বাসা থেকে মাঝে মাঝে আশে পাশের শহরে যাই । আর কত বন্দি থাকা যায় । বেশ কদিন আগে গেলাম পাশের শহর নায়াগ্রা অন দ্যা লেকে । পুলিশের চার পাচটা গাড়ী চোখে পড়ল । লেকের পাড়ের রাস্তায় দাড়িয়ে গাড়ীর ইনডিকেটর লাইট অন করে আমেরিকার ফোর্টটা দেখছিলাম । দেখলাম আমাকে পুলিশের গাড়ী পেরিয়ে গেল । লুকিং গ্লাসে তাকিয়ে দেখি আমাকে পেরিয়ে গিয়েই গাড়ী ঘোরাচ্ছে । অনুমানে বুঝলাম ফাইন খাব । আমার পেছনে এসে দাড়িয়ে টিকিট ধরায় দেবে । এমন পার্কে যাবার জন্য একজন কে ৮০০ ডলারের টিকিট দিয়েছে । পুলিশ গাড়ী ঘুরিয়ে আসবার আগেই আমি কেটে পড়লাম । এমন আকালের দিনে দন্ড খাবার কোন ইচ্ছা নেই । কিন্তু মানুষ আর কত ঘরে বন্দি থাকবে । ঘরে বন্দি থাকতে থাকতে কেউ বউ পেটাচ্ছে কেউ বাচ্চাদের পেটাচ্ছে এমন পারিবারিক ক্রাইম বেড়ে গেছে । এমনটাই দেখলাম এই শহরের কদিন আগের পত্রিকায় । তারপর টরোন্ট শহরের এক রেস্টুরেন্ট থেকে রাতের আধারে চোররা সব কিছু চুরি করে নিয়ে গেছে ।
আবার কিছু খবর পত্রিকায় আসছে না তা হলো, যেমন কিছুদিন আগে দুই সাউথকোরিয়ান কে চাইনিজ ভেবে চাকু মেরেছে । কদিন আগে চাউর হয়ে ছিল এক ডেনটিষ্ট পুলিশের ইউনিফর্ম, গাড়ী, আমর্স নিয়ে প্রায় তের বা পনের জন মানুষ কে মেরে ফেলেছে । মানুষের বাইরে আসবার প্রবনতাকে রুখবার জন্য সরকার মিলিটারী নামাতে চেয়েছিল । কিন্তু তাতে কেউ ভেটো দিয়েছে । ভেটোর যুক্তি ছিল এই মিলিটারী নামিয়ে ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানীজ দেরকে খুজে খুজে বের করে ইনট্রারোগেট সাথে জাপানে ফেরত পাঠানোর মত কাজ করা হয়েছে । তাই, নো মিলিটারী । আবার বাংলাদেশে ইন এইড অফ সিভিল পাওয়ারে মিলিটারী নামানো দুধভাত ।
গত দুমাস ধরে এমন আটকানো পৃথিবীতে । অফিস যাবার সময় রেডিও অন করি । অফিসে গিয়ে সময় থাকলে পেপার পড়ি । রেডিও তে বলা হচ্ছে টাকা খরচ কম করে করুন । সন্তান কে এই টাফ টাইমটা বোঝানোর চেষ্টা করুন । হাতে টাকা রাখুন । বন্দি পৃথিবীতে ঘটনার শেষ নেই ।
এমন বন্দি দিনে টরোন্টোর এক তরুনী - মায়া কুপারস্টোক তার প্রায় ৩০ জন ভাইবোন কে খুজে পেয়েছে । তার মা ছিল সিংগেল মাদার । জামাই ছিলনা । মায়ার মা যে স্পার্ম ডোনার কোম্পানীর কাছে যে ব্যাক্তির স্পার্ম নিয়েছিল সেই একই ব্যাক্তির স্পার্ম ব্যবহার করে আরও মহিলারা সন্তান জন্ম দিয়েছে । সব মিলে মায়া খুজে পেয়েছে তার ৩০ জন ভাইবোন কে । চিন্তা আটকে যাবার মত ঘটনা ।
মাঝে নেটফিল্চকে একটা সিরিয়ালে দেখেছিলাম একজন সিআইএর এজেন্ট তার মৃত স্বামীর স্পার্ম ব্যবহার করে সন্তান ধারনের চেষ্টা করছে । কদিন আগে পেপারে আপনার প্রশ্ন কলামে দেখলাম একজন ৭০ বছরের বিপত্নীক বৃদ্ধ সকালে হাটতে বের হবার সময় তিনি একজন ৬৫ বছরের বিধবা মহিলার সাথে কথা বলছেন, হাটছেন । দুজন দুজনার ঘরে ফিরবার সময় বাই বলার সময় হাগ করছেন । তো তারা কি আবার বিবাহ করতে পারেন কিনা । এমন প্রশ্নে উওরে -
প্রশ্নের উওরদাতা লিখেছেন আবশ্যই বিবাহ করতে পারেন ।
আবার আর এক ৪৫ বছরের মহিলা লিখেছেন আমার আগে দুজন স্বামী ছিল । দু স্বামীর সন্তান সন্তত্বীও আছে । এখন আবার আমি নুতন বয় ফ্রেন্ড পেয়েছি । তার সাথে সম্পর্ক প্রায় দুবছরের তো আমার কি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারি ?
উওরদাতা উওর দিয়েছেন না ।
ইদানিং অফিসে পত্রিকা চোখে পড়েনা । ব্রেক টাইমে মোবাইল ই ভরসা । কাজের অংশ হিসেবে দিনশেষে কিছু খাবার প্রডাক্ট এর দাম কমাই । যেগুলো আগামী দু বা তিনদিনের ভেতরে মেয়াদ উত্তীর্ন হবে । এক ভদ্রলোক ছিলেন আমার রেগুলার কাস্টমার । ফ্রজেন পিতজা কিনতেন । বয়স প্রায় ৬৫র কাছাকাছি । এই দেশে এসছেন পোলান্ড থেকে । শৈশব কেটেছে ওয়ার ছ শহরে । আমাকে বল্ল তুমি কি পোল্যান্ড সম্পর্কে জান ? আমার ভাষা ভাষা ধারনা দিলাম । ২য় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের টর্চার ক্যাম্পের একটা ছিল ওসওয়িজে । আর বল্লাম আমার দেশের একজন কে চিনি যিনি তোমার দেশের ওয়ার ছ বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করেছিলেন । ভদ্রলোক শুনে খুব খুশি হলেন । এরপর থেকে আমাকে পেলেই কথা বলতেন । কুশল বিনিময় করতেন । ইদানিং ভদ্রলোক কে আর দেখছিনা ।
আবার মাঝে মাঝে মনে পড়ে সেই বৃদ্ধের কথা করোনাকালে কতদুর এগুলো তার প্রেম বিবাহ । এমন প্রেম কিছু কিছু রাস্ট্রের মাঝেও দেখা যায় যেমন ক্যানাডাকে নেদারল্যান্ড প্রতিবছর লাখ খানেক করে টিউলিপ ফুল পাঠায় ভালবাসার নিদর্শন হিসেবে । ২য় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের নাতসী বাহিনী নেদারল্যান্ড দখল করলে নেদারল্যান্ডের রানী পালিয়ে ক্যানাডা চলে আসে । সেই ভালবাসার নিদর্শন আজও ডাচরা দেয় ।
একি ভাবে হিটলারের ভয়ে বৃটেন থেকে বৃটিশ রাজাও বর্তমান রানীর বাবা সপরিবারে পালিয়ে আসতে চেয়েছিল ক্যানাডাতে । হিটলারের সাথে বৃটিশ সন্ধির খসরা রেডি ছিল । কিন্তু চার্চিল সেটা থামিয়ে দেয় ।
সব থামানো গেলেও করোনাকে থামানো যাচ্ছেনা । বন্যা, খড়া, ভুমিকম্প এমন দুর্যোগে যেমনটা কিছু মানুষের কিছু প্রতিষ্ঠানের লাভ হয় । তেমন করোনা পরবর্তী পৃথিবীর হিসাবে হয়তোবা কিছু বদলাবে । কিছু দেশ লাভবান হবে । যে ইউরোপ আমেরিকাতে একদা শিল্প বিপ্লব হয়েছিল তারা আজকে একটা সুই তৈরি করছে না । তাদের ওয়ারকিং ক্লাশকে মিনিমাম ওয়েজ দেবার বদলে তারচেয়ে কম খরচে প্রডাক্ট তৈরি করছে চায়না থেকে । সেই জায়গাটা বদলে যাবার বিরাট এক সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে । আইফোন তার একসেসরিজ ইনডিয়াতে তৈরি করার চিন্তা করছে । যেমনটা এখনকার বেশকিছু প্রডাক্ট ওয়াশিং মেশিন, চুলা, ফৃজ, ওভেন, ডিশ ওয়াশিং মেশিন মেড ইন চায়নার পাশাপাশি লেখা থাকে মেড ইন মেক্চিকো, ব্রাজিল । যেমন কাপড়ে চায়না , বাংলাদেশ, ইন্ডিয়ার, কম্বোডিয়ার পাশাপাশি মিয়ানমার, জর্ডান, পাকিস্তান দেখা যায় ।
সে সুবিধা নেবার জায়গায় বাংলাদেশ কি আছে ? বাংলাদেশের ডিপসিপোর্ট, আটলেনের রাস্তা, দ্রুত গতির ট্রেন, নিরবিচ্ছিন্ন বিদুত, সিলিকন ভ্যালির আদলে কমপিউটার ভ্যালি এগুলো কি আছে ?
নাকি বাবা জর্দা দিয়া পান খেয়ে গাল ভরা গল্প বিমান থেকে হাতির ঝিল দেখলে লসএন্জেলেস, প্যারিস মনে হয় । ল্যারি পেজ দুখু মিয়ার জমিতে শনির আখরাতে গুগল টাওয়ার তৈরি করবে । নাম জারীর কাগজ রেডি শুধু সাইন করাটা বাকী । বিলগেটস চ্যাংখার পুলে আলাল দুলালের স্বরনে সাইকেলে প্যাডেল মারবেন ।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মে, ২০২০ রাত ১:২৫