অমর একুশের আবহে রেঙেছে বাংলা।
একদিকে শোক অন্যদিকে মাতৃভাষার অধিকার বিজয়ের আনন্দ। আন্তর্জাতিকতায়ও পূর্ন।
একুশের বইমেলা, একুশের চেতনা নিয়ে আবেগি, রাশভারী, উদ্দীপনাময় বক্তৃতা, কত শত কাব্যমালা।
অধিকার আদায়ের এই মাসে লাখো খবরের ভীরে একটা ছোট্ট খবর।
হয়তো অনেক অনেক অফলাইন আর অনলাইনের ভীরে অনেকেরই চোখে পড়েনি!
৪০ বছরে বাংলাদেশকে সবচেয়ে কম পানি দিচ্ছে ভারত
মৌসুমে ফারাক্কা ব্যারাজ দিয়ে গত ৪০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশকে সবচেয়ে কম পানি দিচ্ছে ভারত।
যৌথ নদী কমিশনের হিসাব মতে, ভারত এ বছর বাংলাদেশকে গড় প্রবাহের চেয়ে ৩৫ হাজার ১৪১ কিউসেক পানি কম দিচ্ছে।
সম্প্রতি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো একটি চিঠিতে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বরাবর জরুরি ভিত্তিতে মৌখিক প্রতিবাদ (নোট ভারবাল) পাঠানোর জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ চিঠির মাধ্যমে অনুরোধ জানিয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব হাওলাদার জাকির হোসেন স্বাক্ষরিত ‘২০১৬ সালের শুকনো মৌসুমে ফারাক্কায় গঙ্গার পানির লভ্যতা হ্রাস’ শিরোনামে গত ১৮ জানুয়ারি পাঠানো এ চিঠিতে এ কথা বলা হয়েছে।
এতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, ‘চলতি ২০১৬ সালের শুকনো মৌসুমের জানুয়ারি মাসের প্রথম ১০ দিনে ফারাক্কায় পরিমাপ করা মোট প্রবাহ ছিল ৭২ হাজার ৩৩৫ কিউসেক, যা ৪০ বছরের গড় প্রবাহের চেয়ে ৩৫ হাজার ১৪১ কিউসেক কম।
-----
ভারতকে জরুরি ভিত্তিতে নোট ভারবাল পাঠানোর অনুরোধ করে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এ চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, ‘চলতি ২০১৬ সালের শুকনো মৌসুমে ফারাক্কায় মোট পানির প্রবাহ ৫০ হাজার কিউসেকের নিচে নেমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখপূর্বক চুক্তির অনুচ্ছেদ ২ অনুযায়ী ৪০ বছরের গড় লভ্যতা মতো ১০ দিনওয়ারি ফারাক্কায় পানির প্রবাহ সংরক্ষণ করতে উজানের দেশ ভারতকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণের নিমিত্ত জরুরি ভিত্তিতে ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে নোট ভারবাল পাঠানোর জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’
খবরটা পড়ে অব্দি নিরবে বসে ছিলাম।
আমাদের অসহায়তা, দৈনতা, রাজনৈতিক, সামাজিক সচেতনতার অভাব, আমাদের উদাসীনতা, হঠাৎ বিভিন্ন চেতনার জোয়ারে ভাসা, সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছিল। আমরা যেমন আবেগি তেমনি উদাসীন!
নইলে এভাবে পদ্মার এই পরিণতি হয়- !!!!
আর আমরাও যেন নিরবে সেই পরিণতিরই শেষ দেখার অপেক্ষায় অপেক্ষমান!!
শব্দের চেয়ে ছবি কথা বলে বেশি
তাই সেই কষ্টকে চলুন ছবিতেই অনুভব করি..
পানিতে মারার নীল নকশা....ব্যারেজের পানি প্রত্যাহার
মাওলানা ভাসানির ঐতিহাসিক ফারাক্কা অভিমুখি লং মার্চ
ওপারেতে থৈ থৈ জল.. টই টুম্বুর
প্রাণের প্রাচুর্যে ভরা ওপার.... ঝলমলে জীবন
পানির প্রবাহে অধোগতি...
এপারেতে হাহাকার....
দীর্ঘশ্বাসের ছড়াছড়ি পরতে পরতে
আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম কি আমাদের ক্ষমা করবে?
আমাদের প্রাণ নদীমাতৃক বাংলার প্রধান প্রাণের মৃত্যুতে আমরা কেবলই দর্শক হয়েই থাকব!!
পদ্মাকে বাঁচাতে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরনে সরকার, কর্তৃপক্ষ এবং আন্তর্জাতিক সমর্থন পেতে কি এ বিষয়ে অনলাইন আবেদন/স্বাক্ষর অভিযান চালানো যায় না? যারা এই বিষয়ে অভিজ্ঞ ভেবে দেখতে পারেন।
ফেসবুকের পোকা যারা তারা কি একটু দেশ, নদীকে ভালবেসে এই বিষয়ে নিয়মিত ষ্ট্যাটাস, একটা বিশেষ পেইজ বা স্পেশাল কোন ক্যাম্পেইন চালাতে পারেন?
মাঝে মাঝে হ্যাকার হতে ইচ্ছে করে- এই সব ভাবনা মাথায় এলে। দেশ, জীবনের মৌলিক বিষয়ে এহেন উদাসীনতা দেখলে মনে হয় হ্যাকার হলে অন্তত ওদের প্রযোজ্য সাইট হ্যাক করে মিনিমাম ধাক্কা টুকু দেয়া যেতো- তোমরা অন্যায় করছো।
আমাদের জলের অধিকার কেড়ে নিয়েছো
আমাদের প্রাণের অধিকার
প্রকৃতির স্বাভাবিকতা নষ্ট করেছো
গঙ্গার গলাটিপে মেরেছো
প্রাণীদের বাস্তুহারা করেছো
জলজ জীবন জীবিকা হরণ করেছো
আমাদের দেশটাকে মরুভূমি বানিয়ে দিচ্ছো.....
আমরা তোমাদের এই নীতিকে ঘৃণা করি!!!
এখন নাকি সামাজিক যোগাযোগের বিপ্লবের সুসময়। তবে তাই হোক। সামাজিক সাইটেই হোক ন্যায়ের লড়াই। যে যার অবস্থান থেকে!
দেশ, মাটি, নদী মানুষ, প্রাণকে ভালবেসে! একুশের চেতনায়। অধীকার আদায়ের চেতনায়। মাতৃভাষার মতো মাতৃভুমির প্রাণ নদী অধীকারের চেতনায়। চেতনার বালিয়াড়িতে মৃত স্বপ্নেরা জেগে উঠুক ফিনিক্স পাখির মতো। অমর অব্যয় অজেয় ২১শেতে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৫৪