ছবিঃ আম্রিকান মিলিটারির নিউক্লিয়ার টেস্ট। ২৫ জুলাই, ১৯৪৬।
ছবির সুত্রঃ উইকিপিডিয়া।
নিউক্লিয়ার পাকিস্তানঃ ক্যামনে কি??? (এক/চার)
(আগের পর্বের পর......।)
পাকিস্তানে ফেরত আইসা তার মিটিং ছিল প্রথমে এক আর্মি জেনারেলের সাথে। মিটিং এ যাইয়া কাদির খান দেখে খালি জেনারেল না সেই জেনারেলের সাথে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ভুট্টো আসছে!!! ব্যাপারটার গুরুত্ব বুইঝা ওইখানে কাদির খান একটা সেই লেভেলের প্লান উপস্থাপন করল। ভুট্টো তার প্লান এপ্রুভ কইরা দিল জাগার উপ্রে! সাথে কইল টাকার কোন অভাব হবে না।
তার কাজ শুরু হয় পাকিস্তানি এটমিক এনার্জি কমিশনের আন্ডারে (পি এ ই সি)। পি এ ই সি এঁর তৎকালীন চিফ ছিল মুনির খান নামে এক ভদ্রলোক। ওই ভদ্রলোক অলরেডি এক আলাদা প্রোগ্রামে কাজ করতেছিল। আব্দুল কাদির খান (এ কিউ খান) দেখে যে মুনির খানের খালি একটা মাস্টার্স আছে, আর সে হইল পি এইচ ডি হোল্ডিং রিসার্চার। এই ব্যাপারটা তার ইগোতে লাগছে। সে কোনমতেই মুনির খানের আন্ডারে কাজ করবে না। সোজা যাইয়া ভুট্টোর কাছে নালিশ যে মুনির খান ভাল ম্যানেজার না, সে প্রজেক্টকে আগাইতে দিচ্ছে না!!! শুইনা ভুট্টোর মাথায় সেই লেভেলের একটা আইডিয়া আসলো। এই ধুরন্ধর লোক একজনরে আরেকজনের পিছনে লাগাইয়া দিল।
মুলতঃ তখন বোমা বানাবার দুইটা রাস্তা খোলা ছিল পাকিস্তানের সামনে। একঃ নিউক্লিয়ার রিয়াক্টরের ইউজড ফুয়েল থেকে প্লুটোনিয়াম রিপ্রসেস করে বাইর করা, আর দুইঃ সরাসরি ইউরেনিয়াম এনরিচ কইরা সোজা বোমা বানানো। ভুট্টো কইল, ঠিক আছে তুমি সরাসরি আমার কাছে রিপোর্ট করবা, তোমারে আর মুনির খানের কাছে রিপোর্ট করা লাগবে না। বেসিক্যালি মুনির খান কাজ করবে প্লুটোনিয়াম রিপ্রসেস করে বোমা বানানোর কাজ আর এ কিউ খান করবে ইউরেনিয়াম এনরিচমেন্ট করে। দুইজন একে ওপরের সাথে কম্পিট করবে, তাতে কইরা একজন সাকসেসফুল হইলেই হবে। কম্পিটিশন এদেরকে আগে কাজ ফিনিশ করার মোটিভেশন দিবে।
এখন কথা হইল পাকিস্তান হইল গরিব কান্ট্রি, এরা যদি নিউক্লিয়ার বোমা বানাইতে চায় তাইলে যে খরচ লাগবে সেই খরচ যোগাইতে হইলে তাদেরকে আসলেই “ঘাস” খাইয়া থাকা লাগবে। সো ভুট্টো মুসলিম দেশগুলার লিডারদের সাথে কথা বলা শুরু করল, যে ওরা যাতে প্রজেক্ট ফাইন্যান্স করে। বিনিময়ে পাকিস্তান তাদের প্রজেক্ট শেষ হইলে পরে তাদেরকেও টেকনোলজি সাপ্লাই দিবে যাতে ওরাও বোমা বানাইতে পারে! মজার ব্যাপার হইল যে তখন কোন মুসলিম দেশের হাতে কোন নিউক্লিয়ার বোমাই ছিলনা!!! প্রস্তাবটা শুইনা বেশ কয়েকটা দেশ রাজি হইল। গাদ্দাফি ইমিডিয়েটলি আশি মিলিয়ান ডলার স্যুটকেসে কইরা পাঠাইয়া দিল। সৌদি আরবও পরে টাকা দিছে।
একটা ব্যাপার না বলেই না যে আম্রিকা সহ সারা দুনিয়া মনে করছে যে পাকিস্তানের ইউরেনিয়াম এনরিচ কইরা বোমা বানানোর মত টেকনিক্যাল ক্যাপাবিলিটি নাই। ওরা মনে করছিল যে প্লুটোনিয়াম রিপ্রসেস করেই ওদেরকে বোমা বানাইতে হবে। তখন ফ্রেঞ্চরা একটা প্লুটোনিয়াম রিপ্রসেসিং প্লান্টের চুক্তি করছিল, আর আম্রিকা ওইটা ঠেকাইয়া রাইখা মনে করছিল কাম হইয়া গ্যাছে! এদেরকে আপাতত ঠেকাইয়া দেওয়া গ্যাছে। আর পাকিস্তানও ওইটাই চাইছিল যাতে কইরা সবার চোক ফাকি দিয়া ওরা কামটা সাইরা ফালাইতে পারে।
টাকা পাইয়া এ কিউ খান “কাহুটা” নামক একটা প্লেসে কন্সট্রাকশন প্রজেক্ট শুরু করে। পাকিস্তান সরকার সারা দুনিয়ার বিভিন্ন জায়গায় পাকিস্তানের যত প্রজেক্ট রিলেটেড সায়েন্টিস্ট/টেকনিশিয়ান আছে সবাইকে দেশপ্রেমের দোহাই দিয়া দেশে আইনা প্রজেক্টে লাগাইয়া দিল(যারা টাকার মায়া ছাইড়া আসছিল আরকি!)। কিন্তু সমস্যা হইল কংক্রিটের বিল্ডিং বানানো এক কথা আর আল্ট্রা-প্রিসিসন ইউরেনিয়াম এনরিচিং সেন্ট্রিফিউজ বানানো আরেক কথা। যেই পাকিস্তান একটা সামান্য সুই ঠিকমত বানাইতে পারত না সেই পাকিস্তান ক্যামনে এই মালগুলা বানাবে? উপায় একটাই, কম্পোনেন্টগুলা আমদানি কইরা নিজে অ্যাসেম্বল করা! কিন্তু সমস্যা হইল এই কম্পোনেন্টগুলাএ ম্যানুফাকচারিং আর এক্সপোর্ট হাইলি রেগুলেটেড। চাইলেই কেনা যায় না। বেচতে স্পেশাল পারমিশন লাগে।
এই সমস্যার সমাধান হইল ব্ল্যাক মার্কেটে মালামালগুলা কেনা। যেমন কইরা এ কিউ খান ইউরেঙ্কোতে বিনা সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্সে কাজ করছে, তেমন কইরা অনেকেই আছে যারা কম্পোনেন্টগুলা বিক্রিও করবে। ইউরেঙ্কোতে কাজ করার সুবাদে এ কিউ খান কম্পোনেন্ট সাপ্লাইয়ারদেরকে চেনে/এটলিস্ট জানে। সো পাকিস্তানের আই এস আই এর সহযোগিতায় এ কিউ খান একটা ইন্টারন্যাশনাল চোরাকারবারিদের একটা রিং এস্টাব্লিশ করল। যাদের কাজই হইল বিভিন্ন দেশে ফ্রন্ট কোম্পানি বানাইয়া আইটেমগুলা অর্ডার দেওয়া। কিছু কিছু আইটেম আছে যেইগুলা নিউক্লিয়ার প্লান্টে যেমন ইউজ করা যায় তেমন কইরা অন্যান্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্লান্টেও ইউজ করা যায়। ওইগুলা কেনা কিছুটা সহজ ছিল তাদের জন্য। কিন্তু কিছু কিছু আইটেম ছিল যেইগুলা স্ট্রিক্টলি ইউজ হয় এনরিচমেন্ট প্লান্টে ঐগুলা কসরত কইরা যোগাড় করা লাগছে। নরমালি এরা আইটেমগুলারে কাস্টমসে এগ্রিকালচারাল ইকুইপমেন্ট/টেক্সটাইল প্লান্টের মেশিনারিজ বইলা আমদানি করত।
বিভিন্ন দেশের এক্সপোর্ট আইন বিভিন্ন। এক দেশে একটা আইটেম বিক্রিতে বাধা থাকলে আরেকটা দেশে দেখা যাচ্ছে কোন বাধা নাই। ওইগুলা ওই দেশ থেকে প্রকিউর করা হইছে। আর কোন কোন ক্ষেত্রে সেলাররা জানে যে এই আইটেমগুলা পাকিস্তানে বোমা বানানোর কাজে ব্যাবহার করা হবে। কিনত ওরা প্রিটেন্ড করছে যে ওরা জানে না। আর কোন শেষে কোন আইটেম এক্সপোর্ট কনট্রোলড না হইলে ওই ওই দেশে ওই আইটেম এক্সপোর্ট করলে কোন ক্রাইম হয় না। আর যেহেতু আইটেমগুলা চোরাই পথে কেনা হইতেছে, সো প্রাইস বেশি দিয়া কেনা লাগছে। আর সেলার/স্প্লাইয়ারদের লাভের ভাগটাও বেশি। তারাও চামের উপ্রে বেচছে!
তথ্যসুত্রঃ "The Nuclear Jihadist: The True Story Of The Man Who Sold The World's Most Dangerous Secrets And How We Could Have Stopped Him" - By Douglas Frantz and Catherine Collins
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৮:২৫