এখানে কুকুরদেরকে পরিবারের সদস্য হিসেবে দেখে অথবা বলে মাই ফ্রেন্ড। তো ওই ফ্রেন্ডদের প্রাকৃতিক কর্ম সাধনের জন্য বেছে নেন বাসার আশে পাশের খোলা মাঠ ময়দান। এবং মালিক ফ্রেন্ডরা হাতে রাখেন পলিথিন ব্যাগ, যেখানে সেখানে পু করার পর তা হাত দিয়ে উঠিয়ে গার্বেজ করেন তা দিয়ে। তবে সাধারন কালচার সবাই তা করেন তবে কেউ যদি তা পরিস্কার না করে তার জন্য কোন জেল জরিমানা নেই..... তাই যখন ওই হাগু পাড়ায়ে চলতে হয় তখন কেমন লাগে তা আর বলতে চাচ্ছি না!!!!!! আর প্রতিদিন বিকেলে হাগু + এক্সারসাইজ করানো জন্য ওনাদের বের করানো হয়। সে কারনে আমার হয়েছে মরন !!! বিকেলে পারতপক্ষে লিফটে উঠি না.... ৩/৪ টা যাওয়ার পর কনফার্ম হই যে আশে পাশে কোন কুকুর ভ্রাতা নেই .... ছোট খাটো হলে মাইন্ড করি না কিন্তু দু:খের বিষয় বেশীরভাগেরই সাইজ সিংহ মার্কা। এদেরকে প্রায় আমার নেকড়ে বলে ভুল হয় !!!!! তাই এ নেকড়ে সাইজের কুকুরের সাথে একই লিফটে উঠা কি যে কঠিনতম কাজ.... তা বলে বোঝানো যাবে না। প্রানটা প্রায় যায় যায়... পারলে লিফটের হাতলে পা ঝুলিয়ে রাখি। আমার এ দূরাবস্থা দেখে ওদের মালিকরা প্রায় আমাকে অভয় দেয়, দে আর ফ্রেন্ডলি... ডোন্ট বি স্কেয়ার্ড। কিন্তু আমার আত্মা কি আর এ অভয় বাণীতে ভরসা পায়!!!!!
বৃদ্ধার বয়স কম করে হলেও ৭৫ এর কাছাকাছি হবে। তাঁর আছে ঠিক নেকড়ে সাইজের ৩ কুকুর, প্রথমতো ভেবেছিলাম সত্যিই বোধ হয় নেকড়ে.... আমার ছেলে আমাকে অভয় দিল যে ওগুলা আসলে কুকুর । ভরসা, আমার ছেলে আবার আমার থেকে সাহসী। যাহোক মহিলা খেয়াল করেছে আমি তাঁকে দেখলে লিফটে উঠি না ...... তাই একদিন বললো, তুমি আমার বাসায় এসো, দেখবে ওরা কতটা ফ্রেন্ডলি। তো একদিন কুকুর ছাড়া লিফটে দেখা তার সাথে, দেখি চোখ লাল ও মুখে স্ক্রেচ। জিঙ্গাসা করতেই বললো যে তার কুকুর ফ্রেন্ডরা একটু দুস্টুমি করেছে ...মানে একটু আচড়ে দিয়েছে চোখে মুখে। বুঝলাম কেমন ফ্রেন্ডলি তার ফ্রেন্ডরা তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। যাইহোক, কদিন ধরে তাঁর সাথে দেখা হয় না, তাঁর হাজবেন্ড দেখি কুকুর নিয়ে বের হয়।
একদিন দেখি লিফটের সামনে নোটিশ, সে বৃদ্ধার ছবি, জেনি মারা গেছে দু'দিন, তাঁর অন্তষ্তক্রিয়া বিকেলে গির্জায়। থতমত খেয়ে গেলাম, কেউই জানে না যে সে লাস্ট পনেরদিন হসপিটালে মৃত্যুর সাথে লড়ছিল.... কোন খবর নেই....কোন শোকতাপ নেই, নেই কোন আত্মীয়- অনাআত্মীয়র মাতম, কেউই তাঁকে দেখতে যায়নি.... কেউই তাঁকে মাথায় হাত বুলিয়ে অভয় দেয়নি, '' মা, আমি আছি, চিন্তা করো না''। এ রোবটিক জীবনে কারোই সময় নেই সময় দেবার.... হাজবেন্ড তাঁকে সময় দিলে কুকুরগুলো কে দেখবে..... একটি মেয়ে আছে সে অন্য স্টেট এ থাকে, তার ও সময় নেই নিজের কাজ, সংসার ছেড়ে সময় দেবার ...... এরা ১৮ বছর বয়স থেকে শিখে একা সার্ভাইব করার, মা-বাবা থেকে আলাদা থাকার, কাজ, কাজ আর কাজ... ........ এ রোবটিক আধুনিক জীবন থেকে আমাদের এ আধাপেট খেয়ে মা-বাবা-ভাই-বোন নিয়ে থাকাটাই যে অর্থপূর্ণ, কতটা আনন্দের তা কি প্রথম বিস্ব জানে !!!!!!!!!!... চাই না এ আধুনিক জীবন, চাই না এ নি:শব্দ মৃত্যু..... চাই আমার মৃত্যুতে প্রিয়জনের শোক, চাই আমার লাশে আপনজনের ছোয়া, চাই আমার মৃত্যু পথে চারপাশে সবার উদ্বিগ্ন মুখ, চাই হসপিটালে আত্মীয়- অনাআত্মীয়র ভীড়, চাই অঝঢ় ধারার বৃষ্টির কান্না, চাই না এ নি:শব্দ মৃত্যু.... চাই না.....চাই না।
সে মেয়েটি:
ছেলেকে নিয়ে বের হয়েছি লাইব্রেরীতে যাবো বলে....বন্ধের দিন, শনিবারে বাস ৩০ মিনিট পরপর। স্টপেজ এ এসে দেখি বেঞ্চ এ একটা মেয়ে একটা পলিথিন হাতে সমানে বমি করছে আর চিৎকার দিয়ে কাঁদছে, বয়স বড়জোর ২৫ হবে । পাশে যেয়ে কাঁধে হাত রাখলাম, ডু ইউ নিড এনি হ্যাল্প?
সে বললো, নো থ্যাংস্ আ'ম ওকে..... ।
কিন্তু তোমার অবস্থাতো ভালো মনে হচ্ছে না, আমি কি ৯১১ এ কল দিব ?
সে বললো, না ধন্যবাদ, লাগবে না। আমি একাই সামলে নিতে পারবো।
অর মে আই কল সামওয়ান টু এ্যাটেন্ড ইউ।
সে বললো, আই ডোন্ট হ্যাব এ্যানি ওয়ান।
মানে কি ??? ইন্টারভিউ নিতে লাগলাম... কারন বাস আসতে অনেকক্ষন, তারউপর কম করে ২টা বাস চেইন্জ সাথে সাবওয়েতে যেয়ে তবেই হসপিটাল, যা ওর পক্ষে এ অবস্থায় যাওয়া কঠিন।
বাংলাদেশ হলেতো কথা ছিল না, কোন পথচারী বা যেকোন রিক্সাওয়ালা বা সিএনজি ভাইয়েরা ঢাকা মেডিকেলের বারান্দা পর্যন্ত দিয়ে আসতো কিন্তু এখানে ব্যাক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের বাইরে যাওয়া যায় না... যতক্ষন পর্যন্ত আপনার সাহায্য সে এক্সেপ্ট না করবে ততক্ষন কিছুই করতে পারবেন না।
তোমাকে কিভাবে হ্যাল্প করবো?
নো নিড ডিয়ার, আ উইল টেক কেয়ার মাইসেল্ফ।
মে আই রিচ ইউর প্যারেন্টস্ অর এ্যানি ফ্রেন্ডস্?
আই হ্যাব বয় ফেন্ড বাট হি ইজ বিজি...।
আমি কি এ্যাম্বুলেন্স ডাকতে পারি....?
নো, আই ডোন্ট নিড সো।
আমি কি ট্যাক্সি ডাকতে পারি....? কারন পরের বাস আসতে এখনো ২০ মিনিট লাগবে ততক্ষন তোমার কষ্ট হবে।
আ ডোন্ট হ্যাব মানি টু পে।
মানে কি ১৫/২০ টাকা নেই!! .... এরা সারা সপ্তাহ যা আয় করে শুক্রবার আর শনিবার রাতে সারারাতে তা শেষ করে, সপ্তাহে পেমেন্টের এক জ্বালা......
বুঝতে পারছিলাম না কি করবো, ট্যাক্সি ডেকে ভাড়া দিয়ে উঠিয়ে দিব নাকি নিজে নিয়ে যাবো, ৯১১ কল দিব, এ্যাম্বুলেন্স ডাকবো, নাকি কাউকে ডাকবো সাহায্যের জন্য....... নিজেকে খুব অসহায় লাগছিল।
এমন সময় এক ব্যাক্তি এলো বাসস্টান্ডে, এ অবস্থা দেখে আমাকে জিগ্ঞেস করলো কি হয়েছে, আমি ওর পরিচিত কিনা কারন মেয়েটি ততক্ষন কথা ও বলতে পারছিল না..... ভদ্রলোক মেয়েটির পাশে এসে ওর হাত ধরলো, বললো, তোমার যে অবস্থা তুমি হসপিটাল যেতে পারবে না তাই তুমি অনুমতি দাও আমি ৯১১ এ কল দেই। মেয়েটি তার কথায় শেষ পর্যন্ত রাজি হলো .....
জাস্ট ২ মিনিট... ভদ্রলোক ৯১১ এ কল দিল, এড্রেস বললো, কল এর কারন বললো.. এখানে সব ফোনের সাথে ৯১১ ট্রেক করা থাকে. সাথে সাথে হাজির হলো মেডিকেল এ্যাটেনডেন্ট ও একজন নার্স সহ এ্যাম্বুলেন্স.... কি পরম যত্নে স্ট্রেচারে করে মেয়েটিকে নিয়ে গেল। মেয়েটির বমি ও পরিস্কার করে দিয়ে গেল........ যাবার সময় আমাদের সাহায্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ দিয়ে মেডিকেল এ্যাটেনডেন্ট চলে গেল যেন নিজের কাছের কাউকে নিয়ে যাচ্ছে........ একটা দীর্ঘ নি:স্বাস বুক থেকে বেরিয়ে এলো, কবে আমাদের দেশে এমন ব্যবস্থা হবে। রিক্সাওয়ালা বা সিএনজি ভাইয়েরা না, সরকারী এ্যাম্বুলেন্স এসে নিয়ে যাবে পথে পড়ে থাকা লোকটিকে.... রাস্তায়/জলে মরে পড়ে আছে আর দুই থানার ওসি যুদ্ধ করছে ওদের সীমানায় পড়েনি বলে, ততক্ষনে লাশ পচেঁ গেছে........... হায়রে দেশে কেউ কি নেই একটু তাকানোর। শুধু তাকিয়ে আছি ভবিষ্যতের দিকে... যদি কেউ আসে.............
আগের পর্ব-
আমার নিকটতম প্রতিবেশীরা............
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০২৩ সকাল ৯:৩৯