আশে পাশে যারা আছেন এবার একটু নড়েচড়ে বসেন কারন আমি সেই অল্পকিছু প্রাগৈতিহাসিক ব্লগারদের একজন যারা যুগ ধরে সামহোয়ারের মাটি কামড়ে পড়ে আছে। শত লাথি গুতা ঝড় ঝাপটাতে আমারে এখান থেকে সরাতে পারেনি। তাই ব্লগের আদু আপু হিসেবে আমার একটা নৈতিক দায়িত্ব আছে বাচ্চালোকদের উদ্দেশ্যে কিছু স্বভাবসুলভ বক্তৃতা দেয়া (আদু ভাই কে, সে গল্প আশা করি সবার জানা আছে। জানা না থাকলে আওয়াজ দিয়েন!)।
যাইহোক ব্লগের ইতিহাস, পাতিহাস, ক্যাচাল, অপবাদ, সর্বোচ্চ সর্বনিম্ন পঠিত, সর্বোচ্চ লাইক, সর্বোচ্চ মাইনাস, সর্বোচ্চ শেয়ার... এসব নিয়ে বহু পোস্ট হয়েছে তাই ওই দিকে আর গেলাম না। আর আমার ব্যাক্তিগত ব্লগিং ইতিহাসও আমি অলরেডি দশ বছর পূর্তিতে পোস্ট দিয়ে দিয়েছি তাই একই কাসুন্দি আর ঘাটালাম না (নিজের ঢোল বেশী পেটানো ভালো না)। যাদের হাতে কাজ কাম কম আছে, আর আমার বকবকানী শুনতে চান তারা চাইলে ঢুঁ দিতে পারেন.......
সামুতে ১০ বছর....কিছু চাওয়া পাওয়ার ১০ বছরের হালখাতা!!!!!
যদিও আমার চাওয়া পাওয়ার বিস্তারিত হিসাব অলরেডি দশ বছর পূর্তিতে পোস্ট দিয়ে দিয়েছি তারপরও একান্ত কিছু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চাওয়া, কিছু মন খারাপ (দু:খ বল্লাম না কারন দু:খের সজ্ঞা আমার কাছে ভিন্ন) আবারো যুগ পূর্তিতে তুলে ধরলাম। যেমন:
১) সামহোয়ার কি সম্ভাবনাময় বা প্রতিভাবান ব্লগারদের মনে রাখে? আমার জানা নেই......। যার কারনে হয়তো অসংখ্য ক্ষুরধার লেখনির ব্লগার চলে গেছে অথবা বলা যায় যারা টিকে আছে তারা একান্ত নিজের ভালোবাসায় টিকে আছে। অনেকে হয়তো ইমন জুবায়ের ভাইয়ের কথা বলবেন কিন্তু উনার জীবদ্দোশায় আমরা উনাকে তেমনভাবে মনে করেছি কি? এভাবে ব্লগারদের চলে যাওয়াতে সামহোয়ার এর কিছু যায় আসে না সত্য কারন নতুন কেউ এসে সে অভাব পূরণ করে সহজেই কিন্তু আমরা সাধারন ব্লগাররা হারাই অসাধারন একজন লেখককে। অনেকে প্রশ্ন করতে পারে কিভাবে পার্থক্য করবেন এমন ব্লগারদের? খুব সহজ, সময়ই বলে দেয় কে প্রতিভাবান ব্লগার! হয়তো অনেকই বলবে সামহোয়ারের সীমাবদ্ধতার কথা। লোকবল, অর্থনৈতিক টানাপোড়া, রাজনৈতিক ধাক্কা.......... অনেক অনেক কিছুই আছে। তারপরও বলবো এরই মাঝে অনেক কিছু করা সম্ভব। এবং যা করতে খুব বেশী টাকা পয়সা বা লোকবল লাগবে বলে আমি মনে করি না। যেমন;
- ব্লগের প্রোগ্রামে খুব সহজেই ব্লগারদের কতদিন ধরে ব্লগে আছে তার লিস্ট আছে। সেখান থেকে ৫ বছর বা তারও পুরো ব্লগারদেরকে একটি শুভেচ্ছা বার্তা দিতেই পারে বর্ষপূর্তিতে। এরকম হাতেগোনা ব্লগার আছে আমার জানা মতে।
- এ ধরনের ব্লগাররা অনিয়মিত হলে একটা মেইল দিতে পারে। সেক্ষেত্রে তারা হারিয়ে যেতে চাইলে ও হারাতে পারবে না।
- অভিমান, কষ্ট, দু:খ সবই আছে আমাদের মাঝে। আর আমার মতে লেখকরা একটু বেশীই অভিমানী হয়। সেক্ষেত্রে আমরা কি জানতে চাইতে পারি না এ সব অভিমানীদের অভিমানের কথা?
- ক'দিন আগে আমরা ব্লগ দিবস পালন করেছি। যতটুকু বুঝেছি একা জাদিদ ভাই আর নীল সাধু ভাইয়ের একান্ত চেস্টায় সেটা সফল হয়েছে। সেখানে মনে হয় পুরোনো অল্প কয়েকজন ব্লগারকে দেখলাম, মনিরা, মোস্তাফা ভাই, নীল আকাশ, রাবেয়া, কাউসার, হাবিব, ছবি আপু, মুন আপু, নুরু ভাই....... (যেহেতু আমি যাইনি তাই ছবি আপার পোস্ট অনুযায়ী বললাম)। আমার শুধু একটু কথা, আমি জানি যার ইচ্ছে সেই রেজিস্ট্রেশান করেছে এবং কাউকেই বাধ্য করা হয়নি। কিন্তু কিছু পুরোনো মুখকে কি ধরে বেধেঁ আনা যেতো না, একটি মেইল করা যেত না..... মইনুল হোসেন, মুনির হাসান, মলাসইলমুইনা, আহমেদ জি এস, ডা: এম এ আলী, কান্ডারী অথর্ব, কালীদাস, জুন, করুণাধারা, শায়মা, জাহিদ অনিক, নয়ন জাহাঙ্গীর, খায়রুল হাসান, শের শায়রী, বিলিয়ার রহমান, পদ্মপুকুর, ভ্রমরের ডানা, কামরুন নাহার বীথি, নিঝুম মজুমদার, মুক্ত মানব, বোকা মানুষ বলতে চায়, সোনাবীজ, মোস্তফা পলাশ, সামু পাগলা, কি করি আজ ভেবে না পাই, হাসান মাহবুব, জেন রসি, ডি মুন, সাদা মনের মানুষ, আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম, সনেট কবি, গেম চেন্জার, ভুয়া মফিজ, চাঁদগাজী, দেশ প্রেমিক বাঙালী, রাজীব নুর, মোস্তফা সোহেল, বিজন রয়, মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, নতুন, ঢাবিয়ান, ওমেরা, শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া), ল, হাসান কালবৈশাখী, কলাবাগান, আখেনাটেন,আমি তুমি আমরা, ঠাকুরমাহমুদ, জুল ভার্ন, মাহমুদুর রহমান সুজন, আমি তুমি আমরা, স্বপ্নের শঙ্খচিল সহ এমন অনেক অনেকে প্রিয় মুখ... (সরি, সবার নাম এই মূহুর্তে মনে আসছে না)। ওদেরকে একটু নতুনদের সামনে আনলে নতুনরাও ভাবতো তারা যখন পুরোনো হবে তখন তাদেরকে সবাই এমন করেই মনে রাখবে। এতে তারা ব্লগ ছেড়ে যেতে বা অভিমান করতে দু'বার ভাববে।
২) আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম ভাই এ সামহোয়্যার ইন ব্লগঃ মুদ্রার অন্য পিঠ লিখাটিতে ব্লগের ফাইনান্সসিয়াল দিক নিয়ে প্রথম কথা বলেন। কিভাবে ব্লগকে আর্থিকভাবে সচ্ছল করা যায়। এবং সে প্রেক্ষিতে ২৩ জন ব্লগারদেরকে নিয়ে একটি কমিটি করা হয়। এবং প্রায় প্রত্যেকেই তার নিজ নিজ আইডিয়া বলার চেস্টা করেন ও প্রয়োজনীয় সাহায্যের হাতও বাড়িয়ে দেবার প্রস্তাব ও দেয়। এক পর্যায়ে সত্যপথিক সাইয়ান বেশ দৈাড়ঝাপ শুরু করে। সে পর্যায়ে সাইয়ানের বড় বড় মেইলের ভারে আমি খেই হারিয়ে ফেলেছিলাম আসলে কি হতে যাচ্ছে। আমি এখনো জানি না শেষ পর্যন্ত কি হয়েছে বা সাইয়ান কেমন ফাইনান্স জোগাড় করেছে ব্লগের জন্য। আমি বরাবরেই বলে এসেছি আমি চাই সামহোয়ার চমৎকার একটি জায়গায় দাঁড়াক এবং আমি আমার সর্বোচ্চই করার চেস্টা করবো। শুধু আমিই নয়, অসংখ্য ব্লগার আছেন যারা সামহোয়ারের জন্য কিছু করার চেষ্টায় কখনোই পিছ পা হবেন না, এমন বিশ্বাস আমার সবসময়ই।
৩) খুব বেশি পোস্ট আমি দেইনি কারন সময়ের অভাব। যতটুকু সময় পাই তার মাঝে একটি পোস্ট লিখতে খুব বেশী সময় নেই না। কারন আমার পোস্টগুলো আমি লিখি আমার উপলব্ধি, আমার নিজস্ব চিন্তাধারা থেকে। এবং প্রতিটি পোস্টই বাস্তবতার নিরীখে নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে লিখা তাই এর সাথে দ্বিমত থাকতেই পারে। এবং আমি বরাবরেই ভিন্ন মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমি বাইবেল লিখার চেস্টা করি না তাই এ নিয়ে পক্ষ বিপক্ষ মতামত আমি সাদরে গ্রহন করি। কিন্তু কোনভাবেই উগ্রতা আমি পছন্দ করি না। যাহোক, আমার দু'টি লিখা সামহোয়ার থেকে গায়েব হয়ে গেছে। যখন মিস্টার মন্ত্রী সাহেব ব্লগ বন্ধ করে দেন তখন আমিই একটি পোস্ট দিয়েছিলাম এবং সেখানে মন্ত্রীমহোদয়ের ক্ষোভের কারন উল্লেখ করি যা সম্পূর্ণ আমার ব্যাক্তিগত মতামত ছিল। এবং পরবর্তী দেখলাম আমার সে ধারনাই সত্য হয়েছিল। এতে আমি মোটেও দু:খিত হয়নি কারন আমার লিখার কারনে ব্লগ আবার কোন ঝামেলায় পড়ুক আমি কখনই চাইনি। আমার আরেকটি লিখাও খুজেঁ পাচ্ছিনা ব্লগে সম্ভবত ২০১৭ এর দিকে লিখা। সেখানে আমি নর্থ আমেরিকা, ব্রিটিশ আর বাংলাদেশী ইংরেজী উচ্চারন নিয়ে লিখেছিলাম। আর দেশের আইএলটিএস ব্যবসার কথা উল্লেখ করতে যেয়ে ব্রিটিশ কাউন্সিলের ভূমিকা লিখেছিলাম। এবং আমার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছিলাম যেখানে বলেছিলাম আমার কমপ্লেইন এর পর ব্রিটিশ কাউন্সিল স্পিকিং পরীক্ষার হলে শিক্ষকদের মোবাইল ফোন রাখা বন্ধ করে দিয়েছিল। যেখানে আগে শুধু ছাত্র-ছাত্রীদের মোবাইল ফোন জমা রাখা হতো পরীক্ষার হলে ঢুকার আগে শিক্ষকদের নয়। পুরো ঘটনার পর ব্রিটিশ কাউন্সিল দু:খ প্রকাশ করে আমার কাছে চিঠিও দিয়েছিল। আমার বিশ্বাস ব্রিটিশ কাউন্সিলের স্বার্থে লিখাটা গায়েব হয়নি। তবে মজা পেয়েছি, একটি লিখায় একজন জনৈক ব্লগার দাবী করেছিলেন তিনি আমেরিকার ইউনিভার্সিটির প্রফেসর এবং উনার আন্ডারে ৮/১০ পিএইচডি করছেন। সে মজার কমেন্টসগুলো দেখি উধাও। যদিও স্ক্রিন সর্ট রাখা আছে ।
৪) অনেকে প্রশ্ন করেন কেন আমি ব্লগের ম্যাগাজিন বা বইতে আমি কেন লিখা দেইনি এ পর্যন্ত কিংবা কেনইবা আমি কোন বই বের করছি না। আমার খুব সহজ সরল স্বীকারক্তি, আমার লিখার মান নিয়ে আমার এখনো যথেষ্ট সন্দেহ আছে সেটি বই আকারে বা কোন ম্যাগাজিনে যাবার আদৈা যোগ্য কিনা। নিজের লিখার উপর এখনো যথেস্ট কনফিডেন্স আসেনি। হয়তো অদূর ভবিষ্যতে আসবে। তবে আমার জন্য বরাবরেই স্ট্রাগল হলো সময় ম্যানেজ। চাকরী, সংসার, বাচ্চা-কাচ্চা, সামাজিকতা, ঘোরাঘুরি সব ম্যানেজ করে লিখালিখিতে সময় দেয়া সত্যিই কঠিন। তারপরও হয়তো কোনদিন সে সময় সুযোগ মিললে তার দিকে মনোযোগ দিবো।
অনেক অনেক ভালো থাকুন যেখানেই থাকুন যতদূরেই থাকুন। আর যেখানেই যান আবারো ফিরে আসবেন ব্লগে... দেখা হবে, কথা হবে, ভালোবাসা হবে, খারাপবাসা হবে, ঝগড়া হবে, রাগারাগি হবে, মান-অভিমান হকে কিন্তু কোন নোংড়া কথা হবে না ........
যথারীতি আমার কিছু তোলা ছবি সব শেষে.........
চেরী যখন পুরোপুরি ফুটে তখন খুব অল্প সময়ের জন্য স্থায়ী হয়ে। চেরী ফুলের বাগান থেকে.......
নিউইয়র্ক এর কিছু ছবি। তবে আমার সবচেয়ে ভালোলাগে টাইমস্কোয়ার। যেখানে গেলে জীবন ফিরে পাওয়া যায় ...
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৩:১০