ছবিঃ টাইম ম্যাগাজিন
১৯৬৫ থেকে ১৯৭১ এই ছয় বছরের মধ্যে ইন্ডিয়ার হাতে পরপর দুইবার যুদ্ধে হাইরা (পড়তে হবে বলাৎকার হইয়া) পাকিস্তান টের পায় যে ইন্ডিয়ার সাথে তারা কনভেনশনাল আর্মি দিয়ে পারবে না। তাদের অবশ্যই একটা নিউক্লিয়ার ডিটারেন্ট দরকার। তার উপ্রে ইন্ডিয়া যখন ১৯৭৪ এ “স্মাইলিং বুদ্ধা” কোডনামে তাদের প্রথম নিউক্লিয়ার টেস্টটা চালাইয়াই ফালাইল, তখন পাকিস্তানের ইন্ডিয়ার বিচ হইয়া যাওয়ার মত একটা অবস্তা তৈরি হইয়া গেল। রাইগা মাইগা ভুট্টো কইল আমরা নিউক্লিয়ার বোমা বানামুই, “দরকার হইলে ঘাস খাইয়া থাকমু” কিন্তু বোমাটা আমরা মাস্ট বানামু। এই সময় মেঘ না চাইতেই বৃষ্টির মত করেই নিউক্লিয়ার সায়েন্টিস্ট আব্দুল কাদির খান ভুট্টোর কাছে চিঠি দিয়া হেল্প করার প্রস্তাব করে। মাগার কে এই আব্দুল কাদির খান?
আব্দুল কাদির খানের জন্ম হইছিল ইন্ডিয়ার ভূপালে। ভারত উপমহাদেশ ভাগের সময় ইন্ডিয়ায় অবস্থিত মুসলমানদের উপর আসলেই ভয়াবহ রকম অত্যাচার নির্যাতন করা হয়। এগার-বার বছরের কাদির নিজের চোখে হিন্দুদের হাতে মুসলমানদের গা-শিউরানো নির্যাতন দেখে-দেখে তার মনে ভয়াবহ রকম হিন্দু/ভারত বিদ্বেষ তৈরি হয়। এই বাচ্চা কাদিররে একাই ট্রেনে করে ভূপাল থেকে লাহোর জান হাতে নিয়া ইন্ডিয়া থেইকা পালাইতে হয়। রাস্তায় সে যে পরিমাণ ভায়োলেন্স দেখে তাতে সে তখনই ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেবার প্রতিজ্ঞা করে।
পাকিস্তান তখন বেশ গরিব দেশ ছিল/কোন মেজর ইউনিভার্সিটি ছিল না। পাকিস্তান সরকার স্কলারশিপ নিয়া ছাত্রদের বাইরে যাওয়াটা এনকারেজ করত। কাদির কলেজ শেষ কইরা এইরকম একটা স্কলারশিপ লইয়া বাইরে যায়। সে বেলজিয়ামের একটা ইউনিভার্সিটি থেকে পি এইচ ডি নেয়। তারপর সে সেন্ট্রিফিউজ বানানোর কাজে ব্যাবহৃত হাই-স্ট্রেন্থ মেটাল নিয়া একটা রিসার্চ ল্যাবে কিছুদিন কাজ করে। ওইখানে কাজ করা অবস্থাতেই সে ইউরেঙ্কো নামের একটা সেন্ট্রিফিউজ/ইউরেনিয়াম এনরিচমেন্ট করার প্রতিষ্ঠানে কাজ পায়। এরই মধ্যে সে ডাচ আর জার্মান দুই ভাষাতেই মুটামুটি দক্ষ হয়ে উঠে।
এই সময় সেন্ট্রিফিউজ/রেডিওএক্টিভ ম্যাটেরিয়াল নিয়ে সহজে বাইরের কাউকে কাজ করতে দেওয়া হইত না। ইউরেঙ্কোর সেই ফ্যাসিলিটিতে কাজ করতে ডাচ সরকারের স্পেশাল সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স লাগত। কিন্তু প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ারের এটমস ফর পিস প্রোগ্রামের আন্ডারে নিউক্লিয়ার প্রোগ্রাম এক্সপান্ড হৈতে থাকায় নিউক্লিয়ার সাইন্টিস্টদের সরটেজ হইয়া যায়। ফলাফলঃ ইউরেঙ্কো ওইসব সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স বাদ দিয়া সরাসরি কাদিরকে কাজে লাগায় দেয়।
ঠিক তখনই ১৯৭১ এ ইন্ডিয়ার হাতে পাকিস্তানের সেকেন্ড বলাৎকারের পর তারা নিউক্লিয়ার প্রোগ্রাম শুরু করে দেয়। কাদির খান খবর শুইনা ভুট্টো হেল্পের প্রস্তাব পাঠায়। ভুট্টো কাদিরের নামে খোঁজখবর নিয়া দেখে যে কাদির আসলেই একটা কাজের জিনিস। তারপর সিস্টেমে ওরে পাকিস্তানে আইনা হাল্কা এসপিওনেজ ট্রেইনিং দিয়া বলে আপাতত তোমার পাকিস্তানে দরকার নাই, তুমি ওইখান থেইকা ডিজাইন/প্রজেক্ট চুরি কইরা আন।
এর কিছুদিনের মধ্যে ডাচ ইউরেঙ্কোতে জার্মান সাইন্টিস্টদের ডিজাইন করা কাটিং-এজ একটা সেন্ট্রিফিউজের ডিজাইন আইসা পৌছায়। ডিজাইনগুলা লেখা ছিল জার্মান ভাষায়। কিন্তু সমস্যা হইল ডাচ ইউরেঙ্কো ফ্যাসিলিটিতে অন্য কেউ জার্মান জানত না। কাদিরই ছিল একমাত্র লোক যে টেকনিক্যাল ব্যাপারগুলার সাথে ভাষাটাও বুঝত। কিন্তু সমস্যা হইল ভেরি হাই সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স ওয়ালা কয়েকজন ছাড়া এই ডকুমেন্টগুলায় কারো এক্সেস নাই। আর কাদির আবার কোন আবাল। যেহেত ওই ফ্যাসিলিটিতে ওই একমাত্র জার্মান প্লাস ডাচ জানত, ডাচ ইউরেঙ্কো সব রেগুলেশন বাদ দিয়া কাদিররেই এই ট্রান্সলেশনের কাজ করতে দেয়। আর সে এক্সিডেন্টলি পাইয়া যায় হিরার খনি!!! কাদিরের নাকি আবার ফটোগ্রাফি শখের জিনিস! সে এই ডকুমেন্টগুলারে জার্মান থেকে ডাচে অনুবাদের পাশাপাশি উর্দুতেও অনুবাদ করত। তার উপ্রে আবার ছবিও নিত। লোকে কিছু বললে তারে বলত উর্দুগুলা হইল নোট! কেউ কিচ্ছু মনে করে নাই, মনে করত দিস ম্যান ইজ ওয়ার্কিং হার্ড!!!
এইভাবে কিছুদিন পর যখন মুটামুটি সব ডিজাইন চুরি করা ডান, তার এক কলিগ ব্যাপারটা টের পাইয়া যায়, সে কাদিররে ডাচ সিক্রেট সার্ভিসে বি ভি ডি'র কাছে রিপোর্ট করে। তারা ফলো কইরা দেখে ঘটনা সত্য। ওরে এরেস্ট করার আগে তারা সি আই এ রে জানায় যে কাহিনী এই। মাগার সি আই এ আম্রিকান পলিটিক্যাল রিয়েজনে মানা কইরা দেয় যে তারে গ্রেপ্তার করার দরকার নাই। ওরে আপাতত অবজারভ কর। পুরা রিংটারে ধরা লাগবে বইলা ডাচদেরকে সান্ত্বনা দেয়।
কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই কাদির কাহিনী টের পাইয়া যায় যে তার পিছনে ফেউ লাগানো হইছে, তারপর রুটিন ভ্যাকেশনের নাম কইরা পাকিস্তানে যাইয়া আর ফেরত যায় নাই। এর মধ্যে অবশই যত প্লান/ব্লু-প্রিন্ট লাগে সব পাকিস্তানে পাচার কইরা সারা…।।
তথ্যসুত্রঃ "The Nuclear Jihadist: The True Story Of The Man Who Sold The World's Most Dangerous Secrets And How We Could Have Stopped Him" - By Douglas Frantz and Catherine Collins
চলবে...।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:১২