রাত্রির নৈ:শব্দ চিরে তুলে আনি এক একটা অমূল্য শব্দ,
আর মসৃণ দামী কাগজের বুকে রক্ত জমে ক্রমে।
প্রকৃত বাণী দাও আমায় হে কাব্যকলার দেবী মিউজ,
বল যন্ত্রণার্ত প্রহর আর অপূর্ণ কামনাগুলোকে
কৃষ্ণবর্ণে চিত্রিত করার গোপন শৈল্পিক কৌশল।
অপ্রাপ্তির যন্ত্রণায় পুড়ে পুড়ে নীল হবো অহর্নিশি,
তবু কেন ভাবছি সেইতো পাওনা!
প্রত্তুত্যরে মেয়ে বলে, "কেন মিছে প্রমাণ চাও?"
সংগোপনে যে বিশ্বাস মানুষ ধারণ করে তারতো কখনো প্রমাণ হয় না!
অথচ তুমি জানো ঈশ্বর- হোক সিদ্বান্তহীন,
তবুও বিশ্বাসের প্রমাণ নিয়ে সভ্যতার উষালগ্ন হতে বিনিদ্র রাত্রি মানুষের পার হবেই।
কারণ ভালোবাসিতো তাই,
তোমায় আমি বুঝতে চাই পুরোটাই।
উষার পূর্বে যখন ঝাঁপসা আয়নায় প্রথম দেখেছিলাম তোমার অস্পষ্ট প্রতিফলন,
অন্তকর্ণে শুনেছিলাম মরুর অন্ধকারে জলের কোলাহল;
সেই প্রতিফলন আজ দেখতে চাই দর্পণে পূর্ণচোখে,
অস্তিত্বের শেষাংটুকু লয়ে লীন হবো আজ তোমার জলে।
বুভূক্ষ দস্যুর নির্দয় হাতে,
আস্বাদ নেবো রহস্যময়তার সমস্ত আবরণ ছিঁড়ে-খুঁড়ে।
রাখতে চাইনে আজ এতটুকু অপূর্ণতা!
কিন্তু যতই বুঝতে চাই তোমায়, ততই আরো অস্পষ্ট হয়ে আসে সব।
নগরীর দ্বার থেকে দ্বারে;
ঘুরছি মিছে আজও,
শতাব্দী পূর্বেকার প্রাচীন আঁধারে!
ছায়ামানবী,
তুমিতো জানোই শুধু ছায়া হলেও চলবে আমার; কারণ ছায়া যেহেতু আছে সেহেতু কায়াও আছে... আর কায়া সর্বদাই বাস্তব; কিন্তু মিছে মায়ায় বিশ্বাস রাখতে বলো না দয়া করে। এ জগত ক্রমে যতই স্পষ্টতর হয়েছে আইরিসে, ততই তার বিকটাকৃতি মূর্তিমান রূপে আতঙ্কিত আমি তোমার বিমূর্ত দেহে আশ্রয় খুঁজেছিলাম। এমন কাউকে খুঁজেছিলাম যার মাঝে সূর্যের প্রখরতা আর চাঁদের স্নিগ্ধতা দুইই আছে।
মনে পড়ে ওজিগিয়া থেকে যাত্রা শুরু হবার পর পসাইডোনের আহবানে
নির্মম মেঘেরা যখন নিয়ে এসেছিল চতুর্দিকব্যাপী প্রবল ঝড়?
উত্তর থেকে তুষার-ঝড়?
মহাসমুদ্রের মাঝখানে একখানি ভাঙ্গা নৌকো আর আমি;
তবু তোমায় স্মরণ করেছিলাম।
ক্যাডমাসকন্যা ইনো হয়ে মায়াবস্ত্র পরিয়ে দিয়েছিলে আমায়।
অথচ তার আগে পার করে দিলে উত্তরবিহীন আটটি বছর,
প্রশ্ন করিনি কেন...বিশ্বাস হারাইনি এতটুক।
সাধারণ মানুষের চোখে তুমি ছিলে অদৃশ্য-
আমি খুঁজেছিলাম তোমায় পূর্ণদৃষ্টিতে।
আজ তোমার চোখের অন্তর্বেদনা ফিকে হয়ে আসছে ক্রমে,
ভাবনা ঘুরে-ফিরে আসে-
কখন তুমিই হয়ে যাও বিশ্বাসঘাতিনী ক্লাইতেমনেস্ত্রা!
"তুমিওতো হতে পারো!"
কর্পোরেট ঈশ্বরের ছায়া ক্রমে ব্যপ্তি বাড়ায় আরণ্যক সবুজ ছাড়িয়ে,
সমানুপাতে বাড়ে সাইকোলজিক্যাল এনট্রপি।
তোমার মস্তিষ্কের সবটুকু অঞ্চল;
প্রকৃতিবিজ্ঞানী আমিও দেখতে চাই মাইক্রোস্কোপে ছিঁড়ে-খুঁড়ে।
আবিষ্কার করতে চাই সবকিছু ব্যাখার তত্ত্ব-
যে তত্ত্ব নিজেই নিজকে ব্যাখ্যা করবে।
প্রায় একযুগের সংগ্রামে হয়তো স্তব্ধ হয়ে যেতাম আমি।
হয়তো ইলেকট্রনেরা একসময় ক্লান্ত হয়ে স্তব্ধ হয়ে যেত?
বদলে যেতে তুমি পেনেলোপ?
তোমায় শ্বাসত ভেবে সর্বদা বেদীমূলে সঁপেছি নিজের সমস্ত বিশ্বাস;
অথচ রক্তমাংসের তুমি আজ সমাজ-সংস্কৃতি-রাষ্ট্রের প্রতিফলন বৈ ভিন্ন কিছুতো নও!
বিশ্বাস ভেঙ্গে যাবার পর তাই ফের নির্বাসনে এসেছি জনমানবহীন এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপে,
এখানে মৃত্তিকার গহীন থেকে শুধুই হাহাকার ভেসে আসে...
বাণী দাও হে দেবী মিউজ যাতে মূর্ত করে তুলতে পারি ওকে প্রাকৃতকাব্যে...
তবে কি মিছেই এতকালের ব্যর্থ প্রার্থনা তোমার প্রতি?
ঝঞ্চা-ঝড়-বজ্রপাতে আজ ইথাকার চারিপ্রান্ত উত্তাল করে তোল হে পসাইডোন,
ইলেকট্রনেরা গর্জে উঠুক প্রমত্ত ক্রোধে,
অবারিত আজ আমার রাজ্যের দ্বার।
"তবে কি তুমিও বিশ্রাম নিয়েছো কার্যকারণ সূত্রের 'পরে প্রকৃতির রোষের ভার চাপিয়ে?"
উচ্ছাসের জোয়ারে চাপা পড়েছিল ক্যালিপসোর অস্ফূট আর্তনাদ; সেদিন শুনিনি হায়!
যে আমায় ভালোবেসেছিল নিজের সমস্ত সঁপে।
যে দর্পণে শুধুই প্রতিফলন দেখা যাবে,
বস্তুবাদী শতকে তার ওপাশে সিলভারের প্রলেপ।
আজ তুমিও নেই, ক্যালিপসোও নেই।
শূন্য অলিম্পাস পাহাড়।