ইদানীং বাশাইর বাজার কমিটির কয়েক জনকে অযথাই ঘামতে দেখা যায় অথচ সাধারণ মানুষগুলো মাঘের শীতে মোটামুটি কাবু হয়ে গেছে। কুদ্দুস মিয়াঁও আজকাল ঘামে। কিন্তু তাকেই আবার বারোমাস কাঁথা গায়ে জড়িয়ে ঘুমাতে দেখা গেছে। বাজারটা বিশাল বড়। পুরো এক চক্কর মেরে গরমকালেও সে কখনো ঘামে নাই। অথচ মাঘের এই প্রচণ্ড শীতে পুরো এক চক্কর না মেরেও ঘামছে আর পাগলী সখিনার চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করছে। বাজারের পাহারাদার হয়েছে বলে কী সব দোষ তার!
বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়লেও কাজে ফাঁকি দেয়ার কোন অভ্যাস না থাকায় বাড়ি ফিরে জোহর পর্যন্ত টানা এক ঘুম দেয় কুদ্দুস মিয়াঁ। বিশ বছরের নিঃসন্তান সংসারে বউয়ের সরব উপস্থিতি নীরব হয়ে যাওয়ায় ঘরের অসহ্য নিরিবিলি পরিবেশটা এখন ধ্রুব সত্য। বাজারের খেয়া ঘাটের মাচাটা রাত বারোটার পর তার অলিখিত সম্পত্তি হলেও সেটা এখন সখিনা পাগলীর সম্পদ। সম্পত্তি নিয়া জোড় দখল হয় কিন্তু সম্পদ নিয়া সেটার সুযোগ নাই বিধায় এ নিয়ে আর মাথা ঘামায় না। ডিগ্রীধারী মানুষেরা ডিক্রি জারি করে অন্যের সম্পত্তি দখল করে নেয়। চোখের জলে শ্রাবণ বর্ষণ হলেও তারা যেখানে চৈত্রের মাঠ ঘাটের মতো শুষ্ক থাকে, সেখানে একজন পাগলীকে বুঝিয়ে সিক্ত করার প্রয়াস অরণ্যে রোদন হবে জেনে নদীর ধারেই পা বিছিয়ে ঠাণ্ডা হাওয়ায় ঘাম শুকায়। কিন্তু কিছু দিন যাবত ঘাম আর শুকায় না। বরং গভীর রাতে নদীর হু হু করে বয়ে আসা উত্তরী শীতল হাওয়ায় তার সমস্ত শরীর ঘেমে ভিজে গোসল হয়ে যায়।
শম্ভুক গতিতে হেঁটে বাজারের প্রতিটা অলি গলি বেশ যত্ন সহকারে ঘুরে ঘুরে দেখা কুদ্দুস মিয়াঁর স্বভাব। মাঝে মাঝে পাগলীর চিৎকারে রাতের আঁধারে নির্জন বাজারে তার একাকীত্ব দূর হয়। পাগলীর অজানা চিৎকার তার সরল মনে কোন গরল চিন্তার অনুরণন সৃষ্টি করে না। কিন্তু গেলো সপ্তাহ’র বাজার কমিটির মিটিং এর পর থেকে সে ভাবা শুরু করে দিয়েছে। মিটিংয়ে উপস্থিত সবার আঙুল তার দিকে তাক করা ছিল। অথচ সে কয়েক জনের কপালেই এই শীতের মধ্যেও ঘাম জমতে দেখেছে। পশুরাও যে ঘামে, সে এই প্রথম দেখলো। বিধির বিধান সবাই বুঝতে পারে না। কুদ্দুস মিয়াঁর মতো মূর্খ মানুষের কাছে সেটা আরও বেশী দুর্ভেদ্য। তাইতো সে বুঝে না, বিশ বছর সংসার করেও তার বউ যেখানে মাতৃত্বের স্বাদ নিতে পারে নাই, সেখানে স্বামী নাই, সংসার নাই তারপরও পাগলী কীভাবে নারীত্বের পূর্ণতা পেতে যাচ্ছে!
~০~