somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্যানানা রিপাবলিক অফ হানুলুলু

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মহামতি হেনরী কিসিন্জার পৃথিবীর দুটো দেশকে বটমলেস বাসকেট বা তলাবিহীন ঝুড়ি বলেছিলেন । একটি বাংলাদেশ আর একটি ব্যানানা রিপাবলিক অফ হানুলুলু । বাংলাদেশে তার উদিত, মথিতো, মানডিতো, নাদিতো, যাপিতো, তাপিতো, সদাসিদো, রাজনৈতিক নেতা, কামেল ব্যাক্তিবর্গ, কেবলাজান, জিগরীজান, আশারান, মথুরান, প্রোথিতো, গ্রথিতো, নোতিতো বুদ্ধিজীবি সমাজ, ও মথিত, দলিত, খিচুরিত আমলা, কামলা সবাই কাধে কাধ রেখে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন ।

কিন্তু ব্যনানা রিপাবলিক অফ হানুলুলু সেই উচ্চতাটা ধরতেই পারেনি । সারা পৃথিবীর বিজনেস স্কুল ও ইউনিভার্সিটি গুলোতে আজ বাংলাদেশের নাম পড়ানো হয় । বাংলাদেশের সফলতা নিয়ে পড়ানো হয় । সোলান, সাউডার, হোয়ারটন, গুডম্যান, হাভার্ড, অকসফোরড, প্রিন্সটন, কর্নেল, ম্যাক মাস্টার, ওয়াটারলু, ম্যাকয়রি সহ নাম না জানা বহু প্রতিষ্ঠানে আজ বাংলাদেশের জয় জয়গান। আজকের বিশ্ব বলছে আগামীর টাইগার ইকোনমী বাংলাদেশ । ফেসবুক, গুগল, এমাজন, মাইক্রোসফট, পেপ্যালসহ সারা পৃথিবীর টেক জায়ান্টরা, ভেনচার ক্যাপিটাল কোম্পানীরা আজ শনির আখড়া, চ্যাংখারপুল, গুদারাঘাটে তাদের সুরম্য টাওয়ার নির্মান করছে । নামজারীর কাগজে সাইন করার জন্য জায়ান্ট কোম্পানীর সিইওরা, হেডরা প্রাইভেট জেট নিয়ে বিশ্বের টপ এয়ারপোর্ট হযরত শাহজালাল ইন্টারন্যাশন্যাল এয়াপোর্টে নেমে ল্যাগেজের চেইন ছেড়া দেখে হতবাক হয়ে যাচ্ছেন । গর্ডন গ্রিনিজ, ভেলরী এ টেইলরের মত তারাও বাংলাদেশের সন্মানীত নাগরীকত্ব চাচ্ছেন ।

এই যে বাংলাদেশের এই সফলতা সেটা কি করে সম্ভব হল ? এক ঝাক মেধাবী রাজনীতিবিদ আজ বাংলাদেশের সংসদে জ্বল জ্বল করছেন । তারা তাহাজ্জুদ পড়ে দিন শুরু করেন । বেতের নামাজ পড়ে তারা ঘুমাতে যান এটাই তাদের সফলতার চাবিকাঠী । বাকী অন্য ধর্মের নেতারাও তাদের বেদ, শ্রুতি, ত্রিপিটক , ওল্ড টেষ্টামেন্ট, নিউটেষ্টামেন্ট দিয়ে দিন শুরু ও শেষ করেন । আর জনগনের জন্য কাজ করেন । এটাই তাদের সফলতা ।

এই সফলতা দেখতে বিশ্ব সেরা সাংবাদিক ল্যারি কিং, রবার্ট ফিসক, ক্রিচিয়ান আমানপুর, এনডারসন কুপার, স্টিফেন শাকুর, ফরিদ জাকারিয়া, জেমস বলডউয়িন সহ প্রায় পনেরজন সাংবাদিকের একটি দল ঢাকাতে আসে । তারা এয়ারেপোর্ট টু শেরাটনে যেতে তিন ঘন্টার জার্নিকে এনজয়াবল ও এতিহাসিক বলে বর্ননা করেন । তারা বাংলা মটরের, বিজয় স্বরনীর, গরুর দড়ি দিয়ে ট্রাফিক সিসটেম, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পাথরের বদলে ইটের খোয়ার রেললাইন, রডের বদলে বাশ ইনোভেশন, পৃথিবীর সর্ব বৃহত ছাত্র সংগঠন, তাদের হাতুড়ী, রাম দা, ফেয়ার শেয়ার এরপর হাওয়া ভবনের উন্নয়নের ঐতিহাসিক গ্রেনেড প্রকল্প, ৬৩ জেলাতে ফাটা প্রকল্পের গল্প রিজভী ও ফকরুলের মুখে শুনে বিমোহিত হয়ে যান । ডিয়াবলিজম অফ হাওয়া ভবন ও সুধা সদন নামে এক খানা বই লিখবেন বলে ক্রিচিয়ান আমানুপর আশাবাদ ব্যাক্ত করেন । বাংলাদেশ থেকে ফিরে যাবার সময় বাইতুল মোকারমের মুসুল্লির জুতার বাড়ি খাওয়া খতিবের কাছে কলেমা তৈয়ব, কলেমা শাহাদাত, এরপর ঈমানে মোজাম্মেল ও ঈমানে মোফাচ্ছেল পড়ে তারা মোচেলমান হয়ে কামেল মোমেন, মোমিনাত হয়ে চলে যান ।

বাংলাদেশের এই সফলতার জায়গাটা ব্যানানা রিপাবলিক অফ হানুলুলু ধরতে পারেনি । ব্যানানা রিপাবলিক অফ হানুলুলুর সংসদে এমপিরা, মন্ত্রীরা সব টাকা দিয়ে নমিনেশন কেনা । কেউ ইয়াবা ব্যবসায়ী, আদম ব্যবসায়ী, আল সদুরা ঘাটের গায়িকা সহ নানাবিধ প্রজাতীর অপরাধী । কেউ আবার অপরাধ করে বিদেশের জেলে । আর ব্যানানা রিপাবলিক অফ হানলুলু হল ঘটনার প্রান কেন্দ্র । এখন যেমন চলছে অ্যালা তিশুরি ওলা ফি মাশুরী ।
যার বাংলা মানে হল - তিন কোনাচ্চ্যা কাহিনী ।

প্রথম কাহিনী ব্যানানা রিপাবলিক অফ হানলুলুর এক মসজিদের মওলানা খতিব আল সুফা হুযুর । যাকে সকলে ডাকে জমায়েতে হিন্দ হুযুর বলে । যিনি রাস্তাতে কেউ ওস্ঠা খেলে দোষ দেন ইহুদী নাসারার । যিনি আমেরিকায় ঝড়ে ২০০ লোক মারা গেলে তার দোয়ার বরকত ফজিলত বলেন । তার সকল ওয়াজ নসিহতে ব্যানানা রিপাবলিক অফ হানলুলুর সকল মমিন মমিনাত কে সোনার মদিনায় যাবার প্রেরনা দেন । সেই, জমায়েতে হিন্দ হুযুরের অস্টাদশী মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে । ঘটক দুজন পাত্রের সন্ধান নিয়ে গিয়েছিল হিন্দ হুযুরের কাছে । একজন হুযুরের পেয়ারের সৌদি আরবে ড্রাইভার আর একজন হুযুরের হিসেবে অভিশপ্ত আমেরিকাতে উবারের ড্রাইভার । ঘটক, জমায়েতে হিন্দ হুযুর কে বলেছেন সৌদির ছেলের সাথে আপনার মেয়ের বিয়ে দিলে আপনি পবিত্র হজ্ব, ওমরা হজ্ব জামাইয়ের বাসাতে থেকে করতে পারবেন । আর আমেরিকার ছেলের সাথে বিয়ে দিলে আপনি আপনার মেয়ে আপনার ছোট চার ছেলে সবাই আম্রিকা যেতে পারবে । হুযুর আম্রিকার ছেলের সাথে মেয়ের বিবাহ দেবেন বলে পাকা কথা দিয়েছেন । পরে শুভ বিবাহ সুসম্পন্ন হইয়াছে ।

দ্বিতীয় কাহিনীতে যাবার আগে বলে নেওয়া ভাল বাংলাদেশের যেমন প্রতিবেশী দেশ ইনডিয়া ও মিয়ানমার তেমনি ব্যানানা রিপাবলিক অফ হানলুলুর প্রতিবেশী দেশ ইনডিয়া ও মিয়ানমার । বাংলাদেশে যেমন তার দুই প্রতিবেশীর সাথে কড়ায় গোন্ডায় হিসাব বুঝিয়ে চলে কিন্তু ব্যানানা রিপাবলিক অফ হানলুলু তার ধারে কাছেও নেই । মিয়ানমার, ব্যানানা রিপাবলিক অফ হানলুলুর সীমান্তের সৈন্যর খোমাতে থাপরায় । ইনডিয়া পাখির মত নিরীহ মানুষ মারে ব্যানানা রিপাবলিক অফ হানলুলুর সীমান্তে । যেটা বাংলাদেশের বর্ডারে একেবারেই সম্ভব না । বাংলাদেশের বর্ডার একেবারে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টিত তারকাটায় ঘেরা এবং বাংলাদেশের বর্ডারে ইজরেলের মত সৈন্যরা উজি গান নিয়ে অগ্রাভিজান, করার জন্য প্রস্তুত থাকে । তাই তাদের খোমাতে থাপরানো অসম্ভব ।

তো, দ্বিতীয় কাহিনী ব্যানানা রিপাবলিক অফ হানলুলুর আর এক প্রগতিশীল জনাব মারুফত মাজুরিয়ার । যিনি সব সময় ভারত মাতার গুনগান করেন । বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ শুনে সকালের বেড টি খান । হানুলুলুর স্বাধীনতাতে আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদের সমালোচনা করেন । ব্যানানা রিপাবলিক অফ হানলুলুর টিভি চ্যানেলে গিয়ে আম্রিকার বিষেদগার করেন । ব্যানানা রিপাবলিক অফ হানলুলুর ব্যানানা ফিল্ডের যুদ্ধে ভারতের অবদানের জন্য ব্যানানা রিপাবলিক অফ হানলুলুর সরকারী চাকুরীতে ভারতমাতার নাগরীকদের সুবিধা প্রদানের কথা বলেন । সম্প্রতি ব্যানানা রিপাবলিক অফ হানলুলুর জাতীয় মাছ গচি মাছ ভারতে পাঠানো ও ভারত মাতা কর্তৃক পিয়াজ আটকানো কে তাদের ইন্টারনাল সমস্যা বলে মনে করছেন এই প্রগতীশীল মারুফত মাজুরীয়ার ।

তো, এই প্রগতিশীল জনাব মারুফত মাজুিরিয়ার সাহেবের মেয়ের বিবাহের সন্মন্ধ এসেছিল রবীন্দ্রনাথের বিশ্ব ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিখ্খকের সাথে । আর একজন আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিখ্খকের সাথে । জনাব মারুফত তার মেয়ের বিয়ে দেন আম্রিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিখ্খকের সাথে ।

এদিকে ব্যানানা রিপাবলিক অফ হানলুলুর প্রেসিডেন্ট শাহ আবজেল মোহাম্মদ আম্রিকা গিয়েছেন তার হাটুর মালাইয়ের চিকিৎসা করতে । চিকিৎসা শেষে তিনি প্রেস কনফারেন্স করবেন আম্রিকাতে বসবাসরত হানুলুলুর নাগরীকদের সাথে । বাংলাদেশের সাথে এখানেও ব্যানানা রিপাবলিক অফ হানলুলুর অমিল । কেননা বাংলার দেশ দরদী নেতারা কেউ কখনো বিদেশে চিকিৎসা করেনা । তারা দেশেই চিকিৎসা নেন জনতার সাথে । সোগায় সোগা ও কাধে কাধ মিলিয়ে ।

এদিকে জমায়েতে হিন্দ হুযুর ও প্রগতিশীল জনাব মারুফত মাজুরীয়ার সাহেব দুজনই নিউ ইয়র্কে । জমায়েতে হিন্দু হুযুর স্থানীয় মসজিদের ঈমামতি করবার প্রস্তাব পেয়েছেন । সাথে প্রায়শই সুন্নতে খৎনার মোনাজাত পরিচালনা করছেন । আর জনাব মারুফত মাজুরিয়ার সাহেব হানুলুলু কমিউনিটির এক আলোচনাতে অংশ নেবেন ।

পরবর্তী পর্বে শেষ হবে ।

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০২১ সকাল ৯:৪৪
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×