ঢাকা : স্বামীর সন্ধানে সারারাত থানায় থানায় ধরনা দিলেন বিএনপি নেতা কামরুজ্জামান রতনের স্ত্রী নুরে জান্নাত। ধরে নিয়ে যাওয়ার ৬ ঘন্টা অতিবাহিত হলেও তাকে আটকের কথা এখনও স্বীকার করেনি কোনো সংস্থাই।
সোমবার সকালে বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে আলোচনা করে পরিবারের পক্ষ থেকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন রতনের স্ত্রী।
রাত পৌনে একটায় ডিবি পুলিশের পরিচয়ে রতনকে তুলে নেওয়ার ৫৫ মিনিটের মধ্যেই ডিবি কার্যালয়ে আসেন স্ত্রী নুরে জান্নাত। সাথে ছিলেন তার দেবর মুসা কলিম উল্লাহ ও রতনের সহকর্মীরা।
এ সময় ডিবি পুলিশ জানায় তারা তার স্বামীর বিষয়ে কিছুই জানে না। এ নামে কাউকে তারা আটক করেনি। এ সময় তারা স্থানীয় থানা রমনায় যোগযোগ করার জন্য পরামর্শ দেয়। সেখানে গিয়েও না জবাব পেয়ে যান তেজগাঁও থানায়। তাদেরও একই জবাব।
ঘুরে ফিরে আবার ডিবি পুলিশের কার্যালয়ে আসেন নুরে জান্নাত। এরই মধ্যে তিনি মাঝে মধ্যে ফোন রিসিভ করেই বলে উঠেন, ‘আমার সব শেষ হয়ে যাচ্ছে। তোমরা আমার জন্য দোয়া কোরো। আল্লাহ যেনো আমার স্বামীকে ফিরিয়ে দেন।’
এ বিষয়ে কোনো জিডি করেছেন কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে নুরে জান্নাত বাংলানিউজকে জানান, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে। তিনি সকালে সিদ্ধান্ত দেবেন বলে জানিয়েছেন।
এদিকে প্রথমে ইলিয়াস, পরবর্তীতে রতনের নিখোঁজের সংবাদে অনেকে মন্তব্য করেছেন, রাজনৈতিক সহকর্মী ইলিয়াস আলীর পরিণতিই কি অবশেষে ভোগ করবেন বিএনপি নেতা কামরুজ্জামান রতন? অবার কেউ কেউ ঠাট্টা করেও মন্তব্য করেছেন আর বাকি থাকলো ৯৮ জন!
বিএনপি নেতা ও সাবেক ছাত্রনেতা কামরুজ্জামান রতনকে রোববার দিবাগত রাত পৌনে ১টায় রাজধানীর মৌচাক এলাকা থেকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ।
বিএনপির মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার জানান, মৌচাকে অবস্থিত বেসরকারি টেলিভিশন দেশটিভির একটি টক শোতে অংশ নিয়ে বের হয়ে আসার পর তাকে আটক করা হয়।
রতনকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় ডিবি পুলিশ পরিচয় দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।
আটকের সময় কামরুজ্জামান রতনের সঙ্গে ঘটনাস্থলে থাকা তার ভাই মুসা কলিমউল্লাহ জানান, মৌচাক মোড়ে অবস্থিত দেশ টিভি ভবনের সামনের রাস্তা থেকে ডিবি পরিচয় দিয়ে রতনকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেওয়া হয়। মাইক্রোবাসে ডিবি লেখা ছিলো বলে জানান তিনি। দেশটিভিতে অনুষ্ঠিত একটি টক শোতে অংশ নিয়ে বের হয়ে আসার সময়েই এই ঘটনা ঘটে বলে জানান মুসা।
এদিকে রতন আটকের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ডিবি অফিসে ছুটে আসেন তার স্ত্রী নুরে জান্নাত। রাত পৌনে দুইটার সময় তাকে ডিবি অফিসে কর্তব্যরত কর্মকর্তাদের কাছে স্বামীর খোঁজ করতে দেখা যায়। এ সময় বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘আমি আমার স্বামীর জীবন নিয়ে শঙ্কিত। আমি তাকে জীবিত ফেরত চাই। ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হলেও তারা এখন অস্বীকার করছে। পুলিশও বলছে তারা কিছুই জানেনা। এ অবস্থায় আমি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। রতন যদি অপরাধী হোন, তবে তাকে প্রচলিত বিচারের মুখোমুখি করা হোক।’
ইলিয়াস আলীর মতো তার স্বামীরও একই পরিণতি হতে পারে বলে এ সময় আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি বলেন,‘খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি ডিবি অফিসে গেলেও তারা আটকের কথা অস্বীকার করে। এ সময় তারা রমনা মডেল থানায় যোগাযোগ করার পরামর্শ দেয়। পরে রমনা মডেল থানায় যোগাযোগ করলেও তারা এ ব্যাপারে অজ্ঞতা প্রকাশ করে।’
উল্লেখ্য, রতন সম্প্রতি নিঁখোজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর ছাত্র রাজনীতির সময়ে তার একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। ৯০ দশকের গোড়ার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তাদের পরিচালিত গ্রুপটি ইলিয়াস-রতন গ্রুপ নামে পরিচিতি ছিলো
হরতালে গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য হান্নান শাহ ও যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী ৩৮ নেতা-কর্মীর নামে মামলা হয়েছে তেজগাঁও থানায়।
পুলিশ জানায়, রোববার হরতাল চলাকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এলকায় গাড়ি ভাংচুরের অভিযোগে গভীর রাতে এ মামলা করা হয়।
আপডেটঃবিএনপি নেতা ও সাবেক ছাত্রনেতা কামরুজ্জামান রতনকে আটকের সাত ঘণ্টা পর স্বীকার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)
সোমবার হরতালের শুরুতেই সাবেক স্বাস্থ্য উপমন্ত্রী সিরাজুল হকসহ ৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ। নয়াপল্টনস্থ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে এই তিন জনকে আটক করা হয় ।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১২
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০১২ সকাল ৯:০৫