এই জ্ঞান তাপসের জন্ম বিক্রমপুরের নয়ানন্দ গ্রামের মাতুলালয়ে। সময়টা ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দের ২৪ জানুয়ারি। জন্মের অল্পকাল পরে বাবা রোহিণীকান্ত ভট্টশালী মারা যান কলেরায়। মা শরৎকামিনী দেবী আর কাকা অক্ষয়চন্দ্রর স্নেহে বেড়ে উঠতে থাকে শিশুটি। তো, বালক বয়েসে কেমন ছিল নলিনী? কেমন ছিল তার ছেলেবেলা? বিক্রমপুরের নয়ানন্দ গ্রামটি সন্দেহ নেই- ছিল অপরূপ, নির্জন। উনবিংশ শতকের শেষ প্রান্তের সেই গভীর নৈঃশব্দময় পূর্ববঙ্গের পল্লীআবহে বেড়ে ওঠা বালকের মনে জন্ম নিয়েছিল যে বিস্ময়বোধ, তা থেকেই জন্ম নিয়েছিল আরও নিবিড় ভাবে বাংলাকে জানার গভীর আগ্রহ। আর বালকহৃদয়ে এই বিস্ময়বোধই তৈরি করেছিল লেখালেখির আন্তরিক বাসনা। পরবর্তীকালে ইতিহাস চর্চার পাশাপাশি সাহিত্যচর্চা করেছেন নলিনীকান্ত ভট্টশালী । কুমিল্লার শচীন দেব বর্মন যেমনটি ছিলেন সংগীতপাগল একজন মানুষ- তেমনই এই প্রত্নপাগল মানুষটি পরিত্যক্ত পুরনো মন্দিরের খুঁজে বেড়াতেন পুরনো দিনের জিনিস, যাকে বলা হয় প্রত্নবস্তু। গ্রামের মানুষের মুখে শুনতেন উপকথা, লোকগল্প। এই গল্পকথা ঝাড়াই-বাছাই করে খুঁজে নিতেন সত্য- যে সত্য দিয়ে নির্মিত হয় একটি জাতির ইতিহাস। এভাবেই সত্যনিষ্ট মন-মানসিকতা নিয়ে একটি বালক বেড়ে উঠছিল ইতিহাসবিমূখ পুরাণপ্রিয় এক জনগোষ্ঠীতে।
১৯১২ সাল। ঢাকা কলেজ থেকে এম.এ পাস করলেন নলিনীকান্ত ভট্টশালী। তারপর কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজে ইতিহাস পড়াতে শুরু করেন। কুমিল্লা জেলার প্রাচীন নাম ছিল সমতট। শিক্ষকতার পাশাপাশি প্রাচীন সমতটের ইতিহাস সম্বন্ধে নিবিড় অনুসন্ধান আরম্ভ করেন। পাঠ করতে থাকেন প্রাচীন পুথি, পান্ডুলিপি,ধর্মশাস্ত্র; সংগ্রহ করেন স্থানীয় লোককাহিনী । এভাবে এক নিঃসঙ্গ জ্ঞানসাধকের পথচলা আরম্ভ হয়। যে পথের শেষে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ঢাকার শাহবাগের একটি ভবন। কেন্দ্রীয় জাদুঘর। যে ভবনের দিকে তাকিয়ে একজন প্রত্নপাগল বাঙালি গবেষকের কথা ভেবে আমি মৃদু উত্তেজনা বোধ করতে থাকি ...
কিন্তু, বাংলাদেশের প্রথম জাদুঘর কোনটি?
রাজশাহীর বরেন্দ্র গবেষনা জাদুঘর।নাটোরের দিঘাপতিয়া রাজপরিবারের বিশিষ্ট পন্ডিত এবং রবীন্দ্রনাথের ঘনিষ্ট সুহৃদ কুমার শরৎ রায় ১৯১০ সালের এপ্রিল মাসে জাদুঘরটি স্থাপন করেছিলেন। এর ক’বছর পরেই নলিনীকান্ত ভট্টশালী ঢাকায় একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠার উদ্যেগ নেন। তবে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারকে অবহিত করা ছাড়া মফঃস্বলের একটি মহাবিদ্যালয়ে এক তরুণ প্রভাষকের এই বিষয়ে কী-ই বা করার ছিল ? নলিনীকান্ত ভট্টশালী তাই করেছিলেন। যে কারণে এ লেখার শুরুতে বলছিলাম ১৯১২ সালের ২৫ জুলাই নলিনীকান্ত ভট্টশালী ছোট লাট লর্ড কারমাইকেলকে ঢাকায় একটি জাদুঘরের স্থাপনের গুরুত্ব বোঝাতে পুরনো ঢাকার এক অনুষ্ঠানে জ্বালাময়ী এক বক্তৃতা দিয়েছিলেন। কেবল তাই নয় সে সভায় নলিনীকান্ত ভট্টশালী লর্ড কারমাইকেলসহ ঢাকার সুধীসমাজকে তাঁর সংগ্রহ করা প্রত্নবস্তু দেখিয়েছিলেন। লর্ড কারমাইকেল শিক্ষিত মানুষ। তিনি ২৬ বছর বয়েসি তরুণের আবেগে উজ্জ্বীবিত হয়েছিলেন। অবশ্য ব্রিটিশ সরকারও ঢাকায় একটি জাদুঘর নির্মাণের গুরুত্ব উপলব্দি করতে পেরেছিলেন। তার কারণ ব্রিটিশ সরকারের মুদ্রাবিদ এইচ.ই. স্ট্যপলটন ঢাকায় একটি জাদুঘরের স্থাপনের প্রস্তাব করেছিলেন। লর্ড কারমাইকেল পুরনো ঢাকার নর্থব্রুক হলের সেই সভায় ঢাকায় একটি জাদুঘর স্থাপনের জন্য দু হাজার টাকা অনুদান দেন।
১৯১৩ সালের ৭ অগস্ট জাদুঘরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়। এর পরের বছর, অর্থাৎ ১৯১৪ সালের জুলাই মাসে তৎকালীন ঢাকার পুরনো সচিবালয়ের (বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল) একটি কক্ষে জাদুঘরের উদ্বোধন হয় । নলিনীকান্ত ভট্টশালী নিযুক্ত হলেন জাদুঘরের কিউরেটর। মাসে বেতন পেতেন দুশো টাকা। অবশ্য হাতে পেতেন আরও ৫ টাকা কম। তার মানে ১৯৫ টাকা। ব্রিটিশ আমলাতন্ত্রের লালফিতার দ্যেরাত্ম আর কী! জাদুঘরের কর্মচারী বলতে একজন দারোয়ান আর একজন চাপরাশি। আয়ব্যয়ের হিসেব রাখতেন একটি রেজিস্টার খাতায়।
এভাবে আরম্ভ হল এক প্রত্নগবেষকের প্রত্ন-অনুসন্ধানের কাজ।
জাদুঘর প্রতিষ্ঠার গোড়ার দিকে নলিনীকান্ত ভট্টশালী আর ঢাকা জাদুঘর ছিল অভিন্ন। কেননা, তিনি একাই আবিস্কৃত প্রত্নবস্তুর দীর্ঘ বিবরণ লিখে রেখেছেন। জাদুঘরের গ্যালারিতে ডিসপ্লের জন্য লেবেল কিংবা ক্যাপশন তিনিই লিখতেন। ছবিও নিজেই তুলতেন। শোকেসের নকশার জন্য কোনও কাঠমিস্ত্রির কাছে নাকি ছুটে যাননি। শোকেস তিনিই বানাতেন। সব সময় ভাবতেন কীভাবে আরও আকর্ষণীয় করে প্রত্নবস্তু উপস্থাপন করা যায়। এসব কাজের পাশাপাশি প্রত্নবস্তু সংগ্রহের জন্য হন্যে হয়ে পূর্ববাংলার প্রত্যন্ত গ্রামেগঞ্জে ঘুরে বেড়িয়েছেন। ক্লান্তিহীন। সঙ্গে চিঁড়ে, মুড়ি, আখের গুড়, কাগজ, ক্যামেরা, চর্টলাইট, বেতারযন্ত্র। আজ থেকে একশ বছর আগে পথঘাট আজকের দিনের মতো সুগম ছিল না। পদ্মা-মেঘনা পেরুতে হত নৌকায়। স্থলপথের বাহন হাতি,পালকি কিংবা গরুর গাড়ি। আজ আমরা কত সহজেই না কুমিল্লার কোটবাড়ি যাই। শীতের মিঠে রোদ গায়ে মেখে শাহবন বিহারে ঘুরে বেড়াই। তখনকার দিনে গরুর গাড়ি কিংবা পালকি ছাড়া কুমিল্লা শহর থেকে শালবন বিহারে যাওয়ার উপায় ছিল না। তা সত্ত্বেও এই তরুণ প্রত্নপাগলটি দমে যান নি। শীতগ্রীষ্ম উপেক্ষা করে মাইলের পর মাইল হেঁটেছেন অচেনা গ্রাম্যপথে। অথচ তাঁর এই প্রত্নগবেষনা কাজে বেতনের অর্থ ছিল অপর্যাপ্ত। তবে তিনি চাকরি ছাড়ার কথা ঘুনাক্ষরেও ভাবেননি।
ঢাকার জাদুঘরটি ঘিরে নলিনীকান্ত ভট্টশালীর কার্যক্রম ঢাকা শহরের সুধীসমাজের দৃষ্টি আকর্ষন করে। এদের অনেকের কাছেই প্রাচীন সামগ্রী ছিল। সেসব তারা জাদুঘরে উপহার দিলেন। এসব কারণে সচিবালয়ের জাদুঘরে ঠিক স্থান সঙ্কুলান হচ্ছিল না। ১৯১৫ সালের জুলাই মাস। নলিনীকান্ত ভট্টশালী নিজস্ব প্রচেষ্টায় সচিবালয় থেকে নিমতলীর বারদুয়ারী ভবনে জাদুঘরটি সরিয়ে আনেন।
বারদুয়ারী ভবনের ঠিক ৫০ মিটার পশ্চিমে ছিল গাছগাছালি ঢাকা ছায়াময় একটি একতলা বাড়ি । সে বাড়ির নাম:‘বিনয়কুঠি’। নলিনীকান্ত ভট্টশালী সেই বাড়িতে পরিবারসমেত উঠে এলেন। এ বাড়িতেই ছিল তাঁর গ্রন্থাগার আর অফিসঘর। পরিবার পরিজন নিয়ে আমৃত্যু তিনি ‘বিনয়কুঠি’তেই ছিলেন। শোনা যায়, প্রত্নপাগল ওই মানুষটি নাকি সরকারি ছুটিছাঁটা নিতেন না। তিনি হয়ে উঠেছিলেন জাদুঘরের সার্বক্ষণিক কর্মি এবং গবেষক।
নলিনীকান্ত ভট্টশালীর লেখা একটি বইয়ের প্রচ্ছদ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগে ‘বিনয়কুঠির’ হয়ে উঠেছিল ঢাকা শহরের ইতিহাসপ্রেমী মানুষের মিলনমেলা। নিয়মিত জ্ঞানীগুণিদের আড্ডা বসত বিনয়কুঠিরের ছায়াঘেরা প্রাঙ্গনে । নিশ্চয়ই সে আড্ডা নলিনীকান্ত ভট্টশালী মাতিয়ে রাখতেন। হয়তো দেখাতেন কোনও শিবমূর্তি কি বর্মন রাজাদের তামার প্লেট। চলত চুলচেরা বিশ্লেষন। এভাবে এক সময় উদঘাটিত হত সত্য। যা আরাধ্য।
নলিনীকান্ত ভট্টশালী প্রত্নবস্তু অনুসন্ধানের পাশাপাশি অক্লান্তভাবে গবেষনাপত্র লিখে গিয়েছেন। পাশাপাশি সেসব সম্বন্ধে পত্রপত্রিকায়ও লিখে সাধারণ মানুষের কাছে উপস্থাপন করতেন । নলিনীকান্ত ভট্টশালীর মূল গবেষনার বিষয় ছিল বঙ্গ-সমতট। এই অঞ্চলের অনেক প্রাচীন প্রত্নসামগ্রী তিনি উদ্ধার করেছেন। তার ভিত্তিতে বাংলার ইতিহাসের কালপঞ্জি তৈরি করেছেন। তাঁর অনুসন্ধানের জায়গা ছিল কোটালিপাড়া, সাভার, রামপাল, বিক্রমপুরের বজ্রযোগীনি, দেউলবাড়ি, বড়কামতা এবং লালমাই-ময়নামতীসহ আরও অনেক প্রাচীন জনপদ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল কুমিল্লার কোটবাড়ি। আজ যে আমরা বাংলার খড়গ, চন্দ্র, বর্মন এবং দেববংশের কথা জানি- সেটি নলিনীকান্ত ভট্টশালীর (অনেকটা আকস্মিকভাবেই) তাম্রশাসন আবিস্কারের ফলেই সম্ভব হয়েছে।
নলিনীকান্ত ভট্টশালীর প্রধান অবদান হিন্দু এবং বৌদ্ধ আইকোনোগ্রাফি। (মূর্তি নিয়ে পড়াশোনাকে আইকোনোগ্রাফি বলা হয়।) হিন্দু এবং বৌদ্ধ আইকোনোগ্রাফি তাঁর সময়ের আগে তেমন অগ্রগতি হয়নি। এ ক্ষেত্রে তিনিই পথিকৃৎ। গবেষনার এই ক্ষেত্রটিকে সমৃদ্ধ করার উদ্দেশ্যে ধর্মশাস্ত্র অধ্যয়নের পাশাপাশি মূর্তির সন্ধানে পূর্ব বাংলার আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়িয়েছেন ঠিকই- তবে কোথাও কোনও মূর্তি আবিস্কার করলেও সেটি তিনি খুব সহজেই জাদুঘরে আনতে পারতেন না। কারণ গ্রামবাসী সে মূর্তিতে সিঁদুর লাগিয়ে পূজা করত। তখন এই প্রত্নপাগল মানুষটি ওদের বলতেন," এ মূর্তিটি তোমরা আমাকে দাও। আমি জাদুঘরে নিয়ে পূজা দেব।" মূর্তির তিনি পূজা দিতেন ঠিকই। তবে অন্যভাবে ...এতটাই কঠিন আর দুঃসাধ্য ছিল সেই প্রত্নপ্রেমী মানুষটির সাধনা। অথচ আজ যারা টাকার লোভে বাংলাদেশের প্রত্নবস্তু বিদেশে পাচার করে তাদের সঙ্গে এই জ্ঞানতাপসের দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য অনুভব করে অভিভূত হই। আর উপলব্দি করি যে সার্বিক নৈরাজ্য আর অধঃপতন ঠেকাতে জ্ঞানচর্চার বিকল্প নেই।
ঢাকার কেন্দ্রীয় জাদুঘরে নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারি।
নলিনীকান্ত ভট্টশালীর আগ্রহ কেবলমাত্র প্রাক-মুসলিম বৌদ্ধ-হিন্দু আমলেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি বাংলার মুসলিম ইতিহাসঐতিহ্য নিয়েও যথেষ্ট আগ্রহী ছিলেন বলেই সুলতানি আমলের মুদ্রা অসীম ধৈর্যের সঙ্গে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মুসলিম মুদ্রাবিদ্যায় অসাধারণ পান্ডিত্য অর্জন করেছিলেন। তাঁর ‘কয়েনস অ্যান্ড ক্রোনোলজি অভ দি আরলি ইন্ডিপেন্পেট সুলতানস অভ বেঙ্গল’ বইটি ১৯২২ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত হয়। এই বইটি আজও আকরগ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত । ১৯৩৬ সালে ‘মুসলিম কয়েনস ইন দি ঢাকা মিউজিয়াম’ নামে একটি ক্যাটালগ প্রকাশ করেন। মুসলিম আমলের মুদ্রার ওপর ভিত্তি করে তিনিই সর্বপ্রথম মুঘল-পূর্ব মুসলিম আমল সম্বন্ধে এক যৌক্তিক বর্ণনা উপস্থাপন করেন। নলিনীকান্ত ভট্টশালীর লেখা ‘বেঙ্গল চিফস স্ট্রাগল ফর ইন্ডিপেন্ডেনস ইন দি রেইন অভ আখবার অ্যান্ড জাহাঙ্গীর’ নামে এক সুদীর্ঘ প্রবন্ধ বেরিয়েছিল ‘বেঙ্গল পাস্ট অ্যান্ড প্রেজেন্ট’- গ্রন্থের ৩৫ তম খন্ডে । এই প্রবন্ধে তিনি বাংলার বারো ভুঁইয়াদের ওপর বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে-যা আজও বারো ভুঁইয়াদের ওপর আমাদের যথার্থ জ্ঞানের উৎস।
তখন বলছিলাম যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগে বিনয়কুঠির হয়ে উঠেছিল ঐতিহাসিক গবেষনা কেন্দ্র। গবেষনার ব্যস্ততা সত্ত্বেও ওই মানুষটি কিন্তু সাহিত্যচর্চা ছাড়েননি । ১৯১৫ সালে বেরোয় ‘হাসি ও অশ্রু’ নামে একটি ছোটগল্প সঙ্কলন। বাংলা ১৩৩২ সনে আবদুস শুকুর মোহাম্মদ লিখেছিলেন ‘গোপী চন্দ্রের সন্ন্যাস’। নলিনীকান্ত ভট্টশালী এটি একটি সম্পাদনা করে ছাপিয়েছিলেন। পান্ডুলিপিবিদ্যাকে বলে প্যালিওগ্রাফি। নলিনীকান্ত ভট্টশালীর প্রাচীন বাংলার পান্ডুলিপি নিয়ে গভীর উৎসাহ ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে বাংলা ও সংস্কৃত পান্ডুলিপি সংরক্ষণগারটি রয়েছে, সেটিও তাঁরই উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত। গবেষনার পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক বছর সাহিত্য এবং ইতিহাস পড়িয়েছিলেন তিনি। যতদিন বেঁচেছিলেন বাংলা এবং ইংরেজি ভাষায় ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ব, মুদ্রাতত্ত্ব এবং শিল্পসাহিত্য বিষয়ে অক্লান্তভাবে লিখে গেছেন। ঢাকায় জাদুঘর প্রতিষ্ঠার পর জীবনের ৩৩ বছর কেটেছে ওই প্রতিষ্ঠানে । জাদুঘরটিকে একটি শক্ত ভিত্তি দেওয়ার জন্য, সমৃদ্ধ করবার জন্য নিজের সমস্ত জীবন উৎসর্গ করেছেন। যে কারণে হারুন উর রশীদ লিখেছেন, ‘উইদ সিঙ্গুলার ডেভোসন অ্যান্ড এনার্জি হি ট্রান্সফর্মড দিজ পুওর প্রোভিনশিয়াল কালেকশন ইনটু অ্যান ইন্সিস্টিটিউশন অভ অল ইন্ডিয়া রেপুটেশন!’ (বাংলাপিডিয়া)
১৯৪৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি এই জ্ঞান তাপস বিনয়কুটিরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
শাহবাগে ঢাকা কেন্দ্রীয় জাদুঘর। এই জাদুঘরের উদ্বোধন হয়েছিল ১৯৮৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর। অবশ্য এই ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপিত হয়েছিল সেই ১৯৬৬ সালে । ১৯১৪ সালে এক প্রত্নউন্মাদ মানুষটির অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের একটি কক্ষ যে জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল , তার প্রায় ৭০ বছর পর ঢাকার শাহবাগে সুবিশাল ঢাকা কেন্দ্রীয় জাদুঘরটির উদ্বোধন হয় ।
আমরা তো প্রায়ই যাই শাহবাগের কেন্দ্রীয় জাদুঘরে। ঘুরে ঘুরে দেখি এর প্রত্নসম্ভারপূর্ণ নানা কক্ষ। তখন কি আমাদের মনে পড়ে নলিনীকান্ত ভট্টশালী নামে একজন বাঙালি জ্ঞানসাধক কে? জাদুঘর সমৃদ্ধ করার জন্য যিনি দিনের পর দিন চিঁড়ে, মুড়ি আর আখের গুড় খেয়ে বসে থাকতেন পূর্ববাংলার কোনও নিভৃত গ্রামের পুকুরের পাড়ে?
ছবি: ইন্টারনেট।
তথ্যসূত্র:
কাজল ঘোষ; নানা রঙের ঢাকা
বাংলাপিডিয়া
Click This Link