে বন্দি রাখি,
শহরের ক্লান্তি যখন ঝাপটে ধরে,
যখন বিষাদ ব্যথা আঁকড়ে ধরে আমায়,
স্বস্তি শান্তি দিয়ে যায় ফাঁকি
ঠিক তখনি উঁকি দেই স্মৃতিঘরে,
মুহুর্তেই সময় পরিণত হয় সুখ... ...বাকিটুকু পড়ুন

নাজলী নামের মেয়েটি

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ১৩ ই মার্চ, ২০২৫ দুপুর ২:০৫

"নাজলী এখন ভালো আছে"

নাজলীর অসুখ করেছে, আকাশ পাতাল ভাবনায়
ডুবে আছে মেয়েটি।
ঢাকা শহরের উদাস হাওয়া,এলোমেলো পাগলা মিছিলের
আওয়াজে প্রকম্পিত চারদিক, তবুও ভালো আছে নাজলী নামের
মেয়েটি।

গুমোট নগরে
দু:খবোধ জন্ম নেয়, জন্ম নেয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমা করো মা'মনি

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৩ ই মার্চ, ২০২৫ দুপুর ২:২৩

এখন অনেক রাত। বিছানায় শুয়ে শুয়ে আইপ্যাডে নিউজ পড়ছিলাম আর সেহরির অপেক্ষা করছি। মাগুরার ছোট্ট শিশুটির হাসপাতালে জীবন-মরন যুদ্ধের খবর বিভিন্ন পত্রিকায় দেখছিলাম। মন থেকে চাইছিলাম মেয়েটি সুস্থ হয়ে যাক।

আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×