ক্লাশ থৃ তে পড়ি । প্রয়াত মিনু স্যার একদিন ক্লাশে বল্ল, তোরা আজকের শিশু তোরা একদিন বড় হবি । বড় হয়ে এই দেশ চালাবি । আজকে এরশাদ সাহেব দেশের প্রেসিডেন্ট একদিন তোরা হবি প্রেসিডেন্ট। তোদের মধ্যে কেউ একজন হবে । আমি খুব আশায় বুক বাধলাম । কিন্তু স্যারের শেষ কথাটাতে আমার একটু খটকা লাগল ।
তোদের মধ্যে কেউ একজন হবে । তখন আমার ক্লাশ ফ্রেন্ড লেলিন, তইদুল, নুর আলম, বিপ্লব কুমার মহন্ত, কালিদাস, শামীম, লিখন, মটু রাজিব বাকীদের নাম মনে নাই । স্যার যেহেতু বল্ল কেউ একজন হবে তার মানে লেলিন, তইদুল, কালিদাস, বিপ্লব, শামীম, লিখন এদের ও চান্স আছে । বা ক্লাশের যাদের সাথে আমার জানাশুনা নাই তারাও হতে পারে ভেবে মনটা খারাপ হল ।
এরমধ্যে আবার সে সময় লেনিনের বাপের গাড়ী ছিল । লেনিনদের গাড়ি বিষয়টা ভাবতে মনটা খারাপ হল । খারাপ হরা মন নিয়ে
আমি অপেক্ষায় থাকলাম । আমি বা আমার ক্লাশের কেউ একজন প্রেসিডেন্ট হবো । এদিকে স্কুলের মন খারাপের মাঝে নিয়ন ভাইয়ের গল্প যেন আরও এককাঠী সরেস ।
নিয়ন ভাইয়ের মামার রকেট আছে । সেটা নাকি তার মামার বাড়ীতে তিনবিঘা জমির উপর নামে মানে ল্যান্ডিং করে । । নিয়ন ভাই ও নিয়ন ভাইয়ের ছোট ভাই আমার ফ্রেন্ড চয়ন - তারা দুজনি সেই রকেটে চড়েছে । খেলার মাঝে প্রায়ইশই সে গল্প বলে আমরা হা করে শুনি । কেমনটা লাগে ।
একদিনের গল্প নিয়ন ভাই বলতেছে আমি আর চয়ন রকেটে চড়লাম রকেটটা যখন অনেক উপরে গেল চয়ন অনেক কান্না করল । পরে আমি মামকে বল্লাম মামা আজকে আর রকেট না চালাই চয়ন যেহেতু কাদতেছে । তখন মামা একটা সুইচে চাপ দিল সাথে সাথেই রকেটটা সাই সাই করে নীচে নামল । তারপর মামা সেটাকে তার তিনবিঘা জমিতে পার্ক করল । গল্প শুনে হা হয়ে থাকা আমি চয়নকে বল্লাম রকেটটা এদিকে আনা যায়না ?
চয়নের উওর আনা তো যায় । মামাকে বললেই নিয়ে আসবে কিন্তু তিনবিঘা জমি কোথায় পার্ক করবার মত । আমি উওরে বল্লাম পশ্চিমের ফাকা জমিতে নামানো যাবেনা ?
চয়নের উওর না সেটা করলে রকেট নরম মাটিতে ঢুকে যাবে । কি একটা টেনশন ।
আমার মামার ট্রাক ছিল, ট্রাকটর ছিল, বাইক ছিল । নানীর বাড়ী গেলে সেগুলোতে চড়ার বেশ সৌভাগ্য হয়েছে । কিন্তু ট্রাকে, ট্রাকটরে, বাইকে চড়া আর রকেটে চড়া তো এক না ।
মনের দু:খে একদিন আম্মা কে বল্লাম বড় মামার রকেট নাই কেন ?
আম্মা ঝাড়ি মেরে বল্ল পড়াশুনার খবর নাই ওনি রকেট ওয়ালা হইছে । এতবড় একটা গুরুত্বপুর্ন বিষয় আম্মা গুরুত্বই দিলনা ।
চয়ন কে বল্লাম রকেট টা কি তোমার মামা এদিকে আনবে বা আনলে আমাকে চড়তে নিবা ?
চয়ন বল্ল আনলে তো অবশ্যই নেব । কিন্তু চয়নের ফ্রেন্ড এবং আমার ফ্রেন্ড লিমন, তাজুল, ওরাও যদি চড়তে চায় । একসাথে সবার জায়গা কি হবে ? আচ্ছা অপেক্ষায় থাকি ।
এমন ভাবনা চিন্তার মাঝে মিনু স্যারের প্রেসিডেন্ট বিষয়ক ব্যাপারটা কারও সামনে বলা গেলনা । আবার কে কি বলে । অপেক্ষায় থাকি । বড় হয়ে তো একদিন প্রেসিডেন্ট হবই । আমি না হই সাথের কেউ হবে ।
সে সময় আমাদের এলাকার আকাশে মাঝে মাঝেই হেলিকপ্টার আসত । হেলিকপ্টার আসিবা মাত্র সেটার পেছনে দৌড়ানো আমাদের জন্য মহান বীরত্বের বিষয় । অনেকটা গড মাষ্ট বি ক্রেজি মুভির সেই গুহা মানবের মত । এমন বীরত্বের মাঝে পল্লব আমাদের সাথে হেলিকপ্টারের পেছনে দৌড়ে সে হঠাত করে রাস্তার কোথাও একটা বিড়ির মোতা বা টিপস হাতে নিয়ে বলত আল্লাহর কসম এই মোতাটা হেলিকপ্টার থেকে পড়ছে । আমরা বিশ্বাস করতাম । আর আপসোস করতাম ইস কেন
আমি পাইনা । সব সময় পল্লব ই পায় ।
নাইট রাইডার, ফল গাই, দ্যা টিম, দেখে বা প্রেসিডেন্ট এরশাদের ভোটের সময় টারজান দেখে পরের দিন বাংলা তরজমা পল্লব করত । যদি আমরা যদি বলতাম- না, তখন নায়ক তো এইটা বলছিল । পল্লব বলত আমি মেজভাইয়ার সংগে বসে দেখছি । মেজভাইয়া বলছে নায়কটা ওইটা বলছে ।
ভয়ে আর কথা বলা যাইতো না । মেজভাইয়ার সাথে বসে দেখছে সেইটারে তো আর ফেলে দেয়া যায়না । মেজভাইয়া নিশ্চই ইংরেজী অনেক ভাল জানে ।
তারপর শুক্রবারের জুম্মার নামাজ । মকবুল হুযুর বলত কাল কিয়ামতের দিন পাহাড় উড়বে । গাছপালা উড়বে । ঘরবাড়ী উড়বে । আবার টেনশন । রাতে ঘুমের আগে নানাবিধ টেনশন । যদি আমি ঘুমের মধ্যে থাকতে কিয়ামত হয় তাহলে কি হবে ?
আমি সহ উড়ব নাকি ?
উড়ে কোথায় যাব ? কে কে থাকবে সেখানে ?
কাউকে বল্লে না আবার কষায় থাপ্পর মারে । ভয়ে বলিনা । তারচেয়ে বরং অপেক্ষায় থাকি কিন্তু মনের ভয় যায়না ।
এই অপেক্ষায় থাকতে থাকতে প্রেসিডেন্ট আমার ক্লাশের কেউ হওয়া তো দুরের কথা আমার সময়ের কেউ হলনা । এরশাদের পর রহমান বিশ্বাস, সাহাবউদি্দন, বদরুদ্দিন, ইয়াজউদ্দিন, হামিদউদ্দিন সাহেবরা প্রেসিডেন্ট হল । আমরা বা আমাদের সময়ের কেউ এখনো হলনা । রকেটে চড়া হলনা । কালকের কিয়ামত হলনা । সিগারেটের টিপস কুড়িয়ে পাওয়া হলনা । যা হল সেটা ভয় পাওয়া ।
রাতের ভয় আর দিনের ভয় । পুরো রাস্ট্র ব্যবস্থা এমন ভয় দিয়ে সাজানো
https://www.youtube.com/watch?v=chUDPXVikoI
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০২১ সকাল ৯:১৫