বেগম রোকেয়া জন্মের ৪৬ বছর আগে কুমিল্লার লাকসামে ১৮৩৪ সালে ডাকাতিয়া নদীর উত্তর তীরে খান বাহাদুর বাড়িতে নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী জন্মগ্রহণ করেন। বেগম রোকেয়ার ৭ বছর আগে ১৮৭৬ সালে তিনি ‘রূপ জালাল’ কাব্যগ্রন্থ রচনা করে সে সময় বেশ সাড়া জাগান। “রূপজালাল” নামে গ্রন্থটি বাংলা ভাষায় নারী লেখিকার প্রথম প্রকাশিত বই। নবাব ফয়জুন্নেছার রূপ জালাল কাব্য গ্রন্থের কপি কুমিল্লায় সংরক্ষিত আছে। সংরক্ষিত আছে লন্ডনের ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরীর বাংলা বিভাগে। বাংলা একাডেমী ১৯৮৩ সালে এ গ্রন্থটি পুনঃ মুদ্রন করেছে। এছাড়াও নবাব ফয়জুন্নেছা সংগীত লহরী ও সংগীত সার নামে আরও ২টি গ্রন্থ রচনা করেন। উপমহাদেশের একমাত্র মহিলা নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী নারী জগতের উজ্বল নক্ষত্র। দানবীর এ মহিয়সী নারী প্রচার বিমুখ ছিলেন। নারী লেখিকাদের পথপ্রদর্শকও ছিলেন নবাব ফয়জুন্নেছা। নবাব ফয়জুন্নেছার রূপজালাল কাব্যগ্রন্থ তার স্বামী গাজী চৌধুরীর নামে উত্সর্গ করেন। নবাব ফয়জুন্নেছার বাবার নাম সৈয়দ আহম্মদ আলী চৌধুরী। তার মার নাম আরফান্নেছা চৌধুরানী। ১৯০৩ সালের অক্টোবর মাসে ও ১৩১০ বঙ্গাব্দের ২০ আশ্বিন নবাব ফয়জুন্নেছা ইন্তেকাল করেন।
কথিত আছে, বিয়ের ১৭ বছর পর ১৮৫১ সালে নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী জানতে পারেন তার স্বামী হাছান আলী জমিদারের আরেকটি স্ত্রী রয়েছে। মহীয়সী নারী নবাব ফয়জুন্নেছা তার সতীন থেকে পৃথক থাকার জন্য সাড়ে ৩ একর জমির উপর তার বিয়ের কাবিনের ১ লাখ ১ টাকা দিয়ে বাড়িটি নির্মাণ করেন। স্থাপত্যকলার অপূর্ব নিদর্শন বাড়িটি নির্মাণ করতে প্রায় ৩ বছর সময় লেগে যায়। ব্রিটিশ আমলের সিমেন্ট, রড, চুন ও সুরকি দিয়ে বাড়িটি নির্মাণ করা হয়। নারী জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র নবাব ফয়জুন্নেছা অত্যন্ত ধার্মিক ছিলেন। তিনি পর্দার আড়াল থেকে এ বাড়িটিতে বসে উপমহাদেশের সব বিচারকার্য সম্পাদন, রাস্তাঘাট, পুল-ব্রিজ, স্কুল-মাদ্রাসাসহ যাবতীয় জনকল্যাণমূলক কাজ পরিচালনা করতেন। বাড়ির পাশে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন দশ গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ। কালের বিবর্তনে নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি নবাব বাড়ি হিসেবে দেশ-বিদেশে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে।
তার জমিদারির ১১টি কাচারির প্রতিটির পাশে বিশুদ্ধ পানির জন্য পুকুর এবং মক্তব ও প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন। সে সময় তার তত্ত্বাবধানে নির্মিত বালিকা বিদ্যালয়টি কালের সাক্ষ্য বহন করেছে। নবাববাড়ির বালিকা বিদ্যালয়টি কালক্রমে লাকসাম ফয়জুন্নেছা ও বদরুন্নেছা যুক্ত উচ্চ বিদ্যালয় (বিএন হাইস্কুল) রূপ নিয়েছে। তত্কালীন মাদরাসা আজ লাকসাম নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি কলেজ হিসেবে এলাকায় আধুনিক শিক্ষার দ্বার উন্মোচন করেছে। নবাব ফয়জুন্নেছা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ নির্মাণ কাজেও বিরাট অনুদান প্রদান করেছিলেন। কুমিল্লা শহরে ১৮৭৩ সালে নবাব ফয়জুন্নেছা দুটি বালিকা বিদ্যালয স্থাপন করেন। শহরের পূর্ব প্রান্তে নাজুয়াদীঘির পাড়ে প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয় এবং অপরটি বাদুরতলার উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন নারীশিক্ষায় অগ্রণি ভূমিকা পালনকারী। লাকসামে নবাব ফয়জুন্নেছা তার বাড়ির পাশে দশগম্বুজ মসজিদ স্থাপন করেন। মসজিদের দক্ষিণে পারিবারিক কবরস্থানে নবাব ফয়জুন্নেছাকে চিরদিনের জন্য সমাহিত করা হয়। নারীর স্বাস্থ্য সেবায় ১৮৯৩ সালে নবাব ফয়জুন্নেছা কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে মহিলা ওয়ার্ড স্থাপন করেন। এছাড়াও লাকসামে দাতব্য চিকিৎসাকেন্দ্র, ব্রীজ, কালভার্ট ও মসজিদ নির্মাণ করে একজন দক্ষ দানবীর নেত্রীর ভুমিকা রাখেন। একুশে পদক প্রদানের মধ্যে দিয়ে তার অসীম কাজের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিল।
কিন্তু এশিয়ার মহীয়সী নারী বাংলাদেশের গৌরব নবাব ফয়জুন্নেছার জন্ম ও মৃত্যু দিবস দেশে পালিত হয় না। সরকারি, বেসরকারি বা পারিবারিকভাবেও নবাব ফয়জুন্নেছার জন্ম-মৃত্যু দিবস কেউ পালন করছে না। নবাববাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে আজ ধ্বংস ও বিলীন হওয়ার পথে।
নবাব ফয়জুন্নেছার উত্তরাধিকারী ওয়ান ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফজলে রহমান চৌধুরী আয়াজ জানান, ঐতিহ্যের ধারক লাকসামের নবাববাড়ি দক্ষিণ এশিয়ার সৌন্দর্যমণ্ডিত বাড়িগুলোর মধ্যে অন্যতম। বর্তমানে অযত্নে-অবহেলায় বাড়িটির সৌন্দর্য দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে একপর্যায়ে বাড়িটির ঐতিহ্য বিলুপ্ত হয়ে যাবে। বাড়িটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। বাড়িটিতে নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর স্মৃতি সংরক্ষণ করে জাদুঘর করা হলে বাড়িটি হতে পারে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের অন্যতম দর্শনীয় স্থান ।
নবাব ফয়জুন্নেছাকে স্মরন না করা প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করে লাকসামের প্রবীন সাংবাদিক আবদুল জলিল বলেন, এ মহীয়সী নারীরা যদি শত বছর আগে শত বাধা বিপত্তির মাঝেও কাজ না করতেন তাহলে আজকে নারীদের যতটুকু অগ্রগতি হয়েছে তাও হয়তো হতো না। তাই সরকারী-বেসরকারী ভাবে এ মহীয়সী নারীদের স্মরন করা উচিত।
আমাদের সকলের একটি প্রাণের দাবি কুমিল্লা বিভাগ চাই। আমাদের এই দাবির সাথে আপনারাও একাত্মতা প্রকাশ করুন। যারা আমাদের সাথে যোগ দিতে চান তাদের জন্য আমাদের ফেসবুক পেজ
নারী দিবসে নবাব ফয়জুন্নেছাকে কেউ স্মরন করে না
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!
অপেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন
কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....
আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....
২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ
বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন
=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=
বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি
আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।
সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন