ISIS এর পূর্ণরুপ Islamic state of Iraq & Syria, সংক্ষেপে ‘আইএস’।
২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হেসেনের মৃত্যুর পর আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে উত্থান ঘটে কথিত ইরাকের সুন্নি সশস্ত্র সংগঠন আইএসআইএস বা আইএসআইএল’র।
এই সংগঠনটি বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশ থেকে যোদ্ধা সংগ্রহ করে অর্থ ও জিহাদি হয়ে জান্নাত পাওয়ার লোভ দেখিয়ে।
সংগঠনে বিদেশী নাগরিকের সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার তবে সংবাদমাধ্যম গুলোতে বিদেশীদের সংখ্যা ২০ হাজার দাবী করলেও মূলত এ সংখ্যা ৫০ হাজারেরও বেশী হবে।
বর্তমান বিশ্বে সবচাইতে আতংকের নাম আইএস। আর কাউকে ধরে নিয়ে আটক করে মুক্তিপণ আদায় করা, শিরচ্ছেদ করে ভিডিও প্রকাশ, নারীদের জোর করে নিয়ে নিজের প্রবৃত্তির চাহিদা মোটানো এবং নারী পাচার করে যৌন জীবনে বাধ্য করে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেওয়া, যখন আইএসের প্রকৃতি তখনই কথিত এই ইসলামধারী জঙ্গি সংগঠনটিকে নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হয়।
কেননা এইসব প্রকৃতির কোনটিই ইসলাম সমর্থন করেনা এবং ইতোপূর্বে ইসলামিক যে সব যোদ্ধা আর দলের নাম ইসলামিক ইতিহাসে এসেছে এদের কেউ এদের প্রকৃতির আওতাভুক্ত ছিলোনা।
তাই স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে এইসব অপকর্ম করে কেন ইসলামিক বলে নামধারণ করেছে ? আবার কারাইবা এর পেছনে দায়ী ? কিবা তাদের মূল উদ্দেশ্য ? অর্থ আর অস্ত্রের যোগান-ই বা আসে কোথা থেকে? যেখানে আল কায়েদার মত সংগঠন গোপনে বহুদিন পরে অপ্সাত কোন স্থান থেকে মাঝে মধ্যে তাদের খবরাখবর উপস্থাপন করতো আর সেখানে কথিত এই ইসলামের নামে ইহুদি এই সংগঠনটি প্রতিনিয়ত তাদের বিভৎস কৃতকর্ম পৃথিবীর শান্তিপ্রিয় মানুষষের নিকটে অবলীলায় উপস্থাপন করে যাচ্ছে!
আর এতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে সেই পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো। তবে এই প্রচার আর মার্কিন জোটের বারংবা পরিচালিত আইএসের বিরুদ্ধে পরিচালিত নিস্ফল আক্রমণ বহু প্রশ্ন মানব বিবেকে উত্থাপিত হয়।
প্রথম প্রশ্নই হলো আইএস কাদের সৃষ্টি ? এদের কি নিজস্ব কোন নিয়ন্ত্রণ আছে নাকি কোন দেশের গোয়েন্দা সংস্থা দ্বারা পরিচালিত? আর এদের উদ্দেশ্যই বা কি?
আইএসের সৃষ্টি সর্ম্পকে বলতে গেলে বলা যায়, আইএস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা ‘সিআইএ’ এবং ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা ‘মোসাদ’র সৃষ্টি। আর এতে প্রত্যক্ষ আর পরোক্ষভাবে মদদ দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য।
কিউবার প্রেসিডেন্ট ফিদেল কাস্তে স্পষ্ট করেই বলেছেন আইএসের উত্থানের পেছনে স্বয়ং যুক্তরাষ্ট্র আর ইসরাইলই দায়ী।
ইরাক কিংবা আফগানিস্তানে হামলার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিলো এইসব দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ তথা তৈলকে আহরণ করা এবং নিজেদের বানানো পুতুল বসিয়ে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা সর্বোপরি মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলী শক্তি আরো বৃদ্ধি করা। কিন্তু যখন পুতুল বসিয়েও তাদের সব এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে এবং প্রাকৃতিক সম্পদকে পুরোপুরি গ্রাস করে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশসমূহকে ভিক্ষুকে পরিণত করতে পারেনি তখনি মাকিন যুক্তরাষ্ট্রের সিআইএ ও ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ তাদের যাবতীয় অস্ত্র আর সরঞ্জাম দিয়ে তৈরী করলো আজকের সবচেয়ে শক্তিশালী ও সম্পদশালী জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসকে।
আন্তর্জাতিক এক গবেষণায় দেখা যায় আইএস যে ধরনের সামরিক সরঞ্জাম ব্যবহার করছে তা ইসরাইল ফিলিস্তিন যুদ্ধে ও আমেরিকা আফগান যুদ্ধে ব্যবহার করেছে এবং অন্যান্য যেসব অস্ত্র তাদের হাতে রয়েছে তা কেবল আমেরিকা কিংবা ইসরাইলের নিকটেই রয়েছে সুতারং এসব লক্ষণ থেকে বুঝা যায় যে আইএস আমেরিকার ও ইসরাইলের সৃষ্টি।
ফ্রান্সের প্যারিস শহরে এধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘাঁরপরও মানবাধিকার নিয়ে সোচ্চার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্থল অভিযান চালানোর বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন। জানিনা এই অবস্থানের কারণ কি ?
যদিও আইএস ওয়াশিংটনে হামলার হুমকি দিয়েছে কিন্তু এই হুমকি কি লোক দেখানো কিনা সেটা ভবিষ্যৎই বলে দিবে। নাকি মুসলিম ও ইসলামের বিরুদ্ধে নতুন কোন চক আকতে শুরু করছেন মার্কিণ প্রেসিডেন্ট। কারণ আইএস যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্ম্পক এখন সারা দুনিয়া জুড়ে এক খোলাসা ও নিশ্চিত তথ্য।
আইএসের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো আরব বিশ্বের প্রাকৃতিক সম্পদ তৈলকে পুরোপুরি আরোহন করে আরব বিশ্বকে ভিক্ষুকে পরিণত করা। এই উদ্দেশ্য আইএস ঠিকই এগিয়ে যাচ্ছে, কেননা তারা এই উদ্দেশ্য সফল করতে প্রথমত ইরাক ও সিরিয়িার যেসব অঞ্চলে তৈলের কূপ ও শোধনাগার রয়েছে সেইসব অঞ্চলকে তারা প্রথমেই দখল করে। এবং সেখানকার তৈলকে তাদের মিত্রদের নিকট বিক্রি করতো।
এক গবেষণায় দেখা গিয়োছে আইএস সিরিয়া ও ইরাকের মোট ১৪ টি তৈল কূপও শোধানাগার দখল করেছে। দখল করা এইসব তৈলের কূপ থেকে প্রতিদিন উৎপাদিৎ হয় ৫২ হাজার ব্যারেল তৈল ! আর ব্যারেল প্রতি দাম ১০০ ডলারেরও বেশী কিন্তু তারা এইসব তৈল বিক্রি করছে মাত্র ২৫- ৫০ ডলারে! আর এই হিসেবে আইএসের তৈল বিক্রি থেকে দৈনিক আয় প্রায় তিন মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং অন্যান্য দেশ থেকে প্রাপ্ত সাহায্য প্রায় ১ মিলিয়ন ডলার। বিভিন্ন ভাবে নারীদের সংগ্রহ করে তা বিভিন্ন দেশে যৌন জীবনে বাধ্য করার জন্য পাচার করে দৈনিক অর্থ আয় ও প্রচুর ছাড়া ইরাক আফগানিস্থান ও সিরিয়ার প্রত্মতাত্তি¡ক বিভিন্ন নির্দশাবলী বিক্রি করে তারা প্রচুর পরিমাণ টাকা উর্পাজন করওে চলছে। এইসব অর্থ দিয়ে সাধারণ মানুষকে লোভে ফেলে তাদের দলে ভিড়ায় এই আইএস।
সম্প্রতি প্যারিস হামলার তিনজনের একজন এক ধরনের আর্থিক লোভের বিষয়টির মাধ্যমেই আইএসে যোগদান করার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
মার্কিন জোট ১৩০ বার সিরিয়ায় বিমান হামলা করলেও একবার ও আইএস এর ঘাটিতে লক্ষবস্তু ভেদ করতে পারে নি কিন্তু রাশিয়া জোট মাত্র ২-৩ বার বিমান হামলা করে আইএস'র লক্ষবস্তু ও তাদের ঘাটিতে হামলা করতে সমর্থ হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য আইএস দমন নয় বরং সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে নিঃশেষ করা একই সাথে পুরো সিরিয়ার অবকাঠামো ও অর্থনীতিকে ধ্বংস করে তাদের উপর নির্ভরশীল বানানো।
আমেরিকার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ইসলামকে বিশ্ববাসীর নিকট প্রশ্নবিদ্ধ করে আমেরিকা ও ইউরোপে মুসলমানদের বৃদ্ধি রোধ করা এ হিসেবে ওবামা তার দেশে মসজিদ নির্মাণ নিষিদ্ধ করেছেন এবং সকল মসজিদ বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন অন্যদিকে ফ্রান্সকেও মসজিদগুলো বন্ধের পরামর্শ দিয়েছেন। এক গবেষণায় দেখা গেছে ৫ বছরে আমেরিকায় মুসলিম বেড়েছে প্রায় ৩ হাজার জন আর উইরোপে মুসলিম বৃদ্ধিও হার প্রায় ৫% সুতরাং এবৃদ্ধিই যুক্তরাষ্ট্র সহ তাদের মিত্রদের ইসলামের বিরুদ্ধে যতসব ফন্দি আর জঙ্গি উত্থান করানোর কারণ !
আমেরিকা এক দিক দিয়ে সর্প হয়ে দংশন করে অন্যদিকে ওঝা হয়ে ঝাড়ে।
ওসামা বিন লাদেন, গাদ্দাফি, সাদ্দাম হোসেন’র জ্বলন্ত উদাহরণ এসব রাষ্ট্র নায়ক যুক্তরাষ্ট্রেরই বন্ধু ছিলো কিন্তু কোনকোন ক্ষেত্রে এসব নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের এজেন্ডা বাস্তবায়ন না করার কারণে তাদের রক্তচক্ষুর কারণ হয়ে দাড়ায় এবং এদের নিঃশেস করতে তারা আরবে আরব বসন্তের নামে গুটি বসন্ত রেখে আসছে আবার আর আফগানদের বন্ধু সেজে গিয়ে তাদের পঙ্গু বানিয়ে রেখে আসছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এসব প্রকৃতি দেখে মানুষ প্রবাদ তৈরী করেছে যুক্তরাষ্ট্র যার বন্ধু হয় তার আর শত্রুর দরকার পড়েনা!
সম্প্রতি বাংলাদেশেও আইএস প্রতিষ্ঠার পায়তারা চলছে।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একের পর এক হামলা , তাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়ে ভারতের কাছে প্রমাণ করতে চাইছে বাংলাদেশে জংগী সংগঠন সক্রিয় আছে।
নাস্তিক ও সমকামীতার সমর্থন দিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে উস্কে দিচ্ছে দেশীয় কিছু মানুষকে।
ইসলামের বিরুদ্ধে নোংরা ও মিথ্যা কথা সমাজে ছড়ানোর জন্য আইএস ও অন্যান্য জংগী সংগঠনগুলো নাস্তিক ও সমকামী খুন করে সক্রিয় হয়ে উঠছে।
ফলাফলা আমেরিকা প্রমাণ করতে পারবে বাংলাদেশে আইএস আছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের চাপে সরকারকে বাধ্য হয়ে বাংলাদেশে মার্কিন সৈন্য প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে।
এই সুযোগে আরবরাজ্য গুলোর মত বাংলাদেশেও আইএস দমনের নাম করে দেশ লুটপাট করে নিয়ে যেতে পারবে।
এখন বলতে পারেন বাংলাদেশে তো ইরাক ও সিরিয়ার মত তেলের কূপ নেই।
কিন্তু খেয়াল করেছেন কি নিউক্লিয়ার বোমা তৈরীর প্রধান মৌল বাংলাদেশে পাওয়া গেছে। এছাড়া গ্যাস ও অন্যান্য মূল্যবান খনিজ সম্পদ বাংলার মাটিতে আছে।
( তথ্যসূত্র : গুগল ও ইউটিউব )