ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের মানচিত্র। ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ রোমান, অ্যাঙ্গলো- স্যাক্সোন এবং নর্মানরা আসার আগে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ ব্রিটনরা বাস করত । এরা ছিল কেলটিক জাতিরই একটি শাখা।
অ্যাঙ্গলো- স্যাক্সোনরা ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জে পৌঁছেছিল পঞ্চম এবং ষষ্ট শতকে। এদের সঙ্গে জুটরাও ছিল। জুটরা ছিল ডেনমার্কের উত্তর অঞ্চলের লোক। এর আগে ৪৩ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জটি রোমানরা আক্রমন করে অধিকার করে নেয়। এরপর ৪০০ বছর ধরে, বিশেষ করে, দক্ষিণ ব্রিটেনে রোমান শাসন অব্যাহত থাকে। খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতকের শুরুতে রোমান সা¤্রাজ্যের কেন্দ্রটি দূর্বল হয়ে পড়লে এবং রোমানদের কাছে ব্রিটেনের গুরুত্ব কম থাকায় ৪১০ খ্রিস্টাব্দে রোমানরা ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ ছেড়ে যায়।
ব্রিটেনে একটি রোমান স্নানাগার।
খ্রিষ্ঠীয় পঞ্চম এবং ষষ্ট শতকে উত্তর সাগর (নর্থ সি) থেকে অ্যাঙ্গলো- স্যাক্সোন ও জুটরা ব্র্রিটেনে আসতে থাকে। তারা ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জে গিয়েছিল প্রধানত উত্তর জার্মানি, ডেনমার্ক এবং উত্তর হল্যান্ড থেকে। এরা ছিল মূল মিশ্রজাতি। তবে তাদের বেশির ভাগই ছিল স্যাক্সোন, এঙ্গেলস আর জুট। অবশ্য এদের মধ্যে কিছু কিছু ফ্রাঙ্ক ও ফ্রিসিয়ানও ছিল । স্যাক্সোন, ফ্রাঙ্ক ও ফ্রিসিয়ানরা ছিল জার্মান-ডাচ। এঙ্গেলসরা দক্ষিণ ডেনমার্কের অধিবাসী।
অ্যাঙ্গলো- স্যাক্সোনরা ছিল জার্মানিক জাতির অর্ন্তভূক্ত। তারা ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জে গিয়েছিল প্রধানত উত্তর জার্মানি, ডেনমার্ক এবং উত্তর হল্যান্ড থেকে। ইউরোপের উত্তরাঞ্চল ‘জার্মেনিয়া’ নামে পরিচিতি ছিল। অ্যাঙ্গলো- স্যাক্সোনদের ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জে আসার অন্যতম কারণ ছিল বন্যা।
রোমানরা ব্রিটেন অধিকার করে গড়ে তুলেছিল প্রাচীর ঘেরা নগর। তারা প্রাচীর ঘেরা নগরেই বাস করলেও অ্যাঙ্গলো- স্যাক্সোনদের গ্রামীণ মানসিকতার জন্য তারা বাস করত গ্রামে। অ্যাঙ্গলো- স্যাক্সোনরা গ্রাম গড়ে তুলত কখনও রোমান প্রাচীরের বাইরে বনজঙ্গল পরিস্কার করে কখনও- বা রোমান প্রাচীরের ভিতরেই। অ্যাঙ্গলো- স্যাক্সোনরা নৌবিদ্যায় দক্ষ ছিল বলেই তাদের গ্রামগুলি ছিল নদীর কাছাকাছি। গ্রামের সবচে বড় বাড়িটিই ছিল গোত্র প্রধানের। গোত্র প্রধান ওই বাড়িতে সৈন্যসামন্ত নিয়ে থাকতেন। অ্যাঙ্গলো- স্যাক্সোনদের গ্রামে মাটির কাজ ও কাপড়বোনার জন্যও ছিল আলাদা ঘরবাড়ি । চরণভূমি ছিল অ্যাঙ্গলো- স্যাক্সোনদের এজমালি সম্পত্তি।
অ্যাঙ্গলো- স্যাক্সোন গ্রাম।
অ্যাঙ্গলো- স্যাক্সোন রা ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জে পদার্পন করার পর থেকেই ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের পরিস্থিতি ছিল সাংঘর্ষিক। প্রতিপক্ষ মূলত ব্রিটন এবং ভাইকিং। যে কারণে অ্যাঙ্গলো- স্যাক্সোন সমাজে সারা বছরই বিরাজ করত যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি । রাজা ছিলেন যুদ্ধনেতা; যুদ্ধে নেতৃত্ব দান ও বিজয় অর্জনই ছিল রাজার দায়িত্ব। রাজা দূর্বল হলে তাকে হত্যা করা হত। যুদ্ধে প্রধানত ব্যবহৃত হত সাত ফুট লম্বা বর্শা। বর্শার মাথায় থাকত সুতীক্ষ্ম লৌহ ফলক। তরবারি ব্যবহার করতে পারত কেবল ধনী ও অভিজাতরা। অভিজাতরা থাকত রাজার অধীনে । এদের অধিকারে থাকত জমি ও দাস।
অ্যাঙ্গলো- স্যাক্সোন কুঁড়েঘর ।
কাঠের তৈরি অ্যাঙ্গলো- স্যাক্সোন কুঁড়েঘরগুলির ছাদ তৈরি করা হত খড় দিয়ে । নেকড়ে, শেয়াল ও ভালুকের আক্রমন থেকে বাঁচতে কুঁড়ের চারপাশে তৈরি করা হত কাঠের উঁচু বেড়া। কুঁড়েঘরের ভিতরে থাকত একটি মাত্র রুম। ওই রুমেই থাকত রান্না, তাপ ও আলোর জন্য উনুন। গ্রামের বিশাল হলরুমে নিয়মিত উৎসব অনুষ্ঠিত হত। বড় একটি কড়াইয়ে মাংস-সবজি এসব একসঙ্গে সেদ্ধ করে স্টু তৈরি করা হত । অ্যাঙ্গলো- স্যাক্সোনরা রুটি বানাতো গম এবং রাই দিয়ে। ফলাত গাজর, কপি, সীম, বীন ও রসুন। ফলের মধ্যে আপেল, চেরি ও পাম। শূকর এবং হেরিং মাছ তারা শীতে লবন দিয়ে সংরক্ষণ করত।
অ্যাঙ্গলো- স্যাক্সোনদের প্রধান দেবতা ওডেন।
প্রথম যখন অ্যাঙ্গলো- স্যাক্সোনরা ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জে এল- তখন তারা ছিল বহুদেবতায় বিশ্বাসী- তারমানে প্যাগান। তারা সমাধিতে মূল্যবান সামগ্রী সংরক্ষণ করত। সপ্তাহের নির্দিষ্ট কয়েকটি দিন ছিল দেবতার নামে; অ্যাঙ্গলো- স্যাক্সোনদের প্রধান দেবতা ছিলেন ওডেন। দেবতার পোশাক-আশাক রাজার মতন ; হাতে অভিজাত্যের প্রতীক বর্শা ।প্রেমের দেবী ফ্রেয়া। ইনি ওডেন এর স্ত্রী। ফ্রেয়া এতই সুন্দরী যে ইনি কিছুই বহন করতেন না। সূর্যদেব ছিলেন অ্যাঙ্গলো- স্যাক্সোনদের জীবনদেবতা। সূর্যদেব ছিলেন তরুণ এবং তাকে ঘিরে ছিল জ্যোতির বলয়। চন্দ্র ছিলেন শিকারের দেবী। পরণে সাদা রঙের দীর্ঘ ঢোলা পোশাক; হাতে তীরধনুক।যুদ্ধের দেবতা ছিলেন টিউই। দেবতা টিউইয়ের পোষাক ছিল অ্যাঙ্গলো- স্যাক্সোন যোদ্ধার মতন; হাতে কুঠার। বজ্রের দেবতা ছিলেন:থুনর। পরনে যোদ্ধার বেশ, যিনি বহন করতেন বজ্রপাত। আর ভারি হাসিখুশি আর নাদুসনুদুস দেখতে স্যার্টান ছিলেন কৌতুকের দেবতা ।
অ্যাঙ্গলো- স্যাক্সোন রাজদরবার।
৫৯৬ খ্রিষ্টাব্দে অ্যাঙ্গলো- স্যাক্সোনদের খ্রিষ্ঠীয় সাধুগণ খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষিত করার উদ্যেগ নেন।সেন্ট অগাষ্টিন এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এসব উদ্যেগের ফলে ৬৫০ সালের মধ্যেই সমগ্র ইংল্যান্ডই খ্রিষ্টধর্মে ধর্মান্তিত হয়ে পড়ে । তবে অ্যাঙ্গলো- স্যাক্সোনরা গির্জার ওপর অবিচল আস্থার কথা বললেও তাদের পূর্বতন প্যাগান বিশ্বাসটি অ্যাঙ্গলো- স্যাক্সোন সমাজে প্রচলিত ছিল। তবে খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষিত হওয়ার ফলে অ্যাঙ্গলো- স্যাক্সোন সমাজে যুদ্ধবিগ্রহ কমে আসে।
ওল্ড ইংলিশে অস্টম এবং একাদশ শতকের মধ্যে ৩১৮২ লাইনে রচিত অ্যাঙ্গলো- স্যাক্সোন দের বীরগাথা বেওউল্ফ- এর প্রথম পৃষ্ঠা।
অ্যাঙ্গলো- স্যাক্সোন দের বর্ণমালা Futhorc runic alphabet নামে এবং ভাষাটি ‘ওল্ড ইংলিশ’ নামে পরিচিত। ভাষাটি ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জে শতাব্দী থেেেক প্রচলিত। অল্প নমুনা টিকে আছে। স্যাক্সোনরা তাদের ভাষাকে বলত-Englisc ; ওল্ড ইংলিশ- এ sc উচ্চারণহয় sh এর মতো। তার মানে Englisc -এর উচ্চারণ ইংলিশ। বর্তমান ইংরেজি ভাষার প্রাথমিক কাঠামো এবং শব্দের উৎস ওই ‘ওল্ড ইংলিশ’। পরবর্তীতে নর্মান বিজয়ের পর ইংরেজি ভাষায় নতুন শব্দ (ফরাসি) যোগ করেছে মাত্র।
১০৬৬ সালের ১৪ অক্টোবর হেষ্টিংসের যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল।
১০৬৬ সালে উত্তর ফ্রান্সের অধিবাসী নর্মানদের ইংল্যান্ড বিজয়ের ফলে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জে অ্যাঙ্গলো- স্যাক্সোন যুগের অবসান ঘটেছিল। নর্মান্ডির ডিউক ২য় উইলিয়াম এই অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিল। সে সময় ইংল্যান্ড রাজা ছিলেন দ্বিতীয় হ্যারল্ড। ইনি ১০৬৬ সালের ১৪ অক্টোবর হেষ্টিংসের যুদ্ধে ফরাসি নর্মান যৌথবাহিনীর কাছে পরাজিত হন। নর্মান্ডির ডিউক ২য় উইলিয়াম ১০৬৬ সালের বড়দিনে লল্ডনে রাজ্যাভিষেক। নতুন যুগের সূচনা হয়।
হেষ্টিংসের যুদ্ধ
সোনার অলঙ্কার
অ্যাঙ্গলো- স্যাক্সোন যোদ্ধা
অ্যাঙ্গলো- স্যাক্সোন দের Futhorc runic alphabet
ছবি:ইন্টারনেট।
তথ্যসূত্র:
http://saraalgoe.hubpages.com/hub/Anglo-Saxon
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
http://history.parkfieldict.co.uk/home
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১২ সকাল ৭:১৬