১৮৩৩ সালে রামমোহন মারা যান। তাঁর একেশ্বরবাদী আন্দোলনটি নানা বাধার সম্মুখীন হয়। সে সময় প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ও তাঁর পুত্র দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর (ইনিই রবীন্দ্রনাথের বাবা) এগিয়ে আসেন। যার ফলে ব্রাহ্ম সমাজ নতুন মাত্রা ও বৈশিষ্ট্য পরিগ্রহ করে। প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর তত্ত্ববোধিনী সভা নামে একটি সমিতি প্রতিষ্টা করেন যা ব্রাহ্ম সমাজের আদর্শ প্রচারে অগ্রনী ভূমিকা পালন করে।
১৮৪৩ সালের ১৬ আগস্ট ব্রাহ্ম সমাজের মুখপাত্র হিসেবে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’টি আত্মপ্রকাশ করে। অক্ষয় কুমার দত্ত পত্রিকাটির সম্পাদক নিযুক্ত হন। পত্রিকার সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রাজনারায়ন বসু ,দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো প্রতিথযশা লেখক পত্রিকাটিতে নিয়মিত লিখতেন। ফলে, কাব্যের পাশাপাশি বাংলা গদ্যের বিকাশ লাভ করছিল। তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার লেখকগন প্রত্যেকেই ছিলেন সংস্কারপন্থি। এ প্রসঙ্গে সমরেশ দেবনাথ লিখেছেন, All its contributors and patrons were reformists. Although propagation of religious matters was its primary objective, the journal also published valuable articles on general knowledge and science, history, literature, religions, politics, economics, sociology and philosophy. It used to print pieces urging Bengalis to venture out into international trade and equip themselves adequately for political independence. In this way the journal made significant contributions towards developing Bengali culture and civilization. (বাংলাপিডিয়া।)
একেশ্বরবাদী ব্রাহ্মধর্ম আন্দোলনের মুখপাত্র হিসেবে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকাটি তখন গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। পূর্ববঙ্গে ব্রাক্ষ্মধর্মের প্রচার মূলত তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার মাধ্যমেই হয়েছে। ঢাকার ব্রাহ্মসমাজ গঠনের উদ্যোক্তা ব্রজসুন্দর মিত্র এ পত্রিকা পড়েই ব্রাহ্মসমাজের প্রতি আকৃষ্ট হন।
দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ইচ্ছে ছিল পত্রিকাকে বিশুদ্ধ ধর্মচর্চার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা, কিন্তু অক্ষয়কুমার চাইতেন বিজ্ঞান ও জড়বাদী চিন্তার সঙ্গে যুক্ত হতে এবং শেষ পর্যন্ত তা- ই হয়েছে। কাজেই, তৎকালীন বুদ্ধিজীবিদের দৃষ্টি আকর্ষন করেছিল।
তত্ত্ববোধিনী পত্রিকাটি ১৯৩২ সাল অবধি প্রকাশ হত । রবীন্দ্রনাথও পত্রিকাটি সম্পাদনা করেছেন।
সূত্র: বাংলাপিডিয়া।