রেকর্ড চতুর্থবারের মতো ফিফা ব্যালন ডি’অর জিতে নিজেকে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন আর্জেন্টাইন ফুটবল সুপারস্টার লিওনেল মেসি। এরআগে টানা তিনবার ফিফা ব্যালন ডি’অর জিতে রেকর্ড গড়েন মেসি।
চতুর্থবার এই পুরস্কার জিতে সবাইকে ছাড়িয়ে গেলেন এই ফুটবল জাদুকর। মূলতঃ এখন মেসিময় হয়ে গেল ফিফা ব্যালন ডি’অর।
সোমবার জুরিখের ফিফার কংগ্রেস হাউসে আলো ঝলমলে মঞ্চ সাজানো। অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় পুরো ফুটবল বিশ্ব। জনাকীর্ণ ফিফার কংগ্রেস হাউসেও পিন পতন নীরবতা।
ঘোষণা করা হবে ২০১২ ফিফা ব্যালন ডি’অর বিজয়ীর নাম। ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যেও টানটান উত্তেজনা। সবার চোখ ফিফার কংগ্রেস হাউসের দিকে। ঘোষণা করা হলো ফিফা ব্যালন ডি’অর পুরস্কার বিজয়ী। আর এই বিজয়ীর নাম লিওনেল মেসি।
এই নিয়ে রেকর্ড চতুর্থবারের মতো ফিফা ব্যালন ডি’অর জিতে মেসি গড়লেন অনন্য এক ইতিহাস। এর আগে টানা তিনবার ফিফা ব্যালন ডি’অর জিতেও রেকর্ড গড়েন তিনি। এখন থেকে ফুটবল ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরেই লেখা থাকবে লিওনেল মেসির গড়া এ অনন্য রেকর্ড।
লিওনেল মেসির সঙ্গে এবারের ব্যালন ডি’অর পুরস্কার জয়ের দাবিদার ছিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ও আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা। এই দু’জনকে ছাপিয়ে লিওনেল মেসিই উঠে এলেন ফুটবল বিশ্বে নতুন নক্ষত্র হয়ে।
গত বছর বিস্ময়কর পারফরমেন্সেই ফিফা ব্যালন ডি’অর জয়ের দিকে এগিয়ে যান মেসি। গত বছর পেলের রেকর্ডের পর ১৯৭২ সালে এক পঞ্জিকা বর্ষে জার্মান ফুটবল গ্রেট গার্ড মুলারের গড়া সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডও ভেঙে দেন আর্জেন্টাইন এই ফুটবল জাদুকর। এক পঞ্জিকা বর্ষে মেসির গোল সংখ্যা ৯১টি।
রেকর্ড পুরস্কার জিতেও মেসির কণ্ঠে হতাশার সুর। তিনি বলেন, ‘আসলে বছরটি আমার কাছে সেরা ছিল না। দলের শিরোপা জয়টাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। আমার ব্যক্তিগত রেকর্ডের চেয়ে স্প্যানিশ লিগ, স্প্যানিশ সুপার কাপ কিংবা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’
ব্যালন ডি’অর পুরস্কার ঘোষণার আগে আর্জেন্টিনা সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে লিওনেল মেসি বলেন, ধীরে ধীরে উন্নতি করছে আর্জেন্টিনা। ব্রাজিল বিশ্বকাপে যে আর্জেন্টিনা সব দলের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে তারই আভাস পাওয়া গেছে মেসির কণ্ঠে।
মেসি বলেন, ‘সঠিকভাবেই দল এগিয়ে যাচ্ছে। গত বছর থেকে আর্জেন্টিনা দলের পরিবর্তন এসেছে। আমরা যে ফলাফল প্রত্যাশা করছিলাম, তাই হয়েছে। দল ভালো খেলছে। দলের দারুণ পারফরমেন্সে আমি অনেক খুশি।’
২০১০ সাল থেকে ফিফা বিশ্ব বর্ষসেরা ও ব্যালন ডি’অর মিলে দেয়া হচ্ছে ফিফা ব্যালন ডি’অর। ১৯৯১ সাল থেকে ফিফা বিশ্ব বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার দিয়ে আসছে ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা ফিফা।
ফিফা বর্ষসেরা মহিলা ফুটবলারের পুরস্কার পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের আবি ওয়ামবেক। তিনি পেছনে ফেলেন স্বদেশী অ্যালেক্স মরগ্যান ও ব্রাজিলের মার্তাকে। ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকে মহিলা ফুটবলে যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে পাঁচ গোল করে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন ওয়ামবেক। যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে মোট ১৯৮টি ম্যাচ খেলে তার গোল সংখ্যা ১৫২।
এদিকে, ফিফা বর্ষসেরা কোচ নির্বাচিত হয়েছেন স্পেনের বিশ্বকাপ জয়ী কোচ ভিসেন্তে দেল বস্ক। গত বছর এই পুরস্কার জিতেছিলেন বার্সেলোনার সাবেক কোচ পেপ গার্দিওলা। ২০১০ সালে কোচ দেল বস্কের নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ শিরোপা জিতে স্পেন। গত বছর স্পেনকে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপাও এনে দেন তিনি।
ফিফা বর্ষসেরা মহিলা কোচের পুরস্কার পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পিয়া মারিয়ান সুদাজ। তার নেতৃত্বে ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকে দারুণ সাফল্য দেখায় যুক্তরাষ্ট্র।
ফিফা প্রেসিডেন্সিয়াল অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন জার্মানির কিংবদন্তী ফুটবলার ফ্রাঞ্চ বেকেনবাওয়ার।
ফিফা পুস্কাস অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন স্লোভাকিয়ার মিরোস্লাভ স্টোক। এই পুরস্কারে তালিকায় দুই ও তিন নম্বরে ছিলেন যথাক্রমে রাদামেল ফ্যালকাও ও নেইমার।