somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ঠেলাগাড়ির পাইলট
সুন্দর শিরোনামের কিছু নাই। সুন্দর মানুষের সুন্দর শিরোনাম থাকে। আমারে আমি একটা কুকুরের থেকে বেশী কিছু ভাবি না। যেদিন মানুষ বলে ভাববো নিজেকে সেদিন বরুণাকে নিয়ে কিছু লিখবো।

বরুনা

১২ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিয় বরুণা,

কেমন আছো তুমি?
জানি প্রশ্ন করাই বাহুল্য। তুমি ভালো আছো এটা আমি জানি। ভালো থাকার জন্যেই তো তুমি আমাকে বেছে নাওনি। তীব্র কস্ট হলেও বলবো একদম ঠিক কাজটিই করেছো।
যদি কখনো নিজেকে বেছে নেবার সুযোগ থাকতো আমি নিজেই নিজেকে বেছে নিতাম না।
জানো আমি কবে থেকে নিজেকে বেছে না নেবার চিন্তাভাবনা শুরু করেছি?
জানার কথা না অবশ্য তোমার।
তোমার সাথে তো আমার সুন্দর কিছু ভালোবাসাময় মুহুর্ত কাটেনি। আমিও আমাকে প্রকাশ করিনি তোমার কাছে। তুমিও তা করোনি। তবুও তুমি তোমার মেয়েলি ক্ষমতা দিয়ে দেখেছো আমার দুঃখ,দুর্দাশা,কস্ট কিংবা আমার উজ্জলতাহীন ভবিষ্যৎ ।
আমি নিজেকে বেছে না নেবার সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করছি কয়েক বছর আগে। যখন আমার মায়ের নাকফুল বাদে সব স্বর্নগুলো আমার বাবা বিক্রি করে দিলেন। জানো বরুণা আমি নিজের হাতে সেসব বিক্রি করে এসেছিলাম। যখন নিজ হাতে সেগুলো আমার ছেড়া জিন্স প্যান্টের পকেটে ভরলাম তখন মায়ের চোখের দিকে একবার তাকিয়েছিলাম। জানো বরুণা সেখানে যে কস্ট আমি দেখেছিলাম তার সাথে কোন কিছুর তুলনা হয় না। মা বলছিলো,”সুনীল সব স্বর্নই তো বিক্রি করে দিতে হচ্ছে । তুই আমার বড় ছেলে। আমার অনেক আদরের ছেলে তুই। তোরে বিয়া করাইতে গেলে তোর বউরে কিছু দিতে হইবো । আমি কই থেইকা দিমু? আমি তো মান সম্মান রাখতে পারবো না”।
মুচকি হেসে বলেছিলাম,”আম্মা কেঁদো না। তোমার ছেলের বউটা অনেক ভালো হবে। যাকে কিনা কতগুলো নীল চুড়ি দিলেই খুশি হবে। আর কিছু লাগবে না তার”।
বরুণা আমি কথাগুলো তোমাকে মাথায় রেখে বলেছিলাম।
তোমাকে একবার নীল চুড়ি কিনে দিয়েছিলাম। কি খুশি হয়েছিলে আমার মনে আছে।
জানো তোমাকে চুড়ি কিনে দেবার পর আমি শাহবাগ থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত তীব্র রোদে হেটে এসেছি। বিশ্বাস করো তোমার হাসিমুখটা বারবার ভাসছিলো তখন। মনে হচ্ছে হাজার মাইল পাড়ি দিতে পারবো হেটে ।
আমি অনেক গরীব ঘরের একটি ছেলে বরুণা। কস্ট দুর্দশায় বড় হয়েছি আমি।
আমি মানুষ হয়েছি দেড়শ টাকার স্যান্ডেল,দুইশ টাকার টি শার্ট আর চারশ টাকার জিন্স পড়ে।
তবুও তোমাকে পাবার স্বপ্ন দেখতাম খুব করে। কিন্তু আমি ভুলে গিয়েছিলাম,”ছেড়া জিন্স পড়ে বরুণাকে পাবার স্বপ্ন দেখতে নেই”।
বরুণা সেদিন দেখলাম তুমি অন্যজনের হয়ে গেছো। খারাপ লাগেনি। অভিমান লেগেছে। খুব খুব খুব অভিমান লেগেছে। আমার তীব্র ভালোবাসাটা তুমি বুঝলে না কেন বরুণা?
গাড়ী,বাড়ী গহনা কিছুই দিতে পারতাম না তোমায়। তিরিশ হাজার টাকা বেতন পাই। বাবা মা ছোট দুই ভাইকে নিয়ে আমাদের সংসার খরচ করে হয়তোবা হাজার দুয়েক টাকা অবশিষ্ট থাকতো। তা দিয়ে তোমাকে দুগাছি চুড়ি দিতে পারতাম আর মোটামুটি মানের একটা রেস্টুরেন্টে খেতে পারতাম।
বরুণা সেদিন দেখলাম তুমি অন্যের হয়ে গেছো। খারাপ লাগেনি তা নয়। খারাপ লাগা ভাবটা এখনো আছে।
একদিন আমার সংসার হবে,সন্তান হবে,হয়তোবা ভাগ্যের ফেরে আমি অনেক বড় হবো একদিন । কিন্তু কোন এক সন্ধ্যা নামার আগ মুহুর্তে বৃস্টির সময় আমি যখন বারান্দায় বসে চা খাবো আর আমার প্রিয় নগরীকে দেখবো তখন আমার বুক থেকে যে দীর্ঘশ্বাস বের হবে আর আমার বুকের যে শুন্যতা থাকবে সে শুন্যতা আমি কি দিয়ে পুরন করবো বলতে পারবে বরুণা?
জানি উত্তর জানা নেই তোমার। আমার ও যে নেই।
আমি সুনীল। সেই ছেড়া ফাটা জিন্স,কম দামি স্যান্ডেল আর কম দামী টি শার্ট পড়া সুনীল। যদি কখনো অনেক ধনী হই। দামী স্যুট,দামী কোর্ট,সুন্দর টাই ,কালো পালিশ করা শ্যু আর মোটা ফ্রেমের একটি কালো চশমা পড়ে তোমার সামনে যাবো সাহেব হয়ে। তোমাকে একটা কথাই জিজ্ঞেস করবো,”বরুণা সেদিন আমার জন্যে কি তোমার একটুও খারাপ লাগেনি?”।
উত্তরের অপেক্ষাতে রইলাম।
প্রশ্ন করবার অপেক্ষাতেও রইলাম।
ভালো থেকো বরুণা। সুখী হও।
সব সুনীল তাদের বরুণাকে পায় না। তাতে ভালোবাসার ঘাটতি হয় না।
তোমার প্রতি আমার এতোটুকু ঘৃনাও নেই।
এটাই তোমার প্রতি আমার ভালোবাসার মহত্ব্য।

ইতি
নীল খামে চিঠি লেখা সুনীল
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:৪৫
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×