ছোট গল্প (নাম ঠিক করতে পারিনি এখনও)
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
কালো লিকলিকে সেই সাপটি, বেহুলার বৈধব্যই ছিল যার আজন্ম সাধনা, সবার অলক্ষে আজ আবার বাসর পেতেছে।
যে বাড়িটিকে ঘিরে এত উত্তেজনা সেটার মেঝে থেকে শুরু করে একেবারে দেয়াল পর্যন্ত দেবী বসুমতি কার্পন্য করেনি তার অঙ্গের ব্যবচ্ছেদ ঘটাতে।গ্রামের অন্য দশটি পরিবারের মত এই বাড়িটিতেও সকালের সূর্য সুপাড়ি গাছের ফাঁক দিয়ে মাটির দেয়াল আর বারান্দার মেঝেতে এসে পরে। তবুও শোবার ঘরের ভূতুরে অন্ধকারকে এতটুকু সন্ত্রস্ত করতে পারেনি কোন প্রাচীন প্রযুক্তি।বোধহয় এজন্যই গৃহকর্তৃীর স্বপ্নে দেখা সাপের ফণার মধ্যে জ্বলজলে চোখদুটিকে মৃত্যুর মতই বাস্তব মনে হয়েছে। কর্তৃী যদিও চেয়েছিল একটি শান্তিপূর্ন সমাধান, কিন্তু কর্তার তার পরিবারের প্রতি অসম্ভব দায়িত্ববোধ সেটা আর হতে দেয়নি। তাই দুধকলার বদলে সাপুড়ের উপরেই তাদের শেষ ভরসা।
ইতিমধ্যেই খবরটি ছড়িয়ে গেছে আশেপাশের বাড়ীগুলোতে তাই লোকজনও জড়ো হচ্ছে আস্তে আস্তে।দুইটি বাড়ির পরের বাড়িটি থেকে সদ্য বিবাহিতা মেয়েটিও দেখতে এসেছে সদ্যসমাপ্ত একটি বাসরের নির্জাস থেকে প্রাপ্ত সাপের প্রতি শত্রুজ্ঞানের অনুভূতি নিয়ে।হয়ত অবচেতনে।ধান সিদ্ধ হতে আরও কিছুটা সময় প্রয়োজন তবুও তর সয়নি কিশোরিটির একপলক দেখে নেয়ার, নেহাতই কৌতুহল হয়ত।দুষ্ট ছেলেগুলোর কাছে এর চেয়ে আপাতত লোভনীয় কোন অভিযান নেই হয়ত তাই সুবোধ বালকের মত একমনে প্রত্যক্ষ করছে সাপুড়ের ভেলকিবাজি।গ্রামের মাতব্বর গোছের লোকটি যে সবকিছুই নিয়েই উদ্বিগ্ন, খবরটি শুনে তার বসে থাকার কথা নয় তা যতই কম গুরুত্বপূর্ন হোক না কেন। তাই এই কর্মযজ্ঞের দর্শকসংখ্যা নেহাত কম নয়।বাড়ির কর্তা সবকিছু ঠিকঠাক মত চলছে কিনা সাবধানী চোখে তা পর্যবেক্ষন করে যাচ্ছেন।আগে থেকেই ঘরের চারপাশ অব্যবহৃত কারেন্ট জাল দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে যা অনেকটাই ছেঁড়া ফাঁড়া তবুও অগাধ বিশ্বাস এই জালের উপরে।সাপুড়ে প্রয়োজনীয় বা প্রদর্শনীয় সব জিনিস কর্তাকে দিয়ে তার ঝোলার পাশে জড়ো করালেন।যদিও তার অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে এখনও বলতে গেলে কিছুই বের করেননি তিনি। বোধহয় এটা একধরনের কৌশল, দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষনের।
দর্শকদের অনেকের হাতেই লাঠি বা লাঠি সদৃশ বস্তু রয়েছে, কেউ হয়ত গৃহস্থলী কাজের মধ্য দিয়ে এসেছেন তাই অনেকের হাতে দা অথবা কাস্তে এমনকি বৃদ্ধার বেতের লাঠিখানাও যেন আজ তার নিরাপত্তার প্রধান হাতিয়ার হয়েছে।শুন্য ঘরটিতে যে গত রাতেও পুরো পরিবার রাত কাটিয়েছে এমনটি কার্ও কাছেই মনে হচ্ছেনা।শিশুটিও তাই ঘর থেকে চাদরটি নিয়ে আসার কথা চিন্তায়ও আনতে পারছে না। একটু পরেই সাপুড়ে ঢুকবেন ঘরটিতে আর অবসান ঘটাবেন সমন্ত দুশ্চিন্তার।
স্বাভাবিক জীবন যাত্রাকে স্থবির করেছে যে স্বপ্ন তা বাস্তবতার ছোঁয়া পেয়েছে চার পাচ বছর বয়সি একটি শিশুর সাক্ষ্যতে।অথচ অন্য কোন বিষয় হলে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়া হত দৃষ্টিভ্রম বলে।আজ সে অনেকটাই আলোচনার বিষয়বস্তু নিজেরই অজান্তে।
দর্শকদের মধ্যে ইতিমধ্যেই কিছুটা চাপা উত্তেজনা লক্ষ্য করা গেছে।কীভাবে শুরু হবে এই অভিযান আর কীভাবেই বা শেষ? সাপুড়ে তার ঝোলার দিকে হাত বাড়াতেই বৌঝিরা বোধহয় তাদের হৃদপিন্ডের কয়েকটি স্পন্দনের ছেদ অনূভব করে ফেললেন।অভীজ্ঞ বৃদ্ধরা ঠিক ঠিক বলে দিতে পারবেন মন্ত্রোচ্চারনের মহেন্দ্রক্ষনকে, এই বুঝি উচ্চারিত হতে যােচ্ছ ইন্দ্রযজ্ঞের সেই অমোঘ শব্দাবলী যার প্রচন্ড তেজে আত্মাহুতি দিবে মর্ত্যের সর্পকূল।যদিও সদ্য কলেজ পাশ করা ছেলেটির তুমুল সন্দেহবাদিতাও তাকে দূরে ঠেলে রাখতে পারেনি একটি ভেলকিবাজি চাক্ষুস করা থেকে।অবশেষে আরবীয় যাদুকরদের মতই কালো বেড়ালের কংকালের অংশবিশেষের বদলে বধির সাপের জন্য সাপুড়ে তার ঝোলা থেকে বের করে নিলেন একটি কালো কুচকুচে বীন।যতটুকু উদাসীনতা নিয়ে কলেজপাশকরা সদ্য কৈশোরোত্তীর্ন ছেলেটি এই দৃশ্য প্রতক্ষ্য করল ঠিক ততটুকু বিস্ময়ের সাথে অপলক চেয়ে থাকে একটি কিশোর মায়ের কাছে শোনা গল্পের এমন সহজ অবলোকনে।মধ্যবয়সী বিধবাটির হয়ত হঠাৎ করেই মনে পরে গেল কোন ছায়াছবির দৃশ্যের কথা, অথচ তার স্বামীবিয়োগ সর্পদংশনে নয়।মাতব্বর গোছের সেই লোকটির উদ্বিগ্নতা পার হয়ে গেল প্রজন্ম থেকে প্রজন্মতর।দর্শকদের মধ্যে যে গোয়ালা সেও তার গরুর দুধ চুরির দায় থেকে নিস্তার দিতে চাইলনা সম্ভাব্য সাপটিকে।একটি শাসরুদ্ধকর অবস্থার মধ্য দিয়ে সবাই অপেক্ষা করতে থাকল এমন একটি সুরের যার মায়াজালে অন্ধকার ঘরের কোন একটি সরু গর্ত থেকে বের হয়ে অবলীলায় ধরা দেবে গৃহিনীর স্বপ্নে দেখা সেই সাপ।শুধুমাত্র সেই ছেলেটি আরও একবার সন্দেহপ্রবন হল সর্পের শ্রুতিযোগ্যতা নিয়ে।
সাপুড়ে বাজালেন না তার বীন, বদলে একটুকরো গাছরা বেশ ভক্তিভরে মুখে পুড়ে দিলেন মোহাবিষ্টের মত। দর্শক আরও একবার ধন্য হল একটি পবিত্র শক্তিধর গাছরার গুনের সমূহ প্রদর্শনীর কথা ভেবে।সাপুড়ে তার ঝুলি নিয়ে একটি অদ্ভুত অঙ্গভঙ্গীসহকারে আস্তে আস্তে এগুলেন ঘরের একমাত্র দরজাটির দিকে।ঘরে ঢুকবার আগেই সর্পদংশনের ভয়াবহতা আর যন্ত্রণার কথা মনে করিয়ে দিতে ভুললেন না পেশাদার সাপুড়ে। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও তাই সাপকে পাকড়াও করার দৃশ্যটি সরাসরি উপভোগ করার ভাবনাটি অনেককেই বাদ দিয়ে দিতে হল।তবু্ও এমন একটি মুহুর্তের সাক্ষী হওয়ার আনন্দ থেকে কেউই বঞ্চিত হতে চাইলেন না।
সাপুড়ে ঘরে ঢোকার কিছুক্ষন পরেই বেশ চিন্তাযুক্ত মনে বাইরে বের হয়ে অস্থিরভাবে পায়চারী করতে লাগলেন। মনে হল এ জিনিস তার আয়ত্বের বাইরে।গৃহকর্তা কিছুটা সংকোচ নিয়ে জানতে চাইলেন আরও কিছু প্রয়োজন কিনা। সাপুড়ে অস্ফুট স্বরে বাকসিদ্ধ ব্রক্ষ্মচারীর মত একটি শাবলের প্রয়োজনীয়তার কথা বললেন।গর্ত খুড়ে টেনে হিচড়ে বের করার কথা ভেবে যে শুধু বখে যাওয়া ডানপিটে ছেলেটিই উত্তেজনা অনুভব করল তা নয় বরং এটাকে বেশ স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যাশা করেছিল উপস্থিত জনতা।বীনের মায়াজালে বশীকরণ অথবা পাতালপুরীর রহস্য অগ্রাহ্য করে ইশ্বরের সৃষ্ট সেরা জীবের পায়ের কাছে মাথা নত করা।মনসার অসহায়ত্বে আজ মানুষের মুক্তিলাভ!
সাপুড়ে বেশ গম্ভীর একটি চাহনি দিয়ে আবার তার গুরুকে স্মরন করে সমস্ত বিদ্যার শ্রেষ্ঠ প্রয়োগটি ঘটাতে সচেষ্ট হলেন।গৃহকর্তৃী আরও একবার নিজেকে বেশ গুরুত্বপূর্ন ভাবলেন এমন একটি স্বপ্ন দেখার জন্য।মাতব্বরগোছের সেই লোকটি ইতিমধ্যে সাপের ভয়াবহতা সম্পর্কে তার দূরসম্পর্কে কোন এক আত্মীয়ের অভিজ্ঞতার কথা উপস্থিত মানুষজনকে শোনাচ্ছিলেন যেনবা তিনি নিজেই তার চাক্ষুস প্রমাণ।এমন একটি পরিস্থিতিতে সাপুড়ে দুএকজন সাহসী লোককে ভিতরে যেতে বললেন। স্বাভাবিকভাবেই সন্দেহবাতিক ছেলেটি আর ডানপিটে ছেলেগুলোর মধ্যে একটু নেতাপ্রজাতির ছেলেটি তাদের অভিজ্ঞতার ঝুলির সম্প্রসারনের কথা ভেবেই মনে হয় সর্বপ্রথম এগিয়ে আসল। গৃহকর্তাকে বুঝি পদাধিকার বলেই অন্যসব বিবেচনা তুচ্ছজ্ঞান করেই এগিয়ে যেতে হল।
রুদ্ধশ্বাসে মুহুর্তগুলো যাপন করছিল দর্শক।এই বুঝি খনিশ্রমিকদের মত মহামূল্যবান কোন পাথর নিয়ে অন্ধকার প্রকোষ্ঠ হতে বেরিয়ে আসবে তাদের প্রতিনিধিরা।অথবা শিকারী পূর্বপুরুষের সম্মান বাচাতে জীবন বাজি রেখে বধ করে নিয়ে আসবে প্রতিক্ষীত কোন শিকার।
অবশেষে ক্লন্তির ছাপ আর ধূলোমাখা শরীরর নিয়ে বিজয়ীর বেশে বেরিয়ে আসল উপস্থিত মানুষদের প্রতিনিধিরা।সাপুড়ের একহাতে বিশালাকার একটি সাপ অন্যহাতে ধূলিমাখা কয়েকটি ডিম। সন্দেহপ্রবন ছেলেটির হাতে শাবল, গাছড়ার গুন আর এইমাত্র গর্ত থেকে বের করে নিয়ে আসা সাপের শক্তিমত্তা নিয়ে যে এখনও সন্দিহান।ডানপিটে ছেলেটির হাতে সদ্য ত্যাগ করা সাপের একটি খোলস। গৃহকর্তার চোখমুখে একটি প্রশান্তির অভিব্যক্তি, তার হাতে একটি পুতুল, ছোট্ট মেয়েটি যেটি হারিয়ে বেশ বিষন্ন মনে কাটিয়েছিল একটি দিন।
সবাই যখন ঘর থেকে বাইরে বের হয়ে আসল উপস্থিত মানুষজন উল্লাসে ফেটে পড়ল। কেউ কেউ উত্তেজিত হয়ে সাপটিকে মেরে ফেলতে চাইল।ডিমগুলোকে মাটিতে ছুড়ে এটির নির্বংশ নিশ্চিত করতে চাইল।মাতব্বর লোকটি নেতৃত্ব দিতে থাকল জনগনের আবেগের।সবাই আপাতত আশংকামুক্ত হল। সাপুড়ে সাপটির দায়িত্ব নিতে চাইল আর ভ্রুনগুলো অপেক্ষা করতে থাকল একটি নিরাপদ জন্মলগ্নের জন্য।
আস্তে আস্তে ভীর পাতলা হতে থাকে।বাড়ি ফেরার পথে অনেকেই তারা রাষ্ট্রীয় প্রচারযন্ত্রে দেশের আইনশৃঙ্খলার জন্য সর্বোচ্চ ব্যক্তির দৃঢ় উচ্চারন শুনতে পেলেন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তার কঠোর অবস্থানের কথা। একটি সফল অভিযানের সমাপ্তির পরেও একে তিনি শেষ বলতে নারাজ। এ যুদ্ধ চলতেই থাকবে।তারা আরও একবার আশ্বস্ত হল, তারা নিরাপদ।
সাপুড়ে অপেক্ষা করতে থাকে আবার কখন তার ডাক আসে, কালসাপ নির্বংশ করার।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !
"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমিত্ব বিসর্জন
আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।
"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন
স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?
স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন