একটু চিন্তা করে বলুন, আজ যদি বাংলাদেশের কোন জেলায় বিদ্রোহ দেখা দেয় আর কোন দল সেই জেলাকে বাংলাদেশ থেকে আলাদা করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করে, তখন একজন দেশপ্রেমিক হিসেবে আপনার অবস্থান কি হবে? আপনি কি ব্যাপারটিকে খুব সহজে গ্রহন করে সমর্থন করতে পারবেন? বাংলাদেশকে ঘিরে অতীতে অনেক কিছুই তো হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বিদ্রোহ, স্বাধীন বঙ্গভূমি আন্দোলন কত কি-ই না হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে বিদ্রোহের কারণে অনেককেই বাংলাদেশের আইনে শাস্তির সম্মুখীন হতে হয়েছে। বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সেনানীদেরও কম ভুক্তভুগী হতে হয়নি। এক্ষেত্রে একজন বাংলাদেশী'র কি করা উচিৎ?
সেরকমই কোন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছিলো একাত্তরের দিনগুলোতে? সেই পরিস্থিতিতে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের একজন সচেতন নাগরিকের অনুভুতি কি হতে পারতো? তারা কি কোনক্রমেই নিজ দেশ ভাঙ্গার উস্কানিকে মেনে নিতে পারতো যেমন আজ বাংলাদেশের কোন নাগরিকই মেনে নেয় না? ব্যাপারটি নিয়ে চিন্তা করার প্রয়োজন আমাদের।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গ নিয়ে চিন্তা করতে গিয়েই আজ এই বিষয়ের অবতারণা করেছি আজ।
২৬-শে মার্চের ভয়াল রাতের পর মানুষ বলে পদবাচ্য কোন ব্যক্তিই সেসময় পাকিস্তানের সাথে থাকা সমর্থন করে উঠতে পারেনি। যারা ভাই হয়ে ভাই-য়ের উপর এভাবে ঝাপিয়ে পড়েছিলো, তাদের সাথে কিভাবে থাকতে পারবে মানুষ? নিরীহ মানুষ হত্যা তো ইসলাম কোন ভাবেই মেনে নিতে বলেনি। একজন মুসলমানের রক্ত আল্লাহর কাছে কতটা দামী তা তো একজন বিবেকবান মানুষ মাত্রই জানার কথা। তা জেনেও কিভাবে তারা এইভাবে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যেতে পেরেছিলো তা আমার বোধগম্য নয়। আমি সেই সময় ছিলাম না, তারপরও সেই সম্পর্কে ভাবতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়তে ইচ্ছে হয়। নিজেকে সামলাতে পারি না।
তখন চিৎকার দিয়ে বলতে ইচ্ছে হয়, তাদের শাস্তি দিতে সরকার এতো দেরী করছে কেন!
তারপর নিজেকে সামলে নেই। সেই নিজেকে সামলাই যাকে বিবেকবান মানুষ হিসেবে আপন সত্ত্বার কাছে পরিচিত করতে ভালোবাসি। ভাবি, ক্ষমা নামক কথাটি তো মানুষের জন্যই!
কিন্তু, সেই ক্ষমা কি তাদের জন্যে প্রযোজ্য যারা নিরীহ মানুষের রক্তে হাত রাঙ্গিয়েছে? সেই ক্ষমা করার ক্ষমতা কি ইসলাম আমাকে দিয়েছে? রক্তের বদলা রক্ত নিতে কি ইসলামই বলেনি? আর, যদি ক্ষমা করতেই হয়, কে করবে তা? যাকে হত্যা করা হয়েছে, তার পরিবার ছাড়া অন্য কেঊ ক্ষমা করার অধিকার রাখে কি? রাখে না।
তাই, প্রশ্ন আসতেই পারে, কারা ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য? সেই প্রসঙ্গেই আসছি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সময় যারা স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছেন, কিন্তু কোন অপরাধ করেননি, মানুষ হত্যা করেনি অন্যায় ভাবে, বিধর্মীদের বাড়ি জ্বালিয়ে দেননি নিজ স্বার্থে কিংবা মা-বোনদের গায়ে হাত তুলেননি নিজ লালসা চরিতার্থ করতে, তারা কি ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য নন?
আমার বিবেক বলে, তারা অবশ্যই ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য।
আর, সেই রকম কোন মানুষ থেকে থাকলে, তাকে যেন ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ দেই আমরা। তাকে যেন বুঝতে দেই, কেন অনেক রাসূলুল্লাহ(সাঃ)-এর বংশধর-সহ পীর-মাশায়েখরা পাকিস্তানের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন, যুদ্ধ করেছিলেন নিজের প্রাণকে বাজি রেখে।
এতোটুকুই আমার চাওয়া।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১৬ সকাল ৯:৫৩