প্রিয় আম্মু,
কেমন আছো তুমি???
যদিও জানি প্রশ্ন করাই বাহুল্য।
কারন আমি জানি তুমি একদম ভালো নেই।
ভালো থাকবে কি করে??
আমি যে নেই।
আমি জানি আম্মু তুমি আমার সাথে ফোনে কথা বলার সময় কাদো না।
কিন্তু কিছু কিছু সময় কাদো।
জানি আম্মু তুমি আমার কম্পিউটার টেবিলের সামনের খালি চেয়ারটার দিকে তাকিয়ে থাকো। চোখ মুছো।
আমি এটাও জানি আমার কম্পিউটারের ব্যাকগ্রাউন্ডে আমার ছবিটা ছিলো সেটা তুমি কাওকে চেঞ্জ করতে দাওনি।
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখ না ধুয়েই চা খেতাম আমি। ঘুম থেকে উঠেই পিসি টেবিলের উপর এক কাপ গরম চা পেতাম।
কোন কোন দিন চা না পেলে চিৎকার করে বলতাম,"আম্মু আমার চা কই?"
তুমি চা নিয়ে আসতে আর রাগের ভান করে বলতে,"বুইড়া পোলা। কয়দিন পর বিয়া করবো আর এখনো মুখ না ধুইয়া চা খায়। খবিশ।"
আমি হাসতাম।
এখন আর কেউ চা চায় না। তবুও জানি তুমি মাঝে মাঝে চা বানাও সকালে। তারপর কাপ ভর্তি করে যখন টেবিলের উপর রাখো তখন মনে পড়ে তোমার আমি যে নেই।
জানো আম্মু তোমার এই চা পাগল ছেলেটা যার প্রতিদিন সাত আট কাপ চা লাগতো সে গত ২৮ দিনে মাত্র ছয় কাপ চা খেয়েছে।
আমার সাথে সব সময় আব্বুর একটা দুরত্ব ছিলো।
কিন্তু যেদিন আমার ফ্লাইট সেদিন সকালে আব্বু যখন আমার হাত ধরে কান্না করলো বিশ্বাস করো তখন আমিও কেদেছিলাম। আমি নিজেকে পাথর মনে করি। আমার লাইফে আমি সেদিন সহ মাত্র তিনবার কেদেছি।
গরুর মাংশ আমার অত্যান্ত প্রিয় ছিলো। বেশী গরুর মাংশ খাই বলে তুমি আমাকে "গরু" বলতা।
আবার বলতা তোরে কসাইয়ের মেয়ে বিয়ে করিয়ে দিবো।
সেই আমি এসেছি পর থেকে আব্বু নাকি বাসায় গরুর মাংশ আনে না।
বলে যেদিন তোর সাথে বসে খেতে পারবো সেদিন বাসায় গরুর মাংশ আনবো।
বলোতো এরকম পাগলামির কোন মানে হয়???
এই তিন ডিসেম্বর তো মৃদুল মানে আমার "তুতুটার" জন্মদিন গেলো। ওকে উইশ ও করতে পারলাম না।
আসার দিন তুতুকে বলেছিলাম বাসার বাইরে না যেতে।
কি আজব প্রায় এক মাস হতে চললো তুতু স্কুল আর কোচিং ছাড়া বাসার বাইরে বের হয়নি।
মারুফকে বাইরে বাইরে থাকতে থাকতে মানা করো। আমি নেই। এখন তোমাদের দেখার দায়িত্ব তো ওরই।
কাদবে না আম্মু।
ছেলে হয়ে যখন জন্মেছি।
পরিবারের বড় ছেলে হয়ে যখন জন্মেছি।
তখন অনেক দায়িত্ব নিয়ে জন্মেছি।
আর দায়িত্ব থাকলে অনেক কিছুই ত্যাগ করতে হয়।
আমি ভালো আছি আম্মু।
ইতি
তোমার বড় ছেলে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০১৫ ভোর ৬:৩১