তখন ২০১৪ সাল!
সবেমাত্র এসএসসি পরীক্ষা শেষ হলো। টানা ৩ মাস ফাকা সময়। তাই আমি তাবলীগে চলে যাই বগুড়া ১ চিল্লার ৪০ দিনের জন্য।
সর্বমোট ২০ জনের মত সাথী ভাই ছিল। তাবলীগে যারা যায় মূলত ইসলাম ধর্ম প্রচার করে এবং নিজের মনে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস টা আরো ভালভাবে স্থাপন করে নেয়। যেহেতু মসজিদে থাকার ব্যবস্থা তাই ২৪ ঘন্টাই ইবাদত বন্দেগী করতে হয়।
.
তাবলীগে যারা যায় তারা জানে ছয় নাম্বার এর একটা বই থাকে। নাহ! এটা কোন জিহাদি বই না।
মুন্তাখাব হাদীসের ছয় নাম্বারের বইয়ে এই ছয়টা বিষয় আলোচনা হয়:
১) কালেমা ,
২) নামায ,
৩) এলেম ও জিকির,
৪) একরামুল মুসলেমিন ,
৫) তাসহিহে নিয়্যত
৬) দাওয়াত ও তাবলীগ।
এই বইটা অনেকটা মুখস্থ ছিল আমার। এখন বেশিরভাগ চর্চার অভাবে ভুলে গেছি। বইতে হুর সম্মন্ধে কয়েকটা কাহিনী বর্ণনাতীত ছিল।
বেশ ভাল লেগেছে ব্যাপারটা। কিন্তু জান্নাতে ৭২ হুর পাওয়ার জন্য নিষ্পাপ মানুষদের জবাই করতে হবে এমন কিছু ছিল না।
.. বরং এই ছয়টা বিষয় এর উপর বারবার তাগিদ দিয়েছে জান্নাত লাভের জন্য।
.
ধর্ম সম্মন্ধে জ্ঞান স্বল্প! কিন্তু এই চিল্লায় বেশ অনেক কিছু শিখেছি এবং জেনেছি।
আমরা যখন দাওয়াতে তাবলীগী তে বের হতাম মানুষকে বুঝাইতাম মসজিদে আসার জন্যে।
আমির সাহেবকে দেখতাম ধরে ধরে মানুষের ব্রেইন ওয়াশ করে দিচ্ছে আল্লাহর পথে আসার জন্যে মসজিদে আসার জন্য। কিন্তু বড় কোন হুজুর কে দেখে নি কাউরে বলতে যে, "তুমি আল্লাহর সৈনিক, এই পথে তোমার রক্ত দেওয়া এবং নেওয়া দুটোই হালাল, অন্য ধর্মাবলম্বীদের খুন করা জায়েজ"
.
বরং সবাইকে শান্তিপূর্ণ ভাবে দ্বীন প্রচার করতে দেখতাম। কোন হানাহানির মাঝখান দিয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করে না মুসলিমরা। বড় হুজুরদের দেখতাম অন্য ধর্মালম্বীদের সাথে ভাল আচরণ করতে। এটাই তো ইসলামের প্রচার তাই নয় কি?
.
আচ্ছা যাক আমার প্রচেষ্টা সংগঠনে জগা দার কথা না বললেই নয়। গত রমযানে ঈদ উতসবে কেনাকাটা করতে যাই। আমরা রোযা রেখেছিলাম বলে আমাদের ধর্মের প্রতি সম্মান দেখিয়ে জগা দা কিছুই খায় নি। একসাথে আমাদের সাথে ইফতার করেছে।
এই যে এক ধর্মের প্রতি আরেক ধর্মের সহানুভূতি এটাই তো মানবতা এটাই তো ভালবাসা।
.
আমার হিন্দু বন্ধু আছে কয়েকজন। এক বন্ধু আমার বাসায় প্রায় আসে। আমরা একসাথে মিশি, খাই, চলি। কিন্তু সবাই সবার ধর্মের প্রতি সম্মান দেখাই।
.
মহাত্ম গান্ধী বলেছেন " তোমার ধর্ম কেমন তা বুঝা যাবে আরেক ধর্মের প্রতি তোমার সম্মান প্রদর্শন দেখে"।
এই যে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে যারা অন্যের ধর্মকে কটাক্ষ করে না তাদের প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা।
.
আসলে কিছু পথভ্রষ্ট মুসলিম নামের কলঙ্ক গোষ্ঠীর জন্য সারা বিশ্বে অশান্তি বয়ে আনে। আর এসব জংগীদের উত্থানপতনে কাদের হাত থাকে তাও অনেকেই জানে।
মুসলিমদেরকেই বারবার ভুল পথে ব্রেইন ওয়াশড করে ইসলামের দুর্নাম যারা ছড়ায় তারা কখনো ইসলাম ধর্ম প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে পারে না।
.
মাদ্রাসা শিক্ষার কারণে দেশে জংগী বাড়ছে এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। বেশির ভাগ মূত্রমনারাই মাদ্রাসা শিক্ষাকে অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগের সাথে মিলিয়ে দেখে যেখানে থাকে না কোন বিজ্ঞানের ছোয়া, থাকে না স্বাধীনতা, দেশ ও বিশ্ব সম্মন্ধে জানার অফুরন্ত সুযোগ।
.
কিন্তু এর জন্য দায়ী আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা। মাদ্রাসার ছাত্ররা কখনো সদিচ্ছায় জংগীবাদে লিপ্ত হয় না। মাদ্রাসার শিক্ষকরাও জংগীবাদী শিক্ষা দেয় না। মাঝখানের কিছু পথভ্রষ্ট লোক জংগীবাদ টা ছড়ায়। মাদ্রাসার ছাত্রদের ধর্মের প্রতি আনুগত্য বেশি থাকায় ওদের খুব সহজে ব্রেইন ওয়াশ করা সম্ভব হয়।
মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় কিছু পরিবর্তন রাখা উচিত।
.
২ তারিখে এতিমখানার হাফেজী মাদ্রাসার বাচ্চাদের পাঞ্জাবী পায়জামা বিতরণের আগে গল্প জমাই।
... আমার বেশ দুঃখ লাগে যখন দেখি একটা বাচ্চাও আমাদের মুক্তিযুদ্ধ সম্মন্ধে কিছু জানে না। বিজ্ঞানভিত্তিক তো একবারেই না।
দোষটা ছোট ছোট বাচ্চাদের না দোষটা সিস্টেমেটিক। আসলেও মাদ্রাসার বেশ কিছু শিক্ষকরাও জানে না এগুলো। আরবী শিক্ষার পাশাপাশি ওদের যদি বিজ্ঞানভিত্তিক বা আমাদের মুক্তিযুদ্ধ সম্মন্ধে না জানানো হয় তবে সেটা এই দুরন্ত পৃথিবীতে ওদের অনেক পিছনে ফেলে দিবে।
.... তাই মাদ্রাসা শিক্ষায় বিজ্ঞানভিত্তিক ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত পাঠ্যপুস্তক দিয়ে পড়ানো এখন সময়ের দাবী মাত্র!
.
আগত নতুন প্রজন্মের মাঝে যদি জংগীবাদ সম্পর্কে না জানানো হয় তবে এর পরিস্থিতি হবে খুবই ভয়াবহ। এবং বাংলাদেশ রুপান্তরিত হয়ে বাংলাস্থান হতে সময় লাগবে না। প্রতিটা বাংগালীর উচিত এখন-ই জাগ্রত হওয়া। সময় থাকতে এর বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার থাকতে হবে।
জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে মানবতার জয় হোক।
.... আর অবশ্যই মনে রাখবেন সমস্যাটা মৌলবাদীতে নয় সমস্যাটা জংগীবাদীতে!