প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ভিসা প্রয়োজনিয়তা হয়ে দেখা দেয় এর আগেও ভিসার ইতিহাস আছে । ভিসার অর্থ দেখা । যেকোন দেশের নাগরীক অন্য কোন দেশে স্বল্প সময়ের জন্য থাকতে দেবার অনুমতি হল ভিসা । যা হোক আসি বর্তমান সময়ে । বর্তমানে বিভিন্ন দেশ সাধারনত যে বিভিন্ন রকম ভিসা ইস্যু করে । তার সামান্য বিবরন দেয়া হল
আমেরিকা / America
১/ ভিজিট ভিসা / Visit Visa
যদি আপনি বেড়াতে যেতে চান আপনার বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় স্বজনের কাছে বা এম্নি ঘুরতে চান দেখতে চান আমেরিকা, কিংবা কোন বিজনেস মিটিং আছে সেখানে তাহলে আপনাকে ৫ বছরের মাল্টিপল ভিজিট ভিসা দেবে । এই ভিসাতে আপনি যেকোন সময় আমেরিকা যেতে পারবেন বা আসতে পারবেন । আর এই ৫ বছরের ভিসা নিয়ে এক সাথে ৬ মাস থাকার অনুমতি দেবে আপনাকে ইমিগ্রেশন ডিপামেন্ট । তবে কোন তারতম্যর কারনে ৬ মাসের কম সময় থাকবার অনুমতি দিতেও পারে । এই ভিসা পাবার যোগ্যতা হল আপনি আবার নিজের দেশে ফেরত আসবেন সেই নিশ্চয়তা যেন কনসুলার অফিসার পান । এই ভিসার খেত্রে আপনার পুর্বের ট্রাভেল হিষ্ট্রি দেখা হয় অর্থাত কোন দেশে আগে গিয়েছেন, দেশে কি চাকুরী বা ব্যবসাতে আছেন, কোথায় পড়াশুনা করেছেন, আপনার মানথলি ইনকাম কত । আনুসাংগিক ডকুমেন্টস দেখার চেয়ে আমেরিকার ইমবেসি এই ভিসার খেত্রে অনলাইন ভিসা এপ্লিকেশনে দেয়া তথ্যকে বেশি মুল্যায়ন করে ।
২/ছাত্র ভিসা – Student Visa
এই ভিসা তে আমেরিকার কলেজ বা ইউনিভার্সিটি থেকে আই টুয়েন্টি আসতে হবে । যেটাকে প্রা্ইমারি অফার লেটার বলা যায় । কলেজ, ইউনিভার্সিটির জন্য টোফেল, জিআরই, স্যাট স্কোর লাগে । তবে শুধু আইএলটিএস দিয়েও ভিসা পাওয়া যায় । আমার বেশকজন ক্লায়েন্টস ছাত্র শুধু আইএলটিএসে ভিসা নিয়ে চলে গেছে । যদি ইউনিভার্সিটি আইএলটিএস একসেপ্ট করে ।
আপনার কোর্স ডিউরেশন অনুযায়ী এই ভিসা ইস্যু হয় । ভিসা শেষে আমেরিকা থেকে ফেরত আসতে হয় । আপনার মেধা যোগ্যতা থাকলে এইচওয়ানবি ভিসা বা যেটাকে বলে জব ভিসা নুতন করে দেশ থেকে নিয়ে আবার গিয়ে আমেরিকা গিয়ে জব করতে পারবেন সে খেত্রে আপনাকে সেরকম মেধাবী হতে হবে । একজন আমেরিকান এর বদলে আপনাকে নেবে সো যাকে বলে স্কলার হতে হয় ।
আবার আপনি স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে গিয়ে একটা সময় পরে কোন আমেরিকান বাংলাদেশী বা আমেরকিান কে বিয়ে করেন তবে আপনি স্থায়ী ভাবে থাকতে পারবেন । আপনার বিয়ের সুবাদে আপনিও আমেরকিান পার্সপোর্ট ধারী হয়ে যাবেন ।
৩/ কেটু ভিসা – K2 Visa
কেটু ভিসা যদি কোন আমেরিকান নাগরীক বাংলাদেশে বিয়ে করেন পরে তার বিবাহিত স্বামী/ স্ত্রীকে নিতে চান সেটাকে বলে কেটু ভিসা । এই ভিসা হতে সময় লাগে প্রায় ২ বছর তিন বছর ।
৪/ পি থ্রি ভিসা / P3 Visa.
পি থ্রি ভিসা যদি আপনি আমেরিকাতে পারফরমার হিসেবে যান অর্থাত আমেরকিাতে গিয়ে আপনি গান করবেন, নাচবেন, মুভি করবেন, মন্চে অভিনয় করবেন সেখেত্রে এই ভিসা । এটি আমেরকিান কোন প্রতিষ্ঠান থেকে আপনার নামে একটা পরিমান টাকা ওদের সংশ্লিষ্ট ডিপামেন্ট কে দিয়ে এই ভিসার নিদিষ্ট সময় ইনসিওর করে দেন আপনার কাছে কাগজ আসবে । মানে অাপনার ভিসা ইসু হতে পারে ৪০ দিনের বা ৬০ দিনের মেয়াদের তার বেশিও হতে পারে । । যেমন মাঝে ভিসা প্র্রসেস করলাম আইয়ুব বাচ্চু ভাই ও তার ব্যান্ড এলআরবির । তাদের ৪০ দিনের ভিসা দিয়েছিল । এরপর অনলাইনে ফরমফিলাপ করে এমবেসি গিয়ে ইন্টার ভিউ ফেস করে ভিসা নেবেন ।
5/ ইমিগ্রেন্ট ভিসা – Immigrant Visa.
যদি আপনার রক্তের সম্পর্কের ভাইবোন থাকে তারা যদি ইমিগ্রান্ট ভিসার জন্য এপ্লাই করেন আমেরিকার ন্যাশনাল ভিসা সেন্টারে তবে আপনি প্রায় ১০ বছর সময়ের মধ্যে আমেরিকা যাবেন চিরস্থায়ী ভাবে বসবাসের জন্য । বাবা মার খেত্রে এই ভিসাতে সময় লাগে প্রায় এক থেকে দুই বছর । লখ্খনিয় বিষয় আপনার ভাইবোন যদি আপনার নামে এপ্লিকেশন করে তবে ১০ বছর সময়ে আপনার স্টাটাস চেন্জ হবে সো আপনি সিংগেল ছিলেন বিয়ে করতে পারেন বাবা মা হতে পারেন সো এই চেন্জ গুলো বা আপডেট গুলো টাইম টু টাইম ন্যাশনাল ভিসা সেন্টার কে না দিলে ফেখরায় পড়তে হয় । অনেক সময় ইমিগ্রেশন আবেদন বাতিল হয় ।
বৃটেন – Britain
১/ ছাত্র ভিসা / Student Visa
এখন এই ভিসা সবচেয়ে সহজ যদি আপনার আইএলটিএস স্কোর ৬ এর উপরে থাকে । টাকা থাকে । এই ভিসা কোর্স ডিউরেশন অনুযায়ী ইস্যু হয় । পড়াশেষে ফেরত আসতে হবে । আমেরকিার মত জব পেলে বা বৃটিশ নাগরীক বিয়ে করলে আবার দেশে থেকে নুতন ভিসা নিয়ে যেতে হবে ।
2/ ভিজিট ভিসা / Visit Visa
এই ভিসার অধীনে রয়েছে সাধারন ভিজিট, আত্মীয় স্বজন ভিজিট, (ইনটারটেইনার ভিজিট আপনি কালাচারাল কোন ইভেন্টে গেলে অনেকটা আমেরকিার পিথৃর মত ) এই ভিসা ছয়মাস থেকে ১০ বছর পর্যন্ত ইসু হয় । এই ভিসাতে আপনার ব্যাংক স্টেটম্যান্ট, এফডিআর, জব হলে পে স্লিপ, অফিস লেটার, ব্যবসা হলে ট্রেড লাইসেন্স, টিন সার্টিফিকেট এগুলো দিতে হবে । এখন ডকুমেন্টস যায় দিল্লীতে ভিসা ডিশিসন সেখান থেকে হয় । পাসপোর্ট থাকে ঢাকাতে সো দিল্লীওয়ালা বোঝেনা যাত্রাবাড়ী আর বারীধারার পার্থক্য তাই ডকুমেন্টস খুব সাবধানে দিতে হয় । না হলে রিফিউজ ।
৩/ এমপ্লয়মেন্ট ভিসা / Employment Visa এই ভিসাতে রেষ্টুরেন্টর শেফরা বেশি যায় ।
৪/ মাইগ্রেশন ভিসা / Migration Visa
আপনার একাডেমিক যোগ্যতা ভাল, দেশে ভাল জব করেন, আইএলটিএসে মার্কস ভাল, তাহলে এই ভিসাতে আপনি চিরস্থায়ী ভাবে মাইগ্রেশন করে বৃটেন যেতে পারবেন ।
৫/ সেটেলম্যান্ট ভিসা / Settlement Visa. বৃটিশ নাগরিক যদি এই দেশে বিয়ে করে নিয়ে যেতে চায় চিরস্থায়ী ভাবে । ম্যারেজ সার্টিফিকেট, ৫ কপি ছবি, ইমেইল, চিঠি, মোবাইল যোগাযোগ প্রমান, সেকেন্ডারী লেভেল ইংরেজী কোর্স সার্টিফিকেট ইত্যাদি ডকুমেন্টস প্রয়োজনীয় ।
অষ্ট্রেলিয়া – Australia
ভিজিট ভিসা / ফ্যামিলি ভিজিট ভিসা/ বিজনেস ভিজিট ভিসা /ইন্টারট্রেইনার ভিজিট – Visit Visa/ Family Visit Visa/ Business Visit Visa/ Entertainer Visa.
মোটামুটি তিন বছর দু বছর এর জন্য ইস্যু করে এই ভিসা । এটা মাল্টিপল দেয় । বেড়ানো, আত্মীয়স্বজনের সাথে সাখ্খাত, বিজনেস মিটিং । বা কালচারাল কোন কিছু করতে চাওয়া । ব্যাংক স্টেটম্যান্ট, এফডিআর, ইনভাইটেশন, হোটেল বুকিং লাগে । ভিসা পেতে । এই ভিসা গুলো আপনার হয়ে কেউ অষ্ট্রেলিয়া থেকেও করাতে পারে । যদি তিনি সামর্থবান মানুষ হন ।
চিরস্থায়ী মাইগ্রেশন / Permanent Migration
আপনার একাডেমিক কোয়ালিফিকেশন ভাল । আইএলটিএস আছে এবং অষ্ট্রেলিয়ার জব লিষ্টে আপনার প্রফেশনের উল্লেখ আছে তবে এপ্লাই করতে পারবেন এবং এপ্রভ করলে চিরস্থায়ী ভাবে বসবাসের সুযোগ পাবেন ।
প্যারেন্টস মাইগ্রেশন / Parents Migration
আপনার ছেলে মেয়েরা অষ্ট্রেলিয়াতে আছে সিটিজেন হিসেবে তাহলে তারা এই ভিসাতে আপনার জন্য এপ্লাই করতে পারবে । সময় লাগে প্রায় ১০ বছরের মত । প্যারেন্টস মাইগ্রেশনে যদি প্রায় ১কোটি ১০ লাখ টাকা দেন তাহলে মোটামুটি এক বছরের মধ্যে পারমানেন্ট রেসিডেন্সি পেয়ে যাবেন ও খুব সময়ের মধ্যে অষ্ট্রেলিয়ান সিটিজেন হবেন ।
কানাডা – Canada
ভিজিট ভিসা / Visit Visa
যদি আত্মীয় থাকে বা ঘুরতে যেতে চান তবে এই ভিসাতে আবেদন করতে হয় । ব্যাংক স্টেটম্যান্ট, সলভেন্সি, অফিস লেটার, টিন সার্টিফিকেট, ব্যবসা করলে ট্রেড লাইসেন্স । বাংলা ডকুমেন্টস নোটারী হতে হয় । বিমানের টিকিট বুকিং , হোটেল বুকিং দিতে হয় । ভিসা ছয়মাস থেকে দুবছর ইসু করে ।
সুপার ভিসা – Super Visa.
যদি কানাডায় বসবাস রত ছেলে মেয়ে তার মাকে বা বাবাকে নিতে চায় একটা নিদিষ্ট সময়ের জন্য তাকে সুপার ভিসা বলে ।
মাইগ্রেশন ভিসা / Migration Visa
চিরস্থায়ী ভাবে বসবাসের জন্য । বর্তমানে সবচেয়ে বেশি আকর্ষনিয় প্রগ্রাম এটি । বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মানুষ নিচ্ছে কানাডা চিরস্থায়ী ভাবে বসবাসের জন্য । যেমন বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্টানের ম্যানেজার, ডাকতার, ইন্জিনিয়ার, রিয়েল এষ্টেট, ইনসুরেন্স , সাংবাদিক, ফটোগ্রাফার, আষ্টির্ট, ব্যাংকার ।
শিখ্খাগত যোগ্যতা মাষ্টার্স । আইএলটিএস দরকার ।
ওয়ার্কপারমিট ভিসা - Work Permit Visa
এই ভিসাতে ইন্টারমেডিয়েট পাশ হলেই হয় মোটামুটি ইংলিশ বোঝা মানুষ হলেই চলে । এই ভিসাতেও আপনি ওই দেশের নাগরিক হতে পারবেন । কানাডার কোন প্রতিষ্টান থেকে আপনার জব অফার লেটার লাগবে । এটাতে ফ্যাকটরি টাইপের জব হয় । যেটা আপনার এজেন্সি ম্যানেজ করে দেবে । সাথে লাগবে কানাডার এলএমও বা লেবার মার্কেট ওপিনিয়ন । সব ডকুমেন্টস আসবার পর আপনি ভিএফএস ঢাকায় কানাডিয়ান ভিসা সেন্টারে গিয়ে বায়োমেটট্রিকস বা অংগুলের ছাপ দিয়ে এপ্লাই করবেন । এই ভিসাতে ঢাকাতে বেশি জালিয়াতি, ধান্দাবাজী হয় । বায়োমেটৃকস না নিয়ে গুলশানের ধান্দাবাজী অফিস থেকে এপ্লাই করে টাকা ১০ লাখ ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় । যার কানাডাতে পরিচিত লোক আছে এবং যিনি একটু তার জন্য করবেন তার উচিত এই ভিসাতে এপ্লাই করা । এই ভিসাতে সব ডকুমেন্টস প্রসেস হতে সময় লাগে দেড় দুই বছর ।
ইউরোপ – Europe
ভিজিট ভিসা - যদি রিলেটিভ থাকে/ যদি মিটিং এ যান/ যদি ঘুরতে যান ইউরোপের খেত্রে ভিজিট ভিসা ১৫ দিন থেকে ৫ বছর ইস্যু করে । নির্ভর করে আপনার যাবার গুরুত্বের উপরে । ধরুন আপনি যে অফিসে কাজ করেন তার হেড অফিস মিউনিখে, প্যারিসে, জুরিখে এবং আপনাকে বছরে দুবার একবার যেতে হয় সেখেত্রে ৫ বছর ভিসা ইস্যু করতে পারে । তবে বেশি ভাগ ১৫ দিন ১ মাসের ভিসা ইস্যু করে ।
ফ্যামিলি রিইউনিয়ন : Family Reunion
যদি আপনার ভাই বোন থাকে ওই দেশে নাগরীক হিসেবে । তিনি আপনাকে বা আপনার বাবা মাকে চিরস্থায়ী ভাবে নিতে চায় সেটাকে ফ্যামিলি রিইউনিয়ন ভিসা বলে ।
Brazil, Singapore, Malaysia, Thailand, Indonesia.
ব্রাজিল, সিংগাপুর, ম্যালয়শিয়া, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ।
ভিজিট ভিসা ফর মিটিং এন্ড সাইট সিং
৬ মাসের ব্যাংক স্টেটম্যান্ট, ব্যাংক সলভেন্সি লেটার, অফিস লেটার আপনার পদবী বেতন, কতদিন হল জবে আছেন বা ব্যবসাতে আছেন উল্লেখ করে । ব্যবসা করলে ট্রেডলা্ইসেন্স লাগবে এবং সেটা নোটারী করে দিতে হবে । ব্যাংকষ্টেটম্যান্টের শেষ ব্যালান্স অন্তত একলাখ টাকার উর্দ্ধে থাকতে হবে । ব্রাজিলের খ্রেত্রে ব্যাংকে অবশ্যই আরও বেশি টাকা দেকাতে হবে । সাথে কনফার্ম হোটেল বুকিং ।
বিজনেস হলে ও ইনভাইটেশন অবশ্যই ইনভাইটেশন লাগবে ।
China চায়না ।
ভিজিট ভিসা - চায়না ভিজিট ভিসা ইসুর খেত্রে ইনভাইটেশন দেখে । যদি না থাকে তবে বেশি টাকা দিলে আপনার হয়ে কেউ ইনভাইটেশন এনে দেবে এবং ভিসা করাবে । ডকুমেন্টস সিংগাপুর ম্যালশিয়ার মত । তবে ব্যাংকেষ্টেটম্যান্টে ৫ লাখ এর বেশি টাকা থাকলে ভাল হয় ।
24/10/2015
Iqbal Road, Dhaka.
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১২