ধর্মান্ধ প্রতিক্রিয়াশীলেরা যেদিন লাঠিসোটা নিয়ে বাউল-ভাস্কর্য ভাঙ্গতে গেল- সেদিন প্রায় সারাদিনই লালনের এই গানটা আমার খুব মনে পড়েছিল-
এ দেশেতে এই সুখ হলো,
আবার কোথা যাই না জানি।
গানটা কবে লিখেছিলেন লালন? কোন্ বিপর্যয়কর অবস্থায় লিখেছিলেন? কেন তাঁর দেশত্যাগের ইচ্ছে হয়েছিল? কারা তাঁকে মানসিক যন্ত্রনা দিয়েছিল?
মূলস্রোতের নয়- বরং, ইসলামের এক বিশেষ ব্যাখ্যার বা মতবাদের অনুসারী ছিলেন লালন; যে কারণে সারাজীবনই মূলস্রোতের বিরাগভাজন হয়ে ছিলেন । নিরাকারের বদলে ভিতরের ঈশ্বররুপ সহজ মানুষ ভজতে বলেছিলেন লালন -মূলস্রোতবাদীরা বিরাগভাজন তো হবেই।
ভজ মানুষের চরণদুটি
নিত্য বস্তু হবে খাঁটি।
এসব কথার কোনও মানে হয়!
শুনি মলে পাব বেহেস্তখানা
তা শুনে তো মন মানে না।
এসব কথার কোনও মানে হয়!
এসব গানের গূঢ় সৌন্দর্য তৎকালীন মূলস্রোতের মহাজনের বোঝেনি। বোঝার কথাও নয় শিল্পবিরোধীদে।প্রমান আছে-তৎকালীন একজন মৌলভি এই মন্তব্য করেছিল-গান হিসেবে লালনগীতি নাকি উচ্চাঙ্গের নয়। কাজেই-
লালনও যুদ্ধ চালিয়ে গেছেন সমানে। গেয়েছিলেন-
শোনায়ে লোভের বুলি,
কেউ নেবে না কাঁধের ঝুলি।
কিংবা
বিশ্বাসীদের দেখাশোনা করে লালন এ ভূবনে ...
এর মানে: তোমরা যে এত ধর্ম ধর্ম কর ...দেখব কতটুকু বিশ্বাস কর।
লালনকে তাই গোঁড়াদের এত ভয়। বিশ্বাসের কথা বলে যে সব সময় বিশ্বাস-এর স্থির থাকা যায় না - ঘোর বিশ্বাসীরা সেটা ভালো করেই জানে । কাজেই, তাদের নামাজ আর "পারসোনাল মিরাজ" হয়ে ওঠে না। কাজেই, যে ধর্ম প্রচার করতে হয় অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে - সে ধর্ম প্রচারের জন্য মাঝে মাঝে পাকিস্থানী সেনাবাহিনীর সাহায্য দরকার হয়! আর লালন দূর থেকে বলেন-
বিশ্বাসীদের দেখাশোনা করে লালন এ ভূবনে ...
লালনভক্তরাও আজও তাই করছেন। করবেন।
তখন বলছিলাম যে-লালন ইসলামের এক বিশেষ ব্যাখ্যার বা মতবাদের অনুসারী ছিলেন ; তাঁর পূর্বপুরুষ; সেই মহাত্মা সুফিরা মুগল সম্রাটদের ভোগবাদের তীব্র বিরোধীতা করেছিল। ইতিহাস সাক্ষী: সেই শুদ্ধত্মাদের বন্য হাতির পায়ে নিচে পিষে পিষে মেরে ফেলা হয়েছিল!
মাঝে মাঝে এমন সময়ও আসে। যখন লালনকে লিখতে হয়-
এ দেশেতে এই সুখ হলো,
আবার কোথা যাই না জানি।
গানটা কবে লিখেছিলেন লালন?
কোন্ বিপর্যয়কর অবস্থায় লিখেছিলেন?
কেন তাঁর দেশত্যাগের ইচ্ছে হয়েছিল?
কারা তাঁকে মানসিক যন্ত্রনা দিয়েছিল?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আজ আমাদের জানা।