মেসো শব্দটা গ্রিক। অর্থ, ‘মধ্য’। যেমন, মেসোপটেমিয়া। এর মানে: দুই নদীর মধ্যেখানের অঞ্চল। তেমনি, মেসোআমিরিকায় বলতে বোঝায় মধ্যআমেরিকাকে, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার মধ্যবর্তী অঞ্চলটিকে (প্রধানত মেক্সিকো) । তো, মেসোআমেরিকায় কতগুলি সভ্যতা বিকাশ লাভ করেছিল। যেমন, ওলমেক, অ্যাজটেক, মায়া।
এর মধ্যে মায়া সভ্যতার উদ্ভ ও বিকাশ ছিল অভূতপূর্ব। বর্তমান মেক্সিকো, গুয়েতেমালা, বেলিজ ও হন্ডুরাসজুড়ে ছড়িয়ে ছিল মায়া সভ্যতা। লিখিত ভাষাসহ মেসোআমিরিকার সবচে উন্নত সভ্যতা ছিল মায়া সভ্যতা।
গুয়েতেমালা। এখানেই উদ্ভব হয়েছিল মায়া সভ্যতা।
মানচিত্র। মেক্সিকোর ইউকাটন উপদ্বীপ। ৯০০ শতকের পর এখানে ছড়িয়ে যায়।
মায়া সভ্যতা নিয়ে বিস্তর গবেষনা হয়েছে। এখনও চলছে। মায়া সভ্যতার উত্থানকাল ধরা হয় ২৫০ খ্রিস্টাব্দ। নগর সভ্যতা অবশ্য বিকাশ লাভ করেছিল ৯০০ শতক এর দিকে। এবং তা স্পানিশ বিজয় পর্যন্ত বিকাশ লাভ করে চলেছিল। ২৫০ খ্রিস্টাব্দ থেকে প্রথম ৬৫০ বছর মায়ার সভ্যতার
ক্লাসিক পিরিয়ড ধরা হয়। এই সময়ে মেক্সিকো, গুয়েতেমালা ও উত্তর বেলিজে কমবেশি ৪০টি
নগর গড়ে উঠেছিল। বেলিজ দেশটা কারও কারও কাছে নতুন মনে হতে পারে।
http://en.wikipedia.org/wiki/Belize
উন্নতির শীর্ষে মায়া সভ্যতার জনসংখ্যা ছিল প্রায় ২০ লক্ষ । বেশির ভাগই বাস করত এখনকার গুয়েতেমালায়। নগরগুলি আসলে ছিল ধর্মীয় কেন্দ্র। বেশির ভাগ মায়া বাস করত নগরের বাইরে –গ্রামে, কৃষিজীবনে।
৯০০ শতকের পর গুয়েতেমালার মায়া নগরগুলি পরিত্যক্ত হয়ে যায়। দক্ষিণের নগরগুলি জনশূন্য হয়ে যায়। ঐতিহাসিকদের মতে যুদ্ধের কারণে বানিজ্যপথের পরিবর্তনই নাকি এর অন্যতম কারণ।
তবে মেক্সিকোর ইউকাটন উপদ্বীপের চিচেন ইটজা, উক্সমাল এবং মায়াপান সংস্কৃতির বিকাশ অব্যাহত থাকে ১৫১৯ অবধি। ষোড়শ শতকে যখন মেসোআমেরিকায় স্পেনিশ লুটেরারা এল তখন বেশির ভাগ মায়াই গ্রামীণ কৃষিজীবনে সম্পৃক্ত।
মায়ারা চাষ করত ভূট্টা, বীন ও লাউ। মাংসের মধ্যে খেত টার্কি, তাপির, খরগোশ, বানর ও ম্যাকাও পাখি।
তাপির
স্পেনিয়রা মায়াদের রোমান ক্যাথলিজমে ধর্মান্তরিত করে। মায়ারা আজও আছে। দক্ষিণ মেক্সিাকোয়, গুয়েতেমালায় ও বেলিজে।
সেই সময়কার মায়া পুরুষ। মেল গিভসনের আপোকালিপটো ছবি থেকে ...
মায়ারা আজ রোমান ক্যাথলিজমে বিশ্বাসী হলেও পূর্বেকার মায়া বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি, দেবদেবী ও গৃহস্থালী পরব পালন করে আজও। মায়ারা অনেক দেবতায় বিশ্বাসী ছিল। সে দেবতা ভালো কি মন্দ হতেন। ইটজামনা ছিলেন প্রধান দেবতা। তিনি সৃষ্টিকর্তা, আগুন ও উনুনের দেবতা। অন্যএকজন হলেন পালকযুক্ত সরীসৃপ;কুকুলকান। ইনি বৃষ্টি ও বজ্রপাতের দেবতা। মায়াদের উপসনালয়ে এর মূর্তি পাওয়া গেছে। মৃত্যুর পরের জীবনে বিশ্বাসী ছিল মায়ারা। মৃত্যুর পর আত্মার বিপদজনক ভ্রমন শুরু হত পাতালদেশে। পাতালের অধিকর্তা দেবতা অমঙ্গলকর। সে দেবতার প্রতীক জাগুয়ার। জাগুয়ার রাত্রিরও প্রতীক।
স্বর্গে তারাই যাবে যাদের উৎসর্গ করা হয়েছে। আর যারা জন্মের সময়ই মারা গেছে।
গণিত ও জ্যোর্তিশাস্ত্র অভূতপূর্ব উন্নতি করেছিল। অবশ্য সে জ্ঞান অর্জন ছিল ধর্মীয় কৃত্যের সঙ্গে জড়িত । গণিতে শূন্যের ব্যবহার, পজিশনাল নোটেশন নির্ধারণ করেছিল মায়ারা; জ্যোর্তিশাস্ত্রে সৌর বৎসরের গননা, চন্দ্র ও শুক্র গ্রহের অবস্থান এমনকী সূর্যগ্রহনও আগেভাবে বলে দিতে পারত তারা!
মায়ারা প্রকৃতির আবর্তন লক্ষ করেছিল। সময় নিয়ে অবসেসড ছিল। তারা মনে করত বিশ্বজগৎ ৫ বার সৃষ্টি হয়েছে আর ৪ বার ধ্বংস হয়েছে। বছরের কোনও কোনও দিন শুভ কোনও কোনও দিন অশুভ।
একসময় ঐতিহাসিকদের ধারনা ছিল মায়ারা শান্তিপ্রিয় । ধর্মনিয়ে মগ্ন থাকে। মায়া হাইয়ারোগ্লাফিক লেখনি পড়তে পারার পর জানা গেল তারা প্রতিদ্বন্দি নগর আক্রমন
করত। শাসককে বন্দি করত, টর্চার করত, তারপর তাকে দেবতার কাছে বলি দিত!
নরবলি বা হিউম্যান স্যাক্রিফাইস ছিল মায়াদের ধর্মবিশ্বাসের মূলে।
মায়ারা নরবলি দিত উর্বরতা, ধর্মনিষ্টা দেবতার সন্তুষ্টির লক্ষ্যে । মায়া পুরোহিত বিশ্বাস করত দেবতা মানুষের রক্তে পুষ্ট হন! রক্তই দেবতাদের সঙ্গে যোগাযোগের উপায়।