বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার প্রস্তুতিমূলক কোচিং, বিভিন্ন শ্রেণির তুলনামূলক উত্তম শিক্ষাদান ভিত্তিক কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়/মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিমূলক কোচিং; শিক্ষকদের ব্যাচ আকারে টিউশন, ডাক্তারদের প্রাইভেট প্র্যাকটিজ কিংবা অর্থের বিনিময়ে অন্য যে কোন ধরনের প্রাইভেট কনসালটেন্সি প্রভৃতি বন্ধ করতে চাওয়ার পূর্বে পারিপার্শ্বিকতার সাপেক্ষে আদৌ বন্ধ করা সম্ভব কিনা সেটা একটু বিচার বিশ্লেষণ করা দরকার। আমার ধারনা এগুলো বন্ধ করা সম্ভব নয়। একজন সরকারী চাকুরীজীবি ইঞ্জিনিয়ার যদি তাঁর স্বাভাবিক কর্ম ঘণ্টার বাইরে কনসালটেন্সি করে জনগণকে সেবা দিয়ে আয় করতে পারেন তাহলে একজন ডাক্তার তাঁর স্বাভাবিক কর্ম ঘণ্টার বাইরে প্রাইভেট প্রাকটিজ করতে পারবেন না কেন? অনুরূপ একজন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক যদি নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বান্ধ্যকালীন কোর্সে সম্পৃক্ত থেকে কিংবা স্বাভাবিক কর্ম ঘণ্টার বাইরে বিভিন্ন ফার্মে কনসালটেন্সি অথবা কোন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিয়ে বেতনের বাইরে আয় করতে পারেন তাহলে সুযোগ থাকলে কলেজ কিংবা স্কুল পর্যায়ের একজন শিক্ষক স্বাভাবিক কর্ম ঘণ্টার বাইরে বাসায় ছাত্র পড়িয়ে আয় করতে পারবেন না কেন? অনুরূপ ভাবে আইন পেশার ব্যক্তিদেরও আয় আছে। তেমনি কেউ যদি জনগণের চাহিদার আলোকে শিক্ষাদানের নিমিত্তে কোচিং ব্যবস্থা গড়ে তোলেন তাহলে সেটা অবৈধ হয় কি করে? তবে হ্যাঁ যারা উপরে উল্লেখিত উপায়ে আয় করতে গিয়ে জনগণের গলা কাটে কিংবা গলায় ছুরি ঠেকানোর মতো অবস্থা সৃষ্টির মাধ্যমে অধিক ও অযৌক্তিক আয়-রোজগারের পথ তৈরি করে তাহলে সুনির্দিষ্ট নিয়মনীতি ও আইন করে সেই নিয়মনীতি ও আইনের আলোকে দোষী ব্যক্তিদেরকে শাস্তির আওতায় আনা সময় ও জনগণের দাবি! উল্লেখ্য যে, সমগ্র বিশ্বেই উন্নত অর্থ ব্যবস্থাপনা ও তুলনামূলক অধিক আয়ের দেশসমূহে কোন না কোন ভাবে এই সিস্টেমগুলো গড়ে উঠেছে। অনুরূপ আমাদের দেশেও এই সব পরিসেবার চাহিদা অপেক্ষাকৃত আর্থিকভাবে স্বচ্ছল জনগণের সময়ের চাহিদা। তাই এই সব খাতে এখন শুধু দরকার বাধ্যতামূলক নিয়মনীতি ও আইন।যে নিয়মনীতির আলোকে সরকার প্রতি ছাত্রের মাসিক কোচিং ফি বেঁধে দিতে যৎসামান্য যৌক্তিক পরিমাণ, শিক্ষকদের প্রতি ছাত্রের জন্যও একই রকম যেমন ১৫০-২০০/৩০০ টাকা, সরকারী ডাক্তারদের প্রাইভেট প্র্যাকটিজ ৩০০-৪০০ টাকা এবং প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা ও পরীক্ষানিরীক্ষা, ইঞ্জিনিয়ার কিংবা আইন পেশায় প্রাইভেট কনসালটেন্সিতে অর্থ খরচ হবে যৌক্তিক পরিমাণ!আমার বিশ্বাস একজন শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার কিংবা আইন পেশার একজন ব্যক্তি দেশের মধ্য ও নিম্নবৃত্ত মানুষের আয়ের সাথে সঙ্গতি রেখে যৌক্তিক পরিমাণ ফি নিলেও তাদের তেমন কোন ক্ষতি হবে না। হয়তো তাদের আকাশচুম্বী একটা ইমারত বানানো, দু-চার-দশ কোটি খরচ করে একটি বিলাস বহুল গাড়ি কেনা কিংবা কাড়ি কাড়ি অর্থ ব্যাংক ব্যালেন্স হবে না কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে এটা নিশ্চিত। এবং সংশ্লিষ্ট খাতে সরকার নির্ধারিত সেই ফি এর রিসিপ্ট ভাউচার দেওয়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য বাধ্যতামূলক করতে হবে যাতে সরকার নির্ধারিত ফি এর বাইরে কেউ কোন অর্থ নিতে না পারেন। সেই সাথে কোচিং বাণিজ্য, ছাত্র পড়িয়ে, প্রাইভেট প্র্যাকটিজ করে, কনসালটেন্সি করে জনগণের মাঝে শিক্ষিত অথচ ধূরন্ধর দূর্জনেরা যেন অরাজক অর্থ শোষণের সিস্টেম পাকাপোক্ত করতে না পারেন।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১২:২০