গতকাল টিভিতে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ওপর একটা ডকুমেন্টারি দেখছিলাম। টেকনাফ -কেয়ারি সিন্দবাদ-নাফ নদী। সেন্ট মার্টিনের জেটি-স্টিমার। প্রচুর পর্যটক। এত ভিড়ভাট্টা দেখে অবাক হলাম। আমরা যখন শেষবার সেন্টমার্টিনে গেছি তখন দ্বীপটি প্রায় ফাঁকাই ছিল। রিক্সা বা হোটেল-রেস্তোঁরা সেসময় ছিলই না। এখন নাকি জেনারেটরের শব্দে দ্বীপটির নির্জনতা পালিয়েছে। অথচ আমরা সেই সময় দ্বীপে পৌঁছেই এক অটুট নির্জনতার মুখোমুখি হয়েছিলাম।
আমি ধর্মান্তরিত হয়েছিলাম।
১৯৯৪ সাল। শিক্ষাসফরে বেরিয়েছি। রাঙামাটি-কক্সবাজার হয়ে গতকাল সন্ধ্যায় টেকনাফে এসে পৌঁছেছি। উঠেছি হোটেল নাফ ইন্টারন্যাশনালে। দিনটা ছিল ডিসেম্বর মাসের ১৭ তারিখ। সকালবেলায় চমৎকার রোদ উঠেছে। বেশ শীতও টের পাওয়া যাচ্ছিল। তখন খুব সিগারেট খেতাম আমি। নাশতার পর দ্বিতীয় সিগারেটটি ধরিয়েছি। সবার সঙ্গে হাঁটছি সেই ব্রিজের দিকে। শিমু আর মিন্টু মেজবা স্যারের সঙ্গে কী সব নিয়ে যেন কথা বলছে-ওরাই গ্রুপটার ম্যানেজম্যান্টে রয়েছে। নীপা ওর ক্যামেরায় আহিরের একটা ছবি তুলে নিল দেখলাম। (নাঃ, ওদের বিয়ে হয়নি। আহির ২০০২ সালে রোড অ্যাক্সিডেন্টে মারা গিছল। নীপার বিয়ে তার আগেই হয়ে গিয়েছিল ১৯৯৬ সালে। নীপা এখন আমেরিকায় থাকে। ওর বড় ছেলেটা নাকি মানসিক প্রতিবন্ধি।) আমি একমুখ ধোঁওয়া ছেড়ে নাসরীনের দিকে আড়চোখে তাকালাম। ওকে ভীষন গম্ভীর মনে হল। কেন? আমি সাড়া দিচ্ছি না বলে? আমি কেন সাড়া দেব? আমি কেন বন্দি হব? আজ শাড়ি পড়েছে নাসরীন। অন্যমেয়েরা সালোয়ার-কামিজ পড়লেও কয়েকদিন হল শাড়ি পড়ছে নাসরীন। গতকাল আমরা মহেশখালি দ্বীপে ছিলাম। অল্পতেই হাঁপিয়ে যাই বলেই সিঁড়ি বেয়ে উঠে অত উচুঁতে টিলার ওপর সেই বৌদ্ধমন্দিরে পৌঁছতে পারিনি আমি। সিঁড়িতে বসে সিগারেট টানছিলাম। কী কারণে নাসরীনও আর উঠল না। ও সিঁড়িতে বসে পড়ল। মেজবা স্যারও উঠলেন না। নাসরীনের ঠিক পাশে বসে পড়লেন স্যার। টুকটাক কথা বলছেন নাসরীনের সঙ্গে।নাসরীনের চোখমুখে অস্বস্তি - বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছিল। কালও ও সাদার ওপর কালো ছোপ ছোপ শাড়ি পরেছিল।মেজবা স্যারের বয়স সাতচল্লিশ-আটচল্লিশ তো হবেই-নাসরীন শাড়ি পড়লে ভালো মানায়। মেজবা স্যার এমনিতেই গ্রগতিশীল। তবে আমার প্রতি নাসরীতে স্পস্ট পক্ষপাতিত্ব টের পেয়েছেন; এবং সেটা পছন্দ করছেন না। স্যার আমাকে প্রতিপক্ষ ভাবছেন? অথচ, আমি প্রকৃতির পাঠ নেব বলে
নাসরীনের আকর্ষন সচেতনভাবে এড়িয়ে চলছি।
আধুনিক জীবন এমন করেই জটিল।
জটিল ও ক্লান্তিকর।
২
তো, সিগারেট টানতে টানতে খালপাড়ে পৌঁছে যাই। সেই সময়টায় টেকনাফে আজকের মত আজকের মত জেটি ছিল না, কেয়ারি সিন্দবাদ ছিল না। ব্রিজের নিচে খাল থেকে সেন্ট মার্টিনগামী ট্রলার ছাড়ত। একেকটা ট্রলারে ১০/১২ জন করে উঠত। দিনে গিয়ে দিনেই চলে আসত। সেই সময় সেন্ট মার্টিনে থাকা-খাওয়ার সুবন্দোবস্ত ছিল না। তবে বয়েকয়ে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের চেয়ারম্যানের বাড়িতে একটা রাত থাকা যেত। তবে দ্বীপের চেয়ারম্যান ছিলেন দারণ রক্ষণশীল। মদ-বিয়ার ধরা পড়লে নাকি লঙ্কাকান্ড বাঁধিয়ে দিতেন।
খালের কাছে পৌঁছে তীব্র দুর্গন্ধ পেলাম। কাল সন্ধ্যেয় বার্মিজ মার্কেটে যাওয়ার সময়ও দুর্গন্ধ পেয়েছিলাম। বার্মিজ মার্কেটে কাল সন্ধ্যায় সময়টায় ভালোই কেটেছিল। মিন্টুরা কয়েক বোতল মদ কিনল। আমি সিগারেট-লাইটার। মায়ের জন্য শাল। বোনদের জন্য যে ঠিক কী কিনেছিলাম তা আর এতদিন পরে মনে পড়ছে না।
খালপাড়ে ঝকঝকে রোদ। ট্রলার-নৌকার ভিড়। একটি ট্রলারে দশবারো জন তরুণ-তরুণী উঠে পড়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী। আমরা ঢাক বিশ্ববিদ্যালয় শুনে ওদের মুখচোখে বেশ সমীহের ভাব ফুটল। ওরাও সেন্ট মার্টিন যাচ্ছে।
সব মিলিয়ে আমরা প্রায় ৩৩/৩৪ জন। অত ট্রলার পাওয়া গেল না। শেষমেশ ৭৬ হর্স পাওয়ারের একটা বেশ বড় লবণবাহী নৌকা ভাড়া করা হল ৩৩শ টাকায়। তখনও জানতাম না কাজটা ঠিক হয় নি। পরে জেনেছি-নৌকার মাঝিমাল্লাদের ঠিক সমুদ্রে ভাসার অভিজ্ঞতা নেই। তখনও জানতাম না যে ফেরার পথে মৃত্যুর মুখোমুখি পৌঁছে যাব।
যাক। আমরা সব দুমদাম করে নৌকায় উঠে পড়ি। লবণবাহী বলেই নৌকাটির পাতাটন ছিল বেশ বড়। পিছনে বেশ বড় একটা ছই। কেউ ছইয়ের ওপর- কেউ-বা পাটাতনের ওপর ততক্ষণে পজিশন নিয়ে নিয়েছে। নৌকা ছাড়ল। একটু পর খাল পেরিয়ে নাফ নদীতে পড়তেই বাতাস আর বাতাস। বাঁ পাশে মায়ানমারের পাহাড়শ্রেণি। টিন সেডের ব্যারাক, জিপ, কাটাতাঁর। নদীতে কী রকম গন্ধ। বুকের ভিতরে মৃদু উত্তেজনা টে র পাচ্ছি। ঘন্টাখানেকের মধ্যেই সমুদ্রে পড়ব। জীবনে প্রথম। সমুদ্র! আহ!
পাটাতনের ওপর দাঁড়িতে আমি হা করে আকাশ দেখছি। নীল আকাশের তলে ঝকঝকে রোদের ভিতর জীবনে প্রথম খুব কাছ থেকে দেখলাম উড়ন্ত গাঙচিল। এত কাছে-যেন হাত বাড়িয়ে ছোঁওয়া যাবে। প্রায় অবিশ্বাস্য সেই দৃশ্য। পাখি এত ভালোবাসি-তাকে মুক্তই দেখতে চাই। কাজেই গাঙচিলের উড়ন্ত দৃশ্যটা আজও ফিরে ফিরে আসে এখনকার এই সীমিত জীবনে, যে জীবনে ডিসেম্বর এলেও টেকনাফের নাফ নদীর গন্ধটা আর পাই না। গাঙচিল প্রথম দেখি মহেশখালি যাওয়ার সময়। গতকাল।
আমাদের সঙ্গে বড় একটা স্টিরিও ছিল। ছইয়ের ওপর ডান্স কম্পিটিশন হবে ।মেজবা স্যার খুব ক্রিয়েটিভ মানুষ। ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে খুব ফ্রিলি মিশেন। রাঙামাটিতে মিন্টুর কাছে বিয়ার চেয়েছিলেন স্যার। ডান্স কম্পিটিশনটা মেজবা স্যারেরই আইডিয়া। সবাই নাচল। অমিও। অত করে বলার পরও নাসরীন নাচল না। বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছিল। আমার পারমিশন চাইছিল? অনুমতি দেব-সে রকম সম্পর্ক তো আমাদের মধ্যে গড়ে উঠেনি। আমি তো ওকে এড়িয়েই চলেছি। নাসরীন বুঝতে চাইছে না। আগেও দেখেছি, যেসব ঘটনাবলী মেয়েদের ঠিক অনুকূলে থাকে না -মেয়েরা সেসব না বোঝার ভান করে।
তারপর মধ্যাহ্নের ঠিক আগে আগে নৌকায় গুঞ্জন। কী ব্যাপার? বেশ খানিকটা দূর থেকেই চোখে পড়ল ঝিকমিকে বালির পাড় । বুকের ভিতরে ধক করে উঠল । সেন্ট মার্টিন? জীবনে প্রথম দ্বীপে নামতে যাচ্ছি। পিছনে ক্ষীন সবুজাভ আবহ। আরও কাছে যেতেই ঝিকিমিকি বালির পাড় আরও স্পস্ট হল। একটা জেলে নৌকা। বেলাভূমিতে কাত হয়ে আছে। ঠিক করলাম দ্বীপে নেমে নৌকার ছায়ায় বসে থাকব।
৩
দ্বীপে নেমে সবাই দূদ্দাড় করে হূমায়ুন আহমেদের বাড়ি দেখতে ছুটল। যেন হূমায়ুন আহমেদের বাড়িটি দেখার জন্যই সবাই সেন্ট মার্টিন দ্বীপে এসেছে। হূমায়ুন আহমেদের বাড়িটি দ্বীপের দক্ষিণে। আমরা নেমেছি উত্তরে। মেজবা স্যারকেও সেদিকেই যেতে দেখলাম। মুচকি হাসি। ভিড়ের মধ্যে নাসরীনও রয়েছে। শাড়ি পরেছে বলে সাবধানে হাঁটছে। আমি আজ একটু একা থাকতে চাই। নাসরীনকে এড়ানো দরকার। ওকে বোকা বানানোর জন্য আমিও সবার সঙ্গে কিছুদূর হাঁটলাম। তারপর আস্তে আস্তে পিছিয়ে পড়ি।
সেই জেলে নৌকার ছায়ায় এসে বসলাম। মনে মনে ঠিক করলাম যতক্ষণ আমি দ্বীপে থাকব ততক্ষন সিগারেট ধরাব না। যেহেতু আজ আমি ধর্মান্তরিত হব। আমি প্রার্থনা বাক্যগুলি তৈরি করতে থাকি। প্রকৃতি আমি তোমায় ভালোবাসি। তুমিই আমার মা নারী ও শিক্ষক। এমন কী বন্ধুও। এই মহাবিশ্বের মাঝে তোমার সৃষ্টি কী করে হল-সেই সব বিরল ঘটনা-সেসব আমি কমবেশি জানি। আমি আমার মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তোমায় দেখব দেখব আর দেখব মা। হে মহান নারী আমি এই মুহূর্তে মানুষরচিত শাস্ত্রীয় ধর্ম পরিত্যাগ করলাম। আজ থেকে আমি আদিম। আদিম ও প্যাগান। প্যাগান ও সর্বেশ্বরবাদী হে আমার মহান শিক্ষক-নাগরিক জীবন আমার ক্লান্ত লাগে, কেমন বন্দি মনে হয়। হে, আদি মাতা। আমি এক শিশুপ্রতিম নগ্ন উপাসক। তুমি আমাকে নাও। গভীর শান্তি ও ছায়া দান কর। আমাকে অনুশাসনে-অনুশাসনে বেঁধ না। আমার দুঃখময় জীবনই হোক প্রতিমুহূর্তের প্রার্থনা। প্রার্থনা ও ধ্যান ...
আমি প্রার্থনা করছি। আর আমার তৃষ্ণার্ত চোখ ঘুরছে প্রকৃতির শরীরে : জেলেদের শিশু, রোদ, বালি, ঢেউ- ঢেউয়ের রং; রঙের তারতম্য, সমুদ্র। গাঙচিল। দূরের বার্মিজ পাহাড়।
দূর থেকে নাসরীনকে এদিকেই আসতে দেখলাম। ঘটনাটা ও এখন ওর মতন করে ব্যাখ্যা করবে: জেলে নৌকার ছায়ায় আমি ওর জন্য অপেক্ষা করছি। নাসরীন আমার ঠিক পাশে বসল। শুঁটকি মাছ ও লোনা গন্ধ ছাপিয়ে কী এক পারফিউমের তীব্র সুগন্ধ পেলাম। কিংবা গন্ধটা নাসরীনের শরীরেরও হতে পারি। আমি জানি না।
আমার অনেকটা ঘেঁষে বসেছে নাসরীন। কিছুটা সাহসী হয়ে উঠছে কি? দু-তিনটে উদোম জেলে শিশু ও গাঙচিল বাদ দিলে আশেপাশে জীবিত কেউই নেই। জেলে শিশুরা আমাদের দেখছে। আর আমি দেখছি ওদের, ওদের পিছনে দূরের বার্মিজ পাহাড়। ঝিকিমিকি রোদ। সমুদ্র। গাঙচিল। বালি। ঢেউ। তার নানা স্তরের রং। নাসরীন দেখছিল আমাকে। সময়টা ১৯৯৪। ১৭ ডিসেম্বর। মধ্যাহ্ন। নারী। নারী ও প্রকৃতি। নারী দেখছিল তার পছন্দের পুরুষটিকে। পুরুষটি দেখছিল অপার এক প্রকৃতিকে। দেখছিল বালিয়াড়ির রোদ ও জেলেদের শিশুদের। এসবই ঘৃনা করছিল নাসরীন? পুরুষটি ভাবছিল, সম্প্রতি এক গবেষনায় দেখা গেছে যে, সেন্ট মার্টিন ঠিক বিচ্ছিন্ন প্রবাল দ্বীপ নয়- বরং সেটি মায়ানমারের পাহাড়শ্রেণিরই বিস্তার। তা হলে? ভাবছিল-একটা সময়ে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের নাম ছিল নারকেল জিঞ্জিরা। নামটা কে রেখেছিল? আরবরা? একদা নারকেল জিঞ্জিরায় মার্টিন নামে অলৌকিক শক্তির অধিকারী এক সাধু বাস করতেন। একবার ঘূর্নিঝড়ের সময় উচুঁ উচুঁ ঢেউ দ্বীপটিকে গ্রাস করে নেবে- ঠিক সেই সময়ই সাধু মার্টিন নাকি তাঁর অলৌকিক শক্তিবলে বিশাল একটা আকাশ সমান পালের মতন ফুলে অস্থির অশান্ত ঢেউগুলি আটকে দ্বীপটিকে রক্ষা করেছিলেন। কোথায় ছিল তাঁর ঘর? কোন দেশি ছিল সাধুটি? আরবরা এ দ্বীপে কি কখনও নামে নি? কোনও বুর্জগ পীরের মাজার কি রয়েছে এ দ্বীপের কোথাও? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি সেন্ট মার্টিনে সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের কথা ভাবছে? অদূর ভবিষ্যতে? তা হলে বাংলাদেশ সরকার এই দ্বীপটা ইউরোপীয় কোম্পানীর কাছে লিজ দিয়ে দিক না ২০০ বছরের জন্য। ভালো রাজস্ব পাওয়া যাবে। আর, ইউরোপীয় কোম্পানীটি সেন্ট মার্টিনে আধুনিক ক্যাসিনো বসাক না কেন?
নাসরীন আমাদের দেখছিল। ওর আমার অভ্যন্তরীন চিন্তাকে পড়তে পারছিল না।
নাসরীন এখন কোথায় আছে কে জানে! আমার সেদিনের ভূমিকা হয়তো ওকে দারুণ বিস্মিত করেছিল। নাসরীন কর্কট রাশি। ওর কিছুই ভোলার কথা তো না।
৪
ফেরার পথে মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতা হল আমাদের।
অপরাহ্নে নৌকায় উঠেছিলাম। রান্না মাঝিরাই করেছিল। বাজার করেছিল সেন্ট মার্টিন থেকেই । মোটা চালের ভাত। আর ডাল। ডালের সঙ্গে লাউ আর কী এক সামুদ্রিক মাছের মিশেল ছিল। বাংলাদেশটাকে এই জন্যই এত ভালো লাগে আমার। এ দেশটায় রান্নার এত বৈচিত্র্য। মাঝিদের রান্না চমৎকার । তো খাব কী। নৌকা যে ভীষন দুলছে। 'জোয়ারের ঢেউ' শব্দটা কানে পৌঁছল। বেশ বড় বড় ঢেউ- প্রায় দোতলা সমান। একবার উঠে যাচ্ছি, আবার নেমে পড়ছি নাগরদোলার মতন। সবার মুখ আতঙ্কে শুকিয়ে এসেছে। হাড়ে হাড়ে টের পেলাম- লবণবাহী নৌকা ভাড়া করা ঠিক হয় নি। এদের ঠিক সমুদ্রে ভাসার অভিজ্ঞতা নেই। ধ্যাত, এত অকালে মৃত্যুর মুখোমুখি পৌঁছে গেলাম! ভাবছিলাম এখন নৌকা ডুবে মরে গেলে কাল পত্রিকায় কী লিখবে।
৫
যে দিনটায় আমি মৃত্যুর ঠিক কাছাকাছি পৌঁছে গেছিলাম ঠিক সেই দিনটায় আমি অদ্ভূত এক দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম।
ঢেউগুলি যখন শান্ত হয়ে এলো তখন প্রায় সন্ধ্যা।
আমরা প্রায় নাফ নদীতে পৌঁছে গেছি।
নাফ নদীতে সন্ধ্যা নামছিল।
ডান পাশে বার্মিজ পাহাড়ের ওপর পরিপূর্ন একটা পূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে।
আর, বাঁ পাশে সূর্যটা বঙ্গোপসাগলে লাল আলো ছড়িয়ে ক্রমেই ডুবে যাচ্ছিল।
দৃশ্যটায় কী ছিল- আমার কেমন ঘোর লেগেছিল।
কী যেন বলতে চাইছিল প্রকৃতি।
আমাকে।
অন্যদের নয়।
কেবল, আমাকেই।
যাকে আমি ভীষণ ভীষণ ভালোবাসি।
যাকে দুচোখ ভরে দেখব বলে আমি একটা মেয়েকে পর্যন্ত উপেক্ষা করেছি।
সেই প্রকৃতি আমায় মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়ে এনে একই সঙ্গে অস্তমিত সূর্য ও উদীয়মান চাঁদ দেখিয়ে কী যেন বলতে চাইছিল ১৯৯৪ সালের ১৭ ডিসেম্বরের এক শীতার্ত সন্ধ্যায়।