ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সময় দুদেশের মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা আরো বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে থেকে জানা গেছে, নেপাল ও ভুটানকে নিয়ে বিদ্যুৎ খাতে বৃহত্তর আঞ্চলিক সহযোগিতার ডাক দিতে পারে ঢাকা ও দিল্লি। সূত্র: বিডি নিউজ 24.com । চলুন দেখা যাক ভারত-বাংলাদেশ এর মাঝে বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতার দৃশ্যটি কেমন-
গত বছর জানুয়ারিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়া দিল্লি সফরের সময় ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা বিষয়ক একটি সমঝোতা স্মাারক সই হয়। প্রাথমিকভাবে ভারত কেন্দ্রীয় গ্রিড থেকে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশকে দিতে সম্মত হয়। তখন জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা ছিল ভারতের।
সমঝোতা স্মারকের আগেই সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেলে ভারতের জাতীয় বিদ্যুৎ সংস্থা ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশন (এনটিপিসি)। এরপরও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুর থেকে বাংলাদেশের ভেড়ামারা পর্যন্ত ১৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ সঞ্চালন লাইন স্থাপনের কাজ শুরু করা হয়। ধারণা করা হয়েছিল, বহরমপুরের কাছাকাছি কোনো প্ল্যান্ট থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে এনটিপিসি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নাজুক হওয়ায় এ নিয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। ভারত তার অন্যান্য রাজ্য সরকারের কাছে বিক্রি করা দরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করলেও পরিবহন ব্যয়ের বিষয়টি চিন্তা করতে হবে। যত দূরের কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে, পরিবহন ব্যয় ততই বাড়বে। আবার প্ল্যান্টের জ্বালানি যদি 'তেল' হয়, সেক্ষেত্রে দাম বাংলাদেশে উৎপাদিত বিদ্যুতের চেয়ে অনেক বেশি হবে, যার চড়া মাসুল গুনতে হবে বাংলাদেশের গ্রাহকদের। অমীমাংসিত এ ধরনের অনেক বিষয়েই বাংলাদেশকে এখনো অন্ধকারে রেখেছে ভারত। চূড়ান্ত চুক্তি সম্পাদনের আগে এ বিষয়গুলোর নিষ্পত্তি হওয়া দরকার।
ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ব ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশন (এনটিপিসি) বিপিডিবির সঙ্গে যৌথভাবে খুলনায় কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণের কাজ করবে। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বিদ্যুৎ আমদানি-রফতানি এবং কয়লা ভিক্তিকবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে যৌথ কোম্পানি গঠন করার কথা বলা হচ্ছ । জয়েন্ট ভেঞ্চার এগ্রিমেন্ট (জেডিএ) এবং পাওয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্ট সংক্রান্ত দু’টি খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় ৪শ কেভি হাইভোল্টেজের সাবস্টেশন ও সঞ্চালন লাইন নির্মিত হবে। কর্তৃপক্ষের বক্তব্য হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বিদ্যুৎ ক্রয়-বিক্রয় এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে যেসব জটিলতা ছিল তা অনেকাংশেই কেটে গেছে। যৌথ উদ্যোগে যে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হবে সেখানে বাংলাদেশ-ভারতের সমান অধিকার থাকবে। এতে প্রথমবার বাংলাদেশ এবং পরেরবার ভারতের প্রতিনিধি পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবেন। জেডিএ গঠনের পর এটিকে একটি জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে রেজিস্ট্রেশন করা হবে।
খুলনায় রামপালে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা। ব্যয়ের ৩০ শতাংশ অর্থের যোগান দেবে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। আর ভারতের ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার করপোরেশন দেবে ৭০ শতাংশ অর্থের যোগান। কিন্তু এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড একক কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। বিরোধ নিত্তির বিষয়টিও বাংলাদেশের হাতে থাকছে না। ভারতের সাথে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ বিনিময় প্রটোকল চুক্তি নেই যেমনটি বাণিজ্যিক বা অন্যান্য ক্ষেত্রে আছে। এছাড়া এমন কোনো আইনও নেই। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড অধ্যাদেশেও কোনো বিনিময় বা অন্য দেশের সাথে যৌথ চুক্তির বিধান নেই। আগেতো নিজের দেশে আইন তৈরি করতে হবে। এ ধরনের চুক্তি হবে আত্মঘাতী। ভারত বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের ওপর আধিপত্য বিস্তার করতেই এসব করছে। তিনি আরও বলেন, এসব করে সব কিছুর কর্তৃত্ব ভারতের হাতে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। ভারত থেকে বিদ্যুৎ আনবেন, দাম ঠিক করবে ভারত, কখন বিদ্যুৎ দেবে বা না দেবে এসব কর্তৃত্বও থাকবে ভারতের হাতে।
এই হলো দু দেশের মাঝে সম্পরকো । যেখানে একতরফা ভারতের প্রয়োজন মেটানোই হলো এ দেশের যে কোন সরকারের নীতি । আঞ্চলিকভাবে মোড়ল ভারতের হাতকে শক্তশালী করে সাম্রাজ্যবাদ তার প্রয়োজন মেটাচ্ছে ।