কিছু কিছু মানুষের সাথে পরিচয় হয়ে মনে হয় একে অনেক আগের থেকেই চিনি । আবার এর উল্টাটাও হয় , অবাক হয়ে চিন্তা করি আরে! এরকম লোকের সাথে আগে কখনোই পরিচয় হয় নাই ।
কিন্তু এই দুই ধরনের অনুভূতি একই ব্যাক্তির ব্যপারে কখনো টের পাই নাই লীনার সাথে পরিচয় হওয়ার আগে ।
দু'মাস আগে আমার ইউনিভার্সিটির প্রফেসরদের সাথে আগডুম বাগডুম আলাপ করছিলাম , প্রফেসর আমার খুব পরিচিত সে একটা পেপার বের করে বললো - এই ক্লাসটার বিষয়ে কিছু জানো ?
দেখি লেখা - 'ক্রিয়েটিভ এক্টিভিটি'
আমি আগ্রহ নিয়ে বল্লাম - না তো ! এই বিষয়ে শুনিই নাই কখনো কিছু !
- খুবই ইন্টারেস্টিং , সময় পাইলে টিচারের সাথে যোগাযোগ কইরা একটা ক্লাস করে দেখতে পারো ।
নিজের ব্যস্ততায় সেই ক্লাসের টিচারের সাথে আর যোগাযোগ করতে পারি নাই । গত মাসের ১৬ তারিখ একটা ক্লাস ছিলো আমার, ইউনিতে গিয়া দেখি ক্লাস ক্যান্সেল । ক্যাফেটেরিয়ায় বসে কম্পু গুতাচ্ছিলাম আর কফির মগে চুমুক দিচ্ছিলাম , তখন কানে আসলো কিছু পুলাপান 'ক্রিয়েটিভ এক্টিভিটি'র ক্লাস নিয়া আলাপ করছে । জানতে চাইলাম ওরা কি সেই ক্লাসটা করে কিনা । বললো পনের মিনিট পরেই তাদের ক্লাস শুরু হবে। আমি তখন ঠিক করলাম গিয়া দেখি কাহিনীটা কি !
ক্লাসে ঢুকে দেখি ক্লাস ভর্তি ছেলেমেয়ে । ৩২/৩৩ বছর বয়সী এক মহিলা ক্লাস নিচ্ছেন । আমাকে দেখে জানতে চাইলো আমি এই ক্লাসের ছাত্র কিনা । বল্লাম - না .. শখে আসছি একটা ক্লাস করতে ।
কোনার এক চেয়ারে গিয়ে বসলাম । মহিলা সবার হাতে 'এ থ্রি' সাইজের একটা করে শক্ত পেপার দিয়ে 'হাত' বিষয়ক কি সব লেকচার দিলো কিছু বুঝলাম বেশির ভাগই বুঝলাম না (ক্লাস টা পোলীশ ভাষায় হচ্ছিলো )। কাছে ডেকে বিনয়ের সাথে বল্লাম আমি তোমার কথা কিছুই বুঝি নাই, তুমি কি আমাকে একটু আলাদা ভাবে বুঝায় দিবা ?
বেচারী মুখ কালো করে নিজ ভাষায় বললো - তুমি কি কিছুই বোঝ না !
আমি আমার বিখ্যাত বিনয়ের হাসি দেখিয়ে বল্লাম -
- বুঝি । কিন্তু অল্প সল্প।
- আমি তো ইংরেজী তেমন পারি না। আচ্ছা দেখি তোমার জন্য কি করা যায়।
বলেই নিজ ছাত্র/ছাত্রিদের উদ্দেশ্যে জানতে চাইলো ভালো ইংরেজী জানে কে ? এই ছেলেটাকে কে সাহায্য করবে ।
পাঁচ ছয়টা হাত উপরে উঠলো এর মধ্যে আমার সবচেয়ে কাছের মেয়েটাকে টিচার অনুরোধ করলো আমাকে সাহায্য করার জন্য ।
নাদুস নুদুস শরীরের ২৪/২৫ বছর বয়সের একটা মেয়ে ১৪/১৫ বছর বয়সী কিশোরের ক্ষিপ্রতায় চেয়ার টেবিল কাটিয়ে আমার পাশে এসে বসে হাসি মুখে বললো-
- হ্যাল্লো ! কিছু চিন্তা কইরো না আমি সব বুঝায়া দিবোনে তোমাকে । প্রথমে আমরা হাত দিয়ে যে কোন একটা সাইন দেখাবো , সেটা শান্তির প্রতিক হতে পারে শয়তানের চিহ্ন হতে পারে যে কোন কিছু ... সেইটা আমরা কাগজে এঁকে ফেলবো ছাপ দিয়ে, তারপর আমরা কাগজ বদলাবদলি করবো এবং তোমার হাতের ছবি দেখে আমার কি মনে হচ্ছে সেটা আমি একই কাগজে আঁকবো আর তুমি আমার কাগজটাতে আঁকবে । এরপর আবার আমরা যার যার কাগজ নিয়ে আমি নিজে কি ভেবে এই হাতের সাইন দিলাম সেটা সেই কাগজেই এঁকে বোঝানোর চেষ্টা করবো । বিষয়টা একটু ছেলেমানুষী .. কিন্তু আমি নিশ্চিত তুমি মজা পাবে । ওহ .. ভালো কথা ..আমাকে আমার বন্ধুরা লীনা ডাকে । তুমিও আমাকে লীনা ডাকতে পারো । তোমার নাম কি ?
সারা ক্লাসেই লীনার সাথে টুকটাক আলাপ হচ্ছিলো .... প্রচন্ড প্রানবন্ত একটা মেয়ে, নিজের নাদুস নুদুস শরীর নিয়ে নিজেই ভয়ংকর ভয়ংকর টাইপ রসিকতা করতে দ্বীধা করে না। দারুন ছবি আঁকতে পারে। নিজের ছবি আঁকার খাতা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো- দেখ। সেই খাতায় মার্শাল আর্ট বিষয়ক ছবি দেখে জানতে চাইলাম এগিলিও পারো নাকি !!
বললো - তার ব্লাক বেল্ট আছে ।
ক্লাসের শেষের দিকে এসে লীনা তার হাত বাড়িয়ে বললো -
- তোমার আমার খুব পছন্দ হয়েছে । আমার সামনের মাসে ৬ তারিখে বিয়ে (অবাক হয়ে খেয়াল করলাম কথাটা বলার সময় লীনার গালদুটো রং বদলালো) তোমাকে আমি আমন্ত্রন পত্র দিতে চাই , তুমি কিন্তু অবশ্যই আসবে ।
----- চলবে