বহু বছর আগের কথা বাংলার অথবা ব্যাকরনের কোন একজন শিক্ষক ক্লাশে আমাকে পড়া ধরিলেন
বল - বারেক ফিরিয়া চায় ইহার অর্থ কি ?
আমি উওরে বলিলাম স্যার - বারেক যদি আমার দিকে ফিরিয়া তাকায় । পুরো ক্লাশে হাসির রোল পড়িয়া গেল । আমাদের ক্লাসে বারেক নামের একজন ছিল ।
সে অকস্মাত খাড়া হইয়া বলিল স্যার এরা খুব জাউরা স্যার ।
এরা তিনজন আমাক দেখলেই কয় স্যার - বারেক কাউয়া মারেক ।
আবার মাঝে মাঝে গানের সুরের মত করেও কয় স্যার ।
বারেক কাউয়া মারেক ।
পুরো ক্লাশের হাসির রোল যেন আর থামেনা ।
স্যার আমাকে পড়া ধরিল তাহাতে বারেক কেন অকস্মাত তেলে বেগুনে উঠিল তাহা আর বোধগম্য হইল না ।
"বারেক ফিরিয়া চায়" স্যারের প্রশ্নের উওর, আর উওর হিসেবে থাকিল না ।
অভিযোগ হিসেবে দাড়িয়ে গেল । স্কুল যেহেতু আমাদের এলাকায় ছিল সেই হেতু আমাদের একটু তোড় জোড় হম্বি তম্বি বেশি ছিল । বারেক আমাদের দেখিলে সমিহ করিয়া চলিত । আজকে স্যারের সামনে সেই সমীহ আর সে রাখিলনা । ভাগ্যিস বারেক বাকী যাহা যাহা বলি তাহা আর স্যারকে নালিশ করিল না ।
স্যার সচরাচর ক্লাশে বেত নিয়ে আসেন না । স্যার এইবার একজন কে বলিলেন যা লাইব্রেরী রুম থেকে ডাবল বেত নিয়ে আয় ।
ডাবল বেত আনা মানে পরিস্থিতি ভয়াবহ । যে বেত আনিতে গেল সে সানন্দে বারান্দা দিয়া পশ্চাদদেশ দোলাইতে দোলাইতে সবচেয়ে মোটা দুখানা ফরিদপুরের বেত আনিল । এদিকে আমাদের তিন গুনধর যারা মামলার আসামী তাদের চেহারা মলিন থেকে মলিনতর হইতে থাকিল । দোয়া ইউনুস পড়িতেছি । ভয়ে হিসুর বেগ যেন রকেটের বেগের চেয়েও বেশি আকারে ধাবমান হইতে লাগিল ।
ক্লাশ থৃতে মনোয়ার স্যারের ক্লাশে, প্রথম ভয়ে এই হিসুর বেগ ধাবমান হইবার বিষয়টি পরিলখ্খিত হয় । প্রয়াত মনোয়ার স্যার গৌড়বর্নের ছিলেন । নাকের নীচে কালো মোচ রাখিত । বড় কলারের শার্ট কোমরে চিপা ও নীচে ঢোলা প্যান্ট পড়িত । হাতে থাকিত বেত । "এই" করিয়া উঠিলে পুরো ক্লাশ চলে যেত পিনপতন নীরবতায় ।
পড়াতে না পারিয়া মনোয়ার স্যারের পিন্ডি চটকানো পেটন খাইয়া দু একজন স্কুল ত্যাগ ও স্কুল বদল পর্যন্ত করিয়াছিল । বহু পরে জেনেছিলাম এই স্কুল ত্যাগ করা ছেলে মেয়েদের এসিরুমে বসা দেশের বাবুরা, সুশিলরা ইংরেজীতে বলে ড্রপ আউট আর বাংলায় বলে ঝরিয়া পড়িয়া যাওয়া শিশু । যেমনটা নুরজাহান রোডের মামার চায়ের দোকানের পাশের দেয়ালে আইন ও শালিশ কেন্দ্রের একখানা পোষ্টার দেখিয়া বুঝিয়াছিলাম জামাই বউকে পেটানো কে বলে পারিবারিক নির্যাতন । পোষ্টার খানা দেখাইয়া মামা একদিন আমাকে বলেছিল মামা জামাই বউরে পিডায় হেইডারে পারিবারিক নির্যাতন কইলে হগ্গল মানষে বুঝবো ?
শেখ হাসিনাকে গ্রেনেড হামলার পরের দিন সকালে চা খাইতে গেলে দোকানের ভিড় ভাট্টা কমলে এই মামা আমাকে কানে কানে বলেছিল মামা আসল ঘটনা হুনছেন নি ?
আমি - কোনটা ?
দোকানদার মামা- হাসিনা ভ্যানিটি ব্যাগে কইরা গ্রেনেড নিয়া গেছিল !
আমি - তাই নাকি ? কিন্তু সেইটা কেমনে সম্ভব ?
দোকানদার মামা - পেপার পত্রিকা পড়ছেন ? টিভির রেডিওর খবর হুনছেন ?
আমি - না ?
দোকানদার মামা - মন্ত্রী বাহাদুর নিজে কইছে ?
আমি - সিনেমায় দেখনাই গ্রেনেডে পিন থাকে সেইটা নায়ক দাত দিয়ে খুলে বা হাত দিয়ে খুলে তারপর ছুড়ে মারে । তো ভ্যানিটি ব্যাগে থাকলে সেটা তো বাস্ট হতে পারে ? হাসিনা সেটা ভানিটি ব্যাগ থেকে বের করে ছুড়ে মারবে নিজের দলের মানুষের দিকে ? হাসিনার পার্টির লোকজন যারা আশে পাশে ছিল তারা বুঝবেনা !
দোকানদার মামা - আপনি খালি ত্যাড়া কতা কন । মন্ত্রী সাব কি মিথ্যা কতা কইতো নি ?
আমি - যেই দলেরই হোক এডিতো সারাদিনই মিছা কথা কয় ।
দোকানদার মামা - আপনি কড়া পাতির একটা চা খান । আপনারে বুঝান যা্ইতো না ।
এদিকে বিষয়টি ভাল করিয়া বুঝিবার জন্য ডাবল বেত আসিবার পর স্যার বারেক কে তার টেবিলের কাছে ডাকিয়া বলিলেন, তোকে এ কথা ওরা কেন বলে ?
বারেক - কাদো কাদো গলায় আমি জানিনা স্যার ।
আমি জীবনে কোনদিন কাক মারি নাই স্যার । খালি একদিন কালো মোজার মধ্যে টেনিস বল ঢুকাইয়া হাতের মধ্যে নিয়া ঘুরাচিলাম আর মুখ দিয়া কা কা করছিলাম । তখন স্যার অনেকগুলা কাক আমার মাথার উপর দিয়া উড়ছে আর কা কা করছে ।
সেই ঘটনা এরা শোনার পর থেকে আমাক দেখলেই বলে বারেক কাউয়া মারেক ।
এইবার পুরো ক্লাশ শুদ্ধ আরও উচ্চস্বরে হাসিয়া উঠিল । স্যার ডাবল বেত দিয়া টেবিলে ঝন্নাত করিয়া জজ সাহেবদের মত এক বারি দিলে অকস্মাত সকল হাসি ম্লান হইয়া গেল ।
ইত্যবসরে সকলেই বুঝিয়া গিয়েছে কিছুখনের মধ্যে পিন্ডি চটকানো শুরু হইবে । এখন হাসা বিপদজনক ।
বারেকের কাদো কাদো গলা শুনিয়া হিসুর বেগ ও দোয়া ইউনুস পড়িবার বেগ দুটোই বাড়িয়া গেল । এই কাদো কাদো গলা মানে মামলা গুরুতর । দুই ঘার জায়গায় চার ঘা । পশ্চাদদেশের লাল দাগ গুরুতর ।
স্যার - কারা কারা বলে ?
বারেক- স্যার, মামুন, শামীম, লিখন ।
স্যার তিনগুনধরকে ব্লাকবোর্ড ও লেকচার টেবিলের কাছে ডাকিলেন ।
কেন বলিস তোরা বারেক কাউয়া মারেক ?
বারেক কাউয়া মারেক আর এটার মানে কি ?
ভাজা মাছ উল্টে খেতে না পারার মত আমরা উওর দিলাম স্যার ভুল হয়ে গেছে ।
বন্ধু শামীম সে এক প্রস্থ বেশি আগানো ছিল সাথে সাথে কান ধরিয়া বলিল আর হবেনা স্যার এমন ভুল !
শামীমের দেখাদেখি পশ্চাদদেশ বাচাইতে আমিও কান ধরিলাম ।
স্যার - ভুল হলে সেটার তো শাস্তি আছে নাকি ?
আমরা আরবী আলিফ অক্ষরের মত সোজা হইয়া দোয়া ইউনুস পড়িতে লাগিলাম । ওদিকে রকেটের বেগের মত হিসুর বেগ ।
এরপর তিনজনকে স্যার বলিলেন টেবিলের নীচে মাথা ঢোকা ।
আমরা - স্যার ভুল হয়ে গেছে ! মাফ করে দেন ।
স্যার - পাগলা হাকিম নড়ে হুকুম নড়েনা । টেবিলের নীচে মাথা ।
টেবিলের নীচে মাথা ঢোকানো মাত্র তারপর উচা পশ্চাদদেশে শপাং শপাং শপাং ।
তিনজনের পশ্চাদদেশ মোটামুটি বান্দরের পশ্চাদদেশের মত লাল হইয়া গেল । এমন পশ্চাদদেশে পিটাইবার সুবিধা হইল লাল হয়ে যাওয়া পশ্চাদদেশ কাউকে দেখানো যায়না । বেন্চে বসিতে গিয়া কিছু যৎসামান্য বোঝা যায় আরও বেশি বোঝা যায় ছোট অফিস ঘর টয়লেটে ।
তিনজনকে উওম মধ্যম দিবার পর স্যার বারেক কে বলিলেন তুইও টেবিলের নীচে মাথা ঢোকা ? তারপর বারেকের পশ্চাদদেশে দুঘা বসিয়ে দিলেন । তারপর বলিলেন তুই বিচার দিলি ঠিক আছে কিন্তু মুখ খারাপ করলি কেন ? বারেক কে দুঘা দেওয়া মাত্র আমাদের পশ্চাদদেশের ব্যাথা নিমিষেই ভুলিয়া গেলাম । আমরা তিন গুনধর মহাখুশি । মনে মনে বলিলাম সালা বিচার দেওয়া মারাইচো দেখ মজা ।
আর একদিনের ইংরেজী গ্রামার ক্লাশে স্যার আগাম ডাবল বেত লইয়া হাজির । সেদিনের পড়া ভার্বের লিষ্ট । ভার্বের পাস্ট পাটিসেপল বলতে হবে । বরাবরের মত হিসুর বেগ । আমার বাম পাশে শামীম সে এমন ভাবে বলিল স্যার আমার চাচা মারা যাই নাই স্যার । কিন্তু স্যার শুনিল চাচা মারা গেছে । স্যার বলিল বস ।
এরপর আমাকে ধরিল বেয়ারের পাস্ট পার্টিসেপল বল - কাপা কাপা গলায় উওর দিলাম । স্যার বলিল বস । আমার ডানে বন্ধু তইদুল, তাকে স্যার পড়া ধরিবা মাত্র -
সে বলিল স্যার আমার দাদা মারা গেছে স্যার । স্যার আমাকে বল্ল এ তুই সর একটু । যাহাতে বেতের বাড়ী আমার গায়ে না লাগে । তারপর তইদুলকে শপাং শপাং । এরকম বেশ কজন বেশ ভাল মার খেল । স্যার ক্লাশ শেষ করে চলে গেলেন । স্যার যাইবা মাত্র শামীম হো হো করে হাসি । এদিকে তইদুল রেগে মেগে অস্থির । তইদুল একটু তোতলা ছিল
সে বল্ল আমার নি নি নি নিগাল (লিগাল) দাদা মারা গেল সেটা শুনে স্যার আমাকে কোবালো ।
আর শামীম তোর চাচা ম ম ম মরে নাই তোক স্যার কলো ব ব ব বস ।
স্যার কি বা বা বা বা বালটা বুঝল ?
হে !
মামুন, শামীম, লিখন এই তিন গুনধরের সহিত এরি মাঝে আসিয়া যোগ হল শ্রী উজ্বল কুমার । উজ্বল তার গ্রামের স্কুল ছাড়িয়া আমাদের থানা মফস্বলের স্কুলে আসিয়া ভর্তি হইল । বন্ধু হিসেবে পাইল আমাদের তিনগুনধরকে । উজ্বল কে তার গার্ডিয়ান পক্ষ জানিয়ে দিল খুব সাবধান ।
মামুন শামীম লিখন এই তিন বিশ্ব বাউদা পরিষদের সাথে ভুলেও মেশা যাবেনা । কে শোনে কার কথা উজ্বল কে আমাদের নানাবিধ ট্রেনিং দিতে হবে । উজ্বল কে নিয়ে বের হলাম রাতে আখ চুরি করতে । যেটাকে আমাদের এলাকাতে বলে কুশার । শামীম উজ্জল কে নিয়ে জমিতে গেল কুশার চুরি করতে । আমি আর লিখন পাহারাদার হিসেবে রাস্তাতে থাকলাম ।
এই টেনশনের মাঝে লিখন দুই এক মিনিট পর পর বলিতে লাগিল -
মামুন পাপ হবা নয় ? আমরা যে ,এই ভাবে কুশার চুরি করতেছি ?
আল্লাহ গুনাহ দেবেনা ? মহাজ্বালার কথা কোন টাইমে কোন আলাপ । পরে উজ্জল, শামীম কুশার চুরি করিয়া আনিয়া লিখনকে পাপ বিষয়ক সামান্য লেকচার এন্ড পিকচার দিল, তাহাতে লিখন মোটামুটি শান্ত হল । পরবর্তী চুরি গুলোতেও সাথে থাকিল ।
সাথে থাকা জীবন হঠাৎ করিয়া নাই হইয়া গেল । ঝড়ের মত একেক জন একেক দিকে চলিয়া গেলাম । এই চলিয়া যাওয়ার মাঝে যোগ বিয়োগ হল নুতন মুখ । এই নুতন মুখের একজন তন্ময়, একস জাহাংগীরিয়ান মোটামুটি এক প্লেটে ভাত খাওয়া সম্পর্ক । হঠাৎ সে একদিন সুইডেনের উপছালা ইউনিভার্সিটিতে চলিয়া গেল । কালে ভদ্রে ফোনে গল্প হয় । সে কখনো মালমো, গুটেনবার্গ, স্টকহোম, হেলসিংকি, জুরিখ, বার্লিন চষিয়া বেড়ায় ।
কদিন আগে হঠাৎ তন্ময়ের সাথে আলাপ । ওর বাবা মা ওকে বিবাহ দেবার জন্য উঠিয়া পড়িয়া লাগিয়াছে । দেশে গিয়ে এক ডাক্তার তরুনীর সাথে বিবাহের পুর্বালাপে তরুনী তাকে বলিয়াছে সে তার জামাইয়ের সাথে তাহাজ্জুদ নমাজ পড়িতে চায় ও বিবাহের পরে ডিসকো হিজাব করিতে চায় । তন্ময় শুনিবা মাত্র ভো দৌড় । দেশে বিবাহ শাদীর আশা বাদ দিয়া সে পন করিয়াছে কোন সাদা নারীকে বিবাহ করিয়া বাকী জীবন কাটাইয়া দেবে । সদ্য একখানী ভাল চাকুরী পাইয়াছে বিজনেস এনালিটিকসের উপরে ।
আমার সাথে কথা বলিবার সময় জানাইল সে হাসপাতালে থেকে ফেরত এল ।
বল্লাম কেন ?
বাংগালী একজনের সাথে দেখা করিতে গিয়েছিল । উক্ত ব্যাক্তি করোনা আক্রান্ত হইয়া প্রায় পাচ ছয়দিন দিন দুনিয়া কিছুই বুঝিতে পারেন নাই । উক্ত ব্যাক্তির হালহকিকত নামা জানিতে চাইতেই জানাইল ওনি একজন ইলিগাল বাংগালী । ছোটবেলা থেকে ঢাকাতেই মানুষ । শেয়ার ব্যবসা করিতে গিয়া টাকা পয়সা সব হারিয়ে দেনাদারদের পাওনা টাকার শোধ দেবার নিমিত্তে দেশ ছাড়ে । নিজেকে রোহিংগা রিফিউজি হিসেবে দাবী করিয়া শরনার্থী আবেদন দাখিল করিয়াছে এবং এদেশে প্রায় ১০ বছর ধরে আছে স্ত্রী সন্তান দেশে রেখে । পাওনাদারের টাকা পয়সা শোধ করিয়া দিয়াছে । এখন সামনের ভাল দিনের অপেক্ষা । এরমাঝে করোনা হানা দিয়াছে ।
এই হল দেশের একজন বিনিয়গকারীর অবস্থা । এমন প্রায় তেত্রিশ লাখ বিনিয়গকারীর গচ্ছিত টাকা মারিয়া দেবার পর তাদেরকে হার্ভাডে অকসফোর্ডে পড়া দেশের মহান অর্থনীতিবিদ অর্থমন্ত্রী ফটকাবাজ, রাবিশ বলিয়াছিল । এই রাবিশদের ট্যাকসের টাকাতে এই অর্থমন্ত্রী মাউন্টএলিজাবেদে, বামরুনগ্রাদে চিকিৎসা করিয়াছেন । চিকন চালের ভাত খেয়েছেন । এখন অবসর জীবন যাপন করছেন । দেশের বিনিয়গকারী যদি শরনার্থী হয় তাহলে বিদেশী বিনিয়গকারী কি আসিবে ? গরুর দড়ি দিয়ে ট্রাফিক ব্যবস্থার শহর দেখতে ? স্যাটেলাইট দিয়ে হাল চাষ ও উন্নয়নের বগল বাজানো গল্প আর কত ?
ওদিকে বিনিয়গকারী হেলসিংকির হাসপাতালের জানালা দিয়া সাদা বরফে ঘেরা শহর দেখিতে দেখিতে বিদেশ বিভুইয়েতে পরিবার পরিজন ছাড়িয়া শুভদিন বারেক ফিরিয়া আসিবার মাহেন্দ্রক্ষন গুনিতেছে ।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:৪৯