যখন বিস্ববিদ্যালয়ে পড়তাম আমাদের একজন টিচার নাজিম উদ্দিন স্যার। কয়েক দিন আগে পত্রিকায় ওনার সম্পর্কে লিখা ছাপা হয়েছিল। উনি দু'বার বিসিএসে প্রথম হয়েছিলেন। প্রথমবার প্রথম হবার পর ইউনিভার্সিটিতে জয়েন করেন তারপর ও আবার দ্বিতীয়বার বিসিএসে প্রথম হবার পর উনাকে জিজ্ঞাসা করেছিল কেন উনি আবার বিসিএস দিলেন। তো উনি বললেন যে উনার মেধা আপটুডেট আছে কি না তা যাচাই করছিলেন। যাহোক মারাত্বক হুজুর টাইপ স্যার ক্লাসে ঢুকেই প্রথম দশ মিনিট মেয়েদেরকে আর ছেলেদেরকে শুধু আলাদা বেন্চ্ঞে বসাতেনই না আমাদের মাঝে কম করে একটা বেন্চ ফাঁকা থাকতো..... । আমাদের সবচেয়ে দুষ্ট বন্ধু সেই ক্লাসে সবসময় ঠিক মেয়েদের মাঝে বসতো স্যারকে ভোগানোর জন্য। এখানকার ইউনিভার্সিটি এসে খুব স্যারের কথা মনে হতো আহারে স্যারের নিশ্চয় পিএইচডি করতে এসে চোখের কি কষ্টটাই না হইছে







দেশে টিচাররা ছিলেন রাজা-মাহারাজা আর আমরা ছিলাম প্রজা। কলেজ পর্যন্ততো দৈাড়ের উপর থাকতাম টিচারদের ভয়ে তারপর ইউনিভার্সিটিতে এসে কিছুটা স্বাধীন হলেও একটা অলিখিত দড়ি গলায় পড়ানো থাকতো। একটু এদিক সেদিক হলেই সেটা ধরে টান দিত। বিদেশের ইউনিভার্সিটিতে এসে বুঝলাম আহ্ স্বাধীনতা কাকে বলে... পড়লা নাকি ঘুমাইলা নাকি ডেটিং কইরা টাইম পার করলা সেটা তোমার ব্যাপার। ক্লাসে প্রথম দিন এসেই টিচার বলে দিল তোমরা হলো মালিক আর আমরা কর্মচারী। তোমাদের দেয়া বেতনের টাকায় আমাদের সংসার চলে তাই পড়া আদায় করে নেয়ার দায়িত্ব তোমাদের আমাদের না, আমরা তোমাগো পিছনে দৈাড়ামু না তোমরাই দৈাড়াইবা। তাই বলে খুশি মনে পড়া ছেড়ে দিবা তার উপায় নেই কারন প্রতি সপ্তাহে প্রজেক্ট, এ্যাসাইনমেন্ট, গ্রুপ ওয়ার্ক... কঠিন দৈাড়ের উপর। একটু ফাঁকি দিসোতো মরসো....
এখানে সবচেয়ে ভালোলাগে ছাত্র-ছাত্রীদের সততা। ক্লাসে পরীক্ষায় কেউই কারোটা দেখা বা দেখানোর চেস্টা করে না। আর প্রজেকন্ট পেপারে নেট থেকে বা আমাদের মতো সিনিয়ারদেরটা কপি করার কোনই ট্রেডিশান নাই....আসলে সৎ না হইয়া যাইবো কই, যে কড়া কপি আইন






আমার টিচারদের মধ্যে তিনজন কানাডিয়ান ও দু'জন ইন্ডিয়ান। একজন শিখ আরেকজন তামিল.. তো শিখ টিচার ক্লাসে ঢুকেই চেয়ারের উপর আরাম করে বসে একটা পুরোনো খাতা খুলে রিডিং পড়া শুরু করে। খাতার চেহারা দেখে মনে হয় বাবার দাদার কারো কাছ থেকে উত্তরোধিকার সূত্রে প্রাপ্ত






কানাডায় কিন্তু ইন্ডিয়ানদের বিশাল পাওয়ার। খোদ দু'জন মন্ত্রী থেকে শুরু করে বড় বড় পজিশানে তারা আছে। এবং সত্যিকারে বলতে তাদের স্বজনপ্রীতি দেখলে তাজ্জব হই। কেউ কোথাও ভালো পজিশানে থাকলে নিশ্চিত সে অফিসের ভালো পজিশানগুলা তাদেরই দখলে থাকবে। ভাই-বেরাদার আত্বীয় স্বজন সবই ওইখানে ঢুকে....। আর আমরা ভালো পজিশানে থাকলে খুব কমই তাকাই অন্যদের দিকে কারন আমরা তখন তাকাই আকাশের ঠিকানায় চিঠি দিতে ব্যাস্ত থাকি..... আর আছে চাইনীজ। মনে হয় পুরো কানাডা ওদের বাড়ি ঘর। ব্যবসা বানিজ্য, চাকরী সবখানেই ওদের আধিপত্য। তবে সত্যিকারে ওরা মারাত্বক কর্মঠ.... কোন কাজে ওদের রা নেই। যেখানে সময় যে কোন কাজ করতে প্রস্তুত থাকে। ওরা আত্বীয়করন করে তবে ইন্ডিয়ানদের মতো চোখে টিনের চশমা লাগায়ে না। কারন সংখ্যায় ওরাই বেশী শিক্ষিত তাই জব মার্কেট ওদের দখলে। তার উপর ব্যবসা বানিজ্য যেহেতু ওদের দখলে তাই স্বাভাবিকভাবে চাইনীজ ছেলে-মেয়ের চাকরী সবার আগেই হবে। আমি যে ইউনিভার্সিটিতে পড়ি সেখানে মনে হয় ৮০% চাইনীজ। বাকি কালো আর ইন্ডিয়ান। বাংলাদেশী আছে তবে সংখ্যায় অনেক কম।
চলবে......
আজ এ পর্যন্ত বাকি কথা পরে হবে.......... হ্যাপি নিউ ইয়ার ২০১৭।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৯:২২