কুর্কুমা বাটো মেন্দি বাটো ----- ৩
ফোন দিলাম লীনাকে, উচ্ছসিত কন্ঠে বললো -
- যাস্ট সাত মিনিট অপেক্ষা করো দোস্তো আমি আসছি ।
বলেই ফোন রেখে দিলো, একটা সিগারেট ধরিয়ে চিন্তা করতে থাকলাম সাত মিনিট আবার কি রকম হিসাব !
ঘড়ি ধরে সাত মিনিটের মাথায় দুরে লীনাকে গাড়ি থেকে নামতে দেখা গেলো, লীনার কোকড়া চুলের রং বদলে গেছে ইতিমধ্যে, আগে হালকা বাদামী ছিলো এখন লালচে কমলা। কিছু বুঝে উঠার আগেই আশপাশ কাঁপিয়ে চিৎকার করে আমার উপর ঝাপিয়ে পড়ে তার শহরে স্বাগতম জানালো।
বাসায় যাবার পুরোটা পথে বকবক করে আশেপাশের জায়গাগুলোর সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে থাকলো। গাড়ি থেকে নামলাম একটা ছিমছাম চারতলা বাড়ির সামনে, এলাকাটা একটু পাহাড়ী উঁচু নিচু রাস্তা কিন্তু বেশ ছিমছাম। নেমেই গেটের ভিতর শেফার্ডের সাথে আমার ভালো মতন পরিচয় করিয়ে দিলো । ঘরে ঢুকে সিড়ি বেয়ে উপরে ওঠার সময় দোতালায় ফিসফিস করে বললো এইটা আমার বাবার ফ্লোর এখানে কখনো শব্দ করবা না, বাবার হার্টের সমস্যা আছে। তিনতলায় তিনটা বিশাল বিশাল বেড রুম । এরমধ্যে একটাতে আমাকে ঢুকিয়ে ম্যাট্রেসের উপর একটা স্লিপিং ব্যাগ দেখিয়ে বললো,
- এখানে তুমি ঘুমাবা । তোমার ব্যাগ রেখে উপরে চলো..
ব্যাগ রেখে চারতলায় গিয়ে দেখি পাঁচ ছয়জন ছেলে-মেয়ে তুমুল আড্ডা দিচ্ছে। সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে লীনা বললো,
- এই ফ্রীজে যত কিছু আছে , এবং ঐপাশে যত খাবার আছে এবং কাবার্ডের উপর যত সিগারেট আছে সব আমার বন্ধুদের জন্য মানে তোমাদের সবার জন্য সুতরাং যখন যা লাগবে যাস্ট নিয়ে খেয়ে ফেলবা, কাউকে জিজ্ঞাসা করার কিছু নাই । আর ভাল কথা , আমি জানি তুমি পোর্ক খাও না সুতরাং ফ্রীজে পোর্কের তৈরী কোন খাবার নাই , নিশ্চিন্তে সব খেতে পারো। আরেকটা কথা এই রুমে যতখুশী সিগারেট খেতে পারবা কিন্তু ব্যালকনিতে সিগারেট খাওয়া নিষেধ।
সেখানেই আড্ডায় জমে গেলাম, একজন একজন করে আরো কয়েকজন এসে যোগ দিতে থাকলো। সন্ধ্যে নয়টার দিকে সবাই মিলে ঠিক করলো সাগর পাড়ে যাবে । হৈ হৈ করে সবকটা মিলে তিনটা গাড়ি বোঝাই করে বালটিকের পাড়ে রওনা দিলাম। লীনা আমাকে তার গাড়িতে নিলো, গাড়ি চালাতে চালাতে চিৎকার করে গান গাচ্ছিলো সারা রাস্তায়, একসময় আমাকে বললো,
- তোমাদের দেশি একটা গান শোনাও। মিনমিন করে গাইলে হবে না আমার মত গলা ছেড়ে গাইতে হবে, শুরু করো ।
বেচারী তখনো জানে নাই আমি কি জিনিস ! হেড়ে গলায় গান গাওয়া আমার কাছে ওয়ান-টু'র ব্যাপার।
শুরু করলাম হ্যাপী আকন্দের 'চলো না ঘুরে আসি' দিয়ে শেষ হতেই হাইওয়ের পাশে ঘ্যাচ করে গাড়ি থামিয়ে লীনা বললো ,
- ঐ ব্যাটা ! তুমি কি গান গাও নাকি !! আগে বল্লা না কেন !!! যাইহোক , গানটা মারাত্মক লাগছে আমার এই নাও তোমার পুরষ্কার বলে আমার হাতে এক প্যাকেট মার্লবরো ধরিয়ে দিয়ে বললো আরেকটা শুরু করো ।
মিনিট পনের পরে সাগরে কাছে পৌছলাম, সাগর দেখা যাচ্ছে না কিন্তু প্রচন্ড ঠান্ডা বাতাস বুঝিয়ে দিচ্ছে সাগরের উপস্থিতি। দু'মিনিট হেঁটেই পুরনো বন্ধুর দেখা মিললো, বালটিক সাগর । হালকা কাপড় পড়ে চলে আসছিলাম আমি প্রচন্ড ঠান্ডা বাতাসে ঠকঠক করে কাঁপতে শুরু করলাম। ওদিকে বিয়ের কনে বালুর উপর তার আরেক বন্ধুর সাথে জুডো শুরু করে দিয়েছে। পরের দিন এই মেয়ের বিয়ে কে বলবে !
বাসায় ফিরে লীনা বন্ধুদের নিয়ে পাড়া দেখাতে বের হলো, প্রতিটা গলি প্রতিটা বাসা নিয়ে তার শৈশবের অনেক গল্প। তার ছোট বেলার খেলার মাঠ , মাঠের পাশে বিরাট গাছে ছোটবেলার গাছবাড়ি। বড় এক পাথরের উপর মাথা ফাটিয়ে ফেলার সেই পাথরটা। মাথার উপর তখন হাজার তারার রাতের আকাশ। হৈ-হুল্লোর করতে করতে আবার সব বাসায় ফিরলাম, বাসায় ফিরে চরতলার হলরুমে আবার আড্ডা শুরু হলো । এমন সময় লীনার বাবা আড্ডায় হাজির হলো । ৫৪ বছর বয়সী পেটানো শরীরের ভদ্রলোক। গমগম স্বরে সবাইকে 'দোব্রে ভিয়েচর' জানালো। একটা চেয়ার ছেড়ে দেয়া হলো উনার জন্য, লীনার বাবা আসার পর আড্ডার ভলিউম একটু নেমে গিয়েছিলো । উনি হাসি মুখে বললো - তোমরা ভলিউম কমিয়ে দিলে কেন ? আমি কিন্তু এখনো তোমাদের মত তরুন .. অবশ্য শরীরের বয়সটা সামান্য একটু বেড়ে গিয়েছে।
কথা শুনে সবাই আবার চিৎকার চেচামেচি শুরু করলো ।
সবার সাথে টুকটাক কথা বলে আমার কাছে এসে ভদ্রলোক আটকে গেলেন । লীনাকে বললেন ,
- তুই তো কখনো বলিস নাই তোর বাংলাদেশী বন্ধু আছে !!
লীনা দুষ্টামির হাসি দিয়ে বললো,
- এখন বল্লাম ।
আমাকে উনি হাসি মুখে হুকুমের স্বরে বললেন,
- মাই সান , এখানে আমার পাশে তোমার চেয়ারটা নিয়ে আসো, তোমার কাছে আমার অনেক কিছু জানার আছে ।
তারপর প্রায় চল্লিশ মিনিট ধরে আমার সাথে কথা হলো উনার । প্রচন্ড রকমের মেধাবী লোক । বাংলাদেশ সম্পর্কে ভাসা ভাসা জানতেন, আমাকে পেয়ে পুরোটা জেনে নিলেন (উনার সাথে কি কি কথা হয়েছে পুরোটা বলতে গেলে সেটা আরেক পর্বের সমান হবে)।
যাবার সময় বললেন ,
- আমাদের গল্প কিন্তু এখানেই শেষ হয় নাই । আশা করি কাল আমরা আবার আড্ডা দিবো।
একে একে সবাই উঠে ঘুমাতে চলে গেলো । শেষে আমি লীনা আর মারেক নামে লীনার ছোটবেলার এক বন্ধু রইলাম। মারেক ছেলেটা লন্ডন থাকে, বন্ধুর বিয়েতে চলে আসছে এখানে।
এখানে একটা কথা বলে রাখি , পুরো বাড়িতে বয়স্ক লোক বলতে একমাত্র লীনার বাবা। কনের বাড়ি , পরদিন বিয়ে অথচ সারা বাড়ি ভর্তি শুধুমাত্র কনের বন্ধু-বান্ধব । এক ফাঁকে লীনার কাছে তার মায়ের কথা জানতে চাইলাম। লীনা স্বাভাবিক গলায় বললো ,
- আমার বাবা-মা'র ডিভোর্স হয়ে গেছে। আমার ছোট বোনটা মা'র সাথে থাকে, এ শহরেই। আমি হচ্ছি বাবার মেয়ে , বাবা আমার সবকিছু এবং আমিও বাবার সবকিছু। কাল বিয়েতে আমার মা আর ছোট বোনটা আসবে তুমি তখন তাদের দেখতে পাবে।
আমি বোকার মত আরেকটু আগ্রহ দেখালাম ... লীনা বললো,
- না, মা বিয়ে করেনি । আমার ধারনা বাবা-মা দু'জন দু'জন কে এখনো ভালবাসে, তাও দু'জন আলাদা থাকে। কিন্তু সত্যি কথা হচ্ছে আমার মা একটা প্রচন্ড রকমের উচ্চাকাংখী মহিলা। তার চাহিদার শেষ ছিলো না। আমাদের এই বাড়িটা দেখছো এটা আমার দাদা বানিয়েছে । আমরা দু বোন এখানেই শৈশব কাটিয়েছি তার পরেও বাবাকে মা বাধ্য করেছে শহরের উচ্চবিত্ত এলাকায় আরেকটা বাড়ি কেনার জন্য। বাবা পরে সেখানে বাড়ি বানিয়েছে .... এবং সেই বাড়িতে ওঠার কয়েক মাসের মধ্যেই বাবা-মা'র ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।
পরদিন মেয়েটার বিয়ে, তাই মন খারাপ করা বিষয়টা নিয়ে আর ঘাটালাম না। শুভ রাত্রি বলে ঘুমাতে চলে গেলাম।
......... চলবে
জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা
বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন
আত্মপোলব্ধি......
আত্মপোলব্ধি......
একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !
হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।
আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।
আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন