কানাডায় অফিস পাড়ায় পার্কিং এরিয়ায় গাড়ি রাখা মানে বিশাল ঝামেলা এবং কস্টলি। যেখানে মাত্র সাত ডলার দিয়ে আসা যাওয়া সহ সারা শহরের এ মাথা থেকে ও মাথা ঘোরা যায় ট্রেন বা বাসে সেখানে ডেইলি ১০-২০ ডলার শুধু পার্কিং কষ্ট দেয়াটা আমার কাছে বিলাশিতা মনে হয়। তাই পারতপক্ষে গাড়ি নিয়ে বের হতে পছন্দ করি না ডাইন টাউনের দিকে। আমার বরাবরেই পছন্দ ট্রেন জার্নি। বাসে বা ট্রেনে গেলে মানুষ সম্পর্কে জানা যায়, দেখা যায়.... নতুন কিছু বোঝা যায়। যা আমার খুব ভালো লাগে। মানুষের জীবন আমি যতবেশী দেখবো ততবেশী জানবো ও নিজেকে ততবেশী বুঝতে পারবো এবং আমার লিখালিখি ততবেশী পরিপক্কতা অর্জন করবে বলে বিশ্বাস করি।
সাধারনত ৫/৬ মিনিট লাগে আমার বাসা থেকে বাসে করে সাবওয়েতে যেতে। আমার বাসার ঠিক পরের স্টপেজেই একটা হাই স্কুল আছে। স্কুল ছুটির পর সবাই হুড়মুড় করে বাসে উঠে। কানাডায় গ্রেড নাইন থেকে টুয়েল্ভ পর্যন্ত হাই স্কুল। গ্রেড এইট পর্যন্ত সাধারনত বাসার পাশের হোম স্কুলে পড়ে বাচ্চারা এবং নাইন থেকে হাই স্কুল। একমাত্র হাই স্কুলেই স্কুলের নির্ধারিত পোষাক আছে তবে সব হাই স্কুলে নয়। প্রাইমারি বা মিডল স্কুলে তা নেই। এখানে কিন্তু হাই স্কুল মানে স্বাধীনতা, অনেকটা দেশের কলেজের মতো তেমন কড়াকড়ি নেই। যার ইচ্ছে ক্লাস করো না করলে নেই। তবে প্রতিদিনই পেরেন্টস্ এর কাছে রিপোর্ট যায় বাচ্চা স্কুলে অনুপস্থিত থাকলে। এই একটি নিয়মই কড়াকড়ি। মিডল স্কুলের কড়া শাসনের পর হাই স্কুল মানে স্বাধীনতা। স্কুল ছুটির পর হইচই করতে করতে টিন এইজ এর ছেলে মেয়েগুলো উঠে আসে বাসে, দেখতে খুব ভালো লাগে। বিশেষ করে এখানে কেউই তেমন রাস্তায় কথা বলে না কিন্তু বাচ্চাগুলো এমন কিচির মিচির করতে করতে পুরো বাসই গরম করে ফেলে। আমি সবসময়ই খুব আগ্রহ নিয়ে ওদেরকে দেখি, ওদের আচার আচরন দেখি, ওদের কথা বোঝার চেস্টা করি। যদিও খুব দূরহ কাজ কারন ওদের সে স্পিডি এ্যাক্সেন্ট বোঝা আমার জন্য কষ্টকর বটে।
এ সময়টুকুতে সাধারনত আমি দাড়িয়েই থাকি বাসে। কিন্তু আজ বাসে উঠেই সত্যিই মেজাজটা একটু খারাপই হলো। এখানে বাসের প্রথম দুই সারি বৃদ্ধ বা হুইল চেয়ারের জন্য বরাদ্ধ থাকে। কেউ বসলেও বৃদ্ধ-বৃদ্ধা দেখলে সীট ছেড়ে দেয়। পিক আওয়ার বলে অনেক ভীড় এবং সে হাই স্কুলেই স্কুলের ছেলে মেয়েগুলো বাসের সামনের পুরো জায়গাই দখল করে আছে ও সংরক্ষিত সীটগুলোও। কাউকে সীট ছাড়ার জন্য ও উঠে দাঁড়াতে দেখলাম না। যেটা কানাডায় বিরল কারন সাধারনত বৃদ্ধ-বৃদ্ধা দেখলে সবাই উঠে সীট ছেড়ে দেয়। ২/৩ জন বৃদ্ধকে দেখলাম অনেক কস্টে ভীড়ের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে। যাত্রীরা কেউই সামনের দরজা দিয়ে উঠতে পারছে না। ড্রাইভার বার বার মুভ বেক বলছে কিন্তু ওদের কারো কানে যাচ্ছে কিনা সন্দেহ। কিন্তু কেউই কিছুই বলছে না সে টিনএজ গ্রুপকে। এখানে সত্যিই কেউই কাউকে কিছু বলে না, যে যার মতো করে চলে।
আমি তাদেরকে অবজার্ভ করতে লাগলাম। শুধু হইচই না, একটি ছেলেকে দেখলাম সীটে বসা একটি মেয়েকে টেনে সরিয়ে নিজে বসলো ও তার কোলের উপর মেয়েটিকে বসালো। তারপর হইচই করতে করতে তিনজনের সীটে ছয়জন বসলো। মেয়েটির পড়নে ছিল সে রকম ছেঁড়া ফাঁড়া প্যান্ট (বেচারা !!। এই ছেঁড়া ফাড়া প্যান্ট এর ফ্যাশান যে কে আবিস্কার করেছে.... আল্লাহ মালুম। কি ধরনের সৈান্দর্য্য যে আছে এ ছেঁড়া ফাঁড়া প্যান্ট পড়াতে বা কি ধরনের উপকারিতা পাওয়া যায় এখনো বুঝতে পারি নাই। শুধু এতটুকু বলা যায় গরমকালে কিছু ফ্রেস এয়ার পায়ের বিভিন্ন অংশে লাগে এই যা!!!!) । আর ছেলেটি বারবার মেয়েটির সে ছেড়া অংশে হাত বোলাতে লাগলো। একজন টিনএজ বয়সের ছেলের মা হিসেবে আমার কাছে যারপরনাই বিরক্তি লাগছিল। এবং আমি স্পষ্ট বিরক্ত হয়েই তাদের সামনে দাড়িঁয়েছিলাম। যদিও কানাডার মতো দেশে আমার এ আচরন সম্পূর্ণ অনৈতিক কিন্তু বাঙ্গালী মানসিকতা আমাকে বার বার ধাক্কা দিচ্ছিল। তরুন তরুনীরা এরকম আচরন পথে করলে আমি পাত্তা দেই না। ওরা পূর্ণ বয়স্ক, যা করছে তার দায়ভার তাদের। কিন্তু এরকম ১২/১৩ বছরের বাচ্চাদেরকে দেখলে মেজাজই খারাপ হয়ে যায়।
কিছুক্ষন পর খেয়াল করলাম ২/৩ টা ছেলে একটু ফিসফিস করে কথা বলছে ও আমার দিকে তাকাচ্ছে। হঠাৎ ই একটি ছেলে আমাকে জিজ্ঞেস করলো তোমার স্কার্ফটা কোথা থেকে কিনেছো? আমি তর প্রশ্ন শুনে অবাক হলেও উত্তর দিলাম, হাডসন বে থেকে। সাথে সাথে ওই গ্রুপের একটি কালো ছেলে আমার এ্যাক্সেন্ট শুনে বলে উঠলো, ফাকিং ইন্ডিয়ান। মাথায় রক্ত উঠে গেল, কি বলছো তুমি আবার বলো? এই বলে ফোনের ভিডিও অন করে দিলাম ও ছেলেটির মুখোমুখি দাড়াঁলাম। সাথে সাথে পাশের ছেলেটি আমাদের দু'জনের মাঝে এসে সরি বলে ছেলেটিকে ধাক্কা দিল ও ছেলেটিকে বলতে লাগলো, ও ভিডিও করছে। কিন্তু কিছু বলতে বলতেই আমার স্টপেজ এসে পড়লো আর ব্যাপারটা নিয়ে বেশী ঝামেলা না করে নেমে পড়লাম।
ছবি: গুগল মামা
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১০:১৮