আপনি কি দেখেছেন জনৈক জ্ঞানী ব্লগার কে ইদানিং যিনি নারী জাতির চলন বলনের উপর ব্লগীয় থিসিস রচনা করছেন। তাকে সকাল বিকাল দাড়িতে চিরুনি চালাতে চালাতে একদৃষ্টিতে দাড়িয়ে থাকতে দেখবেন নাবালেক মেয়েদের স্কুল থেকে শুরু করে মহিলা কলেজের গেটে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী হলের সামনে ।সুরমা চোখের তসবী হাতের এই মানুষটি জেনানাদের বিষয়ে ব্যাপক মনোযোগী। আপনার আমার চোখে পড়ুক বা না পড়ুক উক্ত ব্লগারের ব্লগ এড়ায় না এযুগের নারীদের কড়া চকচকে লিপস্টিক, আটসাট পোষাক ও নানান রঙঢঙের তথ্য।
তথ্য সংগ্রহের জন্য নারীলোকন (নারী +অবলোকন) তার কোন ক্লান্তি নাই । যখনই কোন রমনী শরীরের বিশেষ অংশ অনাবৃত রেখে হাস্য-লাস্য অবস্হায় হেলে দুলে চলে তিনি এমন ভাবে তা অন্তস্হ করেন যাতে পরবর্তীতে বর্ণনা করতে পারেন। তিনি কি একজন শরমিন্দার পুরুষ? না হলে প্রথম ব্লগীয় রিপোর্টে কোন অঙ্গের নাম না বলে "বিশেষ অংশ" উল্লেখ করেছেন কেন? তবে কি নারীর প্রতিটি অঙ্গই তার দৃষ্টিতে "বিশেষ অঙ্গ"? তবে কি এটি নারীর প্রতিটি অঙ্গের প্রতি তার গবেষণার বহি:প্রকাশ এটি?।
জ্ঞানার্জনের পথ বন্ধুর। বিদেশী বিপথগামী জেনানাদের খুঁটি নাটি জানাও জ্ঞান। বলাবাহূল্য এই ব্লগার জ্ঞানার্জনের জন্য সুদুর চীন দেশের পর্ণ সাইটে প্রবেশ করেন ঝুঁকি নিয়ে। তিনি বিবাহিত। চার খান বিবিকে এড়িয়ে অতিগোপনে ভীনদেশী নারীদেহ নিয়ে পড়াশোনা এবং গবেষণা দু:সাধ্য কর্ম নয় কি? নিন্দুকেরা বলেন চারজন বিবির একজন বিবি উচ্চ শিক্ষিত । অতিশাসনের ফলশ্রুতিতে উক্ত বিবি বিপথে যাবার পর থেকেই এই বৈপ্লবিক গবেষণাকার্যের সূচনা।
স্বাভাবিক ভাবে, নিজের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তিনি সর্বদাই দীর্ঘ জামা পরিধান করেন। এমন কি গ্রীস্মের দাবদাহে, বর্ষার সিক্ততায় তিনি তার শরীর ঢেকে রাখেন। পাছে পুরুষদেহ নারীদের চোখে যায়। থাকে টাকনুবধি লম্বিত পায়জামা । হায়! তিনি তার পরও দেখতে পান নারীরা নিরীহ পুরুষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার করার প্রয়াস চালায়, তাদের দিকে লালায়িত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।তার রাতে ঘুম হারাম হয়। তিনি নিরাপত্তা হীনতায় ভোগেন। অবশ্য কমজ্ঞানী ব্লগে নারীদের বিচরণে তিনি হতাশ। তবে কী জ্ঞানের কোন মূল্য নাই ইহজগতে?
গবেষণার পরিকল্পনা এবং ব্লগ লিখনের স্বার্থে নারীদের ফর্সা পেটের দিকে নজর দিয়ে দেখা তার কর্তব্য । এই এই ত্যাগী কর্মের ফলশ্রুতিতে তিনি নিশ্চিত হয়েছেন যে নারীদের সেই অংশটি প্রায়শই উন্মুক্ত(নাইজুবিল্লাহ!) । তিনি রাস্তাঘাট-বাজারে, ক্যাম্পাসে-কোর্টে, হসপিটালে-মর্গে অবস্হান করেছেন দীর্ঘ সময় । নারীদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পর্যবেক্ষণ করতে করতে তিনি উপসংহারে পৌছেন যে এই যুগের অধিকাংশ নারীই সুদীর্ঘ (হিজাব ইত্যাদি) পোষাক ছাড়া চলাফেরা করছে দ্বিধাহীন ভাবে । এইটি তার কাছে অশনি সংকেত বলে মনে হয়।
এর পর তিনি মতবিনিময়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিশেষ দলীয় ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলেন এবং পায়জামাতে ইসলামী নামক মর্যাদাপূর্ণ দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন । দু:খজনকভাবে তিনি শুনতে পান তার অবাধ্য বিবিদের মত সেই নেতাদের বিবিরাও তাদেরকে পাত্তা দেয়না । সম্ভবত: কেয়ামত আসন্ন। তার মতে নারী শিক্ষিত হলেই বিপত্তি। শিক্ষিত নারীদের মধ্যে পুরুষকে পাত্তা না দিয়ে নিজের স্বাধীনতায় চলার মত বেদায়েতি প্রবণতা থাকে।
প্রথম ব্লগ রিপোর্ট প্রকাশের পর উক্ত জ্ঞানী গবেষকের নজর নিবদ্ধ হয় অভিজাত ক্লাব, উচুমহল এবং ডিসকো পার্টিতে । পার্শবর্তী দালানের ছাদ থেকে ক্রমাগত উঁকি ঝুঁকি দিয়ে মদ্যপানরত পুরুষের ভীড়ে নারীদের তালাশ করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি লাইব্রেরীতেও নারীদের দেহ প্রদর্শনের তথ্য অনুসন্ধানে যান। এর মধ্যে সহসা তার নিজের শিক্ষিত বিবিটিকে "নারী স্বাধীনতার বই" পড়তে দেখতে পেয়ে বিরাট ধাক্কা খান। তার মত পরহেজগার স্বামীকে রেখে, তার উপার্জিত পেট্রোডলারের পয়সা রেখে উক্ত বিবির মন বসছে অন্যত্র । এটি তার সহ্য হয় না। তিনি ব্লগে কড়া ভাষায় লেখেন যে "এ যেন সুখের জন্য নারীরা আগুনে আকৃষ্ট হচ্ছে পতঙ্গের ন্যায়।"
তৃতীয় এসাইনমেন্ট সম্পন্ন হয় সাংস্কৃতিক জগতের নারীদের নিয়ে। সম্প্রতি এক নৃত্য শিক্ষা কেন্দ্র ভ্রমণ করার পর তিনি বুঝতে পারেন যে নারীদের পেট, বক্ষ, উরু এবং নিতম্ব নামক চারটি অঙ্গ তার গোপন বাসনায় জৈতুন তেলের আগুন জ্বেলে দিয়েছে। আধুনিক নারীর নমুনা হিসেবে গত কয়েক মাস যাত্রানুষ্ঠান, "প্রিন্সেস সুইট"দের নৃত্যকলা, "মোল্লা বাড়ির বউ", "নাচ ময়ুরী নাচ " সহ একগুচ্ছ চলচ্চিত্র পর্যবেক্ষণ করেন। তাদের হেদায়েতের স্বার্থে দেহভঙ্গিমার বিস্তারিত বিবরণ তিনি তার ব্লগে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেন। তবে ব্লগে যথাযথ শব্দ ব্যবহার অতীব গুরুত্বপূর্ণ। তাই তার সাথীদের পরামর্শে "সাপ্তাহিক কামরাঙা" এবং "মাসিক কামদগ্ধ" সহ কিছু চটি পত্রিকার নিয়মিত পড়াশোনার করেন যাতে শব্দ ভান্ডারের উন্নতি হয়। তার দ্বিতীয় ব্লগে বেলেল্লাপনার দৃশ্য সফলভাবে পরিস্ফুটনের জন্য "যৌন", "যৌনতৃপ্তি", "যৌন লালসা", "যৌনাবেদন" ইত্যাদি রগরগে শব্দের ব্যাপক ভাবে ব্যবহার তার ভাষা দক্ষতাকে প্রমাণ করে এবং এর মাধ্যমে সাগরেদবৃন্দের মোবারকবাদ পান।
উল্লেখ্য ইন্টারনেট, ব্লগিং, ফোরাম, ইমেইল ইত্যাদিতে নারী ব্লগারদের উথ্থানে তিনি উদ্বিগ্ন এবং উক্ত বেয়াদব নারীরা "জ্ঞানী ব্লগার"দের পাত্তা না দেওয়ায় ভীষন শঙ্কিত । পিপিলিকার পাখা গজায় মরিবার কালে এবং নারী জাতির নিজস্ব বিবেক বুদ্ধির ব্যবহার তার মতে অনুরূপ আত্মঘাতী প্রবণতা।'
বর্তমানে উক্ত ব্লগার তার মিশনের অর্থদাতা "মর্যাদাপূর্ণ" পুরুষদের সঙ্গে তারই ধারণকৃত মোবাইল ক্যামেরার ছবিগুলো নিয়ে আলোচনারত। এই মহান ব্লগার আশাবাদী যে পরবর্তী ব্লগে নারীদেরকে দীর্ঘ পোষাকে প্রত্যাবর্তণ এবং কুমারী নারীদের "সহি" পুরুষদের কে নিকাহ করতে উদ্বুদ্ধ করতে ব্যাপক তথ্যের সমাবেশ ঘটাতে পারবেন।
সাইড এফেক্ট: উক্ত ব্লগার পানের পিক ফেলতে ফেলতে (মতান্তরে লোল) নারীবিষয়ক লেখালেখির কারণে ব্লগে ব্যাপক হীট পেয়েছেন বলে শুকরিয়া করেন।
সর্বশেষ:
গতকাল সেই জ্ঞানী ব্লগার বিবাহপূর্ব রমনীদের বিষয়ে আরেকটি ব্লগ প্রকাশ করেন যেখানে তিনি সর্বপ্রথম তার মস্তিস্ক বিকৃতির বিষয়ে আলোকপাত করেন । এর কারণ হিসাবে তার সরল স্বীকারোক্তি যে সম্প্রতি কাটপিস সিনেমা দেখে এবং নিম্নস্তরের উপন্যাস পড়ে তার মতিভ্রম হয়। পরশু দিবাগত রাতে সুবহে সাদেকের আগে নিদ্রাবস্হায় পেয়ারে ময়ুরী জান, পেয়ারে ময়ুরী জান বলে ডেকে উঠলে, তিনি তার কলহপ্রিয়া প্রথমা বিবি কতৃক ব্যাপক শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন। তার লাঞ্ছিত হওয়ার বিস্তারিত সংবাদ আমাদের হাতে এসে পৌছে নি।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০০৯ সকাল ১১:৪৬