সাম্প্রতিক সবচে আলোচিত ইস্যু ছিল রিজার্ভ থেকে বিশাল অংকের টাকা হ্যাক হয়ে যাওয়া।
ইতিহাসের সবচে বৃহত অর্থ কেলেংকারীও সময়ের টানে মিইয়ে যাচ্ছে! আলোচনায় জায়গা করে নিচ্ছে অন্যকিছু। অন্য কোন বিষয়। গোল্ডফিস মেমোরি আমরা আবার মেতে উঠছি নতুন ইস্যু নিয়ে।
টাকাটা কিন্তু আর ফেরেনি। শূন্যতাটা কিভাবে পূরণ হবে? ভাবার লোক কই?
এতো গেল একটা ঘটনা! কিন্তু বিগত কয়েক বছরের নিয়মিত টাকা পাচারের ভয়াবহ ভয়ংকর কাহিনী পড়লে পিলে চমকে যাবে।
" ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিনানশিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, বাংলাদেশ থেকে শুধু ২০১৩ সালেই ৯৬৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার পাচার হয়েছে। টাকার অঙ্কে যা ৭৬ হাজার ৩৬১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। !!!!!!!!!!
২০০৮ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত আট বছরে দেশ থেকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় লুট হয়েছে ১০ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বিদেশে পাচার হয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা।
অর্থনীতিবিদরা ভাল বলতে পারবেন এর তাত্ত্বিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি কতটুকু! কিন্তু মোটা দাগে আমজনতা শুধু এইটুকুই বুঝি এই টাকাগুলৌ আর ফেরত আসবে না! অর্থের এই শূন্যতা কিভাবে পূরণ হবে?
টাকা পাচারের খাত এবং পদ্ধতি, পরিমানের টুকরো কিছূ তথ্য দেখুন:
@ দেশের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ------ ইসলাম (ছদ্মনাম)। গত বছরের শুরুতেই তিনি মালয়েশিয়ায় ‘সেকেন্ড হোম’ সুবিধা নিয়েছেন। এ সুবিধা পেতে মালয়েশিয়ার ব্যাংকে পাঁচ লাখ রিঙ্গিত বা এক কোটি টাকার বেশি অর্থ জমা রেখেছেন। এ ছাড়া নিয়ে গেছেন সারা জীবনের অর্জিত সব অর্থ-সম্পদ। আর এই পুরো টাকাটাই তিনি পাচার করেছেন হুন্ডির মাধ্যমে।
@ ভুয়া কোম্পানি ও জাল দলিল দিয়ে ব্যাংক থেকে ১১০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার পর লাপাত্তা বিসমিল্লাহ গ্রুপের লোকজন। বিদেশে টাকা পাচার করে নিজেরাও দেশত্যাগ করেছেন। একইভাবে ভুয়া দলিলে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে হলমার্ক গ্রুপ। এসব টাকার অধিকাংশ এখন বিদেশে পাচার হয়ে গেছে ----
@ ঢাকার একটি আইটি কোম্পানির কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করছেন ব্রিটিশ নাগরিক মি. পিটার। তিনি থাকেন অবশ্য থাইল্যান্ডে। তাকে এ দেশে আসতে হয় না। নামমাত্র সেই কনসালটেন্টের নামে মোটা অঙ্কের ফি থাইল্যান্ডের একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হয় নিয়মিত।
@ভুয়া দলিলে ব্যাংকঋণ নিয়ে পাচার : ভুয়া কাগজপত্র জমা দিয়ে ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কেটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করছে একটি সিন্ডিকেট। বিনিয়োগ, বৈদেশিক বাণিজ্যের নামে ঋণ নিয়ে পাচার করে দেওয়া হচ্ছে বিদেশে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিদর্শনে উঠে এসেছে, সাম্প্রতিক সময়ে অন্তত ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকিং খাত থেকে বেরিয়ে গেছে। এর সিংহ ভাগই গেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো থেকে। হলমার্ক ও বিসমিল্লাহ গ্রুপের ঋণ জালিয়াতির পর বেসিক ব্যাংকের প্রায় চার হাজার কোটি টাকার বেশির ভাগই পাচার হয়ে গেছে।
@বিদেশি নিয়োগের নামে পাচার : বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন প্রায় দুই লাখ বিদেশি। এর বাইরে ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন খাতে এ দেশে বিদেশি অবস্থান করছেন প্রায় ১২ লাখ। বাংলাদেশে এসে ব্যবসার কথা বলে বিভিন্নভাবে টাকা পাচারের অভিনব ব্যবসা ফেঁদে বসেছেন তারা। দেশের বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের যোগসাজশে দেশের টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিদেশিদের বেতন, ফি বাবদ প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে প্রায় পাঁচ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা পাচারের এটি হলো খণ্ডচিত্র। এমন অসংখ্য পদ্ধতিতে দেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। হুন্ডির মাধ্যমে যেমন পাচার হচ্ছে টাকা, তেমনি বিদেশি নাগরিকদের চাকরি দেওয়া বা কনসালটেন্ট নিয়োগের নামেও অর্থ পাচার হচ্ছে। ভুয়া দলিল দিয়ে হাজার কোটি টাকা ব্যাংকঋণ নিয়ে কোম্পানির লোকজন লাপাত্তা হয়ে যায়। ব্যাংকঋণের বিপুল অঙ্কের টাকা বিদেশে পাচার করার অসংখ্য ঘটনা ধরাও পড়েছে। সেকেন্ড হোমের সুবিধা নিয়েও দেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে। আমদানি-রপ্তানির সময় পণ্যের প্রকৃত মূল্য গোপন করার মাধ্যমে অর্থ পাচার নিয়মিত ঘটনায় দাঁড়িয়েছে।
যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের মধ্যে ইংলিশ চ্যানেলের ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলোতেও অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। পাচারের টাকা যাচ্ছে বিদেশের নামিদামি ক্যাসিনোতে। আর এসব অর্থ পাচারকারীকে দেখানো হচ্ছে ঋণখেলাপি হিসেবে। জানা গেছে, দেশের অন্যতম আর্থিক কেলেঙ্কারিগুলোর মধ্যে একটি হলো শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি। এর পরে রয়েছে, একের পর এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ লোপাট। হলমার্ক, বেসিক ব্যাংকসহ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংগুলোতে একের পর এক কেলেঙ্কারি। দেশ থেকে অর্থ পাচার ও সর্বশেষ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রিজার্ভের অর্থ চুরি। ২০০৮ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত আট বছরে দেশ থেকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় লুট হয়েছে ১০ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বিদেশে পাচার হয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা। পানামা পেপার্সে যে নামগুলো এসেছে তাদের
আদার বেপারীর জাহাজের খবর রাখতে নেই তত্ত্বে আমরা আমজনতা কমই মাথা খাটাই। ভাবি। হয়তো কোন সংবাদ হিসেবে এলে বা দূর্ঘটনা প্রকাশ হলে। কিন্তু বাস্তবতাতো তাতে থেমে নেই। ৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা নাই হয়ে যাওয়ার কোন প্রভাবই কি নেই আমাদের জীবন যাপনে???? মধ্যবিত্তের প্রতিদিনের দীর্ঘশ্বাসে! নিম্ন বিত্তের অভূক্ত রজনীতে! আমজনতার প্রতিদিনের জীবন যাপনে!
এদিকে আমরা আছি প্রচার আর প্রচারণায় বুদ হয়ে। মধ্যম আয়ের দেশে উন্নয়নে মডেলে পরিণত হবার পরিসংখ্যানে কত সেমিনার সিম্পোজিয়াম। পক্ষে বিপক্ষে। তথ্যের সত্যের আর মিথ্যার এক টাগ অব ওয়ার চলছে অজান্তেই। যতদিননা সত্য ন্যাংটো হয়ে প্রকাশ পায়!
আমি,তুমি, সে । আমার আছে ৫ লাখ। তোমার আছে ৫০ হাজার! তার আছে ৫ হাজার। গড়ে প্রত্যেকের আছে ১ লাখ ৮৫ হাজার। আমরা সবাই ধনী! উচ্চ আয়ের জীবন যাপন করারইতো কথা সবার। কিন্তু বাস্তবতা কি তাই!???
আইজুদ্দিন অত বোঝে না। সারাদিন খাটুনির পর চায় মোটা ভাত একটু সালুন! ব্যাস্ মধ্যম আর উচ্চ বোঝার জ্ঞানও নেই ইচ্ছাও নেই। কিন্তু বাস্তবতটা ঠিকই টের পায়। প্রতিদিনের খাবারের সানকিতে!
তথ্য কৃতজ্ঞতা: মির্জা মেহেদী তমাল ও আলী রিয়াজ
সংবাদ সূত্র:
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৯