আগের কাহিনী বাদ। শুরু করি একেবারে ২০ নভেম্বর থেকে। হ্যা?
এদিনই আমার ফ্লাইট ছিলো। দুপুর দেড়টায়। জীবনের প্রথম যাত্রা। এক্সাইটেড ছিলাম।। ছোটকালে আকাশে বিমান দেখতাম। ভাবতাম কবে আমিও উড়বো এভাবে। উড়তে তো আর পারলাম না। বসেই ছিলাম।
সকালে সবার থেকে বিদায় নিলাম। সাথে দুজন বন্ধু,এক কাজিন, নানাজান আর আমার বাপজান আসিলো। এগারোটার মধ্যে সবার থেকে বিদায় নিলাম। ভেতরে প্রবেশ করলাম। ভেতরে বলতে বোর্ডিং পাস নিবো। প্রথমবারের মত কোন এয়ারপোর্টের ভেতরে প্রবেশ করলাম। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছিলাম। একদিকে তাকিয়ে আমার এয়ারওয়েজের বোর্ডিং পাস দেবার লাইন দেখলাম। আমার এয়ারওয়েজ ছিলো “জেট এয়ারওয়েজ”। কেমন
এয়ারওয়েজ সেটা নিয়ে পরের পোস্টে আলোচনা করবো।
যাই হোক আমার ট্রানজিট ছিলো মুম্বাইতে, তিন ঘন্টার। বোর্ডিং পাস নেবার জন্য সিরিয়ালে দাড়ালাম। যথাযথ কাগজ দিলাম। মালামাল বোর্ডিং এ দিলাম। আমার সামনে এক লোক ছিলো । জেট এয়ারওয়েজে মাল নেবার সীমা ছিলো জনপ্রতি ৩০ কেজী। ওই লোকের হয়েছিলো ৪৪ কেজী। দেখতে চাইলাম কি করে। দেখলাম বেল্টের সামনে যে লোক ছিলো তার হাতে দুটো এক হাজার টাকার নোট দিলো। ওনার মাল গেলো ৪৪ কিলোই বাট নিবন্ধিত হলে ৩০ কেজী বলে। ঘুষ দেয়াও এক প্রতিভা বটে।
বোর্ডিং পাস নিয়ে ইমিগ্রেশন গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। ভাবছি আহারে ইমিগ্রেশন পার হলেই আমার আর বের হওয়া সম্ভব না।
এমন অময় দেখলাম আব্বু ফোন দিলো। বললো,”আব্বু তুমি কি ইমিগ্রেশন পার হইছো”।
বললাম এখনো না।
আব্বু বললো তুমি দাঁড়াও আমি আসতেছি।
আব্বু কিভাবে যেনো ম্যানেজ করে ভেতরে আসছে। বাবাকে বড় হবার পর কোনোদিন জড়িয়ে ধরিনি। সেখানে সবার সামনে আব্বুকে জড়িয়ে ধরলাম। আমি আবেগী নই। বাট চোখে পানি টলমল করছিলো। আব্বুকে বন্ধুর মত জড়িয়ে ধরলাম। আব্বুও বাচ্চার মত কাদতেছিলো। আব্বুর সাথে চেয়ারে বসলাম পাশাপাশি। বন্ধুর মত কিছুটা সময় গল্প করলাম। তারপর আমি
ইমিগ্রেশন গেটে ঢুকলাম।
আব্বুর বাহিরে যেতে হলো। ইমিগ্রেশনের লাইনে দাড়ালাম। ইমিগ্রেশনের রিসিপশনে থাকে পুলিশ। পুলিশেরা আমার পাসপোর্ট নিয়ে যাচাই করতে লাগলো। তারপর টুকটাক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলো।। সবার শেষে বলা হলো, ”আপনি এগুতে পারেন”।
একটা কথা বলে নেই। যারা কখনো এয়ারপোর্ট দিয়ে দেশ ছাড়েননি তাদের জন্য। কোন মানুষ যদি একশটা খুন ও করেন। এবং সে যদি কোনো না কোনভাবে একবার ইমিগ্রেশন গেট ক্রস করে ফেলে তাহলে তাকে আর কেঊ ধরতে পারবে ন। ইভেন পুলিশ, সরকার কেউ না। আর ইমিগ্রেশন ক্রস করবার পর একমাত্র মারা না গেলে আর ব্যাক করা পসিবল না।(আমার জানামতে )
ইমিগ্রেশন পার হয়েও এক ঘন্টা সময় আছে হাতে।। ভেতরের সাজসজ্জা দেখতে লাগলাম। আমি যেখানে বসেছিলাম, তার বাম দিকে দেখলাম মদের দোকান। লাইফে কখনো মদের দোকান দেখিনি।। চোখ গোলগোল করে তাকিয়ে দেখতে লাগলাম। সারির পর সারি বোতল মদ। রাম, জিন, টাকিলা, হুইস্কি, স্কচ, মিক্সড ককটেল ইত্যাদি নানা ধরনের মদ (নাম লেখা ছিলো টেবিলের
সামনে )। রিসিপশনে সোজা ভাষায় বলতে গেলে এক সেক্সি মেয়ে। যিনি টাইট ফিট প্যান্ট পড়ে আছেন আর টাইট টি-শার্ট। (এই না আবার কেউ বলে বসে চোখ সামলান মিয়া। একচুয়ালি পাহাড় তো এমনিতেই চোখে পড়ে! তাই না?!)
চিন্তা করতে লাগলাম বাংলাদেশের মত একটা মুসলিম দেশের (কাগজে কলমে ) এয়ারপোর্টে মদের দোকান কেন? আমি বাচ্চা মানুষ।। তাই চিন্তা না এগিয়ে চুপচাপ বসে রইলাম।
এর থেকেও ভয়ানক ব্যাপার চিন্তা করেছিলাম কাতার এসে। সেটা পরের কোন পোস্টে। যাই হোক সময় হয়ে এলো। শেষবারের মত চেক করবে বিমানে উঠবার আগে। ইজিলি পার পেয়ে গেলাম। আমার সাথে এক ছেলেকে কিছু সময়ের জন্য আটকে রাখলো। কিছু সময় পর ছেলেটাকে ছেড়ে দিলো। ছেলেটাকে দেখলাম চোখ মুছছে। জিজ্ঞেস করলাম ভাই কান্না করেন কেন?
বললো, ”ভাই আমার আমের আচার খুব প্রিয়। বিদেশ আসছি আবার কবে না কবে খাই এই ভেবে আম্মা দুই কাচের বোতলে ভরে
আচার দিয়ে দিছিলো। চেক করবার সময় আমের আচার গুলো রেখে দিলোরে ভাই। ওরা বলে এটা এলাউড না। আমের আচার কি এমন ক্ষতিকারক জিনিষ ভাই?’ (চেক করবার সময় এক অল্পবয়স্ক মেয়ে আর এক বয়স্ক লোক ছিলো। )
উত্তর না দিয়া হিমুর মত একখান হাসি মাইরা সইরা আসলাম।
বিমান আসলো। বিমানে উঠবার সময় দেখা হয়ে গেলো বিখ্যাত পরিচালক মোস্তফা সরোয়ার ফারুকির সাথে । কথা না বইলা সবার আগে ছবি তুললাম । (শত হইলেও এইটা ফেসবুকের যুগ। একটা ভাব আছে না? হে হে। )
তারপর আস্তে আস্তে পেলেনে উঠলাম। স্বাগত জানাইলো ছুডু ড্রেস পড়া এক মাইয়া। তহন শীতকাল আছিলো। শীতকালে উনি ছুডু ড্রেস কেন পড়লো এইটা মাথায় আসলো। যাই হোক আমি বাচ্চা মানুষ তাই আবারো চিন্তা করা বন্ধ কইরা লক্ষী ছেলের মত সিটে বইসা পড়লাম। মন খারাপ কিঞ্চিত। বাপে লাস্ট তিন ঘন্টা পঞ্চাশ বারের উপরে ফোন দিছে। আবারো দিলো। :#>
কইলাম, ”আব্বু যাই”।
প্রতিবারের মত সে আরো একবার বলিলো, ”যাই না আব্বু বলো আসি”।
ওকে আসি আব্বু।
এই বলে ফোন রাখলাম। স্পিকারে কইলো ফোন বন্ধ করতে। আমি বাংগালী মানুষ কথা শুনবার অভ্যাস কম। তাই ফোন টিপত্তেই লাগলাম। এমন সময় আসলো এক ফোন। মাহি ফোন দিলো। ধরবার পারি নাই। তার আগেই এক সুন্দরী ইন্ডিয়ান মেয়ে আসিলো। কোকিল কন্ঠে বলিলো, “স্যার দয়া কইরা ফোনডা বন্ধ করেন”।
আমারে কেউ স্যার কইলো। এই খুশিতে কইলাম “ওকে”।
বাম দিকে নিকুঞ্জ এলাকা। এইখানে আমার বন্ধু শোভনের নানা বাড়ী। সাত তলা সেই বিল্ডিং এর ছাদে কত আড্ডা,কত কিছু করছি হিসাব নাই। আমার সিট জানালার পাশে পড়ে নাই। তবুও উকি মাইরা দেখতে লাগলাম। যদি সেই বিল্ডিংখান দেখা যায়। নিকুঞ্জতে
অধিকাংশ বাড়ীই একই রকমের। তাই একবার মনে হইলো বাড়ীটা দেখছি। কিন্তু আবার মনে হয় এইডা অন্য বাড়ী। আকাশে উঠলে
মানুষ মনে হয় কনফিউশনে পইড়া যায়। সিল্টবেল্ট বান্ধা অবস্থায় আবারো মোবাইল চালু কইরা কানে হেডফোন দিয়া leonard cohen সাহেবের Blue Raincoat শুনতে শুনতে পারি জমাইলাম অজানায়।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুন, ২০১৫ রাত ৯:১০