ফারাও দ্বিতীয় রামেসেস
এমন বর্ণাঢ্য জীবন ক’জনের হয়? ক’জনের হতে পারে? ১৫ বছর বয়েসে মিশরের বিশাল রাজত্ব লাভ, ৬৭ বছরের শাসকজীবন, ৯২ বছরের পরমায়ূ। আট জন প্রধানা স্ত্রী ...অসংখ্য রক্ষিতা ...
প্রাচীন মিশর এর শাসকদের বলা হত ফারাও। ফারাও দ্বিতীয় রামেসেস ছিলেন প্রাচীন মিশর এর একজন বিখ্যাত শাসক। তাঁর সময়কাল ১২৭৯ থেকে ১২১৩ খ্রিস্টপূর্ব। তিনি ছিলেন উনিশতম রাজবংশের তৃতীয় শাসক। ফারাও দ্বিতীয় রামেসেস-এর পিতার নাম ছিল প্রথম সেটি।
আজ আমরা মিশরজুড়ে যেসব উপাসনালয়, ভাস্কর্য আর স্মৃতিস্তম্ভ দেখি তার অধিকাংশের নির্মাতাই ফারাও দ্বিতীয় রামেসেস। নুবিয়ায়, আবু সিম্বলে, কারনাকে, থিবসে, মেমফিসে প্রচুর উপাসনা লয়, ভাস্কর্য আর স্মৃতিস্তম্ভ আজও ফারাও দ্বিতীয় রামেসেস-এর স্মৃতি বহন করছে।
আবু সিম্বল
খাদস এর যুদ্ধই ফারাও দ্বিতীয় রামেসেস-এর শাসনামলের উল্লেখযোগ্য ঘটনা। তুরস্ক দেশটা ইউরোপ ও এশিয়ায় ছড়ানো। তুরস্কের এশিয় অংশই আনাতোলিয়া নামে পরিচিত। হিট্টিরা যিশুর জন্মের ২০০০ বছর আগে সেই আনাতোলিয়াতেই গড়ে তুলেছিল এক অতুলনীয় সভ্যতা। হিট্টিদের সভ্যতাকে অতুলনীয় কেন বললাম? কারণ, ওরাই সভ্যতায় প্রথম ন্যায়বিচার চালু করেছিল; ব্যবহার করতে শিখিয়েছিল লোহা! হিট্টি সভ্যতা আলোচনা প্রসঙ্গে প্রাচীন মিশরের প্রসঙ্গ অনিবার্য। হিট্টিদের উন্নতির শীর্ষে প্রাচীন মিশরের সম্রাট ছিলেন চতুর্থ আমোনহাটপ। সম্রাট চতুর্থ আমোনহাটপ এরই অন্য নাম সম্রাট আখেনাতন। এভাবে না চেনা না গেলে বলি: সম্রাট আখেনাতন ছিলেন সুন্দরী নেফারতিতির স্বামী। যা হোক। মিশর এর সঙ্গে হিট্টিদের সংঘর্ষ হয়ে ওঠে অনিবার্য। সিরিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে।
খাদেসের যুদ্ধ। (এ কালের শিল্পীর আঁকা)
মিশরের সঙ্গে হিট্টিদের সংগঠিত হয় খাদেসের যুদ্ধ। (১৩১৫/১২৯৬) তখন মিশরের সম্রাট ২য় রামেসেস ।
খাদেসের যুদ্ধে রথ এর ব্যবহার ছিল উল্লেখ করার মত। খাদেসের যুদ্ধের পর রামেসেস নিজেকে জয়ী মনে করলেও হিট্টিরাই সিরিয়া নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল।
পরে অবশ্য মিশরের সাথে হিট্টিদের সন্ধি হয় ।
রানী নেফেটারি।
২য় রামেসেস এর ছিল আটজন রানী। এদের মধ্যে প্রধান ছিলেন নেফেটারি। লক্ষ করুন, নেফারতিতি নন। নেফারতিতি ছিলেন চতুর্থ আমেনহোটেপের স্ত্রী; সময়কাল: ১৩৫৩ থেকে ১৩৩৫ খ্রিস্টপূর্ব। আর আমি আগেই বলেছি ২য় রামেসেস এর সময়কাল ১২৭৯ থেকে ১২১৩ খ্রিস্টপূর্ব। যা হোক, রানী নেফেটারি কিন্তু ঐ নেফারতিতি বংশেরই। তেরো বছর বয়েসে নেফেটারির বিয়ে হয়-রামেসেস এর বয়স সে সময় ছিল পনেরো বছর । সেই কালে অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ছিলেন নেফেটারি । চার ছেলে দুই মেয়ে। আমরা খাদেস এর যুদ্ধের কথা জানি। শান্তি স্থাপনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছিলেন নেফেটারি । এমন কী নেফেটারি নিজে বন্ধুত্বপূর্ন চিঠি লিখেছেন হিট্টি রাজা আর রানীকে।
রানী নেফেটারির সমাধিটি আবু সিম্বলে।
ইউরোপের অনেকের ধারনা মোজেস (মুসা নবী) যে সময়ে মিশর থেকে বন্দি হিব্রুভাষীদের নিয়ে) বেরিয়ে আসেন সে সময় মিশরের ফারাও ছিলেন দ্বিতীয় রামেসেস। এ নিয়ে ছবিও (চলচ্চিত্র) হয়েছে।
১৯৫৬ সালে নির্মিত দ্য টেন কমান্ডমেন্টস্ ছবিতে রানী নেফেটারির ভূমিকায় অ্যানি ব্যাক্সটার।
ফারাও দ্বিতীয় রামেসেস: পৃথিবীর সুখি শাসকদের অন্যতম ...
ফারাও দ্বিতীয় রামেসেস এর শেষ জীবনটিও নাকি বেশ সুখে শান্তিতেই কেটেছে। ৬৭ বছর শাসন করেছেন মিশর। প্রাচীন মিশরের জনগনের গড় আয়ূ অত ছিল না। প্রায় ১০০টি সন্তানাদির জনক ছিলেন ফারাও দ্বিতীয় রামেসেস ।
৯২ বছর বয়েসে চিরনিদ্রায় শায়িত হন ফারাও দ্বিতীয় রামেসেস ।