.
.
.
পর্ব ১
পর্ব ২
সাত মিনিটের মত হেটে কাছের মেট্রো স্টেশনে পৌছলাম । আকাশে কিছুক্ষন পরপরই আতসবাজির আলো জ্বলে উঠছে। প্ল্যাটফর্মেই ১২/১৩ বছরের এক ছেলে আতস বাজি জ্বালিয়েছে , মোবাইলে ছবি তুলতে গেলাম দেখে আভগেনী নিজের ক্যামেরাটা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো -
বন্ধু তুমি আমার ক্যামেরাটা ব্যাবহার করতে পারো। তোমার ই-মেইল এড্রেস দিয়ে দিও আমি ছবিগুলো পাঠিয়ে দেব।
কিছুপরেই মেট্রোতে চড়ে বসলাম সবাই। আমি আভগেনী আর জীলন পাশাপাশি বসলাম। এক ইসরাইলী তরুনের কাছে তার দেশের সম্পর্কে অনুভূতি জানার লোভটা সামলাতে পারলাম না। খুব সতর্কভাবে শুরু করলাম -
- আভগেনী তোমার বয়স যেন কত ?
- ২৭.. আমি ওল্ড ম্যান হা হা হা , এখানে আসার আগে দেশে থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করেছি, তারপর আর্মিতে বছর দুয়েক ছিলাম
- তাই নাকি !! তোমাদের কি আর্মিতে যাওয়া বাধ্যতামুলক?
- হুম বাধ্যতামুলক, কিন্তু তুমি যেতে না চাইলে জোর করবেনা কেউ, সেক্ষেত্রে তোমাকে জোরালো একটা কারন দর্শাতে হবে, তবে আমি মনে করি সবারই যাওয় উচিত। আমরা যদি না যাই আমার দেশকে কে রক্ষা করবে বলো?
- তোমার দেশের এখন কি অবস্থা !
- তোমরা তো জানোই .. খুবই অস্থিরতায় আছি আমরা
- তোমরা কিন্তু অনৈতিক ভাবে অন্যের দেশ দখল করে আছো তাইনা !!
- বহুকাল আগে কিন্ত ওটা আমাদেরই দেশ ছিলো, তখন কিন্তু আমরা থাকতাম ওখানে
- কিন্তু এখন তোমরা ফিলিস্তিনিদের মারছো এমনকি নিরীহ মহিলা এবং শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না
- দেখো ফিলিস্তিনিরা কিন্তু দুটো অঞ্চলে থাকে ‘পশ্চিম তীর’ ও ‘গাজা’। কখনো শোনবা না যে পশ্চিম তীরে কোন গন্ডগোল হয়েছে, যা হয় সব গাজায়। ওরা আমাদের আবাসিক এলাকায় বোমা ফেলে এবং আমাদেরও জবাব দিতে হয়। আমাদেরও নিরীহ শিশু মারা যায় অনেক ।
-কিন্তু আমরা তো দেখি যে, ফিলিস্তিনিরা পাথর ছুড়ছে আর এর জবাবে ইসরাইলী সৈন্যরা ট্যাংক আর এম সিক্সটিন দিয়ে গুলি ছুড়ছে।
-সব মিডিয়ার শয়তানি
-কিন্তু এসব তো পশ্চিমা মিডিয়াতেই দেখা যায় ! এমনকি আমেরিকান চ্যানেল গুলোতেও মাঝেমাঝে দেখা যায়
-আমেরিকা!!! ওটা হলো সবচেয়ে বড় হারামি
এটা শুনে আমি সত্যিই অবাক হলাম। এক ইসরাইলীর মুখে একথা শুনবো কখনো চিন্তাও করি নাই। বল্লাম -
- কিন্তু আমেরিকা তো তোমাদের বন্ধু রাস্ট্র
- দেখো, আমেরিকা হলো ধান্দাবাজ। তাদের নিজেদের ব্যাবসার স্বার্থেই তারা ইসরাইলের সাথে আছে।
- তাহলে তোমাদের বন্ধু রাষ্ট্র কে কে ?
- জার্মানী (একটা নাম বলেই অনেক্ষন চিন্তা করে.... বললো - ব্রিটেন এবং এখন ফ্রান্স)
আমি আর কথা বাড়ালাম না, বুঝতে পারছিলাম ওর দেশপ্রেম প্রচন্ড, কি বলতে কি বলি আবার !!আমি ভালো করেই জানি দেশ নিয়ে আজেবাজে মন্তব্য করলে কারো কারো হিতোহিত জ্ঞ্যান থাকে না। বাংলাদেশকে নিয়ে আজেবাজে উক্তি করার জন্য এক নাইজেরীয়ানের টুটি চেপে ধরেছিলাম একবার।
মেট্রো রেল আমাদের গন্তব্যে পৌছে দিলো। দুর থেকেই শোঁ শোঁ গর্জন শুনতে পাচ্ছিলাম। সুন্দর পাথরের রাস্তা ধরে ভীড় ঠেলে সাগরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, বাঁ দিকে বিখ্যাত সব ব্র্যান্ডের শোরূম। রাস্তায়, দোকানে, রেস্তোঁরায় মানুষ গিজ গিজ করছে । চুল-দাড়ি ওয়ালা বিশাল শরীরের এক লোককে দেখলাম রাস্তার পাশে বসে ব্যাঞ্জো বাজাচ্ছে । দুরে একটা বাতিঘর চোখে পড়লো । প্রচন্ড হাড় কাঁপানো বাতাস। সাগর পাড়ে পৌছে আনমনা হয়ে গেলাম, এই সেই বিখ্যাত বাল্টিক সী! সারাজীবন শুধু নাম শুনেছি। দুরের বাতিঘরটা অদ্ভুত এক মায়ায় দাড়িয়ে আছে, আলো জ্বলছে বাতিঘরে সেই আলো ঘুরে ঘুরে আকাশটায় আলোর খেলা দেখাচ্ছে। নতুন বছর শুরু হতে তখনো ১৫ মিনিট বাকি। সবার মাঝে চাপা উত্তেজনা। আকাশ জুড়ে কিন্তু আতসবাজি ক্রমাগত ঝলসেই চলেছে। টমেক সুসানকে ঘাড়ে তুলে নিলো। জীলন-ক্যারলিনাকে দেখলাম পাশাপাশি কোমর জড়িয়ে দাড়িয়ে মুগ্ধ চোখে সাগর দেখছে । বাকিরা অপেক্ষায় ... কখন ১২টা বাজবে !!
হঠাৎ সারা আকাশ যেন আলোয় আলোয় উত্তাল হয়ে উঠলো। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলাম মিনিটের কাটা বারোটায় ছুলো মাত্র। নতুন বছর শুরু হয়ে গেছে। হাজার হাজার আতসবাজি গোটা এলাকাটাকে রঙিন করে তুললো। পুরো আকাশ যেন উন্মাদনায় মেতে উঠেছে। সাই সাই করে আতসবাজি গুলো উচুতে উঠে যাচ্ছে এর পরপরই বিচিত্র বর্নের ছোট ছোট রঙিন জোনাকি সারা আকাশে ছড়িয়ে যাচ্ছে। আলোয় আলোয় আকাশের গায়ে বিচিত্র সব নকশা।(আমি বলে বোঝাতে পারবো না কি যে অদ্ভুত লাগছিলো তখন আমার উপরের আকাশটাকে....) আমার বা হাতে মোবাইল ডানহাতে আভগেনীর ক্যামেরা দুহাতে সমানে ছবি তুলতে লাগলাম।
চলবে ..................শেষ পর্ব