মাচু পিকচুর সূর্যকুমারীরা
ইনকা সভ্যতার মানচিত্র। পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগর। এরপর আন্দেজ পর্বতমালার পুবমুখি বিস্তার। পেরু নামে একটি দেশ। এই পেরুর পুবেই কুজকো নগর। এসবই আন্দেজ পর্বতমালার মধ্যে। যে আন্দেজ পর্বতমালাটির বিস্তার উত্তর-দক্ষিণে ২,৫০০ মাইল!
কুজকো নগর ঘিরেই সূত্রপাত হয়েছিল কুজকো রাজ্যের (কিংডম অভ কুজকো) যা পরে হয়ে ওঠে দক্ষিণ আমেরিকার অন্যতম পরাক্রমশালী ইনকা সাম্রাজ্য। ইনকা সাম্রাজ্য ছড়িয়ে ছিল পেরু, বলিভিয়া, উত্তর আর্জেন্টিনা, চিলি ও ইকিউডোরে।
মানচিত্রে মাচু পিকচুর অবস্থান । ইনকা সভ্যতার অন্যতম নগর ছিল মাচু পিকচু। এটি আসলে ছিল ধর্মনগর। যদিও ইনকা সম্রাট বাস করতেন। সাধারণ মানুষ বাস করত গ্রামাঞ্চলে। তারা কেবল ধর্মীয় উৎসবের সময় সমবেত হত মাচু পিকচু নগরে ...
ইনকাসাম্রাজ্য দীর্ঘস্থায়ী ছিল না। সাম্রাজ্যের সময়কাল ১২০০ থেকে ১৫৩৩। ১৫৩৩ সালেই তো স্প্যানিশ লুটেরারা এল ...
তারপর?
তারপর ইনকা সভ্যতার স্মারক-সেই পাথর নগরগুলি দীর্ঘকাল লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যায়। সভ্যতাটি অরণ্যের গভীরে হারিয়ে যায়। লিমার মতন শহর ঘিরে পেরুর জনগনের জীবনধারা অব্যাহত থাকে। ইনকা সভ্যতার তো অবসান ঘটেছে! ...
মাচু পিকচু । ইনকারা কৃত্রিম উপায়ে বৃষ্টির পানি জমিয়ে রেখে মাচু পিকচু নগরে পানির অভাব দূর করত।
১৯১১ সাল। হিরাম বিংহ্যাম নামে একজন মার্কিন ঐতিহাসিক পেরুর এখানেওখানে ঘুরছিলেন। ঘুরতে ঘরতে তিনি চলে এলেন কুজকোর ৮০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে উরুবামবা উপত্যকায়। । ঘিরে বিশাল বিশাল পাহাড়। গভীর অরণ্য। পেরুর উরুবামবা নদী উৎসও নাকি ওই পাহাড়েই।বিংহ্যাম পাহাড়ে উঠে এলেন। জায়গাটা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮,০০০ ফুট ওপরে। স্থানীয় লোকজনের কাছে শুনলেন জায়গাটির নাম: মাচু পিকচু, যার অর্থ, ‘পুরনো শীর্ষ’।এখানেই বিস্ময়কর এক পাথুরে নগর আবিস্কার করলেন বিংহ্যাম; যা ধ্রপদি ইনকা শৈলিতে নির্মিত।
ইনকা উপাসনালয়ের ওপেন স্পেসে এরকম পাথর থাকত। একে বলা হত- ইন্তিহুয়াতানা বা সূর্যমন্দির।
ঝকঝকে শুস্ক পাথরের প্রাচীর, সিঁড়ি দেওয়াল। একপাশে ইন্তিহুয়াতানা বা সূর্যমন্দির। বংহ্যাম টের পেলেন এই সেই ‘ইনকাদের হারারো নগর’। ইনকা সাম্রাজ্যের প্রতীক। নানা তথ্য উদঘাটিত হল। জানা গেল ইনকারা ছিল ধর্মপ্রাণ। তারা ভাবত যেকোনও মুহূর্তেই অমঙ্গল হতে পারে। কাজেই পুরোহিতদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ন ছিল ইনকা সমাজে। ইনকা সমাজে নারীপুরোহিতও ছিল। মেয়েরা ঋতুমতী হলে নারীপুরোহিতরা চুল আঁচড়ানো উৎসব করত। মেয়েটি তখন নতুন নাম নিত। সবচে সুন্দরী মেয়েটিকেই পাঠানো হত কুজকোতে। মেয়েটি রাজকন্যা বা সম্রাটের স্ত্রী হবে!
মাচু পিকচু
ইনকাদের ভাষার নাম Quechua. এই ভাষায় Aclla Cuna শব্দের অর্থ সূর্যকুমারী। শব্দটির আরও দুটি অর্থ রয়েছে। (ক) নির্বাচিত নারী এবং (খ) ছোট মা। Aclla Cuna হল ইনকা সভ্যতার সবচে পবিত্র এবং রহস্যময় কাল্ট বা নারীসংঘ। মাচু পিকচুর পুরোহিত সূর্যকুমারীদের নির্বাচিত করত। এরা অল্প বয়েসে আসত ইনকা গ্রাম থেকে। অনেককেই ৮/৯ বছর নিয়ে আসা হত। এরা সব সাধারণ ঘরের মেয়ে। এদের নির্বাচন করার পিছনে নানান কারণ থাকলেও সৌন্দর্যই ছিল অন্যতম । মাচু পিকচুতে সূর্যকুমারীদের নানা কাজ করতে হত। এর মধ্যে ধর্মীয় উৎসব বা কৃত্যের সময় রান্নাবান্না ছিল অন্যতম। এ ছাড়া সূর্যকুমারীদের ইনকা সম্রাট এবং ধর্মীয় উৎসবের জন্য কাপড় বুনতে হত। এবং মাচু পিকচুর সূর্য দেবতার পবিত্র আগুন জ্বালিয়ে রাখতে হত।
কন-টিকি-ভিরাকোচা। সূর্যকুমারীরা দক্ষিণ আমেরিকার মহাপ্লাবনের সঙ্গেও সংশ্লিষ্ট ছিল-যে মহাপ্লাবন থেকে একদা উত্থিত হয়েছিল কন-টিকি-ভিরাকোচা (Quechua ভাষায় এর মানে সমুদ্রফেনার সাদা মানুষ)। ইনিই দক্ষিণ আমেরিকার আন্দেজ সভ্যতার সূত্রপাতকারী।
সূর্যকুমারীদের মহাকাশের সাতটি দৃশ্যমান নক্ষত্রের সঙ্গে সর্ম্পকিত মনে করা হত। ইনকারা ছিল আদ্যপান্ত রোম্যানটিক-যারা বিশ্বাস করত রুপা হল চাঁদের কান্না আর স্বর্ণ হল সূর্যের ঘাম ...যা হোক। প্রত্যেক সূর্যকুমারী ছিল সুন্দরী, মেধাবী এবং বুদ্ধিমতী, যারা Orally preserved the high wisdom and ancestral traditions of the red-haired Con-Tiki-Viracocha. এদের পরনের পোশাকের রং ছিল লাল, সাদা কিংবা কালো । এরা একজন অধ্যক্ষার অধীন থাকত। এই অধ্যক্ষার নাম: ‘মামা কুনা’। অধ্যক্ষারা আবার ছিল একজন নারী পুরোহিতের অধীন । এই নারী পুরোহিত ইনকাসমাজে ‘কোয়া পাসকা’ নামে পরিচিত। ইনকারা ‘কোয়া পাসকা’ কে মনে করত সূর্যদেবতার মর্ত্যবাসীনি সঙ্গীনি।
এ কালের ইনকা নারী । যেন সে কালের সূর্যকুমারীদেরই প্রতীক।
অবশ্য সূর্যকুমারীরা চিরকুমারী ছিল না। তার মানে, এদের জীবনভর মাচু পিকচু তে থাকতে হয়নি। ওরা ৬/৭ বছর পর নারীসংঘ থেকে অব্যাহতি পেত। তারপর? তারপর সূর্যকুমারীদের কোনও ইনকা ধনবান পুরুষের রক্ষিতা হিসেবে জীবন কাটতে হত। তবে অনেক সূর্যকুমারীকে বলি দেওয়া হত!
ষোড়শ শতকে মাচু পিকচু -র পতন হয়। এর কারণ স্মল পক্স। ১৫২৭ সালে পার্বত্য নগরটির অর্ধেকই ধ্বংস হয়ে যায়। তারপর ১৫৩২ সালে নগরটি বিস্মৃতর অতলে তলিয়ে যায়। মনে থাকার কথা- ... ১৯১১ সাল। হিরাম বিংহ্যাম নামে একজন মার্কিন ঐতিহাসিক পেরুর এখানে-ওখানে ঘুরছিলেন। ঘুরতে ঘরতে তিনি চলে এলেন কুজকোর ৮০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে উরুবামবা উপত্যকায়। । ঘিরে বিশাল বিশাল পাহাড়। গভীর অরণ্য। পেরুর উরুবামবা নদী উৎসও নাকি ওই পাহাড়েই।বিংহ্যাম পাহাড়ে উঠে এলেন। জায়গাটা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮,০০০ ফুট ওপরে। স্থানীয় লোকজনের কাছে শুনলেন জায়গাটির নাম: মাচু পিকচু, যার অর্থ, ‘পুরনো শীর্ষ’।
ছবি: ইন্টারনেট।
তথ্যসূত্র:
Click This Link
http://en.wikipedia.org/wiki/Viracocha
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা
বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন
আত্মপোলব্ধি......
আত্মপোলব্ধি......
একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !
হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।
আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।
আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন